ন্যায়পরায়ণতা
عدل
'আদল' শব্দের অর্থ ন্যায়পরায়ণতা, ইনসাফ যা-ই করা হোক অথবা আখলাক ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা হােক— হুজুর পাক (ﷺ) এর মহান সত্তার ক্ষেত্রে উভয় প্রকার অর্থই প্রযোজ্য হতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। একদা হুজুর পাক (ﷺ) কিছু মাল বন্টন করছিলেন। এমন সময় যুলহুওয়ায়ত্তগরাহ তামিমী নামক এক ব্যক্তি হুজুর পাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করে বললাে, তিনি যেনাে এক্ষেত্রে ইনসাফের ভিত্তিতে কাজ করেন। অথবা অন্য এক বর্ণনায় এরকম আছে, লােকটি বললাে, আপনি যা করছেন তা ইনসাফের ভিত্তিতে হচ্ছে না। —হুজুর পাক (ﷺ) একথা শুনে বললেন, তােমার জন্য আক্ষেপ! আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে আর কে ইনসাফ করবে? ঘটনাটি বেশ দীর্ঘ। এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করে এটুকুই উল্লেখ করা হলাে।
আবুল আব্বাস মুবাররাদ এলমে নাহু’র একজন ইমাম ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, পারস্যের বাদশাহ কিসরা তার নিজের জন্য দিনসমূহ বিভিন্ন ভাবে ভাগ করে রেখেছেন। বাতাস প্রবাহিত হওয়ার দিনকে নির্ধারণ করেছেন ঘুমানাের জন্য। মেঘাচ্ছন্ন দিনকে নির্ধারণ করেছেন শিকার করার জন্য। বৃষ্টি বাদলের দিন নির্ধারণ করেছেন শরাব পান করার নিমিত্তে। আর যে দিন আকাশ মেঘমুক্ত রৌদ্রকরোজ্জ্বল থাকবে সেদিন মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উক্ত ইমাম আরও বলেন যে, কিসরা তাে শুধু রাজনৈতিক দিক দিয়েই প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। কাজেই দ্বীনের ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে প্রজ্ঞাশীলতার কতটুকুই বা আশা করা যেতে পারে? কিন্তু আমাদের পয়গম্বর সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর অবস্থা কিরকম? তিনি দিবসকে তিন ভাগে ভাগ করে নিতেন। দিনের এক অংশ আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য। এক অংশ পরিবার পরিজনের জন্য। আর এক অংশ নিজের জন্য। তারপর সেই এক তৃতীয়াংশ কি আবার দু'ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ নিজের জন্য রাখেন আর বাকি এক ভাগ মানুষের প্রয়োজনীয় মিটানোর নিমিত্তে নির্ধারণ করতেন।
আবু জাফর তিবরী সাইয়্যেদুনা হযরত আলী মুর্তজা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,হুজুর আকরম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমি আমার গােটা জীবদ্দশায় স্রেফ দু'বার জাহেরী যুগের আমলের প্রতি ইচ্ছা পােষণ করেছিলাম। দুই বারই আমার ও আমার ইচ্ছার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা প্রতিবন্ধক হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত জীবনে আর কখনও এ ধরনের ইচ্ছা পােষণ করিনি। একবারতাে এমন হয়েছি আমি ও আমার সঙ্গী, যে আমার সাথে বকরী চরাতে তাকে এক রাত্রিতে বললাম, তুমি আমার বকরীগুলির প্রতি লক্ষ্য রেখাে। আমি একটু মক্কা মুকাররমা ঘুরে আসি। সেখানে যেয়ে একটু গল্পগুজব করে ও গল্প গুজব শুনে সময় কাটিয়ে আসি যুবক বয়সীরা যেমন অবসর সময় গল্পগুজব করতে ও শুনতে ভালােবাসে। আমি সেখান থেকে মক্কা মুকাররমার এক সরাইখানায় চলে এলাম। এসে দেখি এখানে লােকেরা তীর ছুঁড়ে নিশানা সই করার খেলা খেলছে এবং তার সাথে দফ ও মেযমার বাদ্য বাজছে। এক বাড়িতে বিয়ের উল্লাসও চলছিলাে। আমি তা শ্রবণ করার মানে সেখানে বসে পড়লাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেখানেই ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। আমি গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে গেলাম। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সূর্যের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। বাস, ঘুম থেকে উঠেই সােজা সেখান থেকে চলে এলাম। এরকম ঘটনা আমার জীবদ্দশায় নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে আরেকবার ঘটেছিলাে। এরপর আমি আর কখনও এধরনের আকাংখা করিনি।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী]
© | সেনানী এপ্স |