তৌরিত কিতাব থেকে প্রাপ্ত সুসংবাদ
তাওরাত কিতাবে আছে, আল্লাহ তায়ালা তৌরিতের মধ্যে হযরত মুসা (عليه السلام) এর সঙ্গে ফামেস সফরে এরূপ সম্বােধন করেছিলেন—তোমাদের রব বনী ইসরাইলের জন্য, তোমাদের ভাইদের ভিতর থেকে (অন্য এক বর্ণনায় আছে তাদের ভাইদের মধ্যে থেকে) একজন নবী আবির্ভূত করবেন এবং যে নবীর মুখে আল্লাহতায়ালা তাঁর কালাম উপস্থাপন করবেন আর তিনি তাদের জন্য ঐ সমস্ত ব্যাপারে হুকুম করবে, যে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা হুকুম করেছেন। তারপর যারা তাঁর নির্দেশ প্রতিপালিত করবেনা—আল্লাহ বলেন যে, আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবাে।
তৌরিত কিতাব এহেন ভাষ্য সাইয়্যেদে আলম মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতেরই দলীল কেননা হজরত মুসা (عليه السلام) ও তার কওম বনী ইসরাইল হযরত ইসহাক (عليه السلام) এর বংশধর। আর নবী করীম (ﷺ) হলেন ইসহাক (عليه السلام) এর ভাই হজরত ইসমাইল (عليه السلام) এর বংশধর। আর যে নবীর আগমনের অঙ্গীকার করা হয়েছে, তিনি যদি বনী ইসরাইলদের মধ্যে থেকে হন, তবে তাে তাদের মধ্যে থেকে হলাে তাদের ভাইদের মধ্য থেকে হলো না। আর তারা যদি বলে যে, বনী ইসরাইল ও বনি ইসমাইল ভ্রাতৃ সম্পর্ক—এ দুয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তাহলে তার উত্তরে আমরা বলবে, এভাবে তোমরা তৌরিত কিতাবের প্রতি মিথ্যারােপ করছে। কেননা তৌরিতে উল্লেখ রয়েছে, বনী ইসরাইলের মধ্যে হজরত মুসা (عليه السلام) এর মতে কোন নবী আসে নি। তৌরিতের অন্য এক অনুবাদে রয়েছে, হজরত মুসা (عليه السلام) এর মতাে আর কোনাে নবী বনী ইসরাইলের মধ্যে আগমনই করবেন না। সুতরাং কোনাে কোনাে ইহুদী যে বলে, উপরােক্ত প্রতিশ্রুত নবী হলেন হজরত ইউশা ইবন নূন। তাদের বক্তব্য এই তরজমা দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। কেননা হজরত ঈউশা(عليه السلام) হজরত মুসা (عليه السلام) এর সমকক্ষ ছিলেন না। তার মতােও ছিলেন না। বরং তিনি হজরত মুসা (عليه السلام) এর জীবদ্দশায় তার খাদেম হিসাবে ছিলেন। আর হজরত মুসা (عليه السلام) এর ওফাতের পর তার দাওয়াতী কার্যে সাহায্যকারী ও শক্তি সংযোজনকারী ছিলেন।
সুতরাং সাব্যস্ত হলাে, উক্ত প্রতিশ্রুত নবী হচ্ছেন সাইয়্যেদে আলম হজরত মােহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)। তিনিই প্রকৃতপ্রস্তাবে হজরত মুসা (عليه السلام) এর সমকক্ষ ও আনুরূপ্যের দাবীদার। বরং তারও উর্ধে। হুজুর পাক (ﷺ) দাওয়াতে হক প্রতিষ্ঠা, মোজেজা চ্যালেঞ্জ, আহকাম প্রতিষ্ঠা করা এবং পূর্ববর্তী শরীয়তের বিধান রহিত করণ ইত্যাদির দিক দিয়ে হজরত মুসা (عليه السلام) এরই মতাে। সুতরাং বিভিন্ন পরিচ্ছন্ন প্রমাণাদির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সেই প্রতিশ্রুত নবী হচ্ছেন আখেরী যমানার নবী সাইয়্যেদে আলম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)। এর মধ্যে কোনােরূপ দ্বিধা দ্বন্দ ও সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
তৌরিত কিতাব সেই ভাষ্য "আমি আমার কালাম তাঁর মুখে উপস্থাপন করবে" কথাটির তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য এই-আমি আমার কালামের ওহী তার কাছে প্রেরণ করবা। আর তিনি সেই ওহীর কালামের মাধ্যমে মানবগােষ্ঠিকে সম্বােধন করবেন যা তিনি স্বয়ং শ্রবণ করে থাকবেন। তার কাছে আমি কোনাে লিখিত পাণ্ডুলিপি অবতীর্ণ করবেন না। যেহেতু তিনি একজন উম্মী নবী।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |