হজরত সুলায়মান (عليه السلام) ও রসুলে আকরম (ﷺ)


হজরত সুলায়মান (عليه السلام) পাখির ভাষা জানতেন। জ্বীন ও বাতাস তাঁর বাধ্য ছিলো। আরেকটি মোজেজা ছিলো তার বাদশাহী। ওরকম বাদশাহী অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। এখন দেখা যাক, আমাদের নবী (ﷺ)কে এরূপ কোনো মোজেজা দেয়া হয়েছিলো কিনা। হাঁ, তাঁকেও এরকম, বরং এর চেয়েও বেশী বিস্ময়কর মোজেজা দেয়া হয়েছিলো। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) কে পাখির ভাষা শিক্ষা দেয়া সম্পর্কে কোরআন পাকে এরশাদ হয়েছে, ‘সুলায়মান বলেন, আমাকে পাখির ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।’ পাখিরা যা বলতো তিনি তা বুঝতেন। আর আমাদের পয়গম্বর (عليه السلام) এর পবিত্র হাতের ভিতরে জড়পদার্থ পাথর বাকশীল হতো এবং তসবীহ পাঠ করতো। অথচ পাথর জড় পদার্থ। পাখির মতো প্রাণী নয়। পাখির কথা বলা বা তা বুঝার চেয়ে জড় পদার্থের কথা বলা এবং বুঝা অধিকতর বিস্ময়কর। আবার দেখা যায়, বিষমিশ্রিত জবেহকৃত বকরী তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। হরিণী কথা বলেছে। বর্ণিত আছে, একদা একটি পাখি রসুলেপাক (ﷺ) এর পবিত্র মস্তকের উপরে এসে চক্কর দিতে লাগলো এবং কথা বলতে লাগলো। রসুলেপাক (ﷺ) তখন উপস্থিত লোকজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কে এই পাখিটির বাচ্চা ধরে এনেছো! যেই এনে থাকো, বাচ্চাটি তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। এভাবে তিনি দুম্বার সাথেও কথা বলেছেন।

 

এখন আসা যাক বাতাসের উপর সুলায়মান (عليه السلام) এর অধিকার প্রসঙ্গে। এমর্মে আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করেন ‘হাওয়া সুলায়মান (عليه السلام) এর সিংহাসনকে তার ইচ্ছা মোতাবেক বয়ে নিয়ে যেতো।’ রসুলেপাক (ﷺ) কে এমন কিছু কি দেয়া হয়েছিলো? হাঁ, তাঁকে বুরাক প্রদান করা হয়েছিলো, যা বাতাসের চেয়েও দ্রুততর। এমনকি বিদ্যুতের চেয়েও দ্রুতগামী। আর সে বুরাক তাঁকে এক মুহূর্তে ফরশ থেকে আরশ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলো। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) এর জন্য বাতাসকে অনুগত করে দেয়া হয়েছিলো। যাতে সে তাঁকে যমীনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আর আমাদের নবী করীম (ﷺ) এর জন্য যমীনকে সামনে এনে দেয়া হয়েছিলো যাতে রসুলেপাক (ﷺ) স্বস্থানে থেকেই তা অবলোকন করতে পারেন। এ দু’জনের ব্যবধান এরকম— যেমন দুজন মানুষ, একজন দৌড়ে যমীনের এদিক সেদিক যাতায়াত করে। আর একজনের দিকে যমীন নিজেই এগিয়ে আসে।

 

শয়তান সুলায়মান (عليه السلام) এর অনুগত ছিলো। হাদীছ শরীফে এসেছে, একবার শয়তান রসুলেপাক (ﷺ) এর নামাজের সামনে এসে গেলে তিনি শয়তানটিকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে ফেলতে চাইলেন, যাতেমহল্লার ছেলেপেলেরা তাকে নিয়ে খেলা করতে পারে। জ্বীনেরা হজরত সুলায়মান (عليه السلام) এর অনুগত ছিলো। আর আমাদের নবী (ﷺ) এর উপর তো জ্বীনেরা ইমানই এনেছিলো। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) জ্বীনদের নিকট থেকে খেদমত নিয়েছেন। আর আমাদের নবী (ﷺ) জ্বীনদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) এর বাহিনীতে মানুষ, জ্বীন ও পাখি ছিলো। আর রসুলে আকরম (ﷺ) এর বাহিনীতে ছিলো ফেরেশতাবৃন্দ। এমনকি হজরত জিব্রাইল ও মিকাইল। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) এর বাহিনীতে পাখিদের অংশগ্রহণের চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার ছিলো নবী করীম (ﷺ) এর ছুর পর্বতের সেই কবুতরের ঘটনা। রসুলে আকরম (ﷺ) যখন হিজরতের সময় ছুর পর্বতের গুহায় অবস্থান নিয়েছিলেন, তখন কবুতর এসে গুহামুখে বাসা বানিয়ে


ডিম পেড়েছিলো। এভাবে সে রসুলেপাক (ﷺ) কে শত্র“ থেকে রক্ষা করেছিলো। সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যতো হয়ে থাকে রক্ষা করা। আর একাজটি পাখিই করেছে। হজরত সুলায়মান (عليه السلام) কে এমন বাদশাহী দেয়া হয়েছিলো, যা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। আমাদের নবী (ﷺ) কে দেয়া হয়েছিলো আরও বেশী, তিনি বাদশাহ্ অথবা বান্দা— এ দুটোর যে কোনোটি হতে পারেন। রসুলে আকরম (ﷺ) বন্দেগীকেই গ্রহণ করেছিলেন। আর বন্দেগী এমন এক বিশাল রাজত্ব, যা কখনও লুপ্ত হয় না। আর রসুলে আকরম (ﷺ) ছিলেন এই সাম্রাজ্যেরঅতুলনীয় এবং অক্ষয় সম্রাট। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 




© | সেনানী এপ্স |

Top