ⓞ➤【শামায়েলে তিরমিযি】
৪৫ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ক্ৰন্দন
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাত আদায়কালে ক্ৰন্দন করতেন
২৪৭
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارِكِ ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ ، عَنْ ثَابِتٍ ، عَنْ مُطَرِّفٍ وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : " أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي , وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ مِنَ الْبُكَاءِ " .
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তাঁর বক্ষদেশ হতে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেমন চুলার উপর রাখা পাত্র হতে টগবগ শব্দ শোনা যায়।[১]
[১] সুনানে নাসাঈ, হা/১২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৯০০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৭১; শু’আবুল ঈমান, হা/১৮৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআন শ্রবণ করেও ক্ৰন্দন করতেন
২৪৮
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنِ الأَعْمَشِ ، عَنِ إِبْرَاهِيمَ ، عَنْ عُبَيْدَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اقْرَأْ عَلَيَّ " فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أنزل ، قَالَ : " إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي " ، فَقَرَأْتُ سُورَةَ النِّسَاءِ ، حَتَّى بَلَغْتُ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاءِ شَهِيدًا سورة النساء آية 41 ، قَالَ : فَرَأَيْتُ عَيْنَيْ رَسُولِ اللَّهِ تَهْمِلانِ .
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে পাঠ করে শুনাব, যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে! তিনি বললেন, আমি তা অপরের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি। ফলে আমি সূরা নিসা পাঠ করতে শুরু করলাম। অতঃপর যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছলাম-
وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاءِ شَهِيدًا
অর্থাৎ আপনাকে ডাকব তাদের উপর সাক্ষীরূপে।[১]
তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।[2]
[১] সূরা নিসা- ৪১।
[2] সহীহ বুখারী, হা/৪৬৮২ সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৩; আবু দাউদ, হা/৩৬৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০৬; বায়হাকী, হা/২০৪৮৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৫৫৬০; শু’আবুল ঈমান, হা/১৮৯০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিজদাতে গেলেও ক্ৰন্দন করতেন
২৪৯
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ، قَالَ : انْكسفَتِ الشَّمْسُ يَوْمًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي ، حَتَّى لَمْ يَكَدْ يَرْكَعُ ثُمَّ رَكَعَ ، فَلَمْ يَكَدْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ، فَلَمْ يَكَدْ أَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ، فَلَمْ يَكَدْ أَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ ، فَجَعَلَ يَنْفُخُ وَيَبْكِي ، وَيَقُولُ : " رَبِّ أَلَمْ تَعِدْنِي أَنْ لا تُعَذِّبَهُمْ وَأَنَا فِيهِمْ ؟ رَبِّ أَلَمْ تَعِدْنِي أَنْ لا تُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ ؟ وَنَحْنُ نَسْتَغْفِرُكَ " . فَلَمَّا صَلَّى رَكْعَتَيْنِ انْجَلَتِ الشَّمْسُ ، فَقَامَ فَحَمِدَ اللَّهَ تَعَالَى , وَأَثْنَى عَلَيْهِ ، ثُمَّ قَالَ : " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلا لِحَيَاتِهِ ، فَإِذَا انْكَسَفَا , فَافْزَعُوا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ تَعَالَى " .
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন সালাতে দণ্ডায়মান হন। এতে তিনি এত বিলম্ব করলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর রুকূতে যাবেন না। যখন রুকূতে গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আর মাথা তুলবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর তিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠাবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর যখন সিজদায় গেলেন। তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠবেন না। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন আর ক্ৰন্দন করছিলেন এবং দুআ পাঠ করছিলেন যে, হে আমার রব! তুমি কি এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমার উপস্থিতিতে আমার উম্মতকে শাস্তি দেবে না? আমরা তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ যখন ২ রাক’আত সালাত শেষ করলেন, তখন সূর্যও বের হয়ে আসল। অতঃপর তিনি কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর হামদ ও ছানার পর বললেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। যখন চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকর-এ লিপ্ত হও।[১]
[১] সহীহ মুসলিম, হা/২১৪০; আবু দাউদ, হা/১১৯৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৪৮২ সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৩৯২ মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২২৯; বায়হাকী, হা/১৩৭৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কন্যার মৃত্যুশোকে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন
২৫০
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنَةً لَهُ تَقْضِي فَاحْتَضَنَهَا فَوَضَعَهَا بَيْنَ يَدَيْهِ , فَمَاتَتْ وَهِيَ بَيْنَ يَدَيْهِ وَصَاحَتْ أُمُّ أَيْمَنَ , فَقَالَ يَعْنِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَتَبْكِينَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ؟ " فَقَالَتْ : أَلَسْتُ أَرَاكَ تَبْكِي ؟ قَالَ : " إِنِّي لَسْتُ أَبْكِي ، إِنَّمَا هِيَ رَحْمَةٌ ، إِنَّ الْمُؤْمِنَ بِكُلِّ خَيْرٍ عَلَى كُلِّ حَالٍ ، إِنَّ نَفْسَهُ تُنْزَعُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ ، وَهُوَ يَحْمَدُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ " .
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর। এক কন্যা মূমুর্ষ অবস্থায় ছিলেন। তিনি তাকে কোলে তুলে সামনে রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তখন উম্মে আয়মান (رضي الله عنه) চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, আল্লাহর রাসূলের সামনেই তুমি ক্ৰন্দন করছ? উম্মে আয়মান বললেন, আমি আপনাকেও কি অশ্রুসিক্ত দেখতে পাচ্ছি না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি যে কান্না করছি তা নিষেধ নয়, তা আল্লাহর রহমত। অতঃপর তিনি বললেন, একজন মুমিন সর্বাবস্থায় মঙ্গলজনক অবস্থায় থাকে। এমনকি তাঁর জীবন নিয়ে যাওয়ার সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করে।[১]
[১] মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৩২।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
📌পরিচ্ছদঃ
উসমান ইবনে মাযউন (رضي الله عنه) এর মৃত্যুতেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেঁদেছিলেন
২৫১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ عَائِشَةَ ، " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَبَّلَ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ وَهُوَ يَبْكِي " أَوْ قَالَ : " عَيْنَاهُ تُهْرَاقَانِ " .
আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ
উসমান ইবনে মাযউন (رضي الله عنه) মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কপালে চুম্বন দিলেন। তিনি কাদছিলেন অথবা (রাবী) বলেন, তখন তাঁর চোখ হতে অশ্রু পড়ছিল।[১]
[১] মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৩৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৭০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কন্যাকে কবরের শোয়োনোর সময়ও কেঁদেছিলেন
২৫২
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ وَهُوَ ابْنُ سُلَيْمَانَ ، عَنْ هِلالِ بْنِ عَلِيٍّ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : شَهِدْنَا ابْنَةً لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَرَسُولُ اللَّهِ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ , فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدمَعَانِ ، فَقَالَ : " أَفِيكُمْ رَجُلٌ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ ؟ " ، قَالَ أَبُو طَلْحَةَ : أَنَا ، قَالَ : " أنزل " فَنَزَلَ فِي قَبْرِهَا .
আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হতে অশ্রু বেরোচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা (رضي الله عنه) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি কবরে অবতরণ করো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশে আবু তালহা (رضي الله عنه) কবরে অবতরণ করলেন।[১]
[১] সহীহ বুখারী, হা/১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৬৮৫৩; বায়হাকী, হা/৬৮৩৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৫১৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬২২৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস