হেকায়েত
এক রাত্রিতে মদীনা তায়্যিবায় একটি গুজব রটে গেলাে এবং তাতে সকলেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাে। গুজবটি হলো এই যে, মদীনা শরীফে সম্ভবতঃ কোনাে চোর বা দুশমন ঢুকে পড়েছে। খবর শুনে নবী করীম (ﷺ) সকলের আগে বেরিয়ে পড়লেন। হাতে তরবারী উঠিয়ে নিয়ে হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) এর অশ্বের উপর আরােহন করলেন। তাঁর অশ্বটি খুব তেজস্বী এবং দ্রুতগামী ছিলাে। ঘােড়ায় সওয়ার হয়ে যেদিক থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলাে, হুজুর পাক (ﷺ) সেদিকে চলে গেলেন। হুজুর (ﷺ) উক্তস্থান পরিদর্শন করে যখন প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন রাস্তায় ঐ লােকদের সঙ্গে সাক্ষাত হলাে, যারা তাঁর পরে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে দেখে বললেন, চলাে, সকলেই ফিরে চলো। এখানে কিছুই ঘটেনি। হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) এর ঘােড়াটি প্রথমে খুব ধীরগতি সম্পন্ন ছিলাে। কিন্তু যখন হুজুর পাক (ﷺ) তার উপর আরােহন করলেন, তখন ঘােড়াটি এত দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে গেলাে যে কারও ঘােড়াই তার সঙ্গে তাল রেখে দৌড়াতে পারছিলাে না। এটি হুজুর পাক (ﷺ) একটি অন্যতম মাজেজা ছিলাে।
দৈহিক শক্তি ও পেশীবলের দিক দিয়ে হুজুর পাক (ﷺ) এর সুদৃঢ় ছিলেন যে, বিশ্বখ্যাত কোনাে কুস্তিগীরও তাঁর সামনে টিকতে পারতাে না। মােহাম্মদ ইবন ইসহাক (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। মক্কা নগরীতে রুকানা নামক একজন পালােয়ান ছিলাে। সে কুস্তিতে বিশেষ পারদর্শী এবং শারীরিক শক্তিতে মক্কা নগরীতে অপ্রতিদ্বন্দী এক ব্যক্তিত্ব ছিলাে। দূরদূরান্ত থেকে বীর পুরুষেরা তার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আসতে। কিন্তু অবলীলাক্রমে সে তাদেরকে ধরাশায়ী করে দিতে। একদিন ঘটনাক্রমে সে হুজুর পাক (ﷺ) এর সামনে পড়ে গেলাে। হুজুর (ﷺ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে রুকানা, তুমি আল্লাহকে কেনাে ভয় করছাে না এবং আমার দাওয়াতকে কেন কবুল করছে না? উত্তরে রুকানা বললাে, হে মুহাম্মদ (ﷺ) আপনার দাবীর সত্যতার স্বপক্ষে কোনাে প্রমাণ পেশ করুন। হুজুর পাক (ﷺ) বললেন, কুস্তিতে যদি আমি তোমাকে পরাজিত করতে পারে তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে? সে বললো, হাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, তাহলে প্রস্তুত হও। কথাশুনে রুকানা পালােয়ান কুস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে। হুজুর (ﷺ) কোনোরূপ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন না। তিনি তাঁর সাধারণ পােশাক-চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। প্রথম আক্রমণেই হুজুর (ﷺ) রুকানাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানার বিস্ময়ের অবধি রইলো না। হুজুর (ﷺ) তাকে এমন ভাবে ধরলেন যে, নড়াচড়া করার উপায় নেই। ছেড়ে দেয়ার জন্য আবেদন করলে হুজুর (ﷺ) তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর সে দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বার কুস্তি করলাে। কিন্তু প্রতিবারেই তাকে পরাজয়ের গ্লানি ভােগ করতে হলাে। প্রতিবারেই হুজুর (ﷺ) তাকে ধরাশায়ী করে দিলেন। এতে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে রুকানা বললে, আপনার কি আজব শান! এতে শক্তির অধিকারী আপনি? এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় নি যে, রুকানা শেষ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেছেন কিনা? ওয়াল্লাহু আ'লামু।
উক্ত কুস্তিগীর রুকানা ব্যতীত আরও অন্যান্য কুস্তিগীররাও হুজুর আকরম (ﷺ) এর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাে। তিনি সকলকেই পরাজিত করেছিলেন। আবুল আসাদ জাহমী নামক এক শক্তিশালী লােক ছিলে আরব দেশে। তার শারীরিক শক্তি এতাে বেশি ছিল যে, সে গরুর চামড়ার উপর উঠে দাঁড়িয়ে যেতাে। লােকেরা তার চতুর্দিক দিয়ে তাদের গায়ের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চামড়া ধরে টানাটানি করে। টানের চোটে চামড়া ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতাে কিন্তু তার পায়ের নীচ থেকে চামড়া সরিয়ে নিতে পারতাে না। সে স্বস্থান থেকে একটুও বিচ্যুত হতােনা। একদিন সে হুজুর পাক (ﷺ) কে বললাে, আপনি যদি আমাকে যমীনের উপর ফেলে দিতে পারেন, তাহলে আমি আপনার উপর ঈমান আনবে। হুজুর পাক (ﷺ) তাকে ধরেই যমীনের উপর ফেলে দিলেন। কিন্তু হতভাগা এরপর ঈমান আনলো না। এটি একটি লম্বা চওড়া ঘটনা, যথাস্থানে এর আলােচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী]
© | সেনানী এপ্স |