নবীকরীম (ﷺ) এর বিশেষ মর্যাদা


আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে রসূল সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর যে সমস্ত মর্যাদা ও কারামাতের কথা কুরআন মজীদে বর্ণনা করা হয়েছে, তম্মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও মহান ঘটনা হলাে মেরাজের ঘটনা। এ সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত সেই মর্যাদার ঘোষণা প্রদান করেছে। যেমন সুরা বনী ইসরাইলে سبحان الذى اسرى‘সুবহানাল্লাযি আসরা' আয়াতের আসরা শব্দ, এবং সূরা ওয়ান্নজমে دانى فتدلى  ‘দানা ফাতাদাল্লা' আয়াত দ্বারা হুজুর পাক (ﷺ) এর সুমহান মর্যাদার ঘােষণা দেয়া হয়েছে। তদুপরি আল্লাহ তায়ালার বিস্ময়কর ও অনন্য সূক্ষ্ম ও আশ্চর্যজনক সৃষ্টির দর্শন এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।


হুজুর পাক (ﷺ) এর জন্য আরেকটি বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তার দুশমন মক্কা ও মদীনার মুশরেকদের থেকে হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন। হুজুরপাক (ﷺ) যেমন স্বীয় সাহাবাগণকে হেফাযত করা ও দেখাশােনার কাজের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন, তেমনি ভাবে তিনি দুশমনদের ক্ষতি ও বিশৃঙ্খল থেকে নিজের জন্য প্রতিরােধের ব্যবস্থা করতেন। এ ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ যদিও আল্লাহ তায়ালার হুকুম মােতাবেকই হয়েছিলাে এবং এর মধ্যে যদিও পরিপূর্ণ হেকমত বিদ্যমান ছিলাে, তা সত্ত্বেও উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পর হুজুর পাক (ﷺ) দুশমনের ক্ষতি থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছেন।


তখনকার পরিবেশ সম্পর্কে খবর প্রদান করছে এই আয়াতে কারীমা, কাফেররা যখন আপনার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করেছিল আপনাকে বন্দী করার জন্য। কিংবা হত্যা করে ফেলবে অথবা আপনাকে দেশান্তরিত করে ফেলবে। এ অবস্থা হিজরতের পূর্বে ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল। হুজুর পাক (ﷺ) এর উপর ভিত্তি করেই হিজরতের চিন্তাভাবনা করেছিলেন। এ ঘটনা সুপ্রসিদ্ধ। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা বলেন, এরা যদি মোহাম্মদ (ﷺ) কে সাহায্য না করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য করবেন। মেরাজের ঘটনার আলোকে দেখা যায় যে, নবী করীম (ﷺ) কে কাফের মুশরেকদের পক্ষ থেকে যে দুঃখ কষ্ট দেয়া হতাে, মেরাজের পর আল্লাহতায়ালা তাদেরকে পর্যুদস্ত করে দিলেন এবং হুজুর পাক (ﷺ) এর ব্যাপারে তারা যেসব মতানৈক্য করে সবকিছুর অপনোদন করেছিলেন। কাফেররা যখন তার মুখােমুখি দাঁড়াবার প্রয়াস পেয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তখন কাফেরদের চক্ষু অন্ধ করে দিয়েছেন। সূর গুহায় তিনি অবস্থান করছেন এ সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা সত্বেও কাফেররা তাকে খুঁজে বের করতে কুণ্ঠিত হন। আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে আলস্য ঢেলে দিলেন, তাদের মনোযোগ ফিরিয়ে দিলেন অন্যদিকে।


আল্লাহ তায়ালার কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন প্রকাশিত হওয়া, হুজুর পাক (ﷺ) এর উপর আল্লাহতায়ালার দেয়া প্রশান্তি প্রবাহ অবর্তীণ হওয়া, আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালার সঙ্গতা মুশাহাদা করাএছাড়াও অন্যান্য মহানতম মোজেজা ও নিদর্শনের ঘটনা ঘটেছে তার নবুওয়াতী জিন্দেগীতে যার বর্ণনা যথাস্থানে করা হবে। হক তায়ালার পক্ষ থেকে তার হাবীব (ﷺ) কে হেফাযত করা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার এরশাদ এরকম, যখন তার সাথীকে তিনি বললেন, চিন্তা করােনা নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঙ্গে আছেন।


এ ঘটনার সাথে হজরত মূসা (عليه السلام) এর ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে। যখন তিনি বনী ইসরাইলদেরকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। ফেরাউন ও তার বাহিনী তাদেরকে পিছন থেকে তাড়া করতে লাগলাে। তখন বনী ইসরাঈলের লোকেরা ভয় করতে লাগলো ফেরাউনের বাহিনী তাদেরকে পাকড়াও করে ফেলে কি না। তখন হজরত মূসা (عليه السلام) বলেছিলেন, ভয় করো না। নিশ্চয় আমার সঙ্গে আমার প্রভু প্রতিপালক আছেন।


তবে ওলামায়ে কেরাম বলেন, হুজুর আকরম (ﷺ) এর প্রভু প্রতিপালকের দর্শন এবং হজরত মুসা (عليه السلام) এর দর্শনের মধ্যে বহু তারতম্য হয়েছে । হুজুর আকরাম (ﷺ) এর প্রথম দৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার উপর পড়েছিলাে দ্বিতীয় দৃষ্টি পড়েছিলাে নিজের উপর। সে সময় তিনি বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে আছেন। আর হজরত মুসা (عليه السلام) এর প্রথম দৃষ্টি পড়েছিলাে নিজেব উপর। তারপর দ্বিতীয় দৃষ্টি পড়েছিলাম আল্লাহ তায়ালার উপর। তখন তিনি বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে আছেন আমার রব।এ উভয় প্রকার দৃষ্টি ভঙ্গিই দর্শন ও নৈকট্যের ব্যবস্থা জ্ঞাপক। তবে প্রথম প্রকারের অধিকতর পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং অধিকতর নৈকট্যশশাভিত। যেমন কেউ যদি বলেন, আমি কিছুই দেখিনি কিন্তু তার পূর্বে আল্লাহকে দেখেছি। আর যদি এরকম বলে, আমি কিছুই দেখিনি, কিন্তু তার পর আল্লাহকে দেখেছি। এ দুটি কথার মধ্যে প্রথমটিতে রয়েছে জযবার তরিকা আর দ্বিতীয়টিতে রয়েছে সুলুকের তরীকা।


আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাতটি প্রশংসাবাণী এবং একটি বড় কুরআন দান করেছি। সাবয়ে মাছানী এর অর্থ ঐ সাতটি লম্বা সূরা যা কুরআনে কারীমের প্রথমে সাজানাে হয়েছে। আর সে শুলি হচ্ছে সূরা বাকারা থেকে সূরা আনফাল এর অথবা সুরা তৌবা এর শেষ পর্যন্ত। এখানে অথবা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আনফাল ও সূরা তৌবা মূলত, এক সূরার হুকুম রাখে। একারণে এ দু'সূরার মধ্যে بسم الله الرحمن الرحيم 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' এনে দুই সূরাকে বিছিন্ন করা হয়নি।


কুরআনুল করীমের সাতটি আয়াত কে 'সাবয়ে মাসানি' বলা হয় যার অপর নাম হচ্ছে উম্মুল কুরআন বা ফাতিহা। এ ছাড়া বাকী সমগ্র কুরআনকে কুরআনে আযীম বলা হয়। এই সূরা নামাজের প্রতি রাকাতে তেলাওয়াত করতে হয় অথবা তা একাধিকবার নাযিল হয়েছে বিধায় এ উম্মুল কুরআনের নামকরণ হয়েছে সাবৃয়ে মাছানী হিসাবে। আবার কেউ কেউ এরকম বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ সূরাকে ছজুর আকরম (ﷺ) এর জন্য বিশেষিত করেছেন এবং তাঁর জন্য একে যখীরা বা সঞ্চিত সম্পদ বানিয়ে দিয়েছেন। তাকে ছাড়া অন্য কোন নবীকে এরকম উচ্চমানের প্রার্থনা বা প্রশংসাবাণী দান করেননি। কুরআনের নাম মাছানী রাখার এক যুক্তি এই হতে পারে যে, এ কুরআনে হাকিমে ঘটনাসমূহের বর্ণনা বারংবার পেশ করা হয়েছে। অথবা এ-ও হতে পারে যে, এতে হকতায়ালা শানুহর হামদ ও ছানা প্রকাশ করা হয়েছে। অথবা এ কারণও হওয়া ব যে, এসব হামদ ও ছানা যা করা হয়েছে, সবই বালাগাত ও এজাযের সাথে করা হয়েছে।


আল্লাহ তায়ালা হুজুর আকরম (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এরশাদ ফরমান, আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যই সুসংবাদ প্রদানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রেরণ করেছি। আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ ফরমান, আপনি বলুন, হে মানব জাতি। আমি তােমাদের সকলের জন্যই আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসূল। আল্লাহতায়ালা এরশাদ ফরমান, যে, কোনাে রসূলকে প্রেরণ করেছি, তার আপন সম্প্রদায়ের ভাষার মাধ্যমেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের জন্য তিনি স্পষ্ট বর্ণনা করতে পারেন। শেষােক্ত আয়াতখানা দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ ভাষাগত হিসাবে নবী রসূল প্রেরণ করেছেন। কিন্তু সাইয়্যেদে আলম মোহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) কোনাে ভাষাগত বা গােত্রগত নবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সমগ্র মানব সাইয়্যেদে আলম মাঙালাম সমগ্র তথা সমস্ত মাখলুকাতের জন্য নবী। প্রথমোক্ত দুখানা আয়াতের মাধ্যমে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। এমর্মে হুজুর পাক (ﷺ) নিজে এরশাদ ফরমান, আমি কৃষ্ণাঙ্গ স্বেতাঙ্গ অর্থাৎ আরব আজম সকলের জন্যই প্রেরিত হয়েছি। আসওয়াদ এর মর্মার্থ হচ্ছে আরব অঞ্চল। কেননা এখানকার মানুষের গায়ের বর্ণ সাধারণত বাদামি বা কালো বর্ণের হয়ে থাকে। আর আহসাব। এর মর্মার্থ হচ্ছে আজম বা অনারব। কেননা, এখানকার মানুষের গায়ের বর্ণ সাধারণতঃ লাল বা সাদা হয়ে থাকে।


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান, নবী (ﷺ) মুমিনগণের নিকট তাদের জানের চেয়ে প্রিয়, আর তার স্ত্রীগণ মুমিনগণের মা। – আয়াতখানার মর্মকথা হচ্ছে, নবী পাক (ﷺ) এর হুকুম কার্যকর ও জারী করা এরকম যেমন গােলামের উপর তার মনীবের হুকুম কার্যকর ও জারী করা হয়। কেউ কেউ বলেন যে, আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তির জন্য তার ব্যক্তিসত্তা গত অভিমত অপেক্ষা নবী করীম (ﷺ) এর হুকুম অনুসরণ করা উত্তম হবে। হুজুর পাক (ﷺ) কে কেমন মহব্বত ও অনুসরণ করতে হবে তার বর্ণনা ওজুব এর অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে প্রদান করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রীগণ মুসলমানদের মা। এ বিধানটি হুজুর পাক (ﷺ) এর দুনিয়া থেকে প্রস্থান হওয়ার পর তারা পূত পবিত্র স্ত্রীগণ কি বিবাহ করা যাবে না, তা তার বৈশিষ্ট্য ও কারামাত হিসাবে হুরমতে নিকাহ এর অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা মুসলমানগণের জন্য মা হওয়ার আরেকটি কারণ এই হতে পারে যে, হুজুরপাক (ﷺ) এর জাগতিক ওফাত অনুষ্টিত হলে কি হবে? তারা তাদের আখেরাতে তার স্ত্রী। এক অপ্রচলিত কোরআন অনুসারে উক্ত আয়াতের সংশ্লিষ্ট অংশ এরকম পাওয়া যায়, নবী করীম (ﷺ) মুমিনের জন্য পিতা।


হকতায়ালা শানুহু হুজুর আকরম (ﷺ) এর প্রশংসায় এরশাদ ফরমান, ‘আল্লাহতায়ালা আপনার উপর কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন আর আপনি যা জানেন না, তা আপনাকে শিখিয়েছেন আর আল্লাহ তায়ালার ফল বা অনুগ্রহ আপনার উপর অনেক।' ফযলে আযীম বা মহান অনুগ্রহ বলতে যে কি বুঝায়; তার হাকীকত পর্যন্ত পৌছা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। বলা হয়ে থাকে, একথা দ্বারা আল্লাহ দর্শনের শক্তি ও তা বরদাশত করার ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা, হযরত মুসা (عليه السلام) ঐরূপ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি আল্লাহ পাকের দেয়া এরকম ফল ও শরফ এর বর্ণনামূলক আয়াতে কুরআনী অনেক হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও ছানার পর কুরআন মজীদে যা আছে সবই হুজুর পাক (ﷺ) এর আউসাফ ও কামালাতের বর্ণনার প্রকাশস্থল।


হুজুর আকরাম (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম যে, মুশরিক সম্প্রদায় এবং দ্বীনের দুশমন যখনই হুজুর আকরাম (ﷺ) এর প্রতি কোনােরূপ নিন্দা দোষারােপ ও কটুক্তি বা কটাক্ষ করেছে, তখন হকতায়ালা শানুহু স্বয়ং তাঁর বন্ধুর রক্ষাকর্তা হয়ে তা প্রতিহত করেছেন। প্রেমিকের অবস্থা এরকমই হয়ে থাকে। যে কোনাে ব্যক্তির কাছ থেকে যখন তার প্রেমাস্পদের দুর্নাম শোনে, সেটাকে তখন প্রেমিক নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তার প্রতিউত্তর দিয়ে থাকে এবং তাকে উৎপাটিত করে ফেলার জন্য অগ্রসর হয়। এদিকে স্বীয় প্রেমাষ্পদ সাহায্যের দ্বার অবারিত করে দেয়। মূলতঃ তখন বিরুদ্ধবাদীকে যে প্রতিহত করা হয় তা থাকে অত্যন্ত যথাযথ, আর তাকে যে সাহায্য করা হয়, তা হয় অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং উচ্চমানের। এ প্রসঙ্গে দেখা যায়, কাফেররা যখন নবী করীম সম্পর্কে মন্তব্য করলাে এরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে, হে ঐ ব্যক্তি যার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে, নিশ্চয়ই তুমি পাগাল। (নাউজুবিল্লাহ)। 

আল্লাহ তায়ালা তাদের বক্তব্য সরাসরি উত্তর দিয়ে দিলেন, 'হে মাহবুব! আপনি আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহভাজন, পাগল নন। আর নিশ্চয়ই আপনার জন্য অফুরন্ত পুরস্কার রয়েছে। এবং নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।' যার মধ্যে এরকম চারিত্রিক সৌন্দর্য বিদ্যমান থাকে, তিনি কেমন করে উন্মাদ হতে পারেন?


একদা আস ইবন ওয়াযেল সাহমী দেখতে পেলাে, হুজুর পাক (ﷺ) মসজিদ কাবা থেকে বাইরে তশরীফ নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে দেখে সেও মসজিদের ভিতরের দিকে প্রবেশ করতে লাগলাে। বাবে বনী যাহামের নিকট হুজুর পাক (ﷺ) এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলাে এবং তখন সে তার সঙ্গে কিছু কথাবার্তা বললে। এই সময় কুরাইশ বংশের নিকৃষ্টতম লাইকগুলি মসজিদে হারামে উপবিষ্ট ছিলেন। আস যখন মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাে, তখন লােকগুলি তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি এতক্ষণ কার সাথে কথোপকথন করছিলে? আস বললে অবতার অর্থাৎ নির্বংশ লোকটির সাথে। ঐ সময় হজরত খাদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه) এর উদরে হুজুর পাক (ﷺ) এর একজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে ইন্তিকাল করেছেন। সে সময় হুজুর পাক (ﷺ) এর কোনাে আওলাদ জীবিত ছিলেন না। তাই তারা তাকে অবতার বলে অভিহিত করে। তখন আল্লাহ তায়ালা এর প্রতিউত্তর প্রদান করলেন এভাবে, প্রকৃত নির্বংশ আপনার নিন্দুকেরাই।


এক সময় কাফেররা রাসূল (ﷺ) কে বললাে, আপনি রাসূল নন। আল্লাহতায়ালা তার জবাব দিয়েছিলেন এভাবে, “হে সাইয়্যেদে আলম! হেকমত পূর্ণ কুরআনের কসম, নিশ্চয়ই আপনি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।' কাফেররা বললাে, একজন পাগল কবির কারণে আমরা কি আমাদের দেবতাগণ কে পরিত্যাগ করবে? আল্লাহ তায়ালা তাদের বক্তব্য খণ্ডন করে জবাব দিলেন, বরং সত্য এসে গেছে এবং রসূলগণ সত্য বলেছেন। ‘আল্লাহতায়ালা আরও বললেন, “আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি আর এটা তার জন্য সমীচীন নয়।'


কাফেররা যখন বললাে, ইচ্ছা করলে আমরাও এরকম বলতে পারি । এগুলি তার পূর্ববর্তী লোকদের বানানো কল্পকাহিনী। আল্লাহপাক তাদের একথার উত্তর এভাবে প্রদান করলেন, “এই কুরআনের মতাে একটি কিতাব রচনার উদ্দেশ্যে সমস্ত জ্বীন ও ইনসান যদি একত্রিত হয়, তবুও তারা এর মতাে একটি কিতাব আনতে পারবে না।' কাফেররা যখন বললাে, একি হলাে এ রসূলের (অর্থাৎ এ কেমন রাসূল) সে খানাও খায় আবার বাজারেও যাতায়াত করে। আল্লাহতায়ালা এর উত্তরে বললেন, আপনার পূর্বে আমি যাতে রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের অবশ্যই খানা খেতেন এবং বাজারে যেতেন।' মক্কার কাফেররা মানুষের মধ্য থেকে রাসূল আবির্ভূত হওয়া কি সুদূরপরাহত মনে করলে। আল্লাহ তায়ালা তাদের ভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে দিয়ে ঘােষণা করলেন, হে রাসূল আপনি বলে দিন। যমীনে যদি ফেরেশতারা বসবাস করে, তারা শান্তিতে জমিনে বিচরণ করে, তবুও আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাই প্রেরণ করতাম রসূল হিসাবে।


কথাটির সারমর্ম এই যে, স্বজাতীয়তার মধ্যে মহব্বত ও আন্তরিক মিল পয়দা হয়। আর জাতিগত প্রভেদ পাওয়া যায় মতের বৈষম্য অনান্তরিকতা। কাজে রাসূল প্রেরণের এটা হেকমত যে, ফেরেশতাগণের জন্য রাসূল হলে ফেরেশতাই হবে। আর মানুষের জন্য রাসূল প্রেরণ করা হলে মানুষকে রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করাই হবে যুক্তিসঙ্গত। আর এর ফলে প্রত্যেক নবীই আপন আপন জাতির লোকদের জন্য নিজ সত্তাকে রক্ষাকারী ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবেন। যেমন হজরত নূহ (عليه السلام) বলেছিলেন আমার মধ্যে কোনাে ভ্রষ্টতা নেই। হজরত হুদ (عليه السلام) বলেছিলেন, আমার মধ্যে কোনাে মূর্খতা নেই। কুরআন মজীদে এধরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। আল্লাহ পাক ভালো জানেন।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top