তৌরিত ও ইঞ্জীল ইত্যাদি কিতাব থেকে প্রাপ্ত সুসংবাদ


এতে কোনো রকম অস্পষ্টতা নেই যে, আসমানী কিতাবসমূহে হুজুর পাক (ﷺ) এর আহওয়াল শরীফের বর্ণনা রয়েছে বলে কুরআন মজীদে যে সাক্ষ্য রয়েছে, তার অধিক কোন দলীল পেশ করার সাধারণত কোন প্রয়োজন আর পড়ে না। তবে আল্লাহর দুশমন কাফেরদের অপবাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু দলিল প্রমাণ পেশ করা প্রয়ােজন। এতে মুসলমানের অন্তর প্রশান্ত হবে এবং বিশ্বাসের নূর সুদৃঢ় হবে। অই বদবখতেরা কিতাবের আমানত রক্ষা করার স্থলে খেয়ানত করতাে। তৌরীতের মধ্যে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা সত্ত্বেও যে নির্দেশনা ও নমুনা পাওয়া যায় তা এরকম, আল্লাহতায়ালা সাইনা পাহাড়ে তাজাল্লী নিক্ষেপ করলেন, সাগীর পাহাড়ে আবির্ভূত হলেন এবং ফারান পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করলেন।


সাইনা মানে ঐ পাহাড় যাকে তুরে সাইনা বা তুরে সিনীন বলা হয়। হক তায়ালা তার উপর তাজাল্লী নিক্ষেপ করলেন এবং হযরত মুসা (عليه السلام) এর সঙ্গে কথা বলেন এবং এ দ্বারা তাঁর নবুওয়াত প্রমাণিত হলে। সাগীর নামক স্থান থেকে তার উপর ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ণ হলাে। ফারান ইরানী ভাষার একটি নাম। আর মক্কা মুকাররমায় বনী হাশেমের ওই পাহাড়গুলোকে ফার্ন বলা হয় যার একটির উপর উঠে হুজুর পাক (ﷺ) নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আর এ পাহাড়ের উপরই সর্বপ্রথম আল্লাহতায়ালার ওহী নাযিল হয়েছিলাে। এখানে তিনটি পাহাড় রয়েছে। আবু কুরাইশ পাহাড়ের পাদদেশে মক্কা মুকাররমার লোকালয়। তার বরাবর রয়েছে কাফান পাহাড় যা বাতনে ওয়াদি পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এ পাহাড়ের পূর্ব দিকে এর সংলগ্ন অবস্থায় আছে শুআবে বনী হাশেম। আর এ শুয়াবের মধ্যেই হুজুর আকরাম (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।


ইবন কুতাইবা যিনি উম্মতের একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন, তিনি পূর্ববতী অনেক কিতাব পড়েছিলেন এবং তার অনুবাদ করেছিলেন। তিনি আলামুন্নবুওয়াত নামক কিতাবে বলেছেন, তৌরিত কিতাব উপরোক্ত বিবরণ সম্পর্কে কেউ সামান্য চিন্তা ভাবনা করলেই এর তাৎপর্য অনুধাবন করে। কেননা প্রকৃত অবস্থা এই যে, সময়ে হক তায়ালার তুরে সায়নাতে তাজ্জাল্লী ফরমানাের উদ্দেশ্য হচ্ছে হজরত মুসা (عليه السلام) এর উপর তৌরিত কিতাব নাযিল করা। আর জাবালে সাগীর থেকে যহুর হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর ইঞ্জিল কিতাব নাযিল করা। কেননা হযরত ঈসা (عليه السلام) আরশে খলিল এর জাবালে সাগীরে (যাকে নাসারা বলা হয়) বসবাস করছিলেন। আর এর উপর ভিত্তি করেই তাঁর অনুসারীগণকেই নাসারা বলা হয়। যখন একথা সাব্যস্ত হলাে যে, সাগীর পর্বত থেকে হক তায়ালার যোহর ফরমাননার অর্থ হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ণ হওয়া, তখন পুরান পর্বতমালায় হক তায়ালার আত্মপ্রকাশ হওয়ার অর্থ হবে হুজুর আকরম (ﷺ) এর উপর কুরআন মজীদ নাযিল হওয়া। এ ব্যাপারটি নিয়ে মুসলমান এবং আহলে কিতাবদের মধ্যে কোনােরূপ মতানৈক্য নেই যে, ফারহান মক্কার পবর্তমালার নাম। তারা যদি এরূপ দাবী করে যে, ফারান মক্কার পর্বতমালা ভিন্ন অন্য কোনাে পাহাড়ের নাম, তাহলে তা হবে সত্যের অপলাপ এরকম অবস্থায় আমরা তাদের কাছে প্রশ্ন রাখবাে, তাহলে বলাে দেখি অন্য একটি স্থান কোথায় অবস্থিত যেখানে হক তায়ালার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, তার নাম ফারহান। সেখানে কোন নবীর আবির্ভাব ঘটেছিলাে এবং হজরত ঈসা (عليه السلام) এর পর সে নবীর উপর কিতাব নাযিল হয়েছিলাে। আমাদেরকে ঐ দ্বীনটি দেখিয়ে দাও যা প্রকাশ ও উন্মুক্ত হওয়ার দিক দিয়ে ইসলামের মতাে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল। তোমাদের কি এটা জানা নেই যে, পূর্ব ও পশ্চিমের প্রতিটি প্রান্তে ইসলামের মতাে সমুজ্জ্বল, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন কোনাে দ্বীনের আত্মপ্রকাশ আর ঘটেনি।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 



© | সেনানী এপ্স |

Top