লজ্জাশীলতা


এ অনুচ্ছেদে হুজুর পাক (ﷺ) এর লজ্জাশীলতা সম্পর্কে আলােচনা করা হবে। হায়া শব্দের অর্থ লাজুকতা। ইহার মূল ধাতু حيات ‘হায়াত' অর্থাৎ জীবন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে حيا ‘হায়া' এর অর্থ বৃষ্টিও হতে পারে। যেহেতু বৃষ্টি প্রাণীকুলের জীবনীশক্তির কারণ। حيا ‘হায়া' বা লজ্জাশীলতা মানুষের অন্তরের জীবনীশক্তি অনুসারে হয়ে থাকে। যার হৃদয় যে পরিমাণ জাগ্রত তার হায়াও ঐ পরিমাণ অধিক ও শক্তিশালী। অভিধানে حيا  ‘হায়া’র অর্থ করা হয়েছে تغير 'তাগায়্যুর' (রুপান্তর) ও এনকেসারী (অক্ষমতা)। এটা এমন একটি গুণ যা মানুষের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক করে এবং বিভিন্ন প্রকার দোষের কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শরীয়তের পরিভাষায় হায় এমন এক সৌন্দর্যগুণের নাম, যা মানুষকে অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। হকদারের হক আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করে। হাওয়াকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে। এ অর্থে হাদীস শরীফে এসেছে, লজ্জাশীলতা ইমানের অঙ্গ। যদিও এ গুণটি মানুষের মৌলিক, স্বভাবগত এবং জন্মগত গুণ। তথাপিও এর ব্যবহার শরীয়তের এলেম ও তার বাস্তবায়নের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ এরকম বলেছেন যে, হায়া অর্জনীয় গুণ। শরীয়তপ্রবর্তক লজ্জাশীলতাকে ইমানের অংশ হিসাবে নির্দেশ করেছেন এবং তা অর্জনের জন্য মুসলমানকে বাধ্য করে দিয়েছেন। এটা যদি মৌলিক ও স্বভাবগত গুণই হতো, তবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বান্দাকে বাধ্য করতেন না। তবে যার মধ্যে এগুণটি স্বভাবগত ও মৌলিক হিসাবে বিদ্যমান থাকে, সে এই গুণ অর্জনে অধিকতর সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং ক্রমে ক্রমে তাকে মৌলিকতার বিধানে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে এ বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার রাখা উচিত যে, হায়া সংক্রান্ত আলোচনা অন্যান্য সমস্ত মৌলিক গুণাবলী আলোচনার ন্যায়, যেমন বদান্যতা, বীরত্ব ইত্যাদি। এগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য হুকুম করা হয়েছে। এবং এর বৈপরীত্য থেকে মানুষকে নিষেধ করা হয়েছে। এজাতীয় গুণাবলী সম্পর্কে পুরস্কারের ওয়াদা যেমন এসেছে, তেমনি তার খেলাফ করলে সে সম্পর্কে ধমকও দেয়া হয়েছে। এসবগুলি সবই ঈমানের শাখা।


হুজুর পাক (ﷺ) এর অর্জিত ও মৌলিক উভয় প্রকার হাওয়াই পূর্ণমাত্রায় ছিল। কেননা, তার পবিত্র কলব জীবনীশক্তি সবচেয়ে মজবুত ছিলে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় প্রবণতা থেকে কলবকে বাঁচিয়ে রাখার শক্তি ও তার সর্বাধিক মজবুত, পূর্ণ ও উত্তম ছিলেন। সহীহ বুখারী শরীফে হজরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) এর মাধ্যমে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্তঃপুরবাসিনী কুমারীদের প্রতি সর্বাধিক লজ্জাশীল ছিলেন। সারাহ নামক গ্রন্থে مخدرة  'মুখাদ্দিরাহ' শব্দের অর্থ করা হয়েছে পর্দানশীন রমণী। হাদীস শরীফে خدرها 'খাদরিহা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তার ব্যবহারিক অর্থ হবে প্রচলিত ভাব অনুসারে। কেননা কুমারী মেয়েরা সাধারণত পর্দাশীল হয়ে থাকে। কোন কোন ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, في خدرها 'ফীখাদরিহা' শব্দ দ্বারা বাক্য যে কয়েদ (সীমিত) করা হয়েছে এটা এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, পর্দানশীন নারীদের সাধারণত হায়া বা লজ্জাশীলতা বেশী থাকে। অথবা এই অর্থে যে, বাইরে অবাধে বিচরণকারী নারীদের তুলনায় পর্দানশীন এর লজ্জাশীলতা বেশী থাকে। হাদীছের প্রকাশ্য অর্থ এই যে, অপদানশীনদের প্রতি তাে হুজুর (ﷺ) এর লজ্জা সংকোচ ছিলােই। পর্দানশীন এর প্রতি তাঁর লজ্জা ছিল অত্যধিক। কোনাে মানুষ তার কাছে এলে তিনি তার সাথে দেখা করতে যেতেন। নতুবা নির্জনে অবস্থান করতেন।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী] 


© | সেনানী এপ্স |

Top