আংটিটা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুর হাতে দিয়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যাও, এর উপর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” নকশা করে নিয়ে আস”। সুখ-দুঃখের সাথী হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ভাবলেন, “আমাকে এই অজানা ঠিকানার সন্ধান দিলেন যিনি, এই প্রিয় বাণীর নির্মল সূধা পান করালেন যিনি, তাঁর নাম বাদ দেই কিভাবে”?
মন বলছে আবু বকর! কত খোদার ইবাদত হতো খোদ আল্লাহর ঘর বাইতুল্লাহর মাঝেও। বহু খোদার কনসেপ্ট ছিল সকলের নিশ্বাসে-বিশ্বাসে। সবাই জানতো এবং মানতো, মানব হাতে তৈরী ঐ মূর্তিগুলোই আমাদের খোদা। মহান আল্লাহর ‘লা-শরিকী’ অস্তিত্বের কথা কারও বিশ্বাসের ঘরে উঁকিও মারেনি কখনো। ঠিক এমনি এক সময়ে এক জনের কথায় ভিন্ন সূর। যিনি জানান দিলেন অদৃশ্য এক অস্তিত্বের। অদৃশ্য সেই সত্তাকে কেউ কখনো দেখেনি। বহু খোদার ভজনকারী কারও ভাবনায়ও তিনি কখনো আসেননি।
বললেন, মনুষ্য তৈরী এই মূর্তিগুলো আসলে খোদা নয়। আসল খোদা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। যারা আপদ-বিপদে, সুখে-দুঃখে এই মূর্তিুগুলোর ‘সাহারা’ নিত, তাদের কাছে এটা বড় সাংঘাতিক কথা! যাদের পুরো হৃদয় জুড়ে ঐ মূর্তিগুলোর রাজত্ব, আজ তাদের সামনেই বলা হলো ‘এরা খোদা নয়- বাতিল খোদা’। যাদের তোমরা প্রভূ মানছ এরা প্রভূ নয়। যাদের তোমরা ইবাদত করছ এরা ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয়। তাহলে প্রভূ কে? মহান রাব্বুল আলামিন। তিনি সবার খালেক, মালেক। সকলের রিজিকদাতা। সবার পালনকর্তা। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি। সুখ-দুঃখের নিয়ন্ত্রকও তিনি। সূতরাং ইবাদত পাওয়ার যোগ্যও তিনিই।
বলা হল, তিনি কী রকম? বললেন,
“তাঁকে দেখা যায় না। তবে তিনি আছেন”।
বলা হল,
‘যাকে দেখা যায়না এমন অদৃশ্য সত্বার কাছে যাব এবং পাব কিভাবে’?
বললেন,
“আমার মাধ্যমে”।
তাহলে আপনি কি তাঁকে চেনেন? বললেন,
“হ্যাঁ চিনি। আমি তাঁকে জানি। তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আছে ভালোবাসাও্ তিনি আমাকে ভালোবাসেন। আমিও তাঁকে ভালোবাসি। তাঁর পরিচয় দেয়ার জন্য তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন। তাঁর কথাগুলো শুনাবার জন্য তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যা বলছি তা আমার ঐ প্রিয়তমেরই কথা। সূতরাং আমাকে মেনে নাও, তাহলে ঐ প্রভূকে মানা হয়ে যাবে। আমাকে ভালোবাসলে ঐ প্রভূর ভালোবাসা পেয়ে যাবে। আমার রঙে রঙিন হয়ে যাও, তাহলে তিনি শুধু গ্রহণই করবেন না- সকলকে বন্ধুও বানিয়ে নেবেন”।
যার কথা শুনলে খোদার বন্ধু হওয়া যায় তিনি খোদার কত পেয়ারা হবেন! আল্লাহর সেই পেয়ারা বন্ধুকে বাদ দেই কিভাবে?
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ভাবতে ভাবতে নকশাকারীকে বললেন,
“বাবা, উপরের লাইনে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” নকশা করে তার সাথেই ঠিক নীচের লাইনে আমার প্রিয়তমের নাম “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” লিখে দিও। তিনিই তো আমাকে ঐ প্রভূর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
নকশা করা অবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু যখন আংটিটি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে এনে দিলেন, তখন তিনি দেখলেন সেখানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সাথে তাঁর নাম, এমনকি আবু বকরের নামও লেখা আছে। বললেন,
“আবু বকর, আমি তো আমার প্রিয় খোদার নাম লেখাতে বলেছিলাম তোমাকে। অথচ এখানে দেখছি আমার নামসহ তোমার নামও জুড়ে দিয়েছ তুমি”?
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বললেন,
“আপনি আপনার প্রিয় একজনের নাম লিখতে বলেছেন। আমিও আমার প্রিয় একজনের নাম লিখতে বলেছি। আপনি যেমন আপনার প্রিয়জনের নাম বাদ দিতে পারেননি। আমি তাঁর নাম বাদ দেই কী করে যাঁকে আমি প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। তবে আমার নাম লিখতে আমি বলিনি হুজুর”।
তাহলে তোমার নাম লিখতে বলল কে? অদৃশ্য জগত থেকে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে বললেন,
“হুজুর, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু নাম লিখতে বলেছেন আপনার প্রিয় প্রভূ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন। কেহই যখন আপন আপন প্রিয়জনকে বাদ দিতে রাজী নয়, সে কারণে আপনি বলেছেন আপনার প্রভূরকথা। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বলেছেন আপনার কথা । আর যে ব্যক্তি আপনার গোলামী করে আমি যেহেতু তাঁকে ভীষণ ভালোবাসি সে কারণে আমি বলেছি আপনার গোলাম হযরত হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুর কথা।
(মূল বক্তব্য ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী রা. এর তাফসিরে মাফাতিহুল গাইব তথা তাফসিরে কাবিরের সূরা ফাতিহার তাফসির থেকে নেয়া )
উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা