হজরত মুসা (عليه السلام) ও নবী করীম (ﷺ)


আল্লাহ্তায়ালা হজরত মুসা (عليه السلام) কে এই মোজেজা দান করেছিলেন যে, তাঁর হাতের লাঠি অজগর সাপ হয়ে যেতো। আমাদের পয়গম্বর (ﷺ) কেও আল্লাহ্তায়ালা এরকম মোজেজা দান করেছিলেন। তা হচ্ছে উ¯‘নে হান্নানা অর্থাৎ খেজুর গাছের ওই খণ্ড যাতে হেলান দিয়ে রসুলেপাক (ﷺ) মসজিদে খোতবা দিতেন। খোত্বার জায়গায় যখন মিম্বর প্র¯‘ত করা হলো, তখন তা সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। তখন সেই উ¯‘নে হান্নানা রসুলেপাক (ﷺ) এর বিচ্ছেদের কারণে আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ করেছিলো এবং স্পষ্ট ভাষায় কান্নাকাটি করেছিলো। এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে মোজেজা অধ্যায়ে। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন, একদিন আবু জাহেল ই”ছা করলো, রসুলেপাক (ﷺ) কে বড় একটি পাথর মেরে পিষ্ট করে দিবে (নাউযুবিল্লাহ্)। একথা মনে করতেই সে দেখতে পেলো রসুলেপাক (ﷺ) এর দুই কাঁধের উপর দু’টি অজগর সাপ বসে আছে। সে ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গেলো।


হজরত মুসা (ﷺ) এর মোজেজা ছিল ইয়াদে বায়দা (শুভ্র হস্ত)। তা থেকে বিকশিত ঔজ্জ্বল্যে মানুষের চোখ ঝলসে যেতো। আমাদের নবী সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) তো আপাদমস্তক নূর ছিলেন। আল্লাহ্তায়ালা পরিপূর্ণতার সাথে তাঁকে যে সৌন্দর্য দান করেছিলেন, তার কারণে মানুষেরা নূরের তাজাল্লীতে দৃষ্টি হারানোর বিপদ থেকে নিরাপদ থাকতো। তিনি যদি মানবতার পোশাক না পরতেন, তবে কারও পক্ষেই তাঁর দিকে দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হতো না। কেউই তাঁর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারতো না। তাঁর সেই নূরের বিকাশ হজরত আদম (عليه السلام) থেকে নিয়ে হজরত আব্দুল্লাহ্ পর্যন্ত পবিত্র পৃষ্ঠ ও পবিত্রগর্ভের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে আসছিলো। 


হজরত কাতাদা ইবনে নোমান (رضي الله عنه) একজন সাহাবী ছিলেন। ঝড় বৃষ্টির এক অন্ধকার রাত্রিতে তিনি রসুলেপাক (ﷺ) এর সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করেছিলেন। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁর হাতে একটি খেজুরের ডাল দিয়ে বললেন, যাও। এটা রাস্তার আশেপাশে দশহাত দশহাত পর্যন্ত আলো প্রদান করবে। বাড়ীতে পৌঁছে একটি কালো সাপ দেখতে পাবে তুমি। ওটাকে মেরে দূরে ফেলে দিও। আবু নাঈম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। 


সহীহ্ বোখারী ও অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ আছে, হজরত উব্বাদ ইবনে বিশর এবং উসায়েদ ইবনে হুযায়র (رضي الله عنه) একদা এক অন্ধকার রজনীতে রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমত থেকে বের হলেন। তাঁদের উভয়ের হাতে লাঠি ছিলো। রাস্তায় বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের একজনের লাঠি আলোকিত হয়ে গেলো, আর তাঁরা সে আলোতে রাস্তা চলতে লাগলেন। কিছু দূর আসার পর তাঁরা যখন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন, তখন উভয়ের লাঠিই আলোকিত হয়ে গেলো। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, রসুলেপাক (ﷺ) তো নিজেই নূর ছিলেন। সেখান থেকেই সঞ্চারিত হয়েছে এই নূর। রসুলেপাক (ﷺ) এর নাম সমূহের মধ্যে নূরও একটি নাম। 


ইমাম বোখারী (رحمة الله) তারিখ কিতাবে, ইমাম বায়হাকী ও আবু নাঈম হামযা আসলামী (رضي الله عنه) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন- হামযা আসলামী বলেছেন, আমরা একবার রসুলেপাক (ﷺ) এর সঙ্গে কোনো এক সফরে ছিলাম। অন্ধকার রাতে আমরা যখন রসুলেপাক (ﷺ) থেকে আলাদা হলাম, তখন অকস্মাৎ আমার আঙ্গুলসমূহ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে লাগলো এবং আলোগুলো পরস্পর মিলে যেতে লাগলো। স্পষ্ট অনুভব করলাম যে, কোনো আঙ্গুলের আলোই নিভছে না। হাদীছ শরীফে এসেছে, রসুলে আকরম (ﷺ) তাঁর জনৈক সাহাবীকে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে দাওয়াত দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। তারা তাঁর কাছে অলৌকিকতার নিদর্শন দেখতে চাইলো, যা মুসলমানগণের সত্যতার দলীল হতে পারে। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁর দু’খানা বৃদ্ধাঙ্গুলী উক্ত সাহাবীর দু’চোখের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করলেন। তাতে তাঁর দেহের উক্তস্থান শুভ্র ও নূরানী হয়ে গেলো। সাহাবী আরয করলেন, আমার ভয় হচ্ছে লোকেরা একে কুষ্ঠরোগ মনে করে কিনা। হজরত মুসা (عليه السلام) এর ঘটনা সম্পর্কে কোরআন মজীদে উক্ত হয়েছে, ‘এমন শুভ্রতা যার মধ্যে কোনো দোষ নেই।’ এরপর রসুলেপাক (ﷺ) শুভ্রতাকে ওই সাহাবীর লাঠির মধ্যে স্থানান্তরিত করে দিলেন। প্রশ্ন জাগে, হজরত মুসা (عليه السلام) সমুদ্রকে লাঠির আঘাতে বিভক্ত করেছিলেন। আমাদের নবী (ﷺ) কি এমন করেছেন? হাঁ, আমাদের নবী সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) হাতের আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। এতো আরও বিস্ময়কর ও মহান ঘটনা। কেননা হজরত মুসা (عليه السلام) এর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিলো এই মাটি পানির পৃথিবীতে। আর আমাদের নবী (ﷺ) এর ক্ষমতা বিস্তৃত ছিলো নভোজগতে। এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণ সহজেই অনুমেয়। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, আসমান ও যমীনের মধ্যে ‘মাকুকুফ’ নামক একটি মহাসমুদ্র রয়েছে। পৃথিবীর সাগর উক্ত মহাসাগরের তুলনায় একটি বিন্দু। ওই মহাসাগর রসুলেপাক (ﷺ) এর জন্য দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিলো। মেরাজ রজনীতে তিনি উক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে দীদারে এলাহীতে গিয়েছিলেন। নিশ্চয় হজরত মুসা (عليه السلام) কর্তৃক নীল দরিয়া দ্বিখণ্ডিত করার চেয়ে এই ঘটনা অধিকতর মর্যাদাশালী। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 




© | সেনানী এপ্স |

Top