সূরা কাউছার


আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের তরফ থেকে হুজুর পাক (ﷺ) এর প্রতি যতাে প্রকারের ফযীলত, কামালাত, কারামত ও বরকতের বর্ষণ হয়েছে, তার সবকিছুর বর্ণনা করা হয়েছে একখানা সমীভূত বাক্যে। তা হচ্ছে এই, আল্লাহপাক এরশাদ ফরমান, 'হে আমার মাহবুব! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউছার দান করেছি।' কাউছার শব্দের অর্থ হচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণ। এ আয়াতখানা সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্বেও উপরোক্ত রহস্য কথাটি প্রকাশ করেছে। সারা জাহানের আলেম ও আরেফগণও যদি এই আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা করে, তবুও তার হক আদায় হবেনা। কাউছার বা অসংখ্য কল্যাণ যে কি জিনিস, তার হাকীকত একমাত্র আল্লাহ তায়াআলাই ভালাে জানেন। তা সত্ত্বেও উপস্থিত আমার জ্ঞানে ও দৃষ্টিতে যা আসছে তা আমি লিপিবদ্ধ করছি। আল্লাহতায়ালার এরশাদ, আমি আপনাকে অধিক কল্যাণ বা নেয়ামত দান করেছি। আর সে নেয়ামতের অবস্থা এই যে, এক একটি নেয়ামত যা দুনিয়ার চেয়েও বড় —আমি যখন আপনাকে এরূপ। কল্যাণ ও সৌন্দর্য দান করলাম তখন আপনি আপনার রবের জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার দুশমন যারা তারাই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে।


ইবাদত দুই' প্রকারঃ 

(১) ইবাদতে বদনি বা শারীরিক ইবাদত 

(২) ইবাদতে মালি ও মাল দ্বারা ইবাদত। 

আল্লাহ তায়ালা তার এরশাদ ফাসাল্লিলি রাব্বিকা দ্বারা ইবাদতে বদনি দিকে ইশারা করলেন আর ওয়ানহার দ্বারা ইবাদতে মালীর দিকে ইশারা করেছেন। আবার আল্লাহ তায়ালা ইন্না আতাইনা (নিশ্চয় আমি আপনাকে দান করেছি)' বাক্যে অতীত কাল ব্যবহার করেছেন। এখানে ভবিষ্যতকাল জ্ঞাপক ক্রিয়া ব্যবহার করেন নি এবং ‘(অচিরেই আমি আপনাকে দান করবেন)' এরূপ বলেন। যাবতীয় দান ও কল্যাণ হুজুর পাক (ﷺ) এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল এ জড় জগতে অস্তিত্ব লাভের পূর্ব থেকেই —একথাটি বুঝানাের উদ্দেশ্যেই এভাবে বলা হয়েছে। যেমন হুজুর পাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমি ঐ সময়ও নবী ছিলাম যখন আদম রুহু ও দেহের মধ্যে ছিলেন।


উপরোক্ত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা এরকম, যেন আল্লাহ তায়ালা বলছেন, হে মোহাম্মদ (ﷺ)! আপনার জন্য সমস্ত সৌভাগ্যের সামগ্রী আপনার অস্তিত্বের বৃন্তে প্রবেশ করার পূর্বে আমি আপনাকে দান করে দিয়েছি। এখন অস্তিত্ব লাভের পর আপনাকে তা থেকে কিভাবে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারে? আপনি যে ইবাদতে মশগুল থাকে না তো আমার ফযল। আনুগত্য ও নির্দেশের বাধ্যবাধকতার পরিপ্রেক্ষিতে তা আমি আপনাকে দেইনি। বরং ওজুব ও উপকরণ বিহীন ইবাদত শুধুই আমার ফজল, শুধুই আমার এহছান। আর এজতেবা (মনােনীতকরণ) এর অর্থ দ্বারা তাই পাওয়া যায়। কেউ যদি এরকম বলে যে, সমস্ত নবীগণকে, এমনকি সমস্ত মানব জাতিকে যা কিছু প্রদান করা হয়েছে, তা হুজুর পাক (ﷺ) এর জড়জগতে অস্তিত্ব লাভের পূর্বেই প্রদান করা হয়েছে। উক্তরূপ প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এরকম প্রশ্ন আসতে পারে যে, ফযিলত তাকে তার মধ্যে থাকা স্বাভাবিক, যাকে সবচেয়ে বেশী প্রদান করা হয়েছে। সকলের পূর্বে কিছু প্রদান করা হয়েছে এর মধ্যে কোনােরূপ ফযিলত তাে থাকা উচিত নয়। এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে যে, হুজুর আকরম (ﷺ) এর নবুয়ত ও তার কামালাতে আলমে আরওয়াহ প্রকাশ করা হয়েছিলাে। সেখানে তাে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম এর পবিত্র আত্মা সমূহ তাঁর নিকট থেকে ফয়েয প্রাপ্ত হয়েছিল। যেমন, কুস্তু নাবিয়্যান হাদীছ তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। একসময় অন্যান্য আম্বিয়া কেরামের নবুওয়াত তে আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বাস্তবে তা ছিল না।


এক বর্ণনায় আছে, কাউসার মানে জান্নাতে একটি নহর। উক্ত নহরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে এবং সে নহরের নাম বলা হয়েছে কাউছার একারণে যে, অধিকসংখ্যক লােক সেখানে গমন করবে। সাইয়্যেদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে —একদা নবীকরীম (ﷺ) জান্নাতে ভ্রমণের বিষয়ে এরশাদ করলেন যে, আমি একদা জান্নাতে ভ্রমণ করছি, এমন সময় হঠাৎ আমার দৃষ্টি পড়লে একটি নহরের উপর। দেখলাম, সে নহরের সবদিক দিয়েই কেবল গম্বুজ আর গম্বুজ। গম্বুজ গুলি মেথি দ্বারা খোদাই করা হয়েছে। আর তার মাটি হচ্ছে সুগন্ধিময় মেশকের। আমি হজরত জিব্রাইল (عليه السلام) কে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তিনি বললেন, এর নাম কাউছার। এটা আল্লাহ্ আপনাকে দান করেছেন। ইমাম বুখারী এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইন্না আতইনা কাল কাউছার’ এর তাফসীর সালফে সালেহীনের নিকট একটি মশহুর। এবং তারা এ ধরনের তাফসীর থেকেই উপকৃত হয়েছেন।


আবার কেউ কেউ এরকম বলেছেন যে, কাউসার এর অর্থ হুজুর পাক (ﷺ) এর পবিত্র আউলাদ। কেননা এই সূরায় নাযিল হয়েছিলাে ঐ সমস্ত লােকদের বক্তব্যকে খণডন করার জন্য, যারা হুজুর পাক (ﷺ) কে সন্তানহীন বলে তিরস্কার করতাে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহতায়ালা বললেন, আমি আপনাকে এমন আউলাদই দান করলাম যারা কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।


কেউ কেউ বলেন, কাউছার এর অর্থ অধিক কল্যাণ। অভিধানে কাউছার শব্দের অর্থ করা হয়েছে অধিক মাত্রায় দরুদ পাঠ করা। তা একারণে হতে পারে যে, যেহেতু কাফেররা হুজুর পাক (ﷺ) কে আবতার বা সন্তানহীন বলে তিরস্কার করে, তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, কাফেররা আপনাকে আবার বলে তিরস্কার উপযোগী মনে করে, আর আমি আপনাকে অধিক দরুদ পাওয়ার উপযোগী বানিয়ে দিলাম।


আইনুল মাআনী কিতাব বলা হয়েছে, কাউছার কাওয়াল এর ওযনে, অর্থ অধিকসংখ্যক হওয়া যেমন তাফাল শব্দ থেকে তাফাল এবং জাহর শব্দ থেকে জাওহার ইত্যাদি। আর কাউসার এর বিরুদ্ধতার পরিণাম কি সে সম্পর্কে খবর দেয়া হয়েছে এই আয়াতের মাধ্যমে যারা আপনাকে নির্বংশ বলে দোষারোপ করে, প্রকৃত প্রস্তাবে তারাই নির্বংশ।' অবতার বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে তার কোনো বংশধর থাকে না। তফসীরে কাসাফ বলা হয়েছে, কাউছার কাউআল এর ওযনে, অর্থ অধিক সংখ্যক হওয়া। তব এক্ষেত্রে অর্থের মধ্যে মুবালাগা বা আধিক্য থাকবে। তখন তার অর্থ হবে বহু বহু। আরব দেশে প্রচলিত আছে, কোন বেদুইন পুত্র সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করবে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার পুত্রের অবস্থা কি? তখন সে জবাব দেয়, বহু বহু কল্যাণ সহকারে আগমন করেছে।


হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি কাউসার এর অর্থ করেছেন অধিক কল্যাণ। এতে হজরত সাঈদ ইবন জুবায়র (رضي الله عنه) তাকে প্রশ্ন করলেন, লােকেরা বলে কাউছার মানে জান্নাতের একটা নহর, অথচ আপনি বলেন কাউছার মানে অধিক কল্যাণ। তিনি জবাব দিলেন এটাও অধিক কল্যাণের একটি প্রকার। তাৎপর্য এই যে, আল্লাহপাক বলেন, হে মোহাম্মদ (ﷺ) আমি আপনাকে উভয় জগতের এতে কল্যাণ দান করেছি যার কোনাে সীমা নেই। আর এরূপ কল্যাণ আপনাকে ছাড়া আর কাউকে আমি প্রদান করেন। আর এরকম প্রভূত কল্যাণ প্রদানকারী তাই আমিই, তিনি তামাম জাহানের মালিক ও রব। সুতরাং আপনাকে সর্বাধিক বুযুগী দানকারী, সর্বাধিক দানে ধন্যকারী, সর্বাধিক বখশিশকারী, মহানতম অনুগ্রহ প্রদানকারী তো আমিই। অন্য কেউ নয়। কাজেই ‘ফাসাল্লিলি রব্বিকা’ আপনি আপনার রবের নিমিত্তে সালাত আদায় করুন। আপনার রব আপনাকে তার দানের উপযোগী বানিয়ে ঐ সমস্ত লোকের সাহায্য থেকে আপনাকে হেফাজতে রেখেছেন যারা নিজ নিজ ধারণার বশবর্তী হয়ে গায়রুল্লাহর পূজা করে থাকে। কাজেই ‘ওয়ানহার' - আপনি আল্লাহর নামে কুরবানী করুন। এবং এর মাধ্যমে ঐ সমস্ত লােকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করুন যারা মূর্তির নামে যবেহ করে থাকে। ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার’ এর অর্থ নিঃসন্দেহে নির্দ্বিধায় বলা যায় আপনার কাওম থেকে যে কেউ আপনার সঙ্গে দুশমনী করবে, আপনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, সেই হবে প্রকৃত আবতার নির্বংশ ও বরকতহীন। আপনি হবেন না। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের ঘরে ঘরে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করছে, প্রকৃতপক্ষে তারা সকলেই আপনার রুহানি ফরজ—আপনারই রুহানী উত্তরসূরী। মিম্বরে মিম্বরে মিনারে মিনারে আপনার নাম ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মুখে মুখে উচ্চারিত হবে আপনার নাম, পৃথিবীব্যাপী মানুষের প্রারম্ভে আল্লাহ তায়ালার নাম নিবে। তারপর নাম নিবে আপনার। আর আখেরাতে আপনার প্রতি যে দয়া ও মেহেরবানী হবে তাতাে বর্ণনা-শক্তি বহির্ভূত। দুনিয়াতে যারা আপনাকে আবতার বলেছে প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই আবতার হয়ে গিয়েছে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের নাম উচ্চারণ করার কেউ থাকবে না। হ্যাঁ, যদি কদাচিৎ কেউ তাদের নাম নেই তবু তা অভিসম্পাত এর সাথে নেবে।


আবু বকর বিন আইয়্যাশ (رضي الله عنه) বলেন, কাউছার এর অর্থ উম্মতের সংখ্যাধিক্য। হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন, কাউসার এর অর্থ কুরআন মজীদ। হযরত ইকরামা মতে নবুওয়াত, হযরত মুগীরা মতে ইসলাম এবং হজরত হুসাইন ইবনে ফজলের মতে কুরআনের সহজ সরলতা এবং শরীয়তের সহজসাধ্য। কাউছার শব্দের ভাবার্থ নিয়ে আরও বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কারও মতে অধিকাংশ উম্মতের জন্য শাফাআতের ক্ষমতা, কারও মতে নবুওয়াতের মুজিযা। কারও মতে নবুয়ত ও কুরআন, কারও মতে জিকরে আজীম, কারও মতে দুশমনের বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্তি, আবার কেউ কেউ উলামায়ে উম্মতের বলেছেন। কেননা আল উলামাউ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া- আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিশ। ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী এরকম বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ কেউ কাউছার এর অর্থ করেছেন এলেম। তারা প্রমাণ বা যুক্তি গ্রহণ করেছেন পরবর্তী আয়াত ফাসালিলি রব্বিকা থেকে। কেননা সাল্লি শব্দ দ্বারা যে ইবাদতকে বুঝানাে হয়েছে, তার পূর্বে এসেছে কাউছার। আর ইবাদত করতে হলে তার পূর্বে ইলমের প্রয়োজন। আল্লাহকে তাই তাকে প্রদান করেছেন। এলেমের মধ্যে যে প্রতুলতা ও প্রশস্ততার বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা আর অন্য কোন কিছুর মধ্যে নেই। কেউ বলেন, কাউসার মানে খুলুকে। হাসান বা সচ্চরিত্র। তবে বিশুদ্ধ কথা এই যে, কাউছার দ্বারা সমস্ত পূর্ণতার বৈশিষ্ট্যকে বোঝানো। এটা কোন বিশেষ বস্তু বা গুণের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে খায়রে কাছীর বা অধিক কলাণ অর্থটিই যথাযথ হয়।


পরস্পরে বাহাস মুবাহাছা করার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নাম উপরে উল্লেখ করা হলাে, অই সমস্ত হজরতগণ উপরােল্লিখিত অর্থ বর্ণনা করার পরও আরও কিছু কথাবার্তা আলােচনা করেছেন। ইবন আতা বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে আমার মাহবুব! আমি আপনাকে আমার রবুবিয়াতের মারেফাত, আমার ওয়াহদানিয়াত একত্ব এবং আমার কুদরত ও মালিয়াতের মারেফত দান করেছি। সহল এশায়ী (رحمة الله) বলেন, আমি আপনাকে ওয়াহদাতের সাথে কাছরত অর্থাৎ এককত্বের সাথে আধিক্য, ইলমে তাওহীদের বিস্তারিত এবং স্বীয় উপমাবিহীন তাজাল্লীর সাথে আইনে কাছরের মধ্যে এককত্বের দর্শন এর মারেফত দান করেছি। আর এ তাজাল্লী জান্নাতে ঐ নহর সদৃশ, যে নহর থেকে কেউ একবার পান করলে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। ফাসাল্লিলি রাব্বিকা এর তাৎপর্য এই যে, যখন মুশাহাদা আইনে কাছের —অধিকার মধ্যে একক ত্বকে অর্জন করেছেন, এখন নামাজের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে শহুদে রুহ (আত্মিক দর্শন), হুজুর কলব, ইনকিয়াদ নফস (নফসের আনুগত্য), এবং শারীরিক বাধ্যতার সাহায্যে বারবার ইবাদতের কাঠামো তৈরি করে লুৎফ বা আত্মিক স্বাদ অর্জন করুন। কেননা এ নামাজই হচ্ছে পরিপূর্ণতা, জমা (একীভূতি) ও তফশীল (বিস্তৃতি)। এর হক সমূহ আদায় করার তরীকা-ওয়ানহার। অর্থাৎ আনানিয়াত বা আমিত্বের উট বা গরুটিকে যবেহ করে ফেলুন, যাতে আপনার শুহুদ বা দর্শনের ক্ষেত্রে এই আনানিয়াত বা আমিতুটি অস্থিরচিত্ততার আকারে আত্মপ্রকাশ না করে এবং আপনা থেকে এসকানের মাকামকে ছলব বা রহিত না করে। এবং আপনি হকতায়ালার নিছক ইচ্ছার সাথে অবস্থান করুন। তিনি যেভাবে আপনাকে অবশিষ্ট রাখবেন যেভাবে অবশ্যই অবশ্যই আপনি অবশিষ্ট থাকে যাতে করে আপনার বেসালে হক ও আপনার হালের মধ্যে এবং আপনার সাথে আপনার যে উম্মতের সম্মিলন এবং বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা প্রকাশ না পায়। নিঃসন্দেহে আপনার সাথে শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তি হক থেকে বিচ্ছিন্ন এবং অভিশপ্ত। আর তারাই হচ্ছে প্রকৃত আবতার বা নির্বংশ। আপনি নন।


মাওলানা তাজুল মিল্লাত উদ্দীন আল বুখারী দাকায়েকুল হাকায়েক নামক কিতাবে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে অসংখ্য ও অগণিত অত্যধিক সৌন্দর্য এবং যাবতীয় প্রকারের অসংখ্য ফযীলতসমূহ দান করেছি।


মোটকথা কাওছার' শব্দের তাফসীর সম্পর্কে বড় বড় ইমামগণের বিভিন্ন বক্তব্য ও ব্যাখ্যা রয়েছে। যিনি বাতেনী নূর দ্বারা যে পরিমাণ দেখেছেন, তিনি সেই রকমই ব্যাখ্যা করেছেন। তবে এটা সত্য যে সমস্ত মাখলুকাতের এলেম যদি একত্রিত করা হয়, তবে তা কাউছার' শব্দের গুঢ় রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হবেনা। এ সম্পর্কে যাবতীয় বক্তব্য ও বিস্তারিত আলােচনা যদি একটি দফতরে ধারণ করা হয়, তবে এ দফতরটি হবে কাউছার হাকীকতের তুলনায় একটি অক্ষর তুল্য। আর কাউছার হবে একটি নহর তুল্য আর যাবতীয় আলোচনা যেন সেই নহরের একফোঁটা পানি।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top