কিতাবঃ কদম্বুচি করা শিরিক নয় সুন্নাহ
✍ গ্রন্থনায়ঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
[লেখক, সংকলক, অনুবাদক]
স্টুডেন্টঃ MBBS, ব্লগারঃ সুন্নি-বিশ্বকোষ, ইসলামিক রিসার্চার।
কিতাবঃ কদম্বুচি করা শিরিক নয় সুন্নাহ
লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ
মাসুম বিল্লাহ সানি (০১৭১০৩৫৫৩৪২)
প্রথম প্রকাশকালঃ ৯.১২.১৯
প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম
কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।
উৎসর্গঃ
পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.)।
সূচীপত্রঃ
❏ লেখক পরিচিতি।
❏ লেখকের কিছু কথা।
❏ মাড়ির দাঁত দিয়ে হলেও শক্তভাবে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা।
❏ সিজদার নিয়ম।
❏ আল-হাদিসের আলোকে সম্মানার্থে হাত-পা চুম্বন।
❏ হাদিস নং ১-২০।
❏ প্রমাণ নং ১-১৮।
লেখক পরিচিতিঃ
তরুণ লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সানি, ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট হিসেবে সুন্নি-বিশ্বকোষ নামক ওয়েবসাইট চালু করেন। অতঃপর অনলাইনে আহলে সুন্নাতের সঠিক আকিদা প্রচারে সুন্নি সাইবার টিম গঠন করে এক ঝাঁক তরুণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সুন্নি সাইবার টিমের মাধ্যমে এপ্স, পি.ডি.এফ, ব্লগিংসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছেন। ধর্মীয় গবেষণার পাশাপাশি MBBS কোর্সে অধ্যয়ণরত আছেন।
মসলকে আ'লা হযরতের অনুসারী। পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করে তরিকায়ে কাদেরীয়াতে দাখিল হন।
লেখকের কিছু কথাঃ
বর্তমান জামানায় কিছু আলেম নামের জাহেল নিজেদেরকে আলেম দাবী করে অথচ প্রাণ প্রিয় রাসূল (ﷺ) প্রমাণিত সুন্নাহকে শিরক, বিদআত বলে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে সেট করে দিচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ) আফসোস লাগে তাদের জন্য তারা কুরআন হাদিস পড়েও তা গোপন করে। দলিল দিলে তারা অস্বীকার করে। কোন কিছুর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝে মতামত দিয়ে দেয়। আর একদল তরুণ যাদের নিকট দ্বীনের ২% জ্ঞানও নেই। যারা জীবনে কোন কিতাব পড়ে নি। তারা সহিহ, দ্বয়ীফ, জাল হাদিস মতামত দেয়া শুরু করে, যা কিনা মুহাদ্দিসগণের কাজ। তাদের পছন্দের আলেম যাই লিখে তাই ঠিক। এজন্য তারা কুফরি করতে বাধ্য কিন্তু কষ্মিনকালেও তারা সঠিক মানতে নারাজ। আল্লাহ পাক তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। তাদের উদ্দেশ্যে কুরআন সুন্নাহ থেকে এ পুস্তকটি প্রনয়ণ করলাম। পাঠ বিরক্তিবোধ করবে বলে নিজের কোন ব্যাখ্যা মতামতও দেই নি। পুরোটাই দলিলভিত্তিক সাজিয়েছি। আশা করি পথভ্রষ্টদের চোখ খুলে যাবে।
অধম,
মাসুম বিল্লাহ সানি
প্রশ্নঃ মাতা-পিতা, শিক্ষক, আত্মীয়গনের পায়ে ধরে কি সালাম করা যাবে? সসম্মানার্থে কদম্বুচি বা পায়ে চুম্বন করা জায়েজ নাকি শিরিক?
জবাবঃ
লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
❏ মাড়ির দাঁত দিয়ে হলেও শক্তভাবে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরোঃ
সহিহ হাদিসে রয়েছেঃ
عن العرباض بن سارية رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه و سلم عليكم بسنتي و سنة الخلفاء الراشدين المهدين تمسكوا بها و عضوا عليها بالنواجذ
অর্থ : হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্নিত, হুজুর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমাদের উচিত আমার এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত পালন করা। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে হলেও আঁকড়ে ধরো।"
তথ্যসূত্রঃ
১.সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস শরীফ নং ৪২
২.তিরমিযী শরীফ, হাদীস শরীফ নং ২৬৭৬
৩.আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং ৪৬০৭
৪.মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৪/১২৬
❏ সিজদার নিয়মঃ
অনেকেই মাথা নত করা মানেই সিজদা করা বুঝে আর এরজন্যই যাকে তাকে শিরিক ফতোয়া মারে অথচ, এসব মূর্খ এটাও জানে না যে সিজদার নিয়ম কি!
সহীহ হাদিস শরীফে এসেছে,
حدثنا قبيصۃ, قل,حدثنا سفيان, عن عمرو بن دينار,عن طاوس,عن ابن عبس قل , امر النبي صل اﷲ عليه وسلم ان يسجد علی سبعۃ اعضاء ولا يكف شعرا ولا ثوبا : الجبهۃ واليدين والركبتين والر جلين
”হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ননা করেন, তিনি বলেন : নবী করীম (ﷺ) সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছেন।(সাতটি অঙ্গ হল ) চেহারা,দুই হাত,দুই হাটু ও দুই পা।
[সহীহ বুখারী,১ম খন্ড,হাদিস/ ৭৭২ ; সহীহ মুসলিম]
উপযুক্ত সম্মানিত ব্যাক্তিকে কদম্বুচি করা জায়েজই নয় বরং সুন্নত। তাযীম করে যথোপযুক্ত সম্মানিত ব্যাক্তির হাত এবং কদমে চুম্বন করা সুন্নত"।
নিচের সকল আলোচনা দ্বারা বুঝবেন যে পিতা-মাতা, শিক্ষক, পীর-আউলিয়া, চাচা/চাচী,খালা/খালু,ফুফা/ফুফী ,দাদা /দাদী, নানা/নানী মোট কথায় গুরুজন যারা চারিত্রিক দিক দিয়ে অনেক উন্নত নেককার তাদের এই ভাবে তাযীম করা জায়েয ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
❏ আল-হাদিসের আলোকে সম্মানার্থে হাত-পা চুম্বনঃ
❏ হাদিস ১:
عن زارع وكان فى وفد عبد القيس قال لما قدمنا المدينة وجعلنانتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله
অর্থাৎ,হযরত যারেঈ ইবনে আমির ইবনে কায়স (رضي الله عنه) উনার দাদা হতে বর্ননা করেন, তিনি ছিলেন আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন মদিনা মনোওয়ারায় আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং রসূলে করীম (ﷺ)-এর হস্ত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম।
তথ্যসূত্রঃ
১) ইমাম বুখারী : তারিখুল কবীর : ৪/৪৪৭ পৃ: ১৪৯৩
তিনি বলেন ```হাদিসটি বিশুদ্ধ বা হাসান।
২) নাসিরুদ্দিন আলবানী : সহিহুল আবু দাউদ : ৪/৩৫৭ পৃ: হাদিস ৫২২৫, তিনি বলেন ```হাদিসটি হাসান বা বিশুদ্ধ ।
৩) ইমাম ইবনে শায়বা : আল-মুসান্নাফ : ৮/৫৬২ পৃ:
৪) ইমাম আবু দাউদ : আস সুনান : ৪/৩৫৭ পৃ: অধ্যায়: কিতাবুল আদব, হাদিস : ৫২২৫।
৫) ইমাম তাবারানী (২৬০-৩৬০হি) : মুজমাউল কবীর : ৫/২৭৫ পৃ: হাদিস ৫৩১৩।
৬) ইমাম তাবারানী : মুজমাউল আওসাত : ১/১৩৩ পৃ: হাদিস ৪১৮।
৭) ইমাম বায়হাকী : আস সুনানে কোবরা : ৭/১০২ পৃ: হাদিস ১৩৩৬৫, তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
৮) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ইমান : ১১/২৯৪ পৃ: হাদিস ৮৫৬০, তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
৯) ইমাম শায়বানী : আহাদিসুল মাসানী : ৩/৩০৪ পৃ: হাদিস ১৬৮৪, তিনি বলেন ```হাদিসটি হাসান বা বিশুদ্ধ।
১০) ইবনে হাজর আসকালানী : তালখীসুল হবির : ৪/৯৩, পৃ: হাদিস ১৮৩০, তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
১১) আসকালানী : আদ-দিরায়্যাত ফি তাখরিজ আহাদিসুল হিদায়াত : ২/২৩২ পৃ: হাদিস ৬৯১, তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
১২) ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ৩/১৩২৮ পৃ: হাদিস ৪৬৮৮ (মুসাফা ও মু'আনাকা অধ্যায়)
১৩) ইমাম মিযযী : তাহজীবুল কামাল : ৭/২৬৬ পৃ:
তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
১৪) ইমাম যায়লাই : নাসীবুর রিয়াদ্ধ : ২/২৩২ পৃ:
তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
১৫) ইমাম আবি আছিম : আস-সুন্নাহ : হাদিস ১৯০
১৬) শায়খ মুহাদ্দিসে দেহলবী : আশিয়াতুল লুমআত : ৩/৫০৮ পৃ: হাদিস ৪৬৮৮। তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
১৭) মােবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭/ ৪৩৭ পৃ। তিনি হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,“ এই সনদটি শক্তিশালী।
১৮) ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৮/৮৫ পৃ:, তিনি বলেন```হাদিসটি সহিহ।
১৯) ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুওয়াত : ৫/৩২৭ পৃ:, তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
২০) মোল্লা আলী কারী : মিরকাত শরহে মিশকাত ৭ম খন্ড ৮০ পৃষ্ঠা।তিনি বলেন ```হাদিসটি সহিহ।
২১) আলী ইবনে আব্দুল মালিক আল হিন্দী [ওফাত ৯৭৫] : কানজুল উম্মাল।
২২) ইমাম ইবনে জারির আল তাবারী [২২৪-৩১০ হি] : তাফসীরে তাবারী
২৩) বজলুল মাজহুদ ৬ ষ্ঠ খন্ড ৩২৮ পৃষ্ঠা।
২৪) মায়ালিমুস সুনান।
২৫) এলাউস সুনান ১৭ তম খন্ড ৪২৬ পৃষ্ঠা
২৬) আত-তায়ালিসিঃ মুসনাদে তায়ালিসি।
২৭) আল-বাযযারঃ মুসনাদুল বাযযার (3: 278)।
২৮) আল-হায়সামি তা বর্ণনা করেছেন।
২৯)ইবনে আল-মুকরীঃ কিতাব আর-রুখসায়, পৃ, 80 #20
৩০) ইবনে আব্দিল বার এটিকে হাসান ঘোষণা করেন।
৩১)আল-মুনযিরিঃ মুক্তাসার আল-সুনানঃ (৮:৮৬) এটিকে হাসান ঘোষণা করেন।
৩২)মুফতি আল্লামা সৈয়্যদ আমীমুল ইহসানঃ ‘ফিকহুস্সুনান ওয়াল আছার’’
৩৩)ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, পৃ ২৩৪।
৩৪)ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/ ৫৭পৃ .। তিনি হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,“ এই সনদটি শক্তিশালী।
৩৫)বযলুল মাজহুদ, ৬ষ্ঠ জিলদ্, পৃষ্ঠা ৩২৮;
৩৬)ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ আশয়াতুল লুময়াত।
❏ হাদিস ২:
عن صفوان بن عسال ان قوما من اليهود قبلوا يد النبى صلى الله عليه وسلم ورجله
হযরত ছাফওয়ান বিন আ'সল আল মুরাদি (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইয়াহুদীদের এক দল হুজুর পাক (ﷺ)-এর হাত ও পা মোবারক চুম্বন করেন।
তথ্যসূত্রঃ
১) ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১২২ পৃ: হাদিস ৩৭০৫, তিনি বলেন, সহিহ।
২) ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : ৫/৭২ পৃ: হাদিস ২৭৩৩
তিনি বলেন, হাসান।
৩) ইমাম নাসায়ী : আস-সুনান : ৭/১১১ পৃ: হাদিস ৪০৭৮, তিনি বলেন, সহিহ।
৪) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল- মুসনাদ : ৪/২৩৯ পৃ:।
৫) ইমাম আবি শায়বা : আল-মুসান্নাফ : ১/১২৭ পৃ: হাদিস ৩।
৬) ইমাম ইবনে শায়বা : আল-মুসান্নাফ : ৫/২৯২ পৃ: হাদিস ২৬২০৭।
৭) ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/৩২ পৃ: হাদিস ৫৮।
৮) ইবনে হাজর আসকালানী : আদ-দিরায়্যাত ফি তাখরিজ আহাদিসুল হিদায়াত : ২/২৩২ পৃ:।
৯) ইমাম জায়লায়ী : নাসিবুর রায়্যাহ : ৪/২৫৮ পৃ:।
১০) ইমাম হাকিম নিশাপুরী : আল- মুস্তাদরাক : কিতাবুল ইমান : হাদিস নং ২০। তিনি বলেন, সহিহ।
১১) শায়খ মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল : আল মুসনাদিল জামে : ৭/৫০৪ পৃ:।
১২) তায়ালিসিঃ আল-মুসনাদ (পৃষ্ঠা ১৬০ #১১৬৪);
১৩) মাকদিসিঃ আল-হাদিস আল-মুখতারা (খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৯ #১৮)।
❏ হাদিস ৩:
আমিরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বুখারী (رحمة الله) বলেছেন,➠ আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আবদুর রহমান বিন মোবারক (رضي الله عنه), ➠ তিনি বলেন আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান বিন হাবীব (رضي الله عنه),➠ তিনি বলেন, আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আমর (رضي الله عنه),➠হযরত জাকওয়ান (رضي الله عنه) হতে, ➠ তিনি হযরত ছুহাইব (رضي الله عنه) হতে, হযরত সুহাইব (رضي الله عنه) বলেন,
مولى العباس قال رأيت عليا يقبل يد العباس ورجله
"আমি হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে (ওনার চাচা) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাত এবং পা চুম্বন করতে দেখেছি।"
তথ্যসূত্রঃ
১.তিরমিযী শরীফঃ- ২৭৩৩ ।
২.সুনানু ইবনে মাজাহঃ- ৩৭০৫ ।
৩.ইমাম নববীঃ রিয়াদূস সালেহীনঃ- ৮৮৯ ।
৪.তফসীর ইবনে কাসীরঃ- ৬৪৬পৃষ্ঠা/৩য় খন্ড।
৫.ইমাম বুখারীঃ আল-আদাবুল মুফরাদ,পৃ ২৩৮, হাদিস ৯৮৮।
৬.ইবনে আসাকির: তারিখ-ই-দামেস্ক: খণ্ড ২৬: পৃষ্ঠা ৩৭২
৭.ইমাম মুকরী: আর-রুখসাত: (পৃষ্ঠা ৭৬# হাদীস ১৫)
৮.ইমাম আল-যাহাবী তাঁর সিয়ার আ'লমে আন নাবুলায় বলেছেন .سناده حسنএটিতে "হাসান" চেইন রয়েছে [সিয়ারু নুবালা আলামিন, খণ্ড নং 2 # 94]
৯.ইমাম মিয্যিঃ তাহযিবুল কামালঃ (খণ্ড ১৩, পৃ ২৪০ # ২৯০৫);
১০.খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতুল মাসাবিহ। যাওকান (রা.) সূত্রে।
উক্ত হাদিসটিকে আহলে হাদিস মিথ্যাবাদী "আলবানী" দ্বয়ীফ বলেছে। কারন তার দাবী হল "হযরত সুহাইব (رضي الله عنه)" নাকি অপরিচিত রাবী । আসুন ওনার পরিচয় দেখে নেই :
® হযরত সুহাইব (رضي الله عنه) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর গোলাম ছিলেন এবং আরো বলেছেন তার থেকে আবু সালেহ যাওকান সহ আরো অনেক তাবেয়ীগন হাদিস শুনেছেন।``
তথ্যসূত্রঃ
✦ ইমাম আবু হাতেম : জররাহ ওয়া তা'আদিল ৪/৪৪৪ পৃ: ক্রমিক ১৯৫২।
✦ ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ২/১৪৩ পৃ: রাভী নং ৩৯২৪।
✦ ইমাম যাহাবী : তাহযিবুত তাহযিব : ৪/৪৩৯ পৃ:
✦ তারিখুল কবীর : ৪/১৪৩, ক্রমিক ২৯৬৫
✦মিযযী : তাহযীবুল কামাল ২/৩৫৯ পৃ: ক্রমিক ৩২২
✦ ইবনে আসাকির : তারিখে দামিস্ক : ২৬/৩৭২ ও ২৬/৩৭৩
® ইমাম মিযযি বলেন, ইমাম ইবনে হিব্বান তার সিকাহ গ্রন্থে তাকে সিকাহ বা বিশস্ত রাবীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।``
তথ্যসূত্রঃ
✦ ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ২/১৪৩ পৃ: রাভী নং ৩৯২৪।
✦ ইমাম যাহাবী : তাহযিবুত তাহযিব : ৪/৪৩৯ পৃ:।
✦মিযযী : তাহযীবুল কামাল ২/৩৫৯ পৃ: ক্রমিক ৩২২।
(তথ্যসূত্র প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচ, ১ম খন্ডঃ মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর)
❏ হাদিস ৪:
ওয়াযি ইবনে আমির (رضي الله عنه) বলেন, আমি একদা রাসূলে করীম (ﷺ)-এর খেদমতে গিয়ে হাজির হলাম। আমাকে বলা হল, ইনিই হচ্ছেন আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তখন তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুম্বন করলাম।
তথ্যসূত্রঃ
১.তিরমিযী শরীফঃ- ২৭৩৩ ।
২.সুনানু ইবনে মাজাহঃ- ৩৭০৫ ।
৩.ইমাম নববীঃ রিয়াদূস সালেহীনঃ- ৮৮৯ ।
৪.ইমাম ইবনে কাসীরঃ তফসীর ইবনে কাসীরঃ- ৬৪৬পৃষ্ঠা/৩য় খন্ড ।
৫.ইমাম বুখারীঃ আল-আদাবুল মুফরাদ- হাদিস ৯৭৫।
❏ হাদিস ৫:
এক সাহাবী অন্য সাহাবীকে (رضي الله عنه) কদম্বুচি করেছেনঃ
عن زيدبن ثبت انه قبل يد انس رضي الله عنه واخرج ايضا ان عليا قبل يد العباس و رجله
অর্থ : হযরত যায়েদ বিন সাবিত (رضي الله عنه) হতে বর্নিত, তিনি হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه)'এর হাত মুবারকে চুম্বন করেছেন। তিনি এটাও বর্ননা করেছেন যে , হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র হাত এবং পা মুবারকে চুম্বন করেছেন!"
তথ্যসূত্রঃ
১.ইবনে হাজার আসকালানীঃ ফতহুল বারী- ১১খন্ড-৫৭পৃষ্ঠা !
২.তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমীযি শরীফ ৭ম খন্ড ৫২৮ পৃষ্ঠা।
৩.মুফতি আমিমুল ইহসানঃ ফিকহুস সুন্নাহ ওয়াল আসার।
❏ হাদিস ৬:
হযরত বুরাইদা (رضي الله عنه) বলেন-
سأل أعربى النبى صلى الله عليه وسلم أية فقال له قل لتلك الشجرة رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعوك فقال فمالت الشجرة عن يمينها وشمالها وبين يديها وخلفها فقطعت عروقها ثم جاءت يتخذ الارضتجر عروقها مغبرة حتى وقعت بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال له السلام عليك يا رسول الله قال الاعرابى مرها فلترجع الى منبتها فرجعت فدلت عروقها فاستوت فقال الاعربى ائذن لى اسجد لك قال لو أمرت احدا ان يسجد لاحد لامرت المرأة ان تسجد لزوجها قال فأذن لى ان اقبل يديك ورجليك فاذن له
অর্থাৎ, একজন বেদুঈন হুজুর এ পাক (ﷺ)'র কাছে মুজিযা দেখতে চাইল, হুজুর এ পাক (ﷺ) বেদুঈনকে এরশাদ করলেন ওই বৃক্ষটাকে বলো আল্লাহর রসূল তোমাকে ডাকছেন, সে যখন বললো বৃক্ষ তার ডানে-বামে, সম্মুখে পেছনে ঝুকল তখন ওটার শিকড়গুলো ভেঙ্গে গেল। তারপর তা মাটি খোদাই করে শিকড়গুলো টেনে বালি উড়িয়ে হুজুর এ পাক (ﷺ)’র সম্মুখে এসে দাড়াল এবং বলল আস্সালামু আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ! বেদুঈন বললো “আপনি তাকে আদেশ করুন যেন এটা ওখানে (উৎপত্তিস্থল) ফিরে যায়” তাঁর নির্দেশে ওটা ফিরে গেল এবং তার শেকড়গুলোর উপর গিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। বেদুঈন বললো “আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনাকে সিজদা করবো” তিনি এরশাদ করলেন, “যদি কাউকে সাজদাহ করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে।” বেদুঈন লোকটি আরজ করলো “হুযুর তাহলে আমাকে আপনার হস্ত ও পদদ্বয় মোবারক চুম্বন করার অনুমতি দিন” তিনি [নবীজী (ﷺ)] তাকে অনুমতি প্রদান করলেন।
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম নববীঃ কিতাবুল আযকার।
২.ইমাম আবু নুয়াইম আল-ইস্পাহানী [৩৩৬-৪৩০হিঃ]: দালাইলুন্নবুয়াত কৃত ইমাম আবু নাঈম, পৃষ্ঠা ৩৩২।
৩.ইমাম কাজী আয়াজ আল-মালেকীঃ আশ-শিফা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা: ২৯৯।
৪.ইমাম বাযযারঃ আল মুসনাদুল বাযযারঃ খন্ড ৩, পৃষ্ঠা: ৪৯। হাদিস : ৪৪৫০।
৫.ইমাম মুকরি তাঁর 'তাকবিল আল ইয়াদ' গ্রন্থে (পৃষ্ঠা #৪ # ৫)
৬.ইবনে হাজার আসকালানীঃ ফাতহুল বারী শরহে বুখারী (খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৭)।
৭.ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল - মুস্তাদরাক, কিতাবুল বিরর ওয়াস সিলাতি : হাদিস : ৭৩২৬
৮.ইমাম শায়বানী , যাখিরাতুল হুফফাজ , ২ / ১১৯৪পৃ . হাদিস : ২৫৪৮
৯.তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫২৮;
১০.আল কালামুল মুবীন, পৃষ্ঠা ১৪৬।
১১.নাসীমুর রিয়াজ শরহে শিফা ইমাম কাজী আয়াজ ৩য় জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫০।
❏ হাদিস ৭:
অপরদিকে উক্ত হাদিসটি আরাে অনেক মুহাদ্দীসিন হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।”
১.ইমাম ইবনে মাজাহ : আস - সুনান ; কিতাবুল ফিতান : হাদিস : ৪০২৮
২.ইমাম আবু ইয়ালা ; আল - মুসনাদ : হাদিস : ৩৬৮৫
৩.ইমাম আবু শায়বাহ : আল - মুসান্নাফ : হাদিস : ৩২৩৯০
❏ হাদিস ৮:
হযরত ছাফওয়ান বিন আচ্ছাল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, জনৈক ইয়াহুদী তার সঙ্গীকে বলল, আমাকে এ নবীর নিকট নিয়ে চল। তদুত্তরে সাথী তাকে বলল, তুমি তাঁকে নবী বলবে না কারণ, সে যদি শুনে তুমি তাঁকে নবী বলছ তাহলে তাঁর চার চোখ হয়ে যাবে অর্থাৎ তিনি খুশী হয়ে যাবেন। অতঃপর তারা হুযূর আকরাম (ﷺ)-এর নিকট আসল ও ৯টি নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তদুত্তরে হযরত রাসূলে মকবূল (ﷺ) বললেন,
১. মহান আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার/শরীক করো না,
২. চুরি করো না,
৩. যেনা করো না,
৪. যাকে মহান আল্লাহ্ পাক হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য শাসকের কাছে নিওনা,
৫. যাদু করো না,
৬. সুদ খেয়ো না,
৭. সৎ নর-নারীকে যেনার অপবাদ দিওনা,
৮. যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করো না,
৯. বিশেষ করে তোমরা ইহুদিরা শনিবার দিন সীমাতিক্রম করবে না। সাফওয়ান (رضي الله عنه) বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﻓﻘﺒﻼ ﻳﺪﻳﻪ ﻭ ﺭﺟﻠﻴﻪ ﻭ ﻗﺎﻻ ﻧﺸﻬﺪ ﺍﻧﻚ ﻧﺒﻲ
অর্থ: অতঃপর তারা উভয়ে হুজুর পাক (ﷺ)-এর হাত ও কদম মুবারক চুম্বন করল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর নবী।
তখন রাসূলে পাক (ﷺ) তাদেরকে বললেন, তবে কি কারণে তোমরা ইহুদীরা আমার অনুসরণ করো না। তদুত্তরে তারা বলল, দাউদ নবী দু’আ করেছেন, হে প্রতিপালক, সবসময় যেনো আমার আওলাদে নবী থাকেন। আমরা আপনাকে যদি মান্য করি এ কথা তাদের কানে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ইহুদীগণ আমাদেরকে হত্যা করবে।
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী : ৫/ ৫৫ পূ, : কিতাবুল আদাব : হাদিস : ২৭৩৩। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রহ.) বলেন : উক্ত হাদিসটি : হাসান, সহীহ।
২.মেশকাত শরীফ: কিতাবুল ইমান, পৃষ্ঠা ১৭,
৩.ইবনে মাযাহ : আস - সুনান : ৪/ ১৪২ পূ, হাদিস : ৩৭০৫।
৪.ফাতহুল বারী ৫৭ পৃষ্ঠা,
৫.তুফহাতুল আহওয়াজী : ৭ম খণ্ড, ৫২৫ পৃষ্ঠা,
৬.মুসান্নেফে ইবনে আবি সাইবাহ্: ৮ম খন্ড, ৫৬২ পৃষ্ঠা,
৭.এলাউস ছুনান
৮.মিশকাত শরীফ -কিতাবুল ঈমান- বাবুল কাবায়ের ওয়া আলামাতুন নিফাক- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ- হাদিস, হা / ৫৮।
৯.সুনানে আবি দাউদ , হা / ৫২২৫।
১০.সুনানুন নাসায়ী বি শরহিস জালালুদ্দীন সূয়ুতী (رحمة الله)
১১.ইমাম নাসায়ী : আস - সুনান : ৩/ ১৪২ পৃ . হদিস : ৪০৭৮
১২.ইমাম নাসায়ী : আস সুনানুল কোবরা : ২/ ৩০৬ পৃ . হাদিস : ২৪১
১৩.ইমাম ত্বহাবী : শরহে মাআনিল আছার : ৩/ ২১৫ .
১৪.ইমাম তাবরানী : মু ' জামুল কবীর : ৮/ ৬৯ পৃ . হাদিস : ৭৩৯৬
১৫.ইমাম আবি শায়বাহ : আল - মুসান্নাফ : ৫২৯২ পৃ . হাদিস : ২৬২০৭।
১৬.ইমাম হাকেম নিশাপুরী : অলি - মুস্তাদরাক : ১/ ৯ পৃ . হাদিস : ২০। ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) তার সনদকে সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন।
১৭.ইমাম আহমদ : আল - মুসনাদ : ৪/ ২৩৯ পৃ .
➠ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন,
“এই হাদিসটি সুনানে আরবাআতে রয়েছে, আর সনদটি শক্তিশালী।” (ইবনে হাজার, তাখখিছুল হবীর, ৪/ ১৭৩ পৃ. হা/ ২১৮৬)
➠তিনি এক বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেন,“ এ বিষয়ে অনেক হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে শক্তিশালী সনদ হল হযরত জারেঈন (رضي الله عنه) এর হাদিস।"
(ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১১/ ৫৭ পৃ .)
➠আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) বলেন," ইমাম তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ সনদটি সংকলন করেছেন। সনদটি সহীহ।" (বদরুল মুনীর, ৯/ ৪৮ পৃ .)
➠ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,“ ইমাম তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ সনদটি সংকলন করেছেন। হাকেম হাদিসটি সহীহ সনদে সংকলন করেছেন।" (খাসায়েসুল কোবরা, ১/ ৩১৭ পৃ .)
➠আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-" (ইমাম তিরমিযি এটি বর্ণনা করেছেন) এবং বলেছেন এটির সনদ হাসান, সহীহ। (ইমাম আবু দাউদ ও নাসাঈ এটি বর্ণনা করেছেন)
➠ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটির সনদ সহীহ, এ হাদিসের সনদে কোন ত্রুটি আছে বলে আমি পরিচিত নই যদিওবা শাইখাইন এটি বর্ণনা করেননি।"
(মিরকাত, ১/ ১৩০ পৃ . হা/ ৫৮)
তাই হাদিসটি সহীহ বলে প্রমাণিত হল। (তথ্যসূত্র প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচ, ১ম খন্ডঃ মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর)
❏ হাদিস ৯,১০,১১ :
হযরত ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেছেন,
উক্ত সাহাবীর মতঃ
☛ইয়াযীদ নিব আসওয়াদ (رضي الله عنه),
☛ইবনে ওমর (رضي الله عنه) ও
☛কা’ব বিন মালেক (رضي الله عنه)
কদমবুচি ও হাতবুচির হাদীস বর্ণনা করেছেন।"
তিনি আরো বলেছেন যে, বর্ণিত হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
❏ হাদিস ১২:
হযরত রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ফাতেমা (عليه السلام)কে চুমু খেতেন আর বলতেন, আমি ফাতেমা (عليه السلام) থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হযরত আয়েশা (عليه السلام) এর মাথা মোবারক চুমু খেয়েছেন।
[ইমাম সারাখছিঃ মাবসুত লিস সারাখছি: ১০খণ্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা]
❏ হাদিস ১৩:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) রাসূলে কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেন-"যে সন্তান তার মায়ের দুচোখে চুম্বন করল, তা তার জন্য জাহান্নাম থেকে আবরণ হয়ে গেল;
من قبل رجل امه فكانما قبل عتبة الجنة
যে ব্যক্তি তার মায়ের পা চুম্বন করল সে যেনো জান্নাতের চৌকাঠ চুম্বন করল।
১.ইমাম বায়হাকীঃ শুআবুল ইমান।
২.ইমাম সারাখছিঃ মাবসুত লিস সারাখছি: ১০খণ্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা
৩.দুররুল মুখতার , খন্ড - ৯ , পৃ - ৬০৬ , দারুল মারিফা , বৈরুত।
৪.মুফতি আমজাদ আলী আজমী হানাফীঃ বাহারে শরীয়ত, ১৬ খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মাদীনা।
❏ হাদিস ১৪:
ইমাম তাবারী (رحمة الله) ও ইবনুল মুর্ফিরী (رحمة الله) রেওয়ায়েত করেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) যখন হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (رضي الله عنه)-এর বাহনের লাগাম ধরলেন, তখন হযরত যায়েদ (رضي الله عنه) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র হাতে চুমু খেলেন।
[ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আসরার- কিতাবুল হাজর ওয়াল ইবাদত: ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭০৭-৭০৮]
❏ হাদিস ১৫:
হযরত সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) বলেন, হযরত আবু ওবায়দা (رضي الله عنه) হযরত ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه)-এর হাত চুমু খেয়েছেন।
[ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আসরার- কিতাবুল হাজর ওয়াল ইবাদত: ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭০৭-৭০৮]
❏ হাদিস ১৬:
আবু বকর ইবনুল মুকরী (رحمة الله) হযরত আবী মালেক আল্ আশয়ারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি ইবনে আবী আওফা (رضي الله عنه)-কে বললাম- আমাকে আপনার হাতে চুমু খাবার জন্য আপনার হাতটি প্রদান করুন। যেই হাতে আপনি রাসূলে পাকের নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন।
✦ইমাম বুখারী (رحمة الله) এ হাদীসকে তাঁর রচিত কিতাবুল আদবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
✦ইমাম তিবরানী (رحمة الله)ও এ হাদীসটিকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন।
❏ হাদিস ১৭:
হযরত আবদুর রহমান ইবনে রাযীন (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে করিম (ﷺ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি এবং তাঁর হাত মোবারকে চুমু খেয়েছি। (কিন্তু রাসূলে পাক তা অপছন্দ করেন নি।)
[মুফতি আল্লামা সৈয়্যদ আমীমুল ইহসানঃ ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আসরার- কিতাবুল হাজর ওয়াল ইবাদত: ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭০৭-৭০৮]
❏ হাদিস ১৮:
ان رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم امرنى شيئا ازداد به يقينا- فقال اذهب الى تلك الشجرة فاد عها- فذثب اليها- فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعوك- فجائت حتى سلمت على النبى صلى الله عليه وسلم- فقال لهاارجعى فرجعت- ثم اذن له فقبل رأسه ورجليه- اخرجه حاكم فى صيح الاسناد. (مستدرك حاكم، فتح البارى ج১১ صفه ৫৭، تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৮ الكلام المبين صفه ১৪৬)
অর্থঃ- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার নিকট এসে বলল ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ﷺ)! আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিনি তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয়ই রসূলাল্লাহ্ (ﷺ) তিনি তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে রসূলাল্লাহ্ (ﷺ)কে সালাম করলো। রসূলাল্লাহ্ (ﷺ) তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি স্বাপেক্ষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাথা মোবারক ও উভয় কদম (পা) মোবারক চুম্বন দিল। হাকিম এ হাদীছ শরীফখানা সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেন।
(মোস্তাদরেকে হাকিম, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮, আল কালামুল মুবীন পৃঃ ১৪৬)
❏ হাদিস ১৯:
حضرت ابو سفیان کے مناقب مین لکھا ھے حضرت عباس رضی اللہ عنہ نے فرمایا کہ مین نے اپکے قدم مبارک کو بوسہ دیا- (مستدرک حاکم ج3 صفہ254)
অর্থঃ- হযরত আবু সুফিয়ান (رضي الله عنه) উনার “মানাক্বিবে” বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি উনার কদম মোবারকে চুম্বন দিয়েছি। (মোস্তাদরেকে হাকিম জিঃ ৩ পৃঃ ২৫৪)
❏ হাদিস ২০:
فَقَامَ إِلَيْهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رضي الله عنه فَقَبَّلَ رِجْلَهُ وَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اﷲِ، رَضِيْنَا بِاﷲِ رَبًّا وَبِکَ نَبِيًّا وَبِالإِْسْلَامِ دِيْنًا وَبِالْقُرْآنِ إِمَامًا فَاعْفُ عَنَّا عَفَا اﷲُ عَنْکَ فَلَمْ يَزَلْ بِهِ حَتَّی رَضِيَ.
অতঃপর হযরত উমর (رضئ اللہ تعالی عنہ) উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বরকতময় কদম মুবারকে গিয়ে চুম্বন করলেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক এবং আপনাকে নবী, দ্বীন আল ইসলাম, পথপ্রদর্শক আল-কুরআন হিসেবে পেয়ে এর উপর সন্তুষ্ট। আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ পাক আপনার উপর আরও সন্তুষ্ট হোন। হযরত উমর (رضئ اللہ تعالی عنہ) ইহা ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকলেন যতক্ষণ না প্রিয়নবী (ﷺ) সন্তুষ্ট হয়ে যান।
[ইমাম ইবনে কাসীরঃ তফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আল মায়িদার তফসীর, অনুবাদকঃ মাসুম]
❏ প্রমাণ ১ :
ইমাম হযরত মুসলিম (رحمة الله) [ওফাত ২৬১হিঃ] ইমাম বুখারী (رحمة الله) [ওফাত ২৫৬হিঃ] এর নিকট কদম্বুচির অনুমতি প্রার্থনা সম্পর্কিত ঘটনা।
أحمد بن حمدان القصار سمعت مسلم بن الحجاج وجاء إلى محمد بن إسماعيل البخاري فقبل بين عينيه وقال دعني حتى أقبل رجليك يا أستاذ الأستاذين وسيد المحدثين وطبيب الحديث في علله حدثك
অনুবাদ: আহমদ বিন হামদান আল কাসার (رحمة الله) বলেছেন যে, তিনি ইমাম মুসলিম (رحمة الله)-কে ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দরবারে আসতে দেখেন এবং তিনি তাঁর কপালে চুম্বন করেন, "তখন তিনি তাঁর কদমে চুম্বন করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন" তখন তিনি বলেছিলেন: "হে মহান ওস্তাদের ওস্তাদ! হে চিরাচরিত (ইমামগণের) শিক্ষক! হাদিসের দুর্বলতা সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।
তথ্যসূত্রঃ
►ইমাম ইবনে কাসীরঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (১১/৩৩), মক্তবা আল মা'রিফ, বৈরুত, লেবানন দ্বারা প্রকাশিত।
►খতিব আল-বাগদাদীঃ তারিখে বাগদাদে বর্ণনা করেছেন (১৩: ১০২),
►হাকিমঃ তারীখ আল হাকিম
►মারিফাত `উলুম আল হাদিস,
►বায়হাকীঃ আল-মদখাল,
►ইবনে হাজার আসকালানীঃ হাদীউস সারি (পৃষ্ঠা ৪৮৮) এবং তাঁর নূকাত (২: ৭১৭-৭১৯),
►তবকাত শফিয়িয়ায় বুখারির অধ্যায়ে আল-সুবকি,
►ইবনে আল-মুকরি '(মৃত্যু ৩৮১) তাঁর আল-রুখসা ফাই তাকবিল আল-ইয়াদ (রিয়াদ সংস্করণ ১৯৮৮)
►ইমাম যাহাবী: সিয়ারু নুবালা, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা নং: ৩৩৪৩, ইমাম বুখারীর জীবনী অনুসারে, জীবনী নং: ৪৯৬৯,
►ইমাম নববীঃ তাহযিব আল আসমা ওয়ার রিজাল খন্ড-১, প -৮৮।
►হাফিজ ইবনে ই হাজর আছকালানী: ফাতহুল বারী, অধ্যায়: মুকাদমাহ ফাতহুল বারী
►ইবনে নুকতা 'আত-তাকইদ লি মারিফা রুওয়াত আস-সুনান ওয়াল-মাসানীদ' (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)
►আল কিরামাতু ওয়াল তাক্ববীল।
►মিযানুল আখবার ৪৯ পৃষ্ঠা ।
❏ প্রমাণ ২ :
পাক ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দিসে দেহলভীর অভিমতঃ
قال الشيخ عبد الحق المحدث الدهلوى: وفى هذا الحديث دليل على جواز تقبيل الارجل-
পাক-ভারতের প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘আশিয়াতুল লুমআত’ কিতাবে শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, পরহেজগার আলেম-এর দস্তবুচি জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন- মুস্তাহাব। যদি আলেম ও ন্যায়-পরায়ন বাদশাহর হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের সম্মানার্থে বুচা বা চুমু দেয়, তাতে কোন দোষ নেই। তবে দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর উদ্দেশ্যে চুম্বন করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক রাসূলে পাক (ﷺ)'র কদমবুচি করার বর্ণনা এসেছে।
[সূত্র: আশিয়াতুল লময়াত, খন্ডঃ ৪র্থ, পৃ: ৩৩, মোজাহিরুল হক্ব, খন্ড: ৪র্থ, পৃষ্ঠা: ৬০।]
❏ প্রমাণ ৩ :
কদম্বুচি সম্পর্কে ফতোয়ার কিতাবে আরো বর্নিত আছেঃ
تمام روايات سے ثابت هوا كه علماء ومشاءخ اور ديني شرف ركهنے والے حضرات كي دست بوسي بلكه قدم بوسي نيز پيشاني وغيره پر بوسه دينا سنت اور تعامل صحابه وتابعين سے بلا كسي نكير كے ثابت هے
অর্থ: হাদীস শরীফের সকল বর্ননা দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, দ্বীনদার, আলেম,পীর ও বূজর্গ উনাদের হস্তবুচি বা হাত চুম্বন, কদম্বুচি বা পা চুম্বন এমনকি কপালে চুম্বন দেওয়াও সুন্নত এবং সাহাবায়ে কিরাম এবং হযরত তাবেয়ীগণের আমল হিসাবে বিনা প্রশ্নে প্রমানিত।"
[আল কিরামাতু ওয়াল তাক্ববীল লিশ শায়েখ আবেদ সিন্ধি]
❏ প্রমাণ ৪ :
মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর অভিমত :
اس حدیث پہ بھی معلوم ہوا ہے یہ جو محبین کے عادت ہے کہ پیر کے ہاتھ کو یا پیشانی وغیرہ کو بوسہ دیتے ہیں اسکا بھی کچھ حرج نہیں البتہ اذن شرعی سے تجاوز نہ چاہئے۔
অর্থ, তিনি “আওাকাশুফ” গ্রন্থের একটি হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন, এই হাদীসের জ্ঞাতব্য মূল কথা হল- পীরের প্রায় মুরীদগণের অভ্যাস হল স্বীয় পীরের হাত, পা ও কপালে চুম্বন করা। সুতরাং এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে শরয়ী হুকুমের কোন ব্যাঘাত যাতে না ঘটে। [সূত্রঃ ‘আত্তাকাশুফ’।]
এমদাদুল ফতোয়া কিতাবের ভাষ্য মতে :
پس صحیح جواز تقبیل قدم فی نفسہ ہے اور فقہاء کی منع عارض مفسد۔
অর্থ- কদমবুচি মূলত একটি জায়েয আমল। তবে দিক বিবেচনা করে তা নিষেধ করেছেন।
১.এমদাদুল ফতোয়া, খন্ড ৫, পৃ: ৪৫।
২.মাওয়ায়েজে আশরাফিয়!
আশরাফ আলী থানবী আরো ফতোয়া দিয়েছেঃ
عالم و والدين كي تقبيل يد ورجل جءز ھے
অর্থঃ আলিম, পিতা-মাতার হস্তবুচি (হাত চুম্বন) এবং কদম্বুচি (পা চুম্বন) জায়িয !"
[ইমদাদুল আহকাম ১ খন্ড ১৩৫।]
এমদাদুল আহকাম গ্রন্থে আছে-
عالم،والدین کہ تقبیل ید ورجل جائز ہے مگر انحناء مثل رکوع حرام ہے۔
অর্থ, আলেম, পিতা-মাতা ইত্যাদির হাত ও পায়ে চুম্বন করা জায়েয, কিন্তু রুকুর উদ্দেশ্য মাতা ঝুকানো হারাম। [সূত্র: এমদাদুল আহকাম: খন্ড, ১ম পৃ: ৩৫ পৃষ্ঠা।]
❏ প্রমাণ ৫ :
মাসাআলাঃ তবে ফাসেক-ফাজের, জালেম শাসক এবং জাহেল মুর্খকে কদম বুচি ও হাতবুচি করা মাকরূহ ও গুনাহ। কোন কোন ফকিহ এভাবে বলেছেন।
❏ প্রমাণ ৬ :
দেওবন্দী গুরু রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তার কিতাবে লিখেছেঃ
وفی الفتاویٰ رشیدیہ: سوال:کسی شخص کے لئے تعظیم کو کھڑا ہو جانا اور پاوں پکڑنا اور چومنا تعظیما درست ہے یا نہیں؟
جواب: برائے تعظیم دینداروں کے لئے کھڑا ہونا درست ہے اور پاوں چومنا اس جیسی شخص کا بھی درست ثابت ہے۔
অর্থ, দেওবন্দি মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী তার রচিত “ফতুয়ায়ে রশিদিয়ার” মধ্যে প্রশ্নোত্তরে বলেন- প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির সম্মানে দাড়ানো বা তাকে কদমবুচি করা বৈধ কিনা ? উত্তর: দ্বীনদার ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়ানো ও তাদের পায়ে চুমু খাওয়া বৈধ এবং তা হাদীসে রসূল দ্বারা প্রমাণিত। [ফতোয়ায়ে রশীদিয়া কামেল ৪৫৯ পৃষ্ঠা]
❏ প্রমাণ ৭ :
দেওবন্দী মুফতী শফী তার কিতাবে লিখেছে-
پسي مختصر بات يهي هے که سنت رسول الله صلي الله عليه و سلم اور تعامل صحابه مين اسكي حوحد منقول هے اسكي اسي حدپر ركها جاءے-تو
بلا شبه دست بوسي قدم بوسي معانقه مصافحه سب جءز بلكه سنت ومستحب هيی
অর্থঃ সূতরাং সংক্ষিপ্ত কথা হলো যে, হাদীস শরীফ ও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনের আমল দ্বারা এর (কদম্বুচির) যেই সীমা বর্ননা করা হয়েছে, আমাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। নিঃসন্দেহে হস্তবুছী (হাত চুম্বন) কদম্বুচি ( পা চুম্বন) , মুয়ানিকা, মুছাহাফা, সবই জায়িয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।"
[জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ ১ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা]
তিনি আরও বলেন,
حضرت شیخ محمد عابد سندھی نے اپنی رسالہ میں تحریر فرمایا کہ تعظیم و تکریم کیلئے دست بوسی یا قدم بوسی صرف ان لوگوں کی جائز ہے جو عالم صالح یا سلطان عادل ہویا کوئی دینی شرف و بزرگی رکھتا ہو۔[ذکر الشفعی فی جواھر الفقہ صفحہ،১৮৫ جلد،৮]
অর্থ- তিনি বলেন, হযরত শায়খ মুহাম্মদ আবেদ সিনদী বলেছেন, তাকওয়াবান আলেম, ন্যায়পরায়ন বাদশা, ধর্মীয় দৃষ্টিতে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী শুধুমাত্র এমন লোকদের হাত ও পা চুম্বন করা জায়েয।
[সূত্র: জাওহারুল ফিকহ: খন্ড ১, পৃ: ১৮৫।]
❏ প্রমাণ ৮ :
দেওবন্দী গুরু মাহমুদুল হাসান লিখেছে,
جو شخص واجب الاکرم ہو اس کی قدم بوسی کے اجازت ہیں لیکن اعتقاد میں غلو نہ ہو اور سجدہ کی ھیّت نہ ہوئی پائی۔
অর্থ, যে ব্যক্তি সম্মানের পাত্র তার কদমবুচি করা বৈধ। তবে ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং সেজদার মত হবেনা।
[সূত্র: ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: খন্ড-১ পৃষ্ঠা: ১৭৫।]
❏ প্রমাণ ৯ :
ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীতে বর্ণিত আছে,
اِنْ قَبَّلَ يَدَ عَالِمِ اَوْ سُلْطَانٍ عَّادِلٍ بِعِلْمِهِ وَعَدْلِهِ لَا بَاسَ بِهِ
যদি আলিম বা ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের হাতে চুমু দেয়া হয় ওদের ইলম ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে, তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই।
[ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীঃ অধ্যায়- কিতাবুল কারাহিয়া مُلَاقَاتُ الْمُلُوْكِ]
একই গ্রন্থে আরো উল্লেখিত আছে,
وَلَاْبَاسَ بِتَقُبِيْلِ قَبْرِ وَالِدَيْهِ كَذَا فِى الْغَرَائِبِ
নিজের মা-বাপের কবরে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই যেমন গরায়েবে বর্ণিত হয়েছে।
[ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীঃ অধ্যায়- কিতাবুল কারাহিয়া مُلَاقَاتُ الْمُلُوْكِ]
সেই আলমগীরীর আরও লিপিবদ্ধ আছে,
اِنَّ التَّقْبِيْلَ عَلَى خَمْسَةِ اَوْجَهٍ قُبَلَةُ الرَّحْمَةِ كَقُبْلَةِ الْوَالِدِ وَلَدَهُ وَقُبْلَةُ التَّحِيَّةِ كَقُبْلَةِ الْمُؤْمِنِيْنَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ وَقُبْلَةُ الشَّفَقَةَ كَقُبْلَةِ الْوَلَدِ لِوَالِدَيْهِ وَقُبْلَةُ الْمَوَدَّةِ كَقُبْلَةِ الرَّجُلِ اَخَاهُ وَقُبْلَةُ الشَّهْوَةِ كَقُبْلَةِ الرَّجُلِ اِمْرَأَتَهُ وَزَادَ بَعْضُهُمْ قُبْلَةَ الدِّيَانَةِ وَهِىَ قُبْلَةُ الْحَجْرِ الْاَسْوَدِ
চুম্বন পাঁচ প্রকার-
১.আশীর্বাদসূচক চুম্বন, যেমনঃ বাবা ছেলেকে চুমু দেয়;
২.সাক্ষাৎকারের চুম্বন, যেমনঃ কতেক মুসলমান কতেক মুসলমানকে চুমু দেয়;
৩.স্নেহের চুম্বন, যেমনঃ ছেলে মা-বাবাকে দেয়;
৪.বন্ধুত্বের চুম্বন, যেমনঃ এক বন্ধু অপর বন্ধুকে চুম্বন দেয়;
৫.কামভাবের চুম্বন, যেমনঃ স্বামী স্ত্রীকে দেয়।
তবে,কেউ কেউ ধার্মিকতার চুম্বন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের চুম্বনকে এর সাথে যোগ করেছেন।
[ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীঃ অধ্যায়- কিতাবুল কারাহিয়া مُلَاقَاتُ الْمُلُوْكِ]
❏ প্রমাণ ১০ :
সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী (رحمة الله) বলেন, “বুধবার আমার পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (رحمة الله)-এর কদমবুছীর বরকত নছীব হলো।” (দলীলুল আরিফীন)
❏ প্রমাণ ১১ :
মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
لا يكره التقبيل لزهد وعلم وكبرسن -قال النبوى رحمةالله تعالى عليه تقبيل اليد للغير ان كان لعلمه وصيانته وزهده وديانته ونحو ذالك من الامر الدينيه لم يكره بل يستحب
অর্থাৎ, তিনি বলেন, চুমু দেয়া মাকরুহ হবেনা যখন তা কোন পরহেজগারিতা, ইলম বা জ্ঞান ও বয়োযষ্ঠের কারনে হবে। ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাত চুম্বন, যদি ব্যক্তির জ্ঞানগত মার্যাদা, খোদা ভীরুতা ও ধামির্কতা ইত্যাদি কারনে হয় তাহলে মাকরুহ তো হবে না; বরং মুস্তাহাব বা উত্তম আমল হিসেবে বিবেচিত হবে। [সূত্রঃ মিরকাত, খন্ড ৯ম, পৃঃ ৭৬।]
❏ প্রমাণ ১২ :
দুররুল মুখতারে বর্ণিত আছে,
وَلَا بَاسَ بِتَقْبِيْلِ يَدِا الْعَالِمِ وَالسُّلْطَنِ الْعَادِلِ
আলিম ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের হাতে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই।
[দুররুল মুখতারঃ পঞ্চম খন্ড, কিতাবুল কারাহিয়াতের শেষ অধ্যায় الاستبراء : মুসাফাহা পরিচ্ছেদ]
❏ প্রমাণ ১৩ :
ফাত্ওয়ায়ে শামীতে একটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছে, যার শেষাংশে বর্ণিত আছে-
قَال ثُمَّ اَذِنَ لَه‘ فَقَبَّلَ رَأْسَه‘ وَرِجْلَيْهِ وَقَالَ لَوْ كُانْتُ اَمِرًا اَحَدًا اَنْ تَسْجُدَ لَاحَدٍ لَاَمَرْتُ الْمَرْ أَةَ اَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَقَالَ صَحِيْحُ الْاَسْنَادِ
হুযূর (ﷺ) সেই ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন। তাই সে তাঁর মস্তক ও পা মুবারক চুমু দিলেন। অতঃপর হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান যদি আমি কাউকে সিজ্দার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম স্বামীকে সিজ্দা করতে।
[ফাত্ওয়ায়ে শামীঃ ইমাম হাকিম (রহঃ)- আল-মুস্তাদরাক আল হাকিম]
❏ প্রমাণ ১৪ :
দুররুল মুখতারে সেই জায়গায় আলমগীরীর মত পাঁচ প্রকার চুম্বনের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে নিম্ন লিখিত বক্তব্যটুকু বর্ধিত করেছেন-
قُبْلَةُ الدِّيَانَةِ لِلْحَجْرِ الْاَسْوَدِ وَتَقْبِيْلُ عُتْبَةِ الْكَعْبَةِ وَتَقْبِيْلُ الْمُصْحَفِ قِيْلَ بِدْعَةِ لَكِنْ رُوِىَ عَنْ عُمَرَ اَنَّه‘ كَانَ يَاْخُذُ الْمُصُحَفِ كُلَّ غَدَاةٍ وَّيْقَبِّلُهْ وَاَمَّا تَقْبِيْلُ الْخَبْزِ فَجَوَّزَ الشَّافِعِيَّةُ اَنَّه‘ بِدْعَةٌ مُّبَاحَةٌ وَّقِيْلَ حَسَنَةٌ مُّلَخَّصًا
অর্থাৎ দ্বীনদারীর এক প্রকার চুম্বন রয়েছে, সেটা হচ্ছে হাজর আসওয়াদে চুম্বন ও কাবা শরীফের চৌকাঠে চুম্বন। কুরআন পাককে চুমু দেয়াটা কতেক লোক বিদ্আত বলেছেন। কিন্তু হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতিদিন সকালে কুরআনে পাক হাতে নিয়ে চুমু খেতেন এবং রুটি চুমু দিয়াকে শাফেঈ মাযাহাবের লোকেরা জায়েয বলেছেন। কেননা এটা বিদ্আতে জায়েয। অনেকে এটাকে বিদ্আতে হাসানা বলেছেন।
❏ প্রমাণ ১৫ :
হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (رحمة الله), আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله)'র বরাতে বর্ণনা করেন-
قال الامام العينى بعد كلام فعلم اباحة تقبيل اليد والرجل والرأس كما علم من احاديث المتقدمة اباحتها على الجبهة وعلى العينين وعلى الشفتين على وجه المبرة والكرام
অর্থাৎ, আল্লামা আইনী বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পরে হাত চুম্বন, কদমবুচি, মাথা বুচি, ও ইত্যাদির বৈধতা প্রমানিত হলো। যেভাবে বর্ণিত হাদীস হতে কপালে, দুই চোখের মাঝে, দু’ঠোটের উপরে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হল, তবে এ সকল ক্ষেত্রে চুম্বন তখন জায়েয যখন সম্মান ও বরকত হাসিল উদ্দেশ্য হয়।
[সূত্রঃ রদ্দুল মোখতার, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা- ৩৮০।]
❏ প্রমাণ ১৬ :
ঢাকা সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি আল্লামা আমিমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন, আমি বলব এ রকম কদম চুম্বন বা হস্ত চুম্বন দেয়া অনেক সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে।
☛তার মধ্য থেকে হযরত ওমর রাাদ্বিয়াল্লাহু আনহু,
☛হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه),
☛হযরত আবু লুবাবা (رضي الله عنه),
☛হযরত কা’ব (رضي الله عنه) এবং তাঁর দুই সঙ্গী
☛হযরত মাযীদাতুল আসরী (رضي الله عنه),
☛হযরত উসামা ইবনে শরীক (رضي الله عنه) ও একজন গ্রাম্য সাহাবীকে তারা রাসূলে পাক (ﷺ)-এর হাত মোবারক চুম্বন করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ কদম মুবারকেও চুম্বন করেছেন।
[মুফতি আল্লামা সৈয়্যদ আমীমুল ইহসানঃ ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আসরার- কিতাবুল হাজর ওয়াল ইবাদত: ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭০৭-৭০৮]
❏ প্রমাণ ১৭ :
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’ এর মধ্যে আল্লামা ইবনে হাজর আল আসকালানী (رحمة الله) বলেন,
والحديث يدل على جواز تقبيل اليد والرجل -وقال الابهرى انما كرهها مالك اذا كانت على التعظيم والتكبر واما اذا كانت على وجه التقرب الى الله تعالى لدينه اولعلمه او لشرافته فان ذالك جائز-
অর্থাৎ, (তিনি বলেন) হাদীস শরীফ দ্বারা হাতবুচি ও কদমবুচির বৈধতা ও অনুমোদন প্রমাণিত। তবে ইমাম মালেক ও ইমাম আবহারী (রহ.) এগুলিকে মাকরুহ বলেছেন যদি বড়ত্ব আহমিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হয়। কিন্তু যদি আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যবান বান্দা বা জ্ঞানগত সম্মান ও মর্যাদার কারনে হয় তাহলে উহা নি:সন্দেহে জায়েয। [সূত্র: ফতহুল বারী শরহে বুখারী, খন্ড- ১১তম, পৃ: ৫৭।]
❏ প্রমাণ ১৮ :
বুখারী শরীফে মুকাদ্দামায় আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
قال جاء مسلم بن الحجاج الى البخارى فقبل بين عينيه وقال دعنى اقبل رجليك يا استاذ الاستاذين ويا سيدالمحدثين ويا طبيب الحديث فى علله –
অর্থাৎ,- একদা হযরত ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত ইমাম বুখারী (رحمة الله)'র সাক্ষাৎ পানে ধন্য হওয়ার জন্য আগমন করে ইমাম বুখারীর উভয় চোখের মাঝখানে চুম্বন করলেন, অত:পর তিনি ইমাম বুখারীকে সম্বোধন করে বললেন, হে শিক্ষককূল শিরমণি! মূহাদ্দিসগণের সম্রাট ও হাদীসে রাসূল (ﷺ) এর কারনসমূহ অনুসন্ধানে ডাক্তারের ভূমিকা পালনকারী সম্মানিত ও পবিত্র সত্ত্বা, আমাকে একটু মেহেরবানী করে আপনার পদযুগল চুম্বন করে ধন্য হওয়ার সুযোগ দিন।
[আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী (رحمة الله), বুখারী শরীফঃ অধ্যায়- মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠা- ৩।]
তথ্যউৎসঃ
১.সিহাহ সিত্তাহ এপ্সঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস একাডেমী, ইসলামিক সেন্টার, আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহিদ পাব্লিকেশন থেকে তথ্যসূত্র যুক্ত করা হল।
২.বিভিন্ন ইংরেজী ওয়েবসাইটের অনুবাদ।
৩.বিভিন্ন বাংলা ওয়েবসাইট।
৪.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন।
৫.সুন্নি-বিশ্বকোষ।
৬.জাল হাদিসই আল হাদিসঃ মুফতি আলাউদ্দিন জেহাদী
৭.আঞ্জুমান ট্রাস্ট ওয়েবসাইটঃ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ।