কুরআনে পাকের দৃষ্টিতে উপরোক্ত গুণাবলী ও পবিত্র স্বভাবসমূহ


সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আতা (رحمة الله) এর মাধ্যমে বর্ণিত হাদীস নবী করীম (ﷺ) এর অধিকাংশ আখলাক সমূহ সন্নিবেশ করা হয়েছে। আর ঐ সমস্ত গুণাবলী থেকে কতিপয় উন্নত মানের গুণাবলী কুরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে। এমর্মে হাদিসে কুদসীতে এসেছে, হে নবী (ﷺ) আমি আপনাকে পরবর্তী কওম সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদানকারী, অনুগত সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদ প্রদানকারী, ভয় প্রদর্শনকারী এবং উম্মী সম্প্রদায় অর্থাৎ আপনার কওমের লোকদের জন্য আশ্রয়দাতা হিসেবে প্রেরণ করেছি। ‘সাররাহ' নামক গ্রন্থে حرز ‘হেরয’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে সমতল ও উৎকৃষ্ট স্থান। যেহেতু সমতল ও উৎকৃষ্ট স্থানে মানুষ বিপদের সময় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। হাদীছ শরীফে আরও এসেছে, আপনি আমার বিশেষ বান্দা। আবদিয়াতের মাকামের হাকীকত ও মর্তবা খাছ করে আপনার জন্যই। এর যথার্থ মাকাম ও মর্যাদা অন্য কারও জন্য সমীচীনই নয়। আমি আপনাকে সমস্ত মাখলুকের কাছে রসূল করে প্রেরণ করেছি। আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাককিল। যেহেতু আপনি আপনার যাবতীয় কাজকর্মের ভালো মন্দ ফলাফল আমার উপর সমর্পণ করেছেন। আপনার নিজস্ব শক্তি ও সামর্থ্যকে অস্বীকার করেছেন। কাজেই আপনার যাবতীয় কাজ কর্মের দায় দায়িত্ব আমি গ্রহণ করেছি। আমার এ খাছ বান্দা এমন যে, তাঁর কথায় কোননারকম কঠোরতা ও রুক্ষতা নেই। তিনি বাজারে উঁচু স্বরে কথা বলেন না। বাজারে' কথাটি কয়দে ইত্তেফাক। কারণ বাজারে সাধারণত উঁচু স্বরে কথাবার্তা ও হট্টগােল হয়ে থাকে। এ কথার মর্ম এই যে, তিনি বাজারে আসা থেকে যতদূর সম্ভব বেঁচে থাকতেন। যেহেতু বাজার হচ্ছে পার্থিব কাজ কারবারের স্থান। তার পরকাল প্রেমিকের জন্য বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়াটা তার অবস্থা উপযোগী নয়।


তিনি মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রতিহত করতেন না। কথার মর্মার্থ এই যে, হুজুর আকরম (ﷺ) মন্দকাজের বদলা মন্দ কাজের মাধ্যমে গ্রহণ করতেন না। এ কাজটি শরীয়তসম্মত, যদি সীমা অতিক্রম করা না হয়। কিন্তু তিনি অপরাধ ক্ষমা করতেন এবং ক্ষমা করার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করতেন। অনুগ্রহ করতেন। যেমন অন্য জায়গায় তিনি এরশাদ করেছেন, যা উত্তম তা দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করে। আর আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেবেন না, যতক্ষণ না তার মাধ্যমে বক্র সম্প্রদায়কে সরল করে দেবেন এবং এ সম্প্রদায় কালেমায়ে তাইয়্যেবা পাঠ করে সরল সোজা হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা অন্ধকে দৃষ্টি দান করবেন। শ্রুতির বধিরতা দূর করে দেবেন ও কলবের পর্দাকে সরিয়ে দেবেন। কোন কোন বর্ণনা পূর্বোক্ত বর্ণনার সাথে এতটুকু বেশী যোগ করা হয়েছে,— আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি তাকে যাবতীয় সৌন্দর্য ও সৎস্বভাবের দ্বারা সুন্দর করেছি। সাররাহ' নামক গ্রন্থে এর অর্থ করা হয়েছে, সঠিক কথা বলা এবং সঠিক কাজ করা। আমি তাকে যাবতীয় সম্মানিত স্বভাব দান করেছি। পড়েছি প্রশান্তির পোশাক। নেকি ও কল্যাণ করেছি তার নিদর্শন এবং পরহেজগারীর করেছি তার হৃদয়। যেহেতু পরহেজগার হৃদয় সম্পৃক্ত ব্যাপার। এই পরিপ্রেক্ষিতে হুজুর আকরাম (ﷺ) নিজের সীমার দিকে ইশারা করে এরশাদ করেছেন, তাকওয়া বা পরহেজগার এখানে। সীনাকে এখানে জমির বলা হয়েছে। কেননা, মনের ভিতর কোনো কথা লুকিয়ে রাখাকে বলা হয় اضمار 'এজমার'। والحكمة مكولة ‘ওয়ালহেকমাতু মাকুলাতুন’ আমি হেকমতকে তার বুদ্ধি বানিয়েছি। কোনাে বস্তুর মধ্যে তার প্রকৃত যে অবস্থা থাকে সে সম্পর্কে অবহিত হওয়াকে হেকমত বলা হয়। আবার সত্যকথা বলা বা সঠিক কাজ করা অর্থেও হেকমত শব্দ ব্যবহৃত হয়। সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি পালন করে তার স্বভাব বানিয়েছি। ক্ষমা করা ও ভালো কাজের আদেশ করলে তার চরিত্র বানিয়েছি। ন্যায়বিচার বা মধ্যপন্থা কি তার জীবন, সত্যকে তাঁর শরীয়ত, হেদায়েত কে তাঁর ঈমান আর ইসলামকে তাঁর মিল্লাত বানিয়েছি।


তার সম্মানিত নাম হচ্ছে আহমদ। হুজুর আকরাম (ﷺ) অতীতের উম্মতগণের কাছে আহমদ ও মুহাম্মদ (ﷺ) উভয় নামে পরিচিত ছিলেন। পথভ্রষ্টতার পর আমি তার ওসিলায় সঠিক পথ দেখিয়েছি। অজ্ঞতার পর আমি তার ওসিলায় জ্ঞান প্রদান করেছি। আমি তার মাধ্যমে মাখলুককে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে উঠিয়েছি। অপরিচিতির পর আমি তার ওসিলায় মাখলুককে পরিচিতির মাকামে উন্নীত করেছি।


স্বল্পতার পর তার মাধ্যমে আমি তাদেরকে প্রাচুর্য দিয়েছি। দারিদ্র ও মুখাপেক্ষীতা পর আমি তার ওসিলায় তাদের সম্পদশালী করেছি। আমি তার মধ্যে বিক্ষিপ্ত অন্তরগুলো একাত্ম করেছি, বিভিন্ন চিন্তাধারাকে সমন্বিত করেছি। আর তাঁর উম্মতকে সমস্ত উম্মতের তুলনায় উত্তম উম্মত বানিয়েছি, তাদের সমগ্র মানব জাতির জন্য বিকশিত করা হয়েছে।


صلى الله عليه وسلم واله واصحابه اجمعين


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী] 


© | সেনানী এপ্স |

Top