মুনাফেকদের অনুমতি প্রদান


আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, 'আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মাফ করে দিয়েছেন। আপনি কেননা তাদেরকে এজাযত প্রদান করলেন? এই আয়াতের মাধ্যমে হুজুর পাক (ﷺ) থেকে গুনাহ সংঘটিত হওয়ার ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা ক্ষমা' শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় যে, গােনাহ অবশাই হয়েছে। আবার (কেন আপনি তাদেরকে অনুমতি দিয়েদিলেন?) এই প্রশ্নের অর্থ এস্তেহামে এনকারী। অর্থাৎ অনুমতি দেয়াটা উচিত হয়নি। সুতরাং মুনাফিকদেরকে অনুমতি প্রদান করাটা মুনকার ও অপছন্দনীয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির বিপরীত, যদিও রসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি আল্লাহ তায়ালা সান্তনা বাবার জন্য ‘এফ’ কে এনকারেইন' এর উপর মুকাদ্দাম করা হয়েছে। অপছন্দনীয়তা প্রকাশের পূর্বেই ক্ষমা প্রদর্শন অত্যন্ত প্রিয় ও দুষ্প্রাপ্য ব্যাপার। যা মহব্বত ও অনুগ্রহের ইঙ্গিত। ঐ দল বলে থাকে যে, রাসূল পাক (ﷺ) জীবনের দুটি কাজ এমন করেছেন, যার হুকুম আল্লাহ তায়ালা তাকে পূর্বে প্রদান করেননি। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে হুজুর পাক (ﷺ) বদরের যুদ্ধ বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর অপরটি হচ্ছে মুনাফেকদেরকে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার অনুমতি প্রদান করেছিলেন।


উক্ত আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে সৃষ্ট সন্দেহের জবাব এই—  'আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন' এরূপ কথা গোনাহ সংঘটিত হওয়ার পর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে এরূপ নয়। এখানে এ বাক্যটি হুজুর পাক (ﷺ) এর মর্যাদা ও সম্মানের গুরুত্ব বুঝানাের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। যেমন কোনাে ব্যক্তি তার একজন সম্মানিত বন্ধুকে লক্ষ্য করে বলে থাকে, আল্লাহ আমাকে মাফ করুন, তুমি আমার ব্যাপারে কি করলে? আল্লাহ তোমার উপর সন্তুষ্ট হােন, তুমি আমার কথার কি উত্তর দিলে? আল্লাহ্ তােমাকে ক্ষমা করুন, তুমি আমার অধিকার সম্পর্কে অবহিত হও ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের কথার দ্বারা বন্ধুর সম্মানের অতিরিক্ত বুঝানো ছাড়া আর অন্য কিছু উদ্দেশ্য থাকে না।


এ কথার উদ্দেশ্য বন্ধুর অন্যায় ও ত্রুটি সাব্যস্ত করা নয়। আরেকটি কথা এই যে, আল্লাহ্ এখানে 'গফারাল্লাহু' বাক্য ব্যবহার করবেন না। কেননা - ‘গাফারু’ শব্দ বিরূপ মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে বেশী প্রযােজ্য হয়। বিরুদ্ধবাদীরা যে অর্থ গ্রহণ করেছে ঐরূপ অর্থ বুঝানাের উদ্দেশ্যে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। হাদীছ শরীফেও এ ধরনের শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য ঘােড়া ও গােলামের যাকাত মাফ করে দিয়েছেন। অথচ ব্যাপার এমন নয় যে, ঘােড়া এবং গােলামের যাকাত পূর্ব থেকেই ওয়াজেব ছিলাে।

ইমাম কুশাইরী (رضي الله عنه) বলেন, যারা এরকম বলে যে গুনাহ পূর্বে মাফ করার কথা আসতে পারে না, তারা আরবি ভাষার রীতি সম্বন্ধে অজ্ঞ। তারা বলে যে, এ عفا الله عنك 'আফাল্লাহু আনকা' এর অর্থ হচ্ছে لم يلزم لك ذنب 'লাম ইয়ালযিম লাকা যামবুন' অর্থাৎ আপনার উপর গােনাহর কোনাে বৈধতা নেই। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবেও এরকম বলা হয়েছে। এখন অনুমতি দেয়া উচিৎ হয়নি, এই কথায় আসা যাক। তারা বলে যে, এনকার ও এতাব (শাসানাে) এটা উত্তম আচরণ পরিহার করার জন্য করা হয়েছে।


এ ব্যাপারে কেউ কেউ এরকম বলেছেন যে, হকতায়ালা হুজুর পাক (ﷺ) এর মুনাফিকদের অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে রুখসত দান করেছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, তারা যদি কারো ব্যাপার সম্পর্কে আপনার কাছে কিছু অনুমতি চায়, তবে আপনি তাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা অনুমোদন দিতে পারে। দেখা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা। অনুমতি প্রদান করাকে হুজুর পাক (ﷺ) এর কাছে ছেড়ে দিয়ে একটা সাধারণ হুকুম দিয়ে দিলেন, যা তার আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, কিতাবের তেতুলিয়া নামক কিতাব থেকে এরকম উদ্ধৃতি নকল করা হয়েছে যে, এক জামাত এরকম মত পােষণ করে যে, সেক্ষেত্রে হুজুরে পাক (ﷺ) কে শাসনে রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। এরূপ কক্ষণও হতে পারে না। বরং হুজুর পাক (ﷺ) এক্ষেত্রে মােখতার অর্থাৎ তাকে এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে অনুমতি দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে।হুজুর পাক (ﷺ) তাদের অনুমতি দিয়েছিলেন।তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জানালেন যে,আপনি যদি তাদেরকে অনুমতি নাও দিতেন তবুও তারা তাদের মোনাফেকি কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে। ‘আপনি তাদেরকে অনুমতি প্রদান করেছেন বলে কোনাে অভিযােগ এখানে নেই।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top