হজরত জাবের (رضي الله عنه) এর আয়েকখানা হাদীছ
হজরত জাবের থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রসুলেপাক (ﷺ) এর নিকট কিছু খানা চাইলো। রসুলেপাক (ﷺ) তাকে ষাট সা যব দান করলেন। লোকটি খাদ্যটুকু নিয়ে গিয়ে তাঁর স্ত্রী পরিজন ও মেহমানসহ খেয়ে যেতে লাগলো। পরিশেষে একদিন খাবারটুকু ওজন করে দেখার পর সহসাই সে খাদ্য ফুরিয়ে গেলো। লোকটি রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমতে যেয়ে তার অবস্থার কথা আরজ করলো। তিনি (ﷺ) বললেন, তুমি ওজন না করলে খাদ্য কখনও শেষ হতো না।
আহলে এলেমগণ বলেন, পেয়ালা থেকে ঘি নিংড়িয়ে বের করার কারণে এবং যবকে ওজন করার কারণে বরকত দূর হয়ে গেলো। হেকমত এই যে, নিংড়ানো এবং ওজন করা আল্লাহ্তায়ালার উপর তাওয়াককুলের পরিপন্থী কাজ। তাই নেয়ামত দূর করার দ্বারা শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। ইমাম নববী (رحمة الله) এ মাহাত্ম্যটি বর্ণনা করেছেন। এজন্যই খাবার পাতিলের ভিতর দৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছিলো।
এ সম্পর্কে উপরে একখানা হাদীছ বর্ণনা করা হয়েছে। ওয়াল্লাহু আ’লাম। বরকতের পরিপ্রেক্ষিতে ওই হাদীছখানাও বিখ্যাত, যা ইমাম বোখারী হজরত জাবের থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি হজরত জাবেরের পিতা হজরত আবদুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) এর ঋণ আদায় সংক্রান্ত। হজরত আবদুল্লাহ আনসারীর কর্জদাররা ঋণের টাকা দাবী করলো। কিন্তু আবদুল্লাহ আনসারীরখেজুর বাগানে ওই পরিমাণ খেজুর ছিলো না, যার দ্বারা ঋণ পরিশোধ করা যায়। হজরত জাবের নবী করীম (ﷺ) এর দরবারে নিবেদন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমার পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তিনি অনেক ঋণ রেখে গেছেন, আমার ইচ্ছা ছিলো, ঋণ শোধের উদ্দেশ্যে বাগানের খেজুরগুলো রসুল (ﷺ) এর দরবারে পেশ করি। কিন্তু খেজুরের পরিমাণ ঋণ শোধ করবার মতো নয়।
রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, যাও, আলাদা আলাদাভাবে রক্ষিত খেজুরের স্তূপগুলো একত্রে জমা করে কয়েকটি স্তুূপ করে ফেলো। রসুলেপাক (ﷺ) এর আদেশ মোতাবেক সেরকমই করলাম। এরপর আমি রসুলেপাক (ﷺ) কে সঙ্গে নিয়ে সেদিকে চললাম।
কর্জদাররা যখন রসুলেপাক (ﷺ) কে দেখলো, তখন তারা আমার পিছু নিলো। তিনি যখন তাদেরকে দেখতে পেলেন, তখন খেজুরের স্ত ূপের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করলেন, সবচেয়ে বড় স্তূপটির নিকট বসে পড়লেন এবং বললেন, কর্জদারদেরকে ডেকে আনো। অতঃপর রসুলেপাক (ﷺ) তাদেরকে মেপে মেপে খেজুর দিতে লাগলেন। এভাবে আমার মরহুম পিতার সমস্ত ঋণ শোধ হয়ে গেলো।
আমি মনে মনে মহাখুশী। ভাবলাম, পিতার ঋণ তো পরিশোধ হলো। এখন বোনদের জন্য কিছু না থাকলেও ক্ষতি নেই।
হজরত জাবেরের বোন ছিলেন নয়জন। বড় স্তুপটি থেকেই সকলের পাওনা পরিশোধ হয়েছিলো। অন্যান্য স্তুপগুলো পুরাই রয়ে গিয়েছিলো। হজরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, রসুল করীম (ﷺ) যে বড় স্তূপটি থেকে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করেছিলেন, পরে দেখি সেই স্তূপটিও আগের মতোই পূর্ণ। একটা খেজুরও কমেছে বলে মনে হলো না। কর্জদাররাও বিস্ময়ে হতবাক।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |