আল্লাহতায়ালা কর্তৃক সম্মান প্রদর্শন, পবিত্রতা বর্ণনা ও নেয়ামত দানের অঙ্গিকার
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, কালের কসম, মানুষ নিঃসন্দেহে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।' (সূরা আছর)। 'আছর' শব্দটির তাফসীর সম্পর্কে মুফাসফিরগণের ভিতর মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন আছরের অর্থ যমানা বা কাল। তবে সাররাহ নামক কিতাবে বলা হয়েছে দিবারাত্রির আবর্তন বিবর্তনের নাম হচ্ছে আছর। আর এরকম আবর্তন বিবর্তনকেই এককথায় দাহর বা যুগ বলা হয়। সুক্ষ্ ও আশ্চর্যজনক ঘটনাকেও আবার দাহর বলা হয়, যার বর্ণনা প্রদান ও সংখ্যা নিরূপণ করতে রসনা অক্ষম। আল্লাহ পাক বলেন, যমানাকে গালি দিওনা। কেননা যমানা আমি। এই হাদীসে কুদসীর আলােকে সূচিত হয় যে যমানা বা কালেরও মর্যাদা আছে। সময় ও প্রকৃতি রয়েছে লাভ-লােকসান, সুস্থতা-অসুস্থতা, বিপদাপদ শাস্তি ইত্যাদি। যেমন আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে বিদ্যমান। কিন্তু যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারা নয়।
আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে সময়ের কসম করেছেন। যেমন لا أقسم بهاذالبلد 'লা উকসিমু বিহা যাল বালাদ' দ্বারা শহরের কসম করেছেন এবং লাভজনক দ্বারা হুজুর পাক (ﷺ) এর জীবনের কসম করেছেন। আলিফ লাম মীম' এর ভাবার্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে কয়েকটি মত আছে। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে আলিফ এর অর্থ আল্লাহ, নামের অর্থ জিব্রাইল (عليه السلام) এবং মীমের অর্থ মুহাম্মদ (ﷺ)। এমনিভাবে এর ভাবার্থ হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) এর কলবের শক্তি। والنحم اذا هوا এর তাবীলও এরকমই। نجم 'নজম' এর অর্থ মুহাম্মদ (ﷺ) এর পবিত্র কলব। اذا هوا এর অর্থ অর্থাৎ নূরের মাধ্যমে সীনা সম্প্রসারিত হওয়া এবং আরেক অর্থ (আরবি) অর্থাৎ গায়রুল্লাহ থেকে কলব বিচ্ছিন্ন হওয়া। আবার 'হাওয়া' এর আরেক অর্থ উদিত হওয়া।
সূরা ওয়াল ফাজরিতে ওয়াল ফাজার দ্বারা কসম করা হয়েছে প্রত্যুষের আলোকরশ্মির। এ তাবীল সম্পর্কে মুফাসসিরে কেরাম বলেন, ফজরের অর্থ মােহাম্মদ (ﷺ) যার কাছ থেকে নূরের হট বিচ্ছুরিত হতে থাকে। আল্লাহতায়ালার বাণী, আপনি কি জানেন? রাতের আগন্তুক কে? তা হচ্ছে উজ্জ্বল তারকা। এই আয়াতে রাতের অতিথি বা উজ্জ্বল তারকা দ্বারা হুজুর পাক (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে। রাত দ্বারা আরবের পথভ্রষ্টতা ও মুর্খতার অন্ধকারকে বুঝানাে হয়েছে। সে অন্ধকার সরিয়ে দিয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতাে হুজুর পাক (ﷺ) আরবের আকাশে উদিত হলেন। কসম কলমের এবং সে যা লিখে তার কসম' এই আয়াত দ্বারা হকতায়ালা শানুহু শপথ করে বলছেন,
হুজুর পাক (ﷺ) তার প্রভু থেকে প্রাপ্ত নেয়ামতের (ইসলাম/কুরআন) ব্যাপারে উদাসীন নন। এরপর আল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর সীমাহীন পুরস্কারপ্রাপ্তির সুসংবাদ দিচ্ছি, '(নিশ্চয়ই আপনার জন্য রয়েছে সীমাহীন অবিচ্ছিন্ন পুরস্কার। 'নূন' আরবী বর্ণমালার একটি বর্ণ। যেমন বর্ণমালার মাঝে রয়েছে আলিফ লাম মীম অথবা এও হতে পারে যে নূন' এটি সূরার নাম। অথবা আল্লাহ তায়ালার নাম হতে পারে। হরফে মুকাত্তাআত এর তাবীল ও তাফসীরের ক্ষেত্রে এর মত গ্রহণ করা হয়েছে। আবার কারও কারও মতে নূন একটি মাছের নাম। আল্লাহতায়ালা সে মাছের কসম করেছেন। উক্ত মাছটির পৃষ্ঠদেশে রয়েছে দুনিয়া। সে মাছটির নাম হচ্ছে বাহমুত'। সাইয়্যেদুনা হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নূন' এর অর্থ দোয়াত। কেননা, দোয়াত কলম আর তাদের সাহায্যে যা লিখা হয় তার উপকারিতা অপরিসীম। এসম্পর্কে আরেক মত এরকমও আছে যে, নূন অর্থ নূরের একটি ফলক। যে ফলকে ফেরেশতাবৃন্দ আল্লাহতায়ালার তরফ থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় হুকুম লিপিবদ্ধ করে রাখে। হাদীছ শরীফে এসেছে কলম হচ্ছে আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন। সমস্ত মাখলুক সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহতায়ালা কলম সৃষ্টি করেছেন এবং এর মাধ্যমে মাখলুকাতের তাকদির লিপিবদ্ধ করেছেন।
যে কলমের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার দেয়া শরীয়ত ও ওহী লিপিবদ্ধ করা হয়, তার নমুনা হচ্ছে এজগতের সৃষ্ট কলম। এ কলমের মাধ্যমে দ্বীন ও মিল্লাতকে সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে। এর সাহায্যেই এলেম সমূহকে হস্তগত ও আয়ত্ব করা হয়ে থাকে। অতীতের ইতিহাস এবং বক্তব্য কলমের সাহায্যে গ্রন্থ বন্ধ করা হয়ে থাকে। অবতারিত কিতাব সমূহ ও সহীফা সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়। কলমের সৃষ্টি না হলে দ্বীনী ও দুনিয়াবী বিষয়াদি স্থিতিশীলতা লাভ করতােনা।
তাফসীরে কাশশাফ এর গ্রন্থকার সূরা ইকরা এর আয়াত আল্লামা বিল কালাম এর তাফসীর সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যদি তার সূক্ষ্ম হেকমত ও সূক্ষ্ম সৃষ্টিকৌশলের দলীল হিসাবে কলম ও লেখা এর বর্ণনা ছাড়া অন্য কোনােকিছুর বর্ণনা নাও দিতেন তবুও যথেষ্ট হতাে। কলমের বিশেষত্ব ও মর্যাদার কারণ এটাই যে, তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রসূল কারীম (ﷺ) এর প্রশস্তি, কিতাবুল্লাহর তাফসীর ও হাদীস নব্বী (ﷺ) এর ব্যাখ্যা, আওলিয়ায়ে কেরাম (رحمة الله) এর অমূল্য বাণী এবং নসীহতসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কোনাে বিষয়ে অর্থাৎ দ্বীন বহির্ভূত কোন লেখার কাজে যদি কলম ব্যবহৃত হয় তাতে তার কোনাে সার্থকতা নেই। যেমন আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, অর্থাৎ ধ্বংস ও আক্ষেপ তাদের জন্য যারা স্বহস্তে কিতাব লিখে বলে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। এর মাধ্যমে তারা দুনিয়ার স্বার্থ অর্জন করে থাকে। তারা স্বহস্তে যা লিখে ও অর্জন করে, তার জন্য ধ্বংস ও অনুশােচনা। এগুলি লিখে তারা বলে এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা আদৌ আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা জেনে বুঝে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে।
মক্কার কাফের সম্প্রদায় চুড়ান্ত মৃধতা, নির্বুদ্ধিতা ও অহংকারের কারণে হুজুর আকরম (ﷺ) কে পাগল বলে মন্তব্য করতাে। অথচ প্রকৃত অবস্থা ছিলাে এই যে, মক্কার সমস্ত বুদ্ধিজীবী ও ভাষাবিদ পণ্ডিতেরা হুজুর আকরম (ﷺ) এর মুকাবেলা করতে অক্ষম ছিলাে। হাবীবে খােদা (ﷺ) তাে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এমন কিছু শিখেছিলেন এবং বুঝেছিলেন সমস্ত বিজ্ঞানীদের পক্ষে যা আয়ত্ত করা সম্ভব ছিলাে না। তিনি এমন কিতাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, সমস্ত জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীরা যার মােকাবেলা করতে অক্ষম। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব (ﷺ) কে যে সমস্ত পুরস্কার দান করেছিলেন তার মধ্যে সর্ববৃহৎ পুরস্কারটির প্রশংসা করে বলছেন, নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন। আর হুজুর পাক (ﷺ) এর মহান চারিত্রিক গুণাবলী তার নবুওয়াতের সর্ববৃহৎ নিদর্শন। সাইয়্যেদা হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) 'খুলুকুন' আযীম এর তাফসীর সম্পর্কে বলেন, হুজুর আকরম (ﷺ) এর চরিত্র হচ্ছে পবিত্র কুরআন।
## আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সম্মান প্রদর্শন, পবিত্রতা বর্ণনা ও নেয়ামত দানের অঙ্গীকার।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি আল্লাহ তায়ালার দেয়া সর্ববৃহৎ মর্যাদা ও সম্মান হচ্ছে তার তাযীম, তাকরীম তাঁর পবিত্রতার বর্ণনা। এগুলি তার প্রতি আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও রহমতের নিদর্শন। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আরও অধিক সীমাহীন নেয়ামত প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। সূরা ওয়াদ্দুহা আল্লাহ তায়ালা দিন ও রাত্রির কসম করেছেন। আর এ দিন রাত্রি আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শনের প্রকাশস্থল। এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব (ﷺ) কে তার দুনিয়া ও আখেরাতের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করেছেন। এমর্মে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, হে হাবীব! আপনাকে আপনার প্রভু পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনাকে দুশমনও মনে করেন না।
মুফাসসেরীনে কেরাম 'দোহা ও লাইল' শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন যে, দোহা' মানে হচ্ছে হুজুর আকরম (ﷺ) এর সুরভিত কুন্তল রাজি। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী ও এরকম বর্ণনা করেছেন। তিনি স্বীয় তাফসীরের গ্রন্থে এই সূরার শানে নযুল সম্পর্কে বলেন, একদা কিছুকাল পর্যন্ত হুজুর পাক (ﷺ) এর উপর ওহী অবতরণ বন্ধ ছিল। কোন কারণ বা মুসলেহাতের পরিপ্রেক্ষিতেই বন্ধ ছিলাে। এতে মুশরেকরা বলাবলি করতে লাগলাে, মােহাম্মদকে তার প্রভু পরিত্যাগ করেছে তাঁর প্রতি বৈরী হয়েছে। (আল্লাহ)। আল্লাহ তায়ালা তখন দোহা ও লাইলের শপথসহ ঘােষণা শুনিয়ে দিলেন, না আপনার প্রভু আপনাকে বর্জন করেন নি আপনার প্রতি বৈরীও হননি। এরপর আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব (ﷺ) কে ভবিষ্যতের সুসংবাদ শুনিয়ে বলেন, 'আপনার অতীত জীবন থেকে ভবিষত জীবন অধিকতর উত্তম হবে সন্দেহ নেই। উক্ত আয়াতের মর্মার্থ এই যে, প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা তার হাবীবে পাক (ﷺ) এর জন্য যে মর্তবা, উচ্চ মর্যাদা এবং নেয়ামতসমূহ দুনিয়াতে দান করে যাচ্ছেন তার চেয়ে উন্নততর নেয়ামত আখেরাতে তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন, যেমন শাফাআতের অধিকার দেয়া, মাকামে মাহমুদ প্রদান করা ইত্যাদি। সেগুলিকে আখেরাতের জন্য নির্ধারণ করে রাখার কারণ হলাে, দুনিয়া তার সংকীর্ণতার দরুন নেয়ামতগুলি গ্রহণ করার যােগ্যতা রাখে না। ঐ সমস্ত নেয়ামতের আরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এই আয়াতের মাধ্যমে, আপনি যখন দৃষ্টিপাত করবেন, তখন দেখতে পাবেন সেখানে অসংখ্য নেয়ামতসমূহ আর বিশাল রাজত্ব।
অথবা এর অর্থ এ-ও হতে পারে যে, হুজুর পাক (ﷺ) এর নবুওয়াতী জীবনের প্রারম্ভিক অবস্থার তুলনায় তার শেষ অবস্থা অবশ্যই ভালাে হবে। যেহেতু হুজুর পাক (ﷺ) এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত পূর্ণ মর্তবা ও ফয়েজপ্রাপ্তির ক্রমােন্নতিতে ভরপুর। তিনি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনেই আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে লাভ করেছেন দয়া-মহানুভবতা, দান ও ক্ষমা, বিভিন্ন মাজেজা ও সৌভাগ্যশীলতা। তারই যথাযথ ঘােষণা প্রদান করা হয়েছে উপরোক্ত আয়াতে কারীমায়। এমর্মে আল্লাহকে আরও বলেন, অচিরেই আপনার প্রতি আপনাকে এতো বেশী দান করবেন যে, আপনি আনন্দিত হবেন। মােটকথা, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার হাবীব (ﷺ) কে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে, আমি আপনাকে এতবেশী দান করবাে যে, আপনি খুশী না হয়ে পারবেন না।আমার সেই দান এমন হবে যে, তা সংখ্যা ও গণনার আওতায় আনা সব হবে না। আশ শিফা' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, একজন আহলে বায়াত এরকম বর্ণনা করেছেন, হুজুর পাক (ﷺ) কে সন্তুষ্ট করা সংক্রান্ত কুরআনে মজীদের আয়াত সমূহের মধ্যে উপরােক্ত আয়াত হচ্ছে সবচেয়ে বেশী অর্থবহ। সেদিন যতক্ষণ পর্যন্ত একজন উম্মতও দোযখে অবস্থান করবে, ততক্ষণ হুজুর পাক (ﷺ) সন্তুষ্ট হবেন না।
বান্দা মিসকীন অর্থাৎ শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন, 'আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ােনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত গুনাহ খাতা মাফ করে দিবেন।' এই আয়াতখানাও সীমাহীন মাগফেরাতের আশা প্রদানকারী। তবে সকলের মতে এই আয়াত খানা গােনাহখাতা মাফ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর ওয়ালাসাউফা ইউতিকা রববুকা ফাতারদা আয়াতখানা সম্মান লাভ ও উচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্তির আশা প্রদানকারী।
মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থকারের নিম্নোক্ত বক্তব্য বিশ্বয়কর। তিনি বলেন যে সমস্ত মূর্খ লােকেরা হুজুর আকরম (ﷺ) এর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুর আকরম (ﷺ) এর কোন উম্মতকে দোযখে দিলে তিনি সম্তষ্ট হবেন না। এটা শয়তান কর্তৃক প্রদত্ত ধোকা বৈ কিছু নয়। শয়তান এ ধরনের বক্তব্য প্রদানকারীদের সঙ্গে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা যে কাজে সন্তুষ্ট, হুজুর আকরম (ﷺ) ও সে সমস্ত কাজে সন্তুষ্ট। হকতায়ালা গােনাহগারদেরকে দোযখে দেবেন। আর এদিক দিয়ে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তাআলার এরকম কাজের উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন এবং এসম্পর্কে বলবেন যে, আমার কোনাে উম্মতকে দোযখে দেয়া হােক বা দোযখে তার ঠিকানা বানানাে হােক, এতে আমি সন্তুষ্ট নই। এটাতাে হতেই পারে না। বরং আল্লাহ তায়ালা তাকে শাফায়াতের অনুমতি প্রদান করবেন। কাজেই আল্লাহতায়ালা যাদের ব্যাপারে চাইবেন হুজুর (ﷺ) তাদের জন্য সুপারিশ করবেন।" (এপর্যন্ত হচ্ছে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়ার ভাষ্য)।
এটা অতি স্পষ্ট কথা যে, শাফাআত সংক্রান্ত হাদীছসমূহে এসেছে, হুজুর আকরম (ﷺ) বিভিন্ন প্রকারের গােনাহগার, যেমন, চোর, যেনাকারী, শরাব পানকারী ইত্যাদি লোকদের জন্য শাফাআত করবেন। এরপরও এমন কিছু গােনাহগার দোযখে থেকে যাবে, যাদের অন্তঃকরণে সরিষা পরিমাণ ইমান ব্যতীত নেকী বলতে কিছুই নেই। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, এরাও আমার বান্দা ।আমি এদের জন্য আমার নিজের পক্ষ থেকে নিজের কাছে শাফায়াত করলাম। অতঃপর তাদেরকেও ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং দোযখ থেকে নিক্রান্ত করা হবে। এসবই হুজুর পাক (ﷺ) এর মহা-শাফাআতের নিদর্শন।
এটা স্পষ্ট কথা যে, আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কোনাে শাফাআতই কিয়ামতের ময়দানে হবেনা। তবে আল্লাহ তায়ালা যে তার হাবীব (ﷺ) কে সন্তুষ্ট করবেন বলে কথা দিয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টি থাকবে হুজুর (ﷺ) এর শাফাআতে।
মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবের উদ্ধৃতি হুজুর পাক (ﷺ) এর উম্মতের চিরকালের জন্য দোযখে অবস্থান সম্পর্কিত। অর্থাৎ ঐ ব্যাপারে হুজুর (ﷺ) স্তুষ্ট থাকবেন না। আর এটাতাে স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, কোনাে গােনাহগারই চিরকাল দোযখ ভােগ করবেনা। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া অন্ধকারের বক্তব্যের দুটি দিক হতে পারে। প্রথমটি হুজুর (ﷺ) এর কোনাে উম্মত দোযখে প্রবেশ করুক এতে তিনি সন্তুষ্ট হবেন না। আর অপরটি হচ্ছে, তাঁর কোনাে উম্মত দোযখে স্থায়ী অবস্থান করুক এতে তিনি সম্তুষ্ট হবেন না। দ্বিতীয়টিকে বুঝানােই তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এরপর সূরা ওয়াদ্দুহায় ঐ সমস্ত নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যা হুজুর পাক (ﷺ) এর প্রাথমিক অবস্থার অনুকূলে প্রদান করা হয়েছিলাে। এবর্ণনা দ্বারা এটাই বুঝানাে হয়েছে যে, পরবর্তীতে ঠিক ঐ পূর্বের মতাে আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত সমূহ প্রদান করা হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা অতীতেও অনেক অনুগ্রহ করেছেন। বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও ঠিক অদ্রব অনুগ্রহ করবেন। মর্মার্থ এই যে, সকলের দোয়া ও সহযােগিতার হস্ত সংকুচিত হয়ে গেলে এতীম ও নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পরও তিনি আল্লাহ তায়ালার করুণা ও স্নেহমমতার ছায়ায় আশ্রয় পেয়ে প্রতিপালিত হয়েছিলেন।
রসূলে পাক (ﷺ) এর এতীম হওয়া সম্পর্কে কেউ কেউ অবশ্য এরকম বলেন যে, এতীম হওয়া মানে একক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া, অনন্যোদাহরণ হওয়া। মক্কার মূর্খরা মূর্খতার কর্দম এবং গােমরাহীর গহ্বরে আকৃষ্ট নিমজ্জিত ছিলাে। তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন পূতপবিত্র চরিত্রের অধিকারী এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। আল্লাহতায়ালা তাকে তাদের ভিতর থেকে বের করে এনে এলেম ও হেদায়েতের মাকামের পরিমন্ডলে প্রবিষ্ট করিয়ে নিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার নূরানী কলবকে কেনাআত ও অমুখাপেক্ষীতার মহান দৌলতে পরিপূর্ণ করে দেয়ার পর মাল ও গনীমতের দৌলতেও ধনী করে দিয়েছেন। প্রেমময় প্রভু প্রতিপালক তাকে বাল্যবয়সে নিঃস্ব, এতীম এবং বঞ্চিত অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন। নবুওয়াত ও রেসালত দান করার পরও কি তিনি তাকে আগের অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন? আল্লাহর বাণী তুমি তােমার প্রভুর নেয়ামত সম্পর্কে মানুষকে বলাে। তাই নেয়ামত প্রকাশ করা এবং সে সম্পর্কে আলােচনা করাও নেয়ামতের শুকরিয়ার শামিল। শরীয়ত ও তার আহকাম জানা ও তা মানুষকে শিক্ষা দেয়া, তার আলােকে হেদায়েত করা এ সমস্ত কাজ নেয়ামত প্রকাশক।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |