হজরত মুসা বললেন, আহমদ কে?
আল্লাহ্তায়ালা বললেন, আহমদ ওই মহান ব্যক্তি, যিনি আমার সর্বাধিক নৈকট্যভাজন। আসমান যমীন সৃষ্টির পূর্বেই আমি তাঁর নাম আমার নামের পাশে আরশে লিপিবদ্ধ করেছি। আমার তামাম মাখলুকের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা হারাম, যতক্ষণ না তিনি এবং তাঁর উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। এই হাদীছ দ্বারা বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়, রসুলেপাক (ﷺ) এর উম্মত তাঁর অনুসরণের কারণে অন্য সকল আম্বিয়া কেরামের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
যে অতিথিপ্রিয় হন, তাঁর সঙ্গীগণও তো প্রিয়পাত্রই হয়ে থাকে। তবে হাদীছ শরীফে ‘তামাম মাখলুক’ কথাটি আছে, তার অর্থ নবীগণ ছাড়া অন্য সকল মানুষ। কেনোনা কোনো উম্মত নবীর ঊর্ধ্বে যেতে পারে না বা তাঁর সমপর্যায়েও আসতে পারে না। এরূপ নয়। কক্ষণো নয়। সাধারণ মানুষ কেনো! কোনো ওলীও নবীর মর্যাদা লাভ করতে পারে না।
নবী মুসা জিজ্ঞেস করলেন, উম্মতে মোহাম্মদী কী রকম। তাদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ কীরূপ? আল্লাহ্তায়ালা তাঁর ও তাঁর উম্মতের গুণাবলী উল্লেখ করলেন।
রসুল মুসা নিবেদন করলেন, হে আমার আল্লাহ্! আমাকে দয়া করে সেই উম্মতের নবী বানিয়ে দিন। আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করলেন, কোনো উম্মতের জন্য নবী সেই কাওম থেকেই হয়।
রসুল মুসা বললেন, হে আমার আল্লাহ্! তাহলে আমাকে সেই নবীর উম্মত বানিয়ে দিন। হজরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্তায়ালা হজরত শুয়াইয়া (عليه السلام) এর নিকট ওহী পাঠিয়ে বললেন, আমি উম্মী নবীকে দুনিয়াতে প্রেরণ করবো, যে নবী দুনিয়াতে এসে বধির কান, অন্ধ চোখ এবং ওই অন্তরসমূহ যা ঔদাসিন্যের পর্দায় ঢাকা পড়েছে, সেগুলোকে খুলে দিবেন। তাঁর জন্মস্থান হবে মক্কা মুকাররমা এবং তাঁর হিজরতের জায়গা হবে মদীনা মুনাওয়ারা। আর তাঁর রাজ্য হবে শাম।
রসুলেপাক (ﷺ) এর উম্মতের গুণাবলী সম্পর্কে আল্লাহ্তায়ালা এমনও বলেছেন, আমি তাঁর উম্মতকে সমস্ত উম্মতের চেয়ে উত্তম বানাবো। তারা ভালো কাজের আদেশ করবে, আর মন্দ কাজের প্রতিবন্ধক হবে। আমার এককত্বকে স্বীকার করবে, আমার উপর ইমান আনবে। তারা আমার নির্ভেজাল ইবাদত করবে। আমি অন্যান্য নবীগণের উপর যা নাযিল করেছি, তার সমস্তকেই তারা প্রত্যয়ন করবে। চন্দ্র ও সূর্যের প্রতি দৃষ্টি রাখবে অর্থাৎ ইবাদতের সময় সম্পর্কে সচেতন হবে। খোশনসীব ওই অন্তর, চেহারা ও আত্মা, যারা আমার সাথে এখলাসের সম্পর্ক করবে। তাদের প্রতিটি মজলিশ, শয্যা, সফর, অবস্থান, চলমানতা ও স্থিরতা সর্বাবস্থায় আমার তসবীহ, তকবীর, তাহমীদ ও তৌহিদকে তাদের জন্য আমি সহজ করে দেবো। অবলীলাক্রমে সর্বাবস্থায় তারা এগুলো চালিয়ে যাবে। ফেরেশতাদের সারির ন্যায় মসজিদে তারা সারিবদ্ধ হবে। ফেরেশতারা আছে আমার আরশের আশেপাশে, আর তারা হচ্ছে আমার প্রিয়পাত্র এবং আমার দ্বীনের সাহায্যকারী। আমি তাদের মাধ্যমে আমার উপাসনালয়কে মূর্তিপূজারী দুশমনদের থেকে মুক্ত করবো। তারা আমার উদ্দেশ্যে দ-ায়মান হয়ে, উপবিষ্ট হয়ে, রুকু সেজদার সাথে নামাজ আদায় করবে। তারা এমন হবে যে, আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আপন ঘরবাড়ি ও মাল দৌলত রেখে বেরিয়ে আসবে। তারা আমার রাস্তায় জেহাদ করবে। আমি তাদের কিতাব অর্থাৎ কোরআনের মাধ্যমে সকল কিতাবকে, তাদের শরীয়তের মাধ্যমে সকল শরীয়তকে এবং তাদের দ্বীনের মাধ্যমে সকল দ্বীনকে সমাপ্ত করে দেবো। তাদের জামানা পাওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তাদের কিতাবের উপর ইমান না আনে এবং তাদের দ্বীন ও শরীয়তকে না মানে, তারা আমার প্রিয়পাত্র থাকবে না। আমি তাদের উপর অসন্তুষ্ট।
আমি তাদেরকে সকল উম্মতের চেয়ে উত্তম উম্মত এবং উম্মতে ওসাতা বানিয়েছি। তারা কিয়ামতের দিন সকল উম্মতের সাক্ষী হবে। তাদের স্বভাব হবে এরকম— রাগান্বিত হলে আমার তাহলীল অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ধ্বনি দিবে। য্দ্ধুবিগ্রহে লিপ্ত হলে আমার তসবীহ পাঠ করবে, আমার পবিত্রতা বর্ণনা করবে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী বলবে। মুখম-ল ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র রাখবে। টাখনুর উপর ইযার পরিধান করবে। প্রতিটি চড়াই উৎরাই কালে আল্লাহু আকবার বলবে। রক্ত প্রবাহিত করে কোরবানী করবে। তাদের কিতাব তাদের সীনায় থাকবে। রাতের বেলায় তারা আবেদ, আর দিনের বেলায় সিংহতুল্য বীরযোদ্ধা। তারা কতই না ভাগ্যবান, যারা উক্ত উম্মতের সঙ্গে থাকবে। তাদের মাযহাব ও রীতিনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব তো আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করি। আমি মহান করুণাময় আল্লাহ্তায়ালা। - এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন আবু নাঈম।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |