হুজুর পাক (ﷺ) এর প্রতি জেহেলের সম্বোধন করা
আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে এরশাদ ফরমান, আল্লাহ তায়ালা যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তাদেরকে হেদায়েতের উপরে একত্রিত করে দিতে পারেন। কাজেই আপনি কক্ষণও অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কাযী আয়ায (رضي الله عنه) বলেন “আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাদের সকলকে হেদায়েত উপর এনে দিতে পারেন, এ সত্যটি সম্পর্কে আপনি জাহেল হবেন না” আয়াতখানার অর্থ কিন্তু এরকম নয়। কেননা এরকম অর্থ করলে আল্লাহ তায়ালার সিফত সমূহের মধ্যে জেহেল (অজ্ঞতা) গুণ সাব্যস্ত করা হয়। আর আল্লাহ তায়ালার সিফত সমূহের মধ্যে অথবা নবীগণের মধ্যে অজ্ঞতা’ সাব্যস্ত করা জায়েয নয়। অথবা ব্যাখ্যাটি এরকম হতে পারে যে, আয়াতের দ্বারা হুজুর পাক (ﷺ) কে নসীহত করাই উদ্দেশ্য। যেনাে তার কার্যাবলীতে জাহেলদের অনুকূল পদ্ধতি অনুসৃত না হয়। তার মধ্যে মূর্খতা বিদ্যমান এরকম প্রমাণ আয়াতের মধ্যে নেই যে, কারণে আল্লাহ পাক তাকে নিষেধ করছেন। বরং কওমের বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রে তিনি যেনাে ধৈর্য ধারণ করেন, এ ব্যাপারে তাকে হুকুম করা হয়েছে। এ শেষোক্ত ব্যাখ্যাটি প্রদান করেছেন আবু বকর ইবনে ফুরক (رضي الله عنه)।
কেউ কেউ বলেন, অর্থগতভাবে এ সম্বােধনটি উম্মতকে করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা জাহেলদের অন্তর্ভুক্ত হয় না। এ ধরনের ব্যাখ্যা অন্যান্য স্থানেও দেয়া হয়েছে। আর এরূপ দৃষ্টান্ত কুরআনে মজীদে অনেক আছে। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লােকের কথার আনুগত্য করেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দিবে।
—এই আয়াতে রাসূল পাক (ﷺ) কে সম্বোধন করা হয় নাই বরং অন্যান্যদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে বুঝতে হবে। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তােমরা যদি কাফেরদের আনুগত্য করাে তাহলে এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালার এরশাদ রয়েছে, আল্লাহতায়ালা যদি চাইতেন তাহলে আপনার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। আর যদি আপনি কোন শিরক করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার আমল বাতিল হয়ে যেতে। —এ জাতীয় যে আয়াত রয়েছে তার কোনোটিতেই হুজুর পাক (ﷺ) কে সম্বোধন করা হয়নি। সম্বােধন করা হয়েছে অন্যদেরকে।
আল্লাহ তায়ালা তার হাবিব (ﷺ) কে যে কোনরকম আদেশ নিষেধ করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে তা হুজুর পাক (ﷺ) থেকে প্রকাশিত হওয়া বা সংঘটিত হওয়া মােটেই সঙ্গত নয়। যে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, যারা তাদের প্রভুর ইবাদত করে, আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দিবেন না। অথচ হুজুর পাক (ﷺ) কখনও এজাতীয় লোককে তার সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতেন না বা নিজের সম্মুখ থেকে তাড়িয়ে দিতেন না। কেননা তিনি তা অত্যাচারী ছিলেন না। আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, পূর্বে নিশ্চয়ই আপনি গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ আয়াতের অর্থ এই যে, হুজুর পাক (ﷺ) হকতায়ালার আয়াত সম্পর্কে ইতিপূর্বে অনবহিত ছিলেন। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে এই যে, আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার বক্তব্য এই যে, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর ঘটনা অবহিত করার পূর্বে আল্লাহ পাকের হাবীব (ﷺ) এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। সে কারণেই উক্ত ঘটনা সম্পর্কে তার অন্তঃকরণে কোনােরূপ খেয়ালের উদয় হয়নি। স্বকর্ণে উক্ত ঘটনা তিনি শ্রবণও করেন নি এবং স্বয়ং তিনি সে সম্পর্কে অবহিত হতেও পারেন নি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহীর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, শয়তানের দিক থেকে যদি কোন অসৎ মন্ত্রী আপনার কাছে, আসে তাহলে আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করুন। বাহ্যিকভাবে আয়াত দৃষ্টে মনে হয় কেননা, হুজুর পাক (ﷺ) কে শয়তান কুমন্ত্রণা দিতে সক্ষম। বস্তুতঃ শয়তানের কুমন্ত্রণা হুজুর পাক (ﷺ) এর জন্য নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, শয়তানের ইচ্ছা এবং এরাদা এই যে, সে হুজুর পাক (ﷺ) কে কুমন্ত্রণা দিতে চায়। কিন্তু সে এ ব্যাপারে অক্ষম। কেননা আল্লাহতায়ালা হুজুরপাক (ﷺ) কে এ বিষয়ে নিরাপদ রেখেছেন।
আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, হে রসূল! আপনার যদি কারও উপর রাগ আসে তখন আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে নিরাপত্তা চাইছে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নিজ আশ্রয়ে রাখবেন। ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচিত করা হচ্ছে শয়তানের সবচেয়ে নিম্নমানের তৎপরতা। যুজাজ (رحمة الله) এরকম বলেছেন। জানা গেছে যে, হকতায়ালা তার হাবীব (ﷺ) কে হুকুম করেছেন, আপনার যদি কখনও কোনাে দুশমনের উপর রাগ আসে অথবা শয়তান আপনাকে সীমালংঘন করানোর ইচ্ছা করতে উদ্যত হয় অথবা অন্তরে কোনোরূপ মন্ত্রী প্রক্ষেপের চেষ্টা করে তখন আপনি হক তায়ালার কাছে পানাহ চাইবেন। তিনি আপনাকে তার ক্ষতি ও অকল্যাণ থেকে নিরাপদ রাখবেন। এটা আপনার পবিত্রতার পূর্ণতার জন্যই। এ কারণেই হক তায়ালা শয়তানকে হুজুর পাক (ﷺ) এর উপর প্রবল হওয়ার শক্তি প্রদান করেন নি। ব্যাখ্যাটি নিম্নোক্ত আয়াতের ভাব প্রকাশ করছে -
যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
'আমার বান্দাগণ মধ্যে এমনও বান্দা আছে, যাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই। আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ ফরমান, “নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের মধ্যে যখন শয়তানী খেয়াল উদয় হয় তখন তারা হুঁশিয়ার হয়ে যায়, অতঃপর অকস্মাৎ তাদের দিব্য চক্ষু খুলে যায়। এই আয়াতের মতলব পূর্বের ব্যাখ্যা অনুরূপ বুঝতে হবে। তবে আল্লাহতায়ালার বাণী কিন্তু শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দিয়েছে' —এ আয়াতের অর্থ পূর্বের মতো হবে না। কেননা ‘বিস্মৃতি' আর এর বিধান এক নয়। এটা মােটেই ঠিক নয় যে, শয়তান কোনাে ফেরেশতার আকৃতি ধরে এসে নবী কে ধোকায় নিপতিত করবে। নবুওয়াতের পূর্বেই হোক বা পরে। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, রাসূল (ﷺ) কে সত্য প্রকাশের উপর কায়েম রাখে। সুতরাং নবী (ﷺ) এর কাছে তিনি আসবেন, তিনি অবশ্যই ফেরেশতা এবং আল্লাহ তাআলার প্রেরিত কোন না কোন দূত হবেন। এর অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। এর পরিপূর্ণ আলােচনা ‘ওহীর প্রারম্ভ' এর বর্ণনায় মধ্যে আসবে ইনশাআল্লাহ। আপনার প্রভুর বাক্য সত্য ও ইনসাফ দ্বারা পরিপূর্ণ, তার পরিবর্তনকারী কেউ নেই।'
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |