প্রশ্নঃ মৃতরা কি শোনতে পায়?
জবাবঃ
ওহাবী সালাফীরা সত্য গোপন করে একটি আয়াতের কিছু অংশ ব্যবহার করে অথচ তারা হাকিকত মানতে নারাজ।
আল্লাহ বলেন,"মৃতকে তুমি তো কথা শুনাতে পারবে না।" (সুরা নামল ৮০)
নামল ৮০ আয়াতে আসলে আল্লাহ মৃত বলতে জিবিত কাফিরদের মৃত আত্মাকে বুঝিয়েছে কারন তা হেদায়ত বঞ্চিত।
দেখুন পুরা আয়াতে কি বুঝানো হয়েছে,
আপনি তো শুনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং যারা বধিরদেরকেও কারন তারা [রাসুল (ﷺ) কে দেখে] পিছনে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। (নামল ৮০)
“আপনি অন্ধদের কে ওদের পথভ্রষ্টতা হতে পথে আনতে পারবেন না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাসী শুধু তারাই আপনার কথা শুনবে। কারণ তারা মুসলমান। (সূরা নামল আয়াত ৮১)
যখন আমরা সূরা নামলের ৮০ এবং ৮১ নম্বর আয়াত এক সাথে পড়ি তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে শব্দ ‘মৃত’ দ্বারা অবিশ্বাসীদের বুঝানো হয়েছে ,এবং তাদের বুঝানো হয়নি যারা আসলেই মারা গেছে ।
দেখুন হাদিসে আরো স্পষ্ট করে দেখি যে জীবিতদেরকেও মৃত বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যারা তাদের আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যারা করে না, তারা আসলে জীবিত ও মৃতের মত।” [মুসলিম,বুখারী,ফতহুল বারী]
আবু মুসা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এমন যে জীবিত ও মৃত।"
[মুসলিম, ইবনে হিব্বান, আল মুসনাদ]
কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিরাও শোনেঃ
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – “বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথিরা চলে যায় তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়……”
(বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, হাদীস নং ১২৫৭)
হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বদরের যুদ্ধে মৃতদের উদ্দেশ্য করে বলেন ,”হে অমুক এবং অমুক, অমুকের পুত্র অমুক; এবং তুমি, অমুক এবং অমুক, অমুকের পুত্র অমুক এবং অমুক! এটা কি সহজ হতো না যদি আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহকে (ﷺ) মেনে নিতে? আমাদের খোদা আমাদের যে ওয়াদা করেছেন আমরা তা সত্য পেয়েছি । তোমাদের খোদা তোমাদের যে ওয়াদা করেছেন তা কি তোমরা সত্য পেয়েছ ? ”এরপর হজরত উমর (رضي الله عنه) বললেন ,”ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! প্রাণবিহীন এই শরীরগুলোকে আপনি কি বলছেন? তারা কি শুনতে পায়? যেখানে আল্লাহ বলেছেন নিশ্চই তুমি মৃতদের শোনাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তর দেন ,
”তার শপথ যার হাতে মুহাম্মদের (ﷺ) প্রাণ, আমি যা মাত্র বলেছি তা তুমি ওদের থেকে বেশি শুনোনি।”
[বুখারী ,মুসলিম]
মৃতরা কথাও বলে যা মানুষ ব্যাতীত সবাই শোনতে পায়ঃ
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী (ﷺ) বলতেন, যখন জানাযা (খাটে) রাখা হয় এবং লোকেরা তা নিজেদের ঘাড়ে উঠিয়ে নেয়, তখন সে সৎ হলে বলে, আমাকে আগে নিয়ে চল।’ আর অসৎ হলে তার পরিবার-পরিজনদের উদ্দেশ্যে বলে, হায় আমার দুর্ভোগ! তোমরা (আমাকে) কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া তার এই আওয়াজ সব জিনিসই শুনতে পায়। যদি মানুষ তা শুনতো, তবে নিশ্চয় বেঁহুশ হয়ে যেত।’’
[বুখারি ১৩১৪, ১৩১৬, ১৩৮০, নাসায়ি ১৯০৯, আহমদ ১০৯৭৯, ১১১৫৮]
আসলে তারা কুরআন হাদিসের মর্ম বুঝে না। নিচের হাদিসটা পড়ে মিলিয়ে নিন এই ওহাবীদের নিয়ে ভবিষ্যৎবানীঃ
আবূ নুমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত। নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ পূর্বাচল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না অর্থাৎ কলবে পোঁছাবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার (ধনূক) থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেনঃ তাদের আলামত হল মাথা মুণ্ডন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ৮৬/ তাওহীদ প্রসঙ্গ
হাদিস নাম্বার: 7052