যবুর কিতাব থেকে প্রাপ্ত সুসংবাদ
যবুর শরীফের চুয়ালিশতম অধ্যায়ে আলাহ্তায়ালা আখেরী যমানার নবী (ﷺ) কে সম্বোধন করে বলেছেন, আপনার মুবারক ওষ্ঠদ্বয় থেকে দুনিয়া ও আখেরাতের নেয়ামত নিঃসতৃ হয়েছে। এ কারণে আলাহ্তায়ালা চিরকাল বরকতময় রেখেছেন। সাররাহ কিতাবে ‘ফয়েয’ শব্দের বিভিন্নঅর্থ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সংবাদ ছড়িয়ে পড়া, পানির প্রাচুর্য নদীর দু’কূল ছাপিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া ও প্রবাহিত করা ইত্যাদি। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছের একটি প্রকার আছে হাদীছে মুস্তাফিয, অর্থাৎ এমন হাদীছ যা অধিক বিস্তার লাভ করেছে। ‘ফাইয়্যায’ শব্দের বাহাদুর, দানবীর। হে বুযুর্গ! আপনি স্বীয় স্কন্ধে তলোয়ার ঝুলিয়ে নিন। ‘জাব্বার’ বলা হয় এমন সুউচ্চ বক্ষে যেখানে কারও হাত পৌঁছাতে পারে না। এ অর্থেই বলা হয় নাখলায়ে জাব্বারা অর্থাৎ অতি উঁচু খেঁজুর গাছ। নিঃসন্দেহে আপনার তীর ধারালো। সমস্ত উম্মত আপনার অধীনে মস্তকাবনত।
যাঁর সম্পর্কে বলা হলো সেই মহান ব্যক্তিত্ব হলেন সাইয়্যেদ আলম মোহাম্মাদুর রসূলুলাহ্ (ﷺ)। ঐ নেয়ামত যা তাঁর পবিত্র ও মিষ্ট ওষ্ঠদ্বয় থেকে জারী হবে বলা হয়েছে তা হচ্ছে, তার মুখনিঃসতৃ বাণী। আর যে কিতাবের কথা বলা হয় তা হচ্ছে তাঁর উপর নাযিলকৃত কুরআন মজীদ। সুন্নত দ্বারা বুঝানো হয়েছে তাঁর দ্বারা বাস্তবায়িত কার্যাবলীকে। গর্দানে তরবারী ঝুলানোর কথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে আখেরী যমানার নবী হবেন আরবীয় নবী। কেননা আরবীয়রা ছাড়া আর কোনো জাতির লোক গর্দানে তরবারী ধারণ করে না। এটাতো সুবিদিত কথা যে, যে নবী সাহেবে শরীয়ত ও সাহেবে সুন্নত হিসাবে দুনিয়াতে আগমন করেন, তিনি সাধারণত তরবারী সহকারেই আবির্ভূত হয়ে থাকেন। যাতে কওে তরবারীর মাধ্যমে মানুষকে সংশোধন করে হকের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারেন। সে তরবারীর সাহয্যে দুনিয়া থেকে যেনো কুফুরীকে মিটিয়ে দিতে পারেন।
যবুর শরীফে এরকম আরেকটি বর্ননা পাওয়া যায়। একদিন হজরত দাউদ (عليه السلام) আলাহ্তায়ালার দরবারে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মুনাজাত করেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! সুন্নত যাহেরকারী একজন (নবী) প্রেরণ করো, যাতে মানুষ জানতে পারে যে মসীহ (عليه السلام) মানুষ।’ এ সমস্ত সংবাদ হজরত মসীহ্ (عليه السلام) ও হুজুর আকরম (ﷺ) এর দুনিয়াতে আগমনের পূর্বে তাঁদের প্রকৃত অবস্থা যাহির করার উদ্দেশ্যেপ্রদান করা হয়েছিলো। তার সারমর্ম এই যে, হে খোদা! মোহাম্মদ (ﷺ) কে তুমি প্রেরণ করো, যাতে তিনি মানুষদেরকে জানাতে পারেন এবং তারা যেনো পড়তে পারে যে, হজরত মসীহ (عليه السلام) মানুষ ছাড়া অন্যকিছু নন, তিনি কোনো ইলাহ বা খোদা নন। হজরত দাউদ (عليه السلام) জানতে পেরেছিলেন যে, মানুষেরা হজরত দাউদ (عليه السلام) সম্পর্কে উলুহিয়াতের দাবী করে বসতে পারে।
হুজুর আকরম (ﷺ) সম্পর্কে হজরত দাউদ (عليه السلام) এর আলোচনা ও বর্ণনা এরকমব্জ আলাহ্তায়ালা সেই নবীয় আখেরুজ্জামানকে সত্য, সঠিক, কর্মী ও বক্তা হিসাবে মনোনীত করেছেন। তাঁকে এবং তাঁর উম্মতকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। আলাহ্তায়ালা তাঁকে কৃতকার্যতা প্রদান করেছেন। আলাহ্তায়ালা তাঁর উম্মতকে এমন মহিমা দান করেছেন যে, তারা শয়নস্থলে আলাহ্তায়ালার তসবীহ পাঠ করবে এবং বুলুন্দ আওয়াযে তকবীর বলবে। তাঁদের হস্তে ধারালো তরবারী থাকবে, যাতে সে তরবারীর সাহায্যে তাঁরা আলাহ্র ইবাদাতে বিমুখদের মোকাবেলা করতে পারে এবং সে কালের বিধর্মী বাদশাহ্দেরকে বন্দী করতে পারে এবং বিধর্মী সম্মানীত লোকদের গলায় তওক পরিয়ে দিতে পারে।
অন্য এক স্থানে বলা হয়েছে, আলাহ্তায়ালা সীহুন (মক্কা মুকাররমা) থেকে প্রশংসিতজনের পাথরখচিত মুকুটের আত্মপ্রকাশ নির্ধারণ করেছেন।” উপরোক্ত ভাষ্যে যে মুকুটের উলেখ করা হয়েছে সে মুকুটের অর্থ দান করা রাজত্ব ও আমানত। আর মাহমুদ (প্রশংসিত জন) এর অর্থহচ্ছেন মোহাম্মাদুর রসূলুলাহ্ (ﷺ)।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, তিনি বাদশাহ্ হবেন। মহান হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল হবেন। দরিয়া থেকে দরিয়া পর্যন্ত, নহর থেকে যমীনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এবং তার উপকূলের সবাই তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বসবে। তাঁর দুশমনেরা নিজেদের জিহ্বা দ্বারা মৃত্তিকা লেহন করবে। যমানার বাদশাহ্ বা তাদের মুসাহেববৃন্দ সহকারে সেজদারত অবস্থায় যমীনের উপর মস্তক অবনত করে তাঁর সামনে হাযির হবে এবং তাঁর উম্মতের নির্দেশ পালনে তারা বিনয়াবনত হবে। গর্দান অবনত করার মাধ্যমে তারা তাঁর উম্মতের হাত থেকে মুক্তি পাবে। তিনি লাঞ্ছিত ও চিন্তাক্লিষ্ট লোকদেরকে অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্তি দান করবেন। সহায়হীন দুবর্ল ও আর্তজনতাকে সাহায্য করবেন। দুর্বল ও মিসকীনদের প্রতি মেহেরবানী করবেন। সবসময়ই তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা হবে এবং সর্বদাই তাঁর জন্য লোকেরা দোয়া করতে থাকবে। অনন্তকাল পর্যন্ত সব সময়ই তাঁর নামের আলোচান ও অনুশীলন হতে থাকবে।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |