নবী করীম (ﷺ)কে আল্লাহ্তায়ালার হেফাজত প্রদান
নবী করীম (ﷺ) এর মাধ্যমে যে সমস্ত মোজেজা প্রকাশ পেয়েছে তার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে আল্লাহ্তায়ালার তরফ থেকে হেফাজত ও নিরাপত্তা লাভ। দ্বীনের দুশমনদের কৌশল ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে আল্লাহ্তায়ালা তাঁকে সর্বোতভাবে হেফাজত করেছেন। নিরাপত্তা প্রদানের অঙ্গীকার দিয়ে আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্তায়ালা আপনাকে মানুষের ক্ষতিসাধন থেকে হেফাজত করবেন। আরও এরশাদ করেছেন, আপনি আপনার প্রভুপালকের হুকুমের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করুন, কেনোনা আপনি আমার দৃষ্টির সম্মুখে।
আরও এরশাদ করেছেন, যারা আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য ইলাহ সাব্যস্ত করে, তাদের মোকাবেলায় আমিই আপনার জন্য যথেষ্ট। আরও এরশাদ করেছেন, ঐ সময়ের কথা স্মরণ করুন, যখন কাফেরেরা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলো। দ্বীনের দুশমনেরা যখন নবী করীম (ﷺ) এর ক্ষতিসাধন করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছিলো, তখন তিনি নিজে সাবধানে চলাচল করতেন এবং সাহাবা কেরামও তাঁকে পাহারা দিয়ে রাখতেন। কিন্তু যখন ‘আল্লাহ্তায়ালা আপনাকে মানুষের ক্ষতি সাধন থেকে হেফাজত করবেন’ এই আয়াত নাযিল হলো, তখন তিনি তাঁবু থেকে বের হয়ে পাহারায় নিয়োজিত সাহাবীদেরকে বললেন, এখন থেকে আমাকে পাহারা দিতে হবে না। তোমরা চলে যাও। আমার আল্লাহ্তায়ালাই আমার হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন।
বর্ণিত আছে, রসুলেপাক (ﷺ) একদিন কোনো এক সফরে একটি গাছের নীচে শায়িত ছিলেন। তাঁর পবিত্র অভ্যাস এরকম ছিলো যে, কোনো স্থানে পৌঁছলে সাহাবা কেরাম সেখানকার কোনো একটি বৃক্ষ নির্বাচন করতেন, রসুলেপাক (ﷺ) যেনো তার নীচে শুয়ে দুপুরের নিদ্রা যাপন করতে পারেন। সেই অভ্যাস মোতাবেক তিনি উক্ত গাছের নীচে শুয়েছিলেন। হঠাৎ এক বেদুইন এসে তলোয়ার উঁচিয়ে বললো, তোমাকে এই মুহূর্তে আমার হাত থেকে বাঁচাবে কে? তিনি (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্! একথা শুনে বেদুইন লোকটি কাঁপতে শুরু করলো। তার হাত থেকে তলোয়ার পড়ে গেলো। তখন ‘আল্লাহ্তায়ালা আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন’ এই আয়াত নাযিল করলেন।
রসুলেপাক (ﷺ) বেদুইন লোকটিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। লোকটি তার কাওমের কাছে ফিরে গিয়ে বলেছিলো, আমি এক উত্তম কাওমের নিকট থেকে এসেছি। অন্য এক হাদীছে এই ঘটনাই এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, রসুলেপাক (ﷺ) বেদুইন লোকটির হাত থেকে তলোয়ার নিয়ে বললেন, বলো দেখি, এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে? বেদুইনটি তখন রসুলেপাক (ﷺ) এর কদম মোবারকে লুটিয়ে পড়েছিলো। বদরযুদ্ধের আলোচনাতেও এরকম এক ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। রসুলেপাক (ﷺ) প্রকৃতির প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে সাহাবা কেরামের কাছ থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছিলেন। তাঁকে অনুসরণ করছিলো এক মুনাফেক। পরের ঘটনা উপরোক্ত বর্ণনার অনুরূপ।
গাতফান যুদ্ধের দিনও এরকম ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা আছে। ঘটনাটি এই যে, হামলাকারী নওজোয়ানটি তার কওমের একজন বাহাদুর নেতাও ছিলো। পরে সে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো। মুসলমান হয়ে সে তার কওমের কাছে ফিরে যাওয়ার পর লোকেরা তাকে বললো, তোমার কী হলো। তুমি তাকে হত্যা করে ফেলবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, আর তা তোমার পক্ষে সম্ভবও ছিলো, কিন্তু করলে না কেনো?
সে বললো, শুভ্রবর্ণের দীর্ঘকায় একটি লোককে দেখলাম। সে আমাকে আঘাত করলো। ফলে আমি পিছনের দিকে পড়ে গেলাম এবং আমার হাত থেকে তলোয়ারটি পড়ে গেলো। আমি বুঝলাম, যাকে দেখেছি সে মানুষ নয়, ফেরেশতা। তাই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।
অন্য আর এক বর্ণনায় আছে, লোকটি তলোয়ার খাড়া করে যখন আক্রমণোন্মুখ হলো, তখন রসুলেপাক (ﷺ) দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! তোমার যদি মর্জি হয়, এর ক্ষতি থেকে আমাকে হেফাজত করো। লোকটির কোমরে ব্যথা আরম্ভ হলো এবং এক পর্যায়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তখন আল্লাহ্তায়ালা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করলেন।
আল্লাহ্তায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! স্মরণ করো, যখন আল্লাহ্তায়ালা তোমাদের উপর নেয়ামত বর্ষণ করছিলেন, সে সময় একটি কওম তোমাদের উপর তাদের হাত সম্প্রসারিত করেছিলো। এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ্তায়ালা মুমিনদেরকে সম্বোধন করেছেন। কেনোনা, রসুলেপাক (ﷺ) এর লাভ বা ক্ষতি প্রকৃতপ্রস্তাবে মুমিনদের লাভ ক্ষতিরই নামান্তর।
আবু লাহাবের স্ত্রীর (লানাতুল্লাহ আলাইহা) নাম ছিলো উম্মে জামিলা। তার পিতার নাম ছিলো হারব। সে ছিলো হজরত আবু সুফিয়ানের বোন। হাম্মা লাতাল হাত্বব বা কাষ্ঠবহণকারিণী। নানা কটুক্তির মাধ্যমে সে নবী করীম (ﷺ) এর মনে কষ্ট দিতো।
একদা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমতে হাজির ছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, উম্মে জামিলা আসছে। নিবেদন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! মহিলাটি বড়ই বেহায়া, বেআদব এবং কটুভাষিণী। এখান থেকে চলে গেলে ভালো হয়।
রসুল (ﷺ) বললেন, সে আমাকে দেখতেই পাবে না। উম্মে জামীলা এসে বললো, হে আবু বকর! তোমাদের নেতা আমার বদনাম করেছে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বললেন, আমাদের নেতা কবিতাও বলেন না, কারও দোষও বলেন না। মালাউন রমণী ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলো। রসুলেপাক (ﷺ) সেখানেই ছিলেন, কিন্তু সে দেখতে পায়নি। নবী করীম (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্তায়ালা একজন ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন, সে আমাকে তার পাখা দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলো। ইমাম বোখারী (رحمة الله) বলেন, তখন ওই দুষ্ট রমণীর হাতে একটি পাথর ছিলো। সে বলেছিলো, মোহাম্মদকে দেখতে পেলে এই পাথরের আঘাতে তার মুখ..... নাউযুবিল্লাহ।
আশশেফা কিতাবে আছে, মুগীরা গোত্রের এক ব্যক্তি রসুলেপাক (ﷺ) কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসেছিলো (নাউযুবিল্লাহ)। সে দুচোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলো। রসুলেপাক (ﷺ) এর কথা সে শুনছিলো, কিন্তু দেখতে পাচ্ছিলো না। সে তার কওমের লোকদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকেও দেখতে পায়নি।
হিজরতের প্রাক্কালেও এরকম ঘটনা ঘটেছিলো। রসুলেপাক (ﷺ) দলের ভিতর থেকে বাইরে চলে গেলেন। লোকদের সঙ্গে কথা বললেন। তাদের সামনে দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু তারা তাঁকে দেখতে পেলো না। দেখে থাকলেও চিনতে পারলো না। তাদের মাথায় মাটি নিক্ষেপ করার ঘটনা এক্ষেত্রেই সংঘটিত হয়েছিলো। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা যথাস্থানে আসবে ইনশাআল্লাহ্।
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) বলেছেন, এক রাতে আমি আবু জাহাস ইবনে হুযায়ফার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলাম এবং দুজন একমত হলাম যে, আমরা রসুলুল্লাহ (ﷺ) কে হত্যা করবো। এই উদ্দেশ্যে আমরা যখন তাঁর বাড়িতে পৌঁছলাম, তখন তাঁকে আল হাক্কাহ সুরা তেলাওয়াত করতে শুনলাম। আবু জাহাস আমার বাহুতে হাত রেখে বললো, আমাদের তো বাঁচতে হবে। তারপর আমরা দুজনে সেখান থেকে পালিয়ে এলাম এবং আপাততঃ হত্যার চিন্তা স্থগিত রাখলাম। হজরত ওমর (رضي الله عنه) এর এই ঘটনা তাঁর ইসলাম গ্রহণের সূচনা সৃষ্টি করেছিলো। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাতো এক বিস্ময়কর ঘটনা। তার বর্ণনা যথাস্থানে করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
নবী করীম (ﷺ) যখন হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন, তখন কুরাইশরা যারাকা ইবনে খাসআম নামক জনৈক ব্যক্তিকে রসুলেপাক (ﷺ) এর অন্বেষণে পাঠিয়ে দিলো। তাঁকে যেখানেই পায়, যেনো ধরে নিয়ে আসে। লোকটি রসুলেপাক (ﷺ) এর কাছাকাছি পৌঁছলে তার ঘোড়াটির পা মাটিতে দেবে গেলো।
রসুলেপাক (ﷺ) তার জন্য দোয়া করলে ঘোড়ার পা মাটি থেকে বের হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে সে সেখান থেকে ফিরে এলো। অন্য আর এক বর্ণনায় আছে, হিজরতের সময় এক কুরাইশ রসুলেপাক (ﷺ) এবং হজরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) কে দেখে ফেললো। লোকটি সংবাদ বলার জন্য দৌড়ে গেলো কুরাইশদের কাছে। কিন্তু মক্কা মুকাররমায় পৌঁছলে, তার মন থেকে উক্ত খেয়াল দূর হয়ে গেলো। কী উদ্দেশ্যে সে মক্কা অভিমুখে দৌড়ে এসেছিলো তা বিলক্ষণ ভুলে গেলো। শত চেষ্টাতেও সে কথা আর স্মরণে আনতে পারলো না। অবশেষে বাধ্য হয়ে ঘরে ফিরে গেলো।
মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক ও অন্যান্যগণ বলেছেন, একদিন রসুলে করীম (ﷺ) সেজদায় ছিলেন। মালাউন আবু জাহেল হাতে করে একটি পাথর নিয়ে এলো। দ্বিতীয় আরেক মালাউন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। পাথর মেরে নবী করীম (ﷺ)কে দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য উদ্যত হলো সে। কিন্তু পাথর তার হাতে আটকে গেলো। হাত দুটি হয়ে গেলো শক্তিহীন। ফলে সে কিছুই করতে পারলো না। অগত্যা সে যখন মোড় ঘুরিয়ে পিছনের দিকে চললো, তখন রসুলেপাক (ﷺ) দোয়া করলে তার হাত থেকে পাথর খসে
পড়লো।
একবার আবু জাহেল একটি অত্যন্ত বড় উট দেখতে পেলো। এতো বড় উট সে আর কখনও দেখেনি। মুসলমানদের উট মনে করে তাকে ধরে যবেহ করে খেয়ে ফেলবে বলে সে মনস্থির করলো। কিন্তু ভয়ে তার কাছেই যেতে পারলো না। রসুলেপাক (ﷺ) বলেন, উটের আকৃতিতে ছিলেন জিব্রাইল। কেউ তার কাছে গেলে নির্ঘাত মরতো।
একবার এক বদবখত ব্যক্তি একটি দেয়ালের উপর দাঁড়িয়েছিলো। রসুলেপাক (ﷺ) নীচে দাঁড়িয়েছিলেন। লোকটি গম পিষবার চাক্কির এক অংশ উঠিয়ে রসুলেপাক (ﷺ) এর মাথার উপর ফেলে দিতে উদ্যত হলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। কিছুই করতে পারলো না। রসুলেপাক (ﷺ) স্বাভাবিকভাবে হেঁটে হেঁটে মদীনা শরীফের দিকে চলে গেলেন।
হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, আবু জাহেল কুরাইশদের সঙ্গে এই মর্মে অঙ্গীকার করেছিলো যে, আমি যদি মোহাম্মদকে নামাজের মধ্যে পাই তবে নামাজরত অবস্থায় তার গর্দান পিষ্ট করবো। রসুলেপাক (ﷺ) নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলে বদবখত্ লোকেরা আবু জাহেলকে খবর দিলো। খবর পেয়ে আবু জাহেল এলো। রসুলেপাক (ﷺ) এর কাছে যেতে না যেতেই দুহাত থেকে কী যেনো সরাতে সরাতে দৌড়ে সেখান থেকে পালালো সে। লোকেরা এরকম করার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বললো, নিকটে যেতেই আগুনের একটি গর্ত দেখতে পেলাম। দেখলাম, আমি যেনো সেই গর্তের ভিতর পড়ে যাচ্ছি। ভয়ানক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ। মনে হলো, সারা পৃথিবী থেকে সেই ভয়ানক আওয়াজ বের হচ্ছে।
রসুলেপাক (ﷺ) বলেছেন, ওসব ছিলো ফেরেশতা। আবু জাহেল আরও কাছে গেলে তার দেহের জোড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। তাকে টুকরা টুকুরা করে ফেলা হতো। তখন এই আয়াত নাযিল হয়েছিলো ‘কক্ষণও নয় ........ নিঃসন্দেহে মানুষ অবাধ্য।’ বর্ণিত আছে, শায়খা ইবনে ওছমান জাদবীর কওম বাইতুল্লাহ শরীফের দারোয়ান ছিলো। কাবা গৃহের চাবি তাদের কাছেই থাকতো। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উক্ত শায়খা রসুলেপাক (ﷺ) এর উপর হামলা করতে উদ্যত হয়ে বলতে লাগলো, আমার বাপ চাচাকে মোহাম্মদের চাচা হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব মেরেছিলো। আজ তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবো মোহাম্মদের উপর! তার চাচা হামযা আমার বাপ চাচা দুজনের উপর অত্যাচার করেছিলো। সেই দুজনের অন্যায়ের প্রতিশোধ একজন থেকে উসুল করে নেবো। একথা বলে সেই নির্বোধ যখনই তরবারী উত্তোলন করলো, সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিতে দিতে সেখান থেকে দৌড়ে পালালো। সে বলেছে, আমি রসুলুল্লাহ্র কাছে গেলে দেখতে পেলাম, আগুনের একটি উল্কাপিণ্ড আমার উপর পড়ছে। তাই দেখে ভয়ে পালিয়ে আসি।
হজরত ফুযালা ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, মক্কাবিজয়ের সময় রসুলেপাক (ﷺ) যখন তওয়াফে রত ছিলেন, তখন আমার মনে হয়েছিলো, তাঁকে শহীদ করে দেই। আমি তাঁর নিকটবর্তী হলাম। তিনি বললেন, হে ফুযালা! মনে মনে তুমি কী ভাবছিলে? তুমি আল্লাহ্র রসুলকে শহীদ করে দিতে চেয়েছিলে, না? আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি এরকম চাইনি। রসুলেপাক (ﷺ) আমার কথা শুনে মৃদু হাসলেন। আমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন এবং তাঁর পবিত্র হাতখানা আমার বুকে রাখলেন। মনে বড়ই প্রশান্তি অনুভব করলাম। আল্লাহ্র কসম! তাঁর হাতখানা বুকের উপর থেকে সরিয়ে নেয়ার আগেই, আমার মনে হলো, তাঁর চেয়ে প্রিয়জন পৃথিবীতে নেই।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ঘটনা হচ্ছে আমের ইবনে তুফায়ল ও আরবাদ ইবনে কায়সের ঘটনা। আমের আরবাদকে বললেন, আমি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মোহাম্মদের মনোযোগ তোমার দিক থেকে সরিয়ে আমার দিকে নিয়ে আসবো। তুমি তখন তলোয়ার দিয়ে অতর্কিতে তাঁর উপর হামলা করে বসবে। কিন্তু আমের দেখলেন, আরবাদ নির্বিকার বসে আছে। কিছুই করছে না। সেখান থেকে বের হওয়ার পর আমের আরবাদকে জিজ্ঞেস করলেন, আক্রমণ করলেনা কেনো।
আরবাদ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যখন তাঁকে আক্রমণ করার খেয়াল করলাম, তখন সেখানে তোমাকেই দেখতে পেলাম। এ অবস্থায় আক্রমণ করলেতো তোমাকেই হত্যা করতাম। আল্লাহ্তায়ালার তরফ থেকে রসুলেপাক (ﷺ) কে হেফাজত করার ঘটনা এতো বেশী যে, ইহুদী গণকেরাও কুরাইশদেরকে এ ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করতো। রসুলেপাক (ﷺ) একদিন কুরাইশদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলবে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারও করে দিতো এবং সেজন্য তাঁকে সময় থাকতেই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করতো। কিন্তু আল্লাহ্তায়ালা সবসময়ই তাঁর হাবীব (ﷺ) কে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছেন। দুশমনদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আঁচ তাঁর গায়ে লাগতে দেননি। এই মর্মে আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘কাফেরেরা চায় আল্লাহ্র নূরকে ফুৎকারে নির্বাপিত করে দিতে। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর নূরের পূর্ণতা প্রদানকারী। কাফেরেরা যদিও একে অপছন্দ করে।’ (৬১ঃ৮)
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |