বীরত্ব ও বাহুবল
সাররাহ নামক কিতাবে হুজুর পাক (ﷺ) এর বীরত্ব ও বাহুবল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। ভীতিকর অবস্থায় বা স্থানে নির্ভীকতা ও দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করাকে বাহাদুরী বা বীরত্ব বলা হয়। শেফা নামক কিতাবে বলা হয়েছে, শক্তির প্রাচুর্য এবং তাকে আকলের অনুগত করার নাম শুজাআত বা বীরত্ব। কামুস বা অভিধানগ্রন্থে বলা হয়েছে, ভয়ভীতির সময় মনে সাহস সঞ্চার করা ও তাকে সুদৃঢ় রাখার নাম বীরত্ব। হুজুর পাক (ﷺ) এর এগুণটি বদান্যতার গুণের ন্যায় পরিপূর্ণ ছিল। অনেক সময় দেখা গেছে, কঠিন অবস্থায় যেখানে বড়াে বড়াে নির্ভীক লোকদেরও পদস্থলন হয়ে গেছে, সেখানে হুজুর পাক (ﷺ) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে অটল রয়েছেন। স্বস্থান থেকে একটুও বিচ্যুত হননি। বরং দৃঢ়তা সহকারে অধিক থেকে অধিকতর বেগে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছেন। সামান্যতম পিছপা হননি। এব্যাপারে হুনায়ন যুদ্ধের অবস্থা উল্লেখ করা যেতে পারে। কাফেরদের পক্ষ থেকে বৃষ্টির ন্যায় তীর বর্ষিত হয়েছে। যাতে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এক প্রকারের উত্তেজনা, পেরেশানী, চাঞ্চল্য এবং টলটলায়মানতার সৃষ্টি হয়েছিলাে। কিন্তু হুজুর পাক (ﷺ) স্বস্থান থেকে একটুও নড়াচড়া করলেন না। তিনি ঘােড়ার উপর আরােহন অবস্থায় ছিলেন। ঐ সময় হজরত আবু সুফিয়ান ইবন হারেছ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ঘােড়ার লাগাম ধরে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি মনে মনে কামনা করছিলেন, কাফেররা যেনাে হামলা করে। হুজুর পাক (ﷺ) অশ্বপৃষ্ঠ থেকে মাটিতে নামলেন। আল্লাহপাকের কাছে সাহায্য কামনা করলেন এবং পবিত্র হাতে এক মুষ্ঠি মাটি উঠিয়ে নিয়ে কাফেরদের প্রতি খুঁড়ে মারলেন। সেদিন হুনায়ন প্রান্তরে এমন একটি কাফের ছিলেন যার চোখে মুখে সে ধূলিকণা পতিত হয়নি।
হুজুর পাক (ﷺ) তখন উচ্চারণ করেছিলেন -
"আনান্নাবিই লা কাজিব আনা বানু আব্দুল মােত্তালিব" অর্থাৎ আমি নবী তাতে কোনাে সন্দেহ নেই, আমি আব্দুল মুত্তালিবের আওলাদ।
সেই দিন হুনায়ন সমরপ্রান্তরে হুজুর পাক (ﷺ) এর চাইতে নির্ভীক, দুঃসাহসী ও বীরপুরুষ কাউকে দেখা যায়নি। বর্ণিত আছে, মুসলমানগণ ওকাফেররা যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে। প্রথম পর্যায়ে মুসলমানগণ পিছপা হয় গেলেন। তখন হুজুর পাক (ﷺ) স্বয়ং অবতীর্ণ হলেন এবং কাফেরদের উপর হামলা করলেন। ঐ সময় আনসারগণকে ডাক দেয়া হচ্ছিলাে এগিয়ে আসার জন্য। এতে সাহাবাগণ যুদ্ধক্ষেত্রে পুনরায় ফিরে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পাশে একে একে সমবেত হতে লাগলেন। পরিশেষে মুসলমানগণ বিজয় হলে। এর বিস্তারিত ঘটনা যথাস্থানে আলােচনা করা হবে।
ইন শা আল্লাহ।
হযরত ইবন ওমর (رضي الله عنه) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেয়ে অধিক বীরপুরুষ, নির্ভীক, দানশীল এবং আল্লাহতায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট আর কাউকে আমি দেখিনি। আমীরুল মুমিনীন সাইয়্যেদুনা হযরত আলী মুর্তজা (رضي الله عنه) বলেন, যুদ্ধের লেলিহান শিখা যখন দাউ দাউ করে জ্বলে এবং মুজহিদগণের বক্ষসমূহ যখন রক্তবর্ণ ধারণ করতাে, তখন আমরা হুজুর আকরম (ﷺ) এর আশ্রয় অন্বেষণ করতাম। এমন অবস্থায় হুজুর পাক (ﷺ) দুশমনদের সবচাইতে নিকটে অবস্থান করতেন এবং সমরপ্রাঙ্গনে তিনি কঠিনতম ব্যক্তিতে পরিণত হতেন।
সীরাত বিশেষজ্ঞগণ বলেন, লোকেরা ঐ ব্যক্তিকে বাহাদুর হিসাবে গণ্য করতাে, যারা যুদ্ধের ময়দানে দুশমনের চাইতে হুজুর পাক (ﷺ) এর বেশী নিকটে থাকতাে।
হযরত ইমরান ইবন হুসায়ন (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা করার জন্য হুজুর পাক (ﷺ) সর্বাগ্রে এগিয়ে যেতেন।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী]
© | সেনানী এপ্স |