তাবীরকারীগণের জন্য কতিপয় আদব
আহলে এলেমগণ বলে থাকেন, স্বপ্নের তাবীরকারীর জন্য কয়েকটি আদব রয়েছে। যথা সূর্য উদয়কালে, সূর্য হেলে যাওয়ার সময়, সূর্যাস্তের সময় এবং রাত্রিবেলা স্বপ্নের তাবীর করা ঠিক নয়। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়ার গ্রন্থকার এরকম বলেছেন। তবে তিনি এর কোনো কারণ উল্লেখ করেননি এবং এর স্বপক্ষে কোনো হাদীছের উদ্ধৃতিও দেননি।
এর কারণ হিসেবে যদি এই বলা হয়, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এই দুই সময় নামাজের জন্য মাকরুহ, তাই নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে বলতে হয় যে, ঠিক দ্বিপ্রহরে যখন সূর্য মাথার উপরে থাকে, সে সময়ের কথা কেনো উল্লেখ করা হলো না। অথচ তার পরবর্তী সময় সূর্য হেলার সময়ের কথা বলা হয়েছে। আর রাতের বেলায় নিষেধ করার কারণই বা কী?
হাদীছ শরীফে তো পরিষ্কার বলা হয়েছে, রসুলেপাক (ﷺ) ফজরের নামাজ আদায় করার পর সাহাবীগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে জিজ্ঞেস করতেন, কেউ আজ রাত্রে স্বপ্ন দেখেছো কি? যাঁরা স্বপ্ন দেখতেন, বলতেন। আর তিনি তার তাবীর বলে দিতেন।
‘ফজরের নামাজের পর স্বপ্নের তাবীর বলা’ এই শিরোনামে একটি স্বতস্ত্র অধ্যায়ই রয়েছে। এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, রসুলেপাক (ﷺ) ফজরের নামাজের পর যে তাবীর বলতেন, তা সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বেই বলতেন। সুতরাং সূর্যোদয়কালে তাবীর বলার নিষিদ্ধতা দলীলের উপর নির্ভরশীল। তবে যে সময়ে নামাজ পড়া মাকরুহ সে সময়ে তাবীর করা যাবে না, ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ এরকম বলেছেন, সূর্য উদয়ের পর অনেকটা উঁচুতে উঠে গেলে এবং আসরের ওয়াক্তের আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত- এই সময়ে স্বপ্নের তাবীর বলা মোস্তাহাব- এ কথাটিও বর্ণিত হাদীছ দ্বারা রদ হয়ে যায়। কেনোনা হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, রসুলেপাক (ﷺ) ফজরের নামাজ আদায়ান্তে সাহাবীগণের কাছ থেকে স্বপ্নের ব্যাপারে জানতে চাইতেন। তাতে মনে হয়, এ সময়ই মোস্তাহাব সময়।
রসুলেপাক (ﷺ) ফজরের পর সাহাবীগণকে স্বপ্নের কথা কেনো জিজ্ঞেস করতেন, তার কারণ সম্পর্কে আহলে এলেমগণ একটি যুক্তি দিয়েছেন। যুক্তিটি হচ্ছে, রসুলেপাক (ﷺ) মক্কাবিজয়ের সুসংবাদের অপেক্ষায় থাকতেন। কেউ কোনো
স্বপ্নের মাধ্যমে এধরণের সুসংবাদ পেয়েছেন কি না, তা জানার জন্যই তিনি ফজরের পর স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করতেন।
তাঁরা এ যুক্তিটিই বা কোথা থেকে পেয়েছেন, বুঝা যায় না। বরং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, তিনি সাহাবীগণের অবস্থা জানতে চাইতেন। তাঁদের সুলুক কোথায় পৌঁছেছে, তা স্বপ্নে প্রতিভাত হবে এবং তাঁদের পরবর্তী নির্দেশনা কী হবে, এ সমস্ত উদ্দেশ্যেই স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করতেন তিনি।
মাশায়েখে কেরামের একটি দস্তুর আছে। তাঁরা আপন মুরিদগণকে তাদের ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তার প্রতিকার ও চিকিৎসা সম্পর্কে নির্দেশ দান করে থাকেন। এটাও রসুলেপাক (ﷺ) এর উক্ত সুন্নতের অনুসরণ। ওয়ালা হু আ’লাম।
কোনো কোনো আহলে এলেম বলে থাকেন, ফজরের পর স্বপ্নের তাবীর বলা অধিকতর উত্তম। কেনোনা এ সময়টি স্বপ্ন দেখার সময়ের সবচেয়ে নিকটে। তাই স্বপ্নের বর্ণনা প্রদানে ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা কম। তাছাড়া এসময় তাবীরকারীর স্মৃতিও থাকে স্বচ্ছ। মন থাকে পবিত্র। কলবে থাকে নূর। জীবিকা অর্জনের চিন্তায় তখনও স্মৃতিবিশৃঙ্খলা শুরু হয় না। তাই এ সময়টি স্বপ্নের তাবীর বলার জন্য উত্তম সময়।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |