[কিতাবঃ যুগ জিজ্ঞাসা,
✍লেখকঃ অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল-কাদেরী]
মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন
অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
🔴প্রশ্নঃ🔴 আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম হলে হযরত আদম (عليه السلام) এবং অন্যান্য নবীগণের পরে পাঠানো হলো কেন? রহস্যটা জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন প্রিয়নবী আকা ও মাওলা সরকারে দু‘আলম হুযূর পুরনূর রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ)কে অসংখ্য-অগণিত সম্মান ও পবিত্র গুণাবলী দ্বারা সম্মানীত করেছেন। তন্মধ্যে তাঁর মহান একটি শান হল তিনি খাতামুন্নবীয়্যীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী যাঁর পরে কিয়ামতের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত আর কোন নবী- নতুন কোন দ্বীন বা শরীয়ত নিয়ে আসবেন না। এ ব্যাপারে আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ রয়েছে। প্রিয়নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
انا خَاتَمُ النبيين لا نبىَّ بعدى- (ابوداؤد شريف- كتاب الفتن)
অর্থাৎ আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না। [আবু দাউদ শরীফ, কিতাবুল ফেতান] সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, প্রিয়নবী হুযূর পুরনুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
انا اول النبيين فى الخلقِ واخِرُهُمْ فى البعث-
আমি সৃষ্টির দিক থেকে সমস্ত নবীর মধ্যে প্রথম এবং পৃথিবীতে আগমনের দিক থেকে (তাঁদের মধ্যে) সর্বশেষ।
[কৃত : ইমাম জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (رحمة الله) (খাসায়েসে কুবরা ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩] অপর এক হাদিসে রাসূলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
انا اخِرُ الاَنْبِيَاءِ واَنتُمْ اَخِرُ الاُمَمِ- (ابن ماجة)
অর্থাৎ আমি শেষ নবী এবং তোমরা (উম্মতে মুহাম্মদী) শেষ উম্মত। [ইবনে মাজাহ্ শরীফ] আলিমকুল শিরোমণি শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত ‘মাদারিজুন নবুয়্যত’ কিতাবের ভূমিকায় পবিত্র কুরআনের সূরা হাদীদ’র এই আয়াত উল্লেখ করেছেন-
هو الاولُ والاخرُ والظاهِرُ والباطنُ وهو بكل شئ عليم-
অর্থাৎ তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনিই গোপন এবং তিনিই সব কিছু জানেন।
[সূরা হাদীদ: আয়াত -৩] এতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের হামদ্ এবং সাথে সাথে মাহবুবে খোদা হুযূর পুরনুর মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমদ মোজতবা (ﷺ)-এর না’ত বা প্রশংসা বিদ্যমান তথা এই পাঁচটি গুণ হুযূরের বেলায়ও প্রযোজ্য।
অর্থাৎ তিনি (রাসুলে পাক (ﷺ) প্রথম সৃষ্টি আর পৃথিবীতে আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষ নবী। তাঁর অনেক মুজেজাত ও আল্লাহ্ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সমূহ সকলের সামনে প্রকাশ্য ও অনেক মুজেজাত ও শান-মান গোপনীয় এবং তিনি (আঁ হযরত দ.) আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে সৃষ্টির সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। আর মহান আল্লাহ্ এ সবগুণে গুণান্বীত নিজস্ব ও জাতী ক্ষমতা বলে।
উক্ত আয়াতে করীমা ও হাদিসে পাক হতে প্রতীয়মান যে প্রিয়নবী হুযূর পাক (ﷺ)-এর সৃষ্টি সবার পূর্বে/প্রথম এবং দুুনিয়ায় আগমন সবার শেষে। তাই কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র আমাদের প্রিয়নবীর কলেমা, দ্বীন ও শরীয়ত বলবৎ থাকবে। প্রিয়নবী (ﷺ)কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে মহান রাব্বুল আলামীনের মর্জি মোতাবেক সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসেবে সকল নবীর পরে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর সকল নবী-রাসূল যুগে যুগে পৃথিবীবাসীর নিকট আমাদের প্রিয়নবী (ﷺ)-এর আগমনী বার্তা এবং আমাদের নবীর শান-মান ও মহান মর্যাদা স্বীয় উম্মতের মাঝে প্রচার করেছেন। তদুপরি আমরা শেষ জমানার গুনাহগার
উম্মতের কিসমত/ভাগ্যকে বুলন্দ ও মূল্যবান করার জন্য এবং আমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে মর্যাদাবান করার জন্য আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা প্রিয়নবী আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে সকল সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টি করে সমস্ত নবীর পরে প্রেরণ করেছেন।
এ বিষয়ে অনেক রহস্য রয়েছে- যা মাসিক তরজুমান ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) তথা রবিউল আউয়ালের বিগত সংখ্যা সমূহে প্রশ্নোত্তর বিভাগ ও বিভিন্ন প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
[খাসায়েসে কুবরা ও খাসায়েসে সুগরা কৃত: ইমাম সূয়ুতী (রাহ.) ও শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাহ.): কতৃক রচিত মাদারিজুন্নবুয়্যত ইত্যাদি]