নবী করীম (ﷺ) এর হুকুমে অস্ত যাওয়া সূর্য পুনরায় উদিত হয়

🖋মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর


回 হাদীস নং – ১


‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত : একদা রাসূল (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমাচ্ছিলেন/আরাম ফরমাচ্ছিলেন ছিলেন, তখন (ঘুমে) ওহী নাযিল হচ্ছিল। সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল ততক্ষণ পর্যন্ত হযরত আলী (رضي الله عنه) আসর নামায পড়তে পারেন নি। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ! আলী তোমার এবং তোমার রাসূলের আনুগত্য করেছে তাই সূর্যকে পুনরায় উদিত করে দাও। বর্ণনাকারী আসমা (رضي الله عنه) বলেন : আমি দেখেছি যে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে তা পুনরায় রাসূল (ﷺ) এর আদেশে উদয় হয়েছে।’’ইমাম হাইসামী তাবরানীর সনদ সম্পর্কে বলেন, হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদীসের সমস্ত রাবী সিকাহ, ইব্রাহীম ইবনে ‘হাসান’ তিনিও সিকাহ বা বিশ্বস্ত, এমনকি ইমাম ইবনে হিব্বান এর দৃষ্টিতেও তিনি বিশ্বস্ত, তবে ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালিব সম্পর্কে আমার জানা নেই।


তথ্যসূত্রঃ

  1. ক.ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কবীর : ২৪/১৪৪পৃ. হাদিস:৩৮২,

  2. খ.ইমাম তাবরানী, মু’জামুল আওসাত,

  3. গ.ইবনে কাসীর : আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৩ পৃ.,

  4. ঘ.হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ.,

  5. ঙ.ইমাম তাহাভী, মুশকিলুল আসার : ২/৮-৯ পৃ. হাদিস নং : ১২০৭, তিনি সহীহ সনদে। তাহাভীর মুশকিলুল আসার,৮/৩৮৮পৃ.,

  6. চ.উকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফাউল কাবীর : ১/৪২২পৃ.,

  7. ছ. ইবনে কাছির,আস-শামায়েল : ১৪৪পৃ.

  8. জ.ইমাম ইবনে আবি আছিম,আস-সুনান, হাদিস নং,১৩২৩,

  9. ঝ.সুয়ূতি : মুখতাসারুল মিনহাজুল আস-সুন্নাহ : ৫২৪-৫২৮পৃ.

  10. ঞ.শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী : নাসিমুর রিয়াদ্ধ : ৩/১০-১৪পৃ.,

  11. ট.ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী : ৬/২২১-২২২পৃ.

  12. ঠ.ইবনে কাইয়্যুম : মানারুল মুনীফ : ৫৭-৫৮পৃ.,

  13. ড.আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল কারী : ১৫/৪৩পৃ.

  14. ঢ.ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.


回 হাদীস নং–২


অপরদিকে উক্ত হাদিসটি অন্য আরেকটি সনদে কিছুটা শব্দ পরিবর্তন হয়ে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্তভাবে–

‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ‘ছাহবা’ নামকস্থানে যোহরের নামায পড়লেন। অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) কে কোন এক ওজরে প্রেরণ করলেন অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। রাসূল (ﷺ) আসরের নামাজ পড়লেন তারপর হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমালেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)কে জাগাননি এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। অতঃপর রাসূল (ﷺ) জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন। হে আল্লাহ! নিশ্চয় তোমার পেয়ারা গোলাম আলী তোমার নবীর প্রেমে নিজেকে আবদ্ধ / মগ্ন রেখেছেন, অতঃপর আলী (رضي الله عنه) নামাযআদায় করার জন্য আল্লাহ তা‘য়ালা পুনরায় অস্তমিত সূর্যকে উদিত করেছেন। বর্ণনাকারী হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) বলেন : সূর্যপুনরায় উদিত হয়ে যমীন ও পাহাড়ের উপর এসে গেল। অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) ওযু করে নামায আদায় করলেন। তারপর ছাহ্বা নামক স্থানে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল।’


তথ্যসূত্রঃ

  1. ’ক. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৭ পৃ:

  2. খ.আল্লামা তাবরানী : মু’জামুল কবীর : ২৪/১৫১-১৫২ পৃ: হাদিস : ৩৯১

  3. গ. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ:

  4. ঘ. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ৬/২২১-২২২ পৃ. হাদিস : ৩১২৪

  5. ঙ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৮ পৃ.

  6. চ. ইমাম তাহাভী : মুশকিলুল আছার : ৪/৭ পৃ. হাদিস : ১২০৮

  7. ছ. আল্লামা ওকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফা : ১/৪২২ পৃ.

  8. জ. আল্লামা ইবনে কাছির : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ.

  9. ঝ. আল্লামা ইবনে কাছির : আস-শামায়েল : ১৪৫ পৃ.

  10. ঞ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.


回 হাদীস নং-৩ 


উক্ত হাদীসের সমর্থনে আরও হাদিস পাওয়া যায়। যেমন–‘‘হযরত যাবের (رضي الله عنه) বলেন,নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) এর আদেশে সূর্য অস্তমিত হতে কিছুটা বিলম্ব করেছিল। ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন : হাদিসটি ইমাম তাবরানী মু’জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আর হাদিসটি সনদের দিক দিয়ে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য।’’


তথ্যসূত্রঃ

  1. ক. ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত :৪/২২৪পৃ,হাদিস:৪০৩৯

  2. খ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ.

  3. গ. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী : ৬/২২২ পৃ. হাদিস : ৩১২৪

  4. ঘ. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ধ : ৩/১০-১৪৫ পৃ.


সর্বশেষে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ বিষয়ের হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলে স্বীকার করেছেন। এ পর্যন্ত তাবরানীর সনদ নিয়ে পর্যালোচনা হল।ইমাম সাখাভী ও আল্লামা আযলূনী (رحمة الله) প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিস সম্পর্কে বলেন-ولكن قد صححه الطحاوي، وصاحب الشفاء، وأخرجه ابن منده، وابن شاهين-‘‘তার উক্ত হাদিসটি হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেন ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) এবং শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায (رحمة الله)। অপরদিকে ইমাম ইবনে মুনাদাহ (رحمة الله), ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) প্রমুখ তাদের কিতাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।’’তাই প্রমাণিত হয়ে গেল ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এর সনদে একজন রাবি অপরিচিত হলেও ইমাম সাখাভীর মতে ইমাম ত্বাহাবীও ইমাম কাযী আয়ায (رحمة الله) সহ অন্যান্য মুহাদ্দীসগণ অন্যধারায় সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অপরদিকে আল্লামা সাখাভী ও আল্লামা আযলূনী (رحمة الله) উক্ত হাদীসের অন্য সনদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেন–وابن مردويه من حديث أبي هريرة، -‘‘ইমাম ইবনে মারদুআহ (رحمة الله) তার হাদীসের গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)হতে একটি সূত্রে বর্ণনা করেন।’’অপরদিকে আল্লামা আযলূনী, হযরত যাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে আরো বলেন  روى الطبرانى فى الكبيروالاوسط بسند حسن–‘ ‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তাঁর “মু’জামুল কবীর” ও “মু’জামুল আওসাত” গ্রন্থে ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।’’অতএব উক্ত হাদিসটির চারটিরও বেশি সনদ পাওয়া গেল। তাই বলতে চাই, যখন দ্বঈফ হাদিস একাধিক সনদে বর্ণিত হয় তা দ্বঈফ বা দুর্বল থাকে না। কিন্তু উক্ত হাদিসের প্রথম আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه)‘র তাবরানীর সূত্র ছাড়া বাকী সবগুলো সনদ সহিহ ও ‘হাসান’ মানের। তাই অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। (সংগৃহীত)

Top