পবিত্র মুখ
হুজুর আকরম (ﷺ) এর মুখ মুবারক সম্পর্কে হজরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে সহীহ মুসলিম শরীফে এরূপ বর্ণনা এসেছে, রসূল (ﷺ) প্রশস্ত মুখগহবরের অধিকারী ছিলেন। এরকম বর্ণনা শামায়েলে তিরমিজিতে হজরত ইবন আবি হালা (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদিছ শরীফে পাওয়া যায়। সে যুগে আরববাসীদের কোন পুরুষের মুখ গহ্বর প্রশস্ত হওয়াটাকে প্রশংসার যোগ্য মনে করে। আর সংকীর্ণ মুখগহবর নিন্দাযােগ্য ভাবতাে। আর নারীদের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ মুখগহবর ছিল প্রশংসনীয়। তাই আরবের কবিগণ মুখগহবরের সংকীর্ণতা তাদের প্রেয়সী গানের প্রতি সম্পৃক্ত করে তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যেতে। অন্য হাদীসে -ظليع القمر যালিউল কামার' এ শব্দের পর يفتح الكلام ويختمه باشداقه 'ইয়াকতাহুল কালাম ওয়া ইয়াতিমুহু বিআশদাকিহি' এটুকু বাক্য অতিরিক্ত পাওয়া যায়। অর্থাৎ হুজুর আকরম (ﷺ) প্রশস্ত মুখগহবরের অধিকারী ছিলেন। তাই তাঁর পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণী হতো ভরাট স্বরে আর সমাপ্ত হতো شدق ‘শিদক’ অবস্থায়। شدق ‘শিদক' শব্দটিকে যদি কাসরা দিয়ে পড়া হয়, তখন তার অর্থ হয়, মুখগহবরের সংকীর্ণ অবস্থা। আর শাদাক' ফাতহা দিয়ে যদি পড়া হয় তখন তার অর্থ হয় প্রশস্ত মুখগহবর خطيب الاشدق 'খতিবুল আশিক' বলা হয় প্রশস্ত তালুর অধিকারী বক্তাকে। আবার خطيب مشدق খতীবুন মুসাদ্দিক' বলা হয়। ফাসাহাত বা অলংকারসমৃদ্ধ ভাষার অধিকারী বক্তাকে। মােটকথা এইযে, নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র মুখ থেকে যে বাণী নির্গত হতাে, তা ছিলাে নেহায়েত সম্পন্ন ও ভরাট বাক্যের সমাহার। তিনি কখনাে অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ শব্দ উচ্চারণ করতেন না। তিনি ছিলেন নিতান্তই স্পষ্টভাষী। সুতরাং উপরােক্ত বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত হলাে যে, নবী করীম (ﷺ) পরিপূর্ণ ফাসাহাত বা অলংকৃত বাক্যের অধিকারী ছিলেন। তবে এমন বাগাড়ম্বরতা নিন্দনীয় ও অপছন্দনীয় যা কৃত্রিম, বানােয়াট ও নাইক—নবী করীম (ﷺ) এর বাণী এ থেকে পবিত্র ছিলে। কোন কোন সীরাত বিশেষজ্ঞ 'জালালকে মুফলিজুল আসনান এর অর্থ করেছেন ঠোঁটের কাছাকাছি হওয়া। অর্থাৎ নবী করীম (ﷺ) এর বাণী সর্বদাই ঠোটের কাছাকাছি থাকতে। দ্বিধাদন্দ পরে বিলম্ব করে কিছু বলতে হতাে না। তিনি ছিলেন مفلج الاسنان 'মুফিজুল আসনান' অর্থাৎ তার দন্ত মুবারক প্রশস্ত ছিলাে। সাররাহ নামক কিতাবে مفلج 'মুফিজ' এর অর্থ করা হয়েছে সামনের পাটির দাঁত প্রশস্ত হওয়া। এক হাদীছে এসেছে, নবী করীম (ﷺ) এর সামনের দাঁত উজ্জ্বল, শুদ্র ও প্রশস্ত ছিলাে। আশরাফ শব্দের অর্থ দাঁতের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা। হজরত আলী মূর্ত (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হুজুর পাক (ﷺ) এর সামনের দাঁত উজ্জ্বল ও চকচকে ছিলাে। হজরত ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, হুজুর পাক (ﷺ) এর ওষ্ঠযুগল প্রশস্ত ছিলাে। যখন তিনি কথােপকথন করতেন তখন এরকম দেখা যেতাে, যেনাে ওষ্ঠযুগলের ফাক দিয়ে সামনের দাঁত থেকে নূরের ঝিলিক বেরুচ্ছে। আল্লাহতায়ালা নবীপ্রেমিক কবি বুসিরীর উপর রহম করুন। তিনি কতই না সুন্দরভাবে দন্ত মুবারকের উপমা দিয়েছেন
کانما اللؤلؤ المكنون في صدف
من معدنی منطق منه ومبتسم
'কাআন্নামালুলুউল মাকনুনুফী সাদাফিন মিন মাদানাই মানতিকিম মিনহ ওয়া মুহতাসিমি'
- নবী করীম (ﷺ) এর দন্ত মুবারক কথােপকথনের ও মুচকি হাসির সময় দেখলে মনে হতাে ঝিনুক পাটি থেকে বেরিয়ে আসা পরিচ্ছন্ন মুক্তা দানা।
ইমাম তিবরানী (رحمة الله) আওসাৎ নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হুজুর আকরাম (ﷺ) এর ওষ্ঠদ্বয় এবং মুখগহবরের সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশী ছিলাে। এক বর্ণনায় আছে, হুজুর পাক (ﷺ) এর দত্ত মুবারক বড় বড় ছিল। সামগ্রিক বর্ণনার ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী (ﷺ) এর মুখ সৌন্দর্যের দিক দিয়ে পূর্ণ ও যথাযথ ছিলাে।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী]
© | সেনানী এপ্স |