হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রদি মদপানের বর্ণনার (নাউযুবিল্লাহ) সনদগতভাবে কোন গ্রহনযোগ্যতা নেইঃ

গত পর্বে আমরা দেখেছি মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনার প্রথম রাবীর অগ্রহযোগ্যতার প্রমাণ ।  এ বর্ণনার দ্বিতীয় রাবী হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহির অবস্থা দেখবো ।
যত কিতাবেই এ বর্ণনা এসেছে সব সনদে আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন রাবী আছে। এ রাবী শেষ বয়সে বছরা চলে যান এবং উনার ভয়াবহ স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। কোন কিছুই উনার মনে থাকতো না। যে কারনে উনার সর্ম্পকে ইমামগনের রায় হচ্ছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ زُهَيْرٍ قَالَ : سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِينٍ يَقُولُ : كُلُّ شَيْءٍ مِنْ حَدِيثِ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ ضَعِيفٌ ، إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ ، وَسُفْيَانَ ، وَحَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ.
হযরত ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সকল বর্ণনা দ্বয়ীফ শুধুমাত্র যেসকল হাদীছ শরীফ ইমাম হযরত শোবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন সেগুলো ব্যতীত। (মুসনাদে ইবনে জা’দ ১/১৩২: বর্ণনা নং ৮৩৭)

وقال أبو داود: قلت لأحمد: عطاء بن السائب ـ أعني كيف حديثه؟ قال: من سمع منه بالبصرة فسماعه مضطرب
হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহির বর্ণনা  সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন, উনার থেকে বছরার যারা হাদীছ শুনেছেন তারা ভ্রান্তিযুক্ত বর্ণনা শুনেছেন। (মিনহাজুল ইমাম আহমদ ফি ইলালুল হাদীছ ১/৪০৯)

ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ثم بآخره تغير حفظه، في حديثه تخاليط كثيرة
শেষ বয়সে উনার স্মরন শক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো। যেকারনে উনার বর্ণনায় অনেক সংমিশ্রন দেখা যায়। (জারহু ওয়াত তাদীল ৬/৩৩৪, তাহযিবুল কামাল ২০/৯২)


قال أبو حاتم: "وفي حديث البصريين الذين يحدثون عنه تخاليط كثيرة لأنه قدم عليهم في آخر عمره
বছরার অধিবাসীদের মধ্যে যারা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন সেগুলোর মধ্যে অনেক সংমিশ্রন রয়েছে কারন এটা ছিলো উনার শেষ জীবনের। (তাহযিবুল কামাল ২০/৯২)

من سمع منه قديماً كان صحيحاً، ومن سمع منه حديثاً لم يكن بشيء
উনার থেকে পূর্বে যারা শ্রবন করেছে সেগুলো ছহীহ। পরবর্তীতে যারা শ্রবন করেছে সেগুলো কোন ভিত্তিই নাই। (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১০৪)

হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিষয়ে ইমামগনের যে রায় তা হচ্ছে, উনার থেকে হযরত শোবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যাতীত কারো রেওয়ায়েত গ্রহনযোগ্য নয়। উনার শেষ জীবনে স্মরনশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো এ উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্য যেসকল বর্ণনাকারীর নাম পাওয়া যায় তারা শেষ জীবনে যখন তিনি বছরায় ছিলেন তখনকার বর্ণনাকারী।  উনার জীবনীতে আরো রয়েছে শেষ বয়সে তিনি বলতেন ওমুক থেকে বর্ণনা শুনেছেন অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে উনার থেকে কোন বর্ণনাই শুনেন নাই। এ কারনে হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শেষ জীবনের কোন বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয় এটাই ইমামদের ঐক্যমত। (তাহযীবুত তাহযীব)

মজার বিষয় হচ্ছে যে তিরমিযী শরীফের বর্ণনা নিয়ে বাতিল ফির্কা দলীল দিচ্ছে এরা তিরমিযী শরীফ ভালো করে পড়েও দেখেনি। যদি দেখতো তাহলে জানতে পারতো হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী অন্য একটা বর্ণনার বিবরনে কি বলেছেন,
وَقَدْ اخْتَلَفَ بَعْضُهُمْ فِي هَذَا الإِسْنَادِ عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ ، قَالَ عَلِيٌّ : قَالَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ : مَنْ سَمِعَ مِنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ قَدِيمًا فَسَمَاعُهُ صَحِيحٌ ، .........
يُقَالُ : إِنَّ عَطَاءَ بْنَ السَّائِبِ كَانَ فِي آخِرِ أَمْرِهِ قَدْ سَاءَ حِفْظُهُ.
এ হাদিসের সনদে আতা ইবনুস সাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনার ব্যপারে হাদিস বিশারদগন ইখতিলাফ করেছেন। হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যারা পূর্বে (বছরা গমনের আগে) আতা ইবনুস সাইব এর নিকট হাদিস শুনেছেন তাদের উক্ত শ্রবণ যথার্থ। ................. বর্ণিত আছে যে, শেষ বয়সে আতার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। (তিরমিযী ২৮১৬)

উল্লেখ্য, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার সর্ম্পকে মদ পানের মত জঘণ্য অভিযোগ যা সুনানে তিরমিযীতের বর্ণিত সে সনদটা খেয়াল করুন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ الرَّازِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ

হযরত আতা ইবনে সাঈব (عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত আবি জাফর রাজী বছরী (أَبِي جَعْفَرٍ الرَّازِيِّ) রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করছেন। হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি শেষ বয়সে স্মৃতি নষ্ট হওয়ার পর উনার থেকে বছরী একজন রাবী হযরত আবি জাফর রাজী বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কৃত রেওয়ায়েত কি করে গ্রহনযোগ্য হবে?  এখন আপনারাই বলুন এ বর্ণনা দলীল হিসাবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে কিনা?
Top