চতুর্থ অধ্যায়ের প্রারম্ভ
হুজুর পাক (ﷺ) এর তালীম, মর্যাদা ও রেসালাত সম্পর্কিত পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব, তথা তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল সে সম্পর্কে এই অধ্যায়ে আলোকপাত করা হবে। আহলে কিতাবের আলেমগণ এজমালী ও তফসিলী (সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত) তাবেই তার স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন, তারই আলোকে আলোচনার ধারা অগ্রসর হবে।
সুতরাং এ অর্থে আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, যারা এ উম্মী নবী ও রাসূলের অনুসরণ করে, তারা তাদের নিকট যে তৌরিত ও ইঞ্জীল কিতাব রয়েছে তাতে একথা লিখিত রয়েছে বলে দেখতে পায় যে, তিনি মানুষদেরকে সৎকাজের আদেশ করবেন এবং অসৎ কাজ থেকে তাদেরকে নিষেধ করবেন।হুজুর আকরম (ﷺ) এর আলােচনা অতীত আসমানী কিতাব সমূহ বিস্তর রয়েছে। আউলিয়া কেরাম গণের মজলিস সমূহের মধ্যে খাতেমুল আম্বিয়া (ﷺ) সম্পর্কে সর্বদা আলোচনা হতো। হক তায়ালা যখন নবী করীম (ﷺ) কে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন, কাজেই তারাতো তার সম্পর্কে আলােচনা অবশ্যই করে থাকবেন। কেননা দস্তুর হচ্ছে, মানুষ প্রিয়জনের আলোচনা বেশি বেশি করে থাকে। উপরোক্ত আয়াতে কারিমা হুজুর আকরাম (ﷺ) এর সত্যবাদিতার প্রমাণ।
আয়াতের মাধ্যমে হুজুর পাক (ﷺ) সম্পর্কে যে সংবাদ প্রদান করা হলাে, তা যদি বাস্তবের অনুরূপ না হতাে, তাহলে তাদের উন্নাসিকতা থেকে যেতাম এবং এটা হতে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণ। এটা সত্য কথা যে, ইহুদী, নাসারাদের চাইতে হুজুর পাক (ﷺ) এর নবুওয়াতের সত্যতা সম্পর্কে অন্যেরা বেশি জানে না। ইহুদী ও নাসারা রা তাদের তাদের কিতাব তৌরিত ও ইঞ্জীলের মধ্যে তার গুণাবলী সমূহ অধ্যয়ন করেছিলাে। আর তারা মদীনা মুনাওয়ারায় তার আগমনের প্রতীক্ষায় যুগ যুগ ধরে অপেক্ষমান ছিলেন। না মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর আবির্ভাবের আলামত সমূহ পাওয়া যাচ্ছিল।
এরাতাে ঐ ইহুদী নাসারা যারা তাদের সঙ্গে কোনাে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশংকা করলে হুজুর পাক (ﷺ) এর আবির্ভাবের ওসীলা দিয়ে বিজয় কামনা করতাে। তারা এরকম বলতাে যে, এখনতাে সেই সময় এসে গেছে, যখন আমরা নবীয়ে আখেরুজ্জামান এর আশ্রয়ের ছায়াতলে থেকে তোমাদের (বিরুদ্ধবাদী) সঙ্গে লড়াই করবে। ইহুদি নাসারারা মৃত্যুর সময় আপন সন্তানদেরকে ওসীয়ত করে যেতাে এবং বলতাে, আমাদের অন্তিমকালের সালাম তোমরা হুজুর (ﷺ) এর বারেগাহে পৌছিয়ে দিয়ে বলবে যে, আমরা এতােকাল তার অপেক্ষায় থেকে থেকে জীবন সাঙ্গ করে দিয়েছি এবং এ পৃথিবী থেকে ইমানের সাথে বিদায় নিয়েছি।
আল্লাহ তায়ালা এরকম ইরশাদ করেছেন, তারা নবী করীম (ﷺ) কে এরকম চিনতে, যেমন নিজেদের সন্তান সন্ততিকে চিনতে।' সারকথা এই যে, কাফেররাও নবীকরীম (ﷺ) কে খুব ভালাে করেই চিনতাে। কিন্তু তার পবিত্র আবির্ভাব কখন হলো, তখন সেই পরবর্তী হতভাগ্যতার পুনরাবির্ভাব ঘটলাে। হিংসা ও বিদ্বেষের কারণে এরা তখন নবী করীম (ﷺ) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে দিলো। জেনে বুঝে তারা সত্য পথকে গোপন করার উদ্দেশ্যে তাদের কিতাবের মধ্যে তাহরীফ (পরিবর্তন) করতে লাগলাে। দুনিয়ার মহব্বত ও নেতৃত্বের লোভ তাদেরকে অতি নিম্ন স্তরে নামিয়ে দিলাে। কিন্তু এহেন তাহরীফ বা রূপান্তর সত্বেত্ত নবীকরীম (ﷺ) এর নবুওয়াতের দলীল সমূহ এবং তাঁর শরীয়তের নিদর্শনসমূহ অই সমস্ত কিতাব সমূহে সুস্পষ্ট রূপে প্রতীয়মান হচ্ছিলো।
বর্ণিত আছে সুরইয়ানী ভাষায় নবী করীম (ﷺ) এর নাম ছিলাে মুশফেহ। আর মাশফাহ অর্থই হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ)। সুরইয়ানী ভাষায় শাফাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে হামদ বা প্রশংসা। তারা যখন আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করতাে তখন বলতাে شفحاله‘শাফহান লাহু' অর্থাৎ তার আরবী হচ্ছে الحمدلله ‘আলহামদুলিল্লাহ'। শাফাহ শব্দের অর্থ
যখন হামদ, তখন মাশফি শব্দের অর্থ হবে মোহাম্মদ (প্রশংসিত)। হুজুর পাক (ﷺ) এর অবস্থা, গুণাবলী, তার নবুওয়াতের আলামত ও নিদর্শনাবলী পরিষ্কারভাবে তার আবির্ভাব ও হিজরতের স্থানে বিদ্যমান ছিলাে।
যেদিন হুজুর আকরম (ﷺ) মদীনা মুনাওয়ারায় উপস্থিত হলেন, সেদিন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম যিনি ইহুদীদের ধর্মযাজক ও সম্মানিত গুণীজনদের অন্যতম ছিলেন এবং হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর আওলাদ ছিলেন, তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় এসে ঈমান গ্রহণ করলেন। সেদিন থেকে তিনি শুনতে পেয়েছিলেন, হুজুর আকরম (ﷺ) মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করবেন, সেদিন থেকেই তিনি তার মহান বরকতময় সাক্ষাত লাভের প্রতীক্ষা করছিল। এখন তিনি হুজুর (ﷺ) এর দিদারে ধন্য হলেন, তখন হুজুর (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন? তুমিই কি সেই ইবন সালাম যে ব্যক্তি ইয়াসরিবের আলেম। তিনি আরয করলেন, হাঁ। হুজুর (ﷺ) বললেন, আমি তোমাকে সেই আল্লাহ তায়ালার কসম দিয়ে বলছি, তিনি আমাকে প্রেরণ ক সংস্থা করেছেন। তুমি কি তৌরিত কিতাব আমার সম্পর্কে বর্ণনা পেয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রসূল। আল্লাহতায়ালা আপনাকে বিজয়ী করে দেবেন। তিনি আপনার দ্বীনকে অন্য সকল দ্বীনের উপর প্রবল করে দিবেন। নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমি আল্লাহর কিতাবে আপনার সৌন্দর্য ও গুণাবলীর বর্ণনা পেয়েছি। যেমন আল্লাহ তায়ালা হুজুর পাক (ﷺ) কে সম্বোধন করে বলেছেন, হে নবী (ﷺ)! আপনাকে আমি সাক্ষী রূপে, সুসংবাদ প্রদানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রেরণ করেছি।
তার গুণাবলী সম্পর্কে আরও উক্ত হয়েছে, উম্মীদের জন্য, অর্থাৎ আরববাসী যারা অধিকাংশই লেখাপড়া জানেনা, তাদের আশ্রয় দানকারী। শুধু তাই নয়, বরং তিনি সারা জাহানের জন্য আশ্রয় আধার। তবে এখানে আরবদেরকে খাছ করে বলার কারণ হচ্ছে, যেহেতু তিনি আরব দেশে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তারাই হচ্ছে তার নিকটতম ব্যক্তি। অথবা তাদেরকে খাছ করে উল্লেখ করার কারণ এ-ও হতে পারে যে, প্রথমে তারা মূর্খতা, অজ্ঞতা, এবং আত্মিক হতভাগ্যতায় নিমজ্জিত ছিল। হুজুর পাক (ﷺ) আমাদের তালিম ও তারবিয়াত প্রদান করে হেদায়েতের বুলু মাকাম নসীব করে দিলেন। 'হারাজ' বলা হয়, ঐ সুরক্ষিত স্থানকে, যেখানে কোনাে বিপদ ও কষ্ট পৌছতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে তারা হুজুর পাক (ﷺ) এর মাধ্যমে বিপদাপদ থেকে আশ্রয় পেয়েছে। সে বিপদাপদ প্রবৃত্তি প্রসূতি হতে পারে, আবার শয়তানী ওয়াসওয়াসা প্রসূতি হতে পারে।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ ফরমান, 'আল্লাহ তায়ালা এমন এক মহান সত্তা, যিনি উম্মীগণের মধ্যে থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে প্রকাশিত গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। উপরোক্ত হেফাজত দ্বারা এ অর্থও হতে পারে যে, তিনি তাদেরকে স্থায়ী আযাব, ধ্বংস ও নির্মূল হওয়া থেকে হেফাযত ও আশ্রয়ের মধ্যে রেখেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, 'আল্লাহতায়ালা এরকম নন যে, আপনি তাদের মধ্যে বিদ্যমান আছেন ,অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আযাব প্রদান করবেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) এর হাদীসের পরিশিষ্ট এই, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আপনি আমার খাছ বান্দা। এই বিশেষণ পাওয়ার সমকক্ষ আর কেউ নেই, আর আপনি আমার রসূলও বটে। যাকে আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্য প্রেরণ করেছি। আমি আপনার নাম রাখলাম মুতাওয়াককিল। কেননা, আপনি সকল কাজে আমার উপর নির্ভর করেছেন। আপনি আপনার ব্যক্তিসত্তাগত শক্তির বাইরে এসে গেছেন। কেননা বন্দেগীর হাকীকত এটাই। আপনি কর্কশ ভাষী নন। কঠোরও নন। এঅর্থে কুরআন মজীদে উক্ত হয়েছে আপনি যদি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে এটা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতাে। তবে অন্য জায়গায় যে বলা হয়েছে (আপনি মুনাফেক ও কাফেরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করুন)' তার উত্তর হচ্ছে এই যে চরিত্রগত সৌন্দর্য এবং হৃদয়ের কোমলতা তার স্বভাবগত ও জন্মগত গুণ ছেলে। আর কঠোরতার যে হুকুম প্রদান করা হয়েছে তা মাখলুকের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। তবে এর আরেকটি উন্নততর ব্যাখ্যা এ-ও হতে পারে যে, কঠোরতা না করা এবং অন্তরের নম্রতা এটা মুসলমানদের বেলায়। আর এর বিপরীতটি কাফের ও মােনাফেকদের জন্য। ফজর আকরম (ﷺ) এর উভয়বিধ গুণ আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে ছিলাে।
যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, মহব্বতও আল্লাহর ওয়াস্তে, দুশমনীও আল্লাহর ওয়াস্তে।হুজুর পাক (ﷺ) নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, প্রফুল্লচিত্ত থাকা আমার স্বভাব। আখলাক সংক্রান্ত অধ্যায় সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি বাজারে শােরগােলকারী ছিলেন না, যেমন জাহেলদের অভ্যাস। বিনম্র হওয়া এবং উচ্চস্বরে কথা না বলা বুদ্ধিমানের স্বভাব। মজলিশে, ঘরে, বাজারে সর্বত্রই বক্স চরিত্র থেকে দূরে থাকাও বুদ্ধিমানের নিদর্শন। হুজুর পাক (ﷺ) কোনাে মন্দের বিনিময়ে কাউকে মন্দ প্রতিদান দিতেন না। বরং ক্ষমা প্রদর্শন করতেন। আল্লাহ তায়ালা কক্ষণও তাঁর হাবীব (ﷺ) কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন না যতক্ষণ না বক্র জাতিকে সংশােধন করবেন এবং যতক্ষণ না মানুষেরা কালেমা 'লাইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে তওহীদের স্বীকৃতি প্রদান করবে।
আল্লাহ তায়ালা হুজুর পাক (ﷺ) এর মধ্যে এমন অন্ধদেরকে চক্ষুষ্মান করে দিবেন যারা সত্যপথ দেখে না। এমন কর্ণকে খুলে দিবেন যা সত্য কথা শ্রবণ করতে অক্ষম। এমন কলবকে খুলে দিবেন যা কিছু বুঝে না এবং প্রকৃত জ্ঞান প্রাপ্ত হয় না।
অন্য এক হাদীছে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে, তিনি বাজারে ডাকাডাকি করবেন না এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলবেন না। যা বলবেন তা সত্য হবে। তিনি সকল সৌন্দর্য ও উৎকর্ষমন্ডিত হবেন। (আল্লাহ্ বলেন) আমি তাকে যাবতীয় পবিত্র স্বভাব দান করবেন। এতমিনান, প্রশান্তি, স্থিরতা ও ধীরে তাকে তার পরিচ্ছদ বানাবাে। তাকওয়া ও পরহেজগারীর তার অন্তর বানাবো। হেকমত হবে তার বুদ্ধিমত্তা। সত্যবাদিতা ও অঙ্গীকার পালন হবে তার স্বভাব। ক্ষমা ও কল্যাণ হবে তার আদব। আদল বা ন্যায় বিচার হবে তার চরিত্র। হক হবে তাঁর শরীয়ত। হেদায়েত হবে তার ইমান। ইসলাম হবে তার মিল্লাত। আমি তাঁর নাম রাখবাে আহমদ। লোকেরা গোমরাহীর পর তার মাধ্যমে হেদায়েত পাবে। তার ওসিলায় মানুষ মূর্খতার পর পুনরায় জ্ঞান লাভ করতে। স্বল্পপরিচিতির পরে তার নাম পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে। (আল্লাহ বলেন) স্বল্পতার পর আমি তাকে অধিক দান করবেন। বিরহের পর আমি তাকে আহ্বান করবাে। দরিদ্রতার পর তাকে আমি সম্পদ দান করবাে। বিরুদ্ধবাদী অন্তর বিক্ষিপ্ত অভিলাষ সম্পন্ন ও বিচ্ছিন্ন দলসমূহের মধ্যে আমি তার মাধ্যমে প্রেমভালোবাসা ঢেলে দেবো। তার উম্মতকে আমি সর্বোত্তম উম্মত হিসাবে সাব্যস্ত করবে। কাবে আহবার থেকেও এরকম বর্ণিত আছে।
অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, সাইয়্যেদুনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কা'ব কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাওরাত কিতাবে মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রশংসনীয় গুণাবলী সম্পর্কে কি কি বর্ণনা পেয়েছাে? তখন তিনি বর্ণনা করলেন, তৈরিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, মোহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ আবদে মুখতার' অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার মনােনীত বান্দা হবেন। মক্কা মুকাররমায় তিনি জন্মগ্রহণ করবেন। মদীনা মুনাওয়ারা হবে তার হিজরতের স্থান। শামদেশ তার করায়ত্বে আসবে। তিনি কর্কশভাষী হবেন না। কঠোরও হবেন না। বাজারে তিনি গােলােযােগ সৃষ্টিকারী হবেন না। মন্দ কাজের প্রতিশোধ গ্রহণ করবে না। বরং ক্ষমাশীল তাই হবে তার মহানগুণ। এই বর্ণনায় হুজুর পাক (ﷺ) উম্মতের প্রশংসাও করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর উম্মত সুখদুঃখে, কষ্টে আনন্দে-সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞচিত্ত হবেন। তাদের স্বভাব হবে নিম্নে অবতরণের সময় তারা আল্লাহর প্রশংসা ‘আলহামদুলিল্লাহ' পাঠ করবেন। আর উর্ধে উঠার সময় আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ‘আল্লাহু আকবার' বলবেন, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে সূর্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। সূর্য যখন কোনাে নামাজের সময় নির্দেশ করবে তখনই তারা সে নামাজ আদায় করে নিবেন, যদিও তারা মাটিতে অবস্থান করেন। টাখনুর উপরে তারা পাজামা বা লুঙ্গি পরিধান করবেন। তারা নিজেদের অঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অর্থাৎ হাত বা মুখমণ্ডল অজু দ্বারা ধৌত করবেন। তাদের মধ্য থেকে আহ্বানকারী মুয়াজ্জিন গগনবিদারী ধ্বনিতে আযানের বাণী উচ্চারণ করবেন। তাদের কাতার যুদ্ধের ময়দানে আর নামাজের স্থানে একই রকম হবে। রাত্রি বেলায় তাঁরা সঙ্গীতমুখর হবেন। সঙ্গীতমুখর হওয়ার অর্থ ওযীফা কালাম ও কুরআন তেলাওয়াতের ধ্বনিতে মুখরিত হবেন।
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে—তিনি রসূলে করীম (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন।—হযরত মুসা (عليه السلام) এর উপর তৌরিত নাযিল হয়েছিল। তিনি তা পাঠ করতে যেয়ে উম্মতে মোহাম্মদী (ﷺ) সম্পর্কে আলোচনা দেখতে পান। তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে আর করলেন, হে খোদা! আমি তৈরিতে এমন এক উম্মতের আলােচনা পেলাম যারা সর্বশেষ উম্মত হবে, অথচ অগ্রগামীও হবে। অর্থ এই যে, কালের হিসাবে তারা হবে সর্বশেষ । কিন্তু উত্তমতা ও মর্যাদার দিক দিয়ে হবে প্রথম এবং অগ্রগামী। তাদের জন্য শাফাআত করা হবে। তাদের দোয়া বরকতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তাদের বুকে কালামে এলাহী সংরক্ষিত থাকবে। তাঁরা তাঁদের হেফয অনুসারে যথাযথভাবে তেলাওয়াত করতে। পারে গনীমতের মাল ভক্ষণ করবে। সদকা তাদের উদরের জন্য তৈরী করা হবে। তারা ঐ বিশেষ উম্মত, যাদের জন্য শরীয়তের বিধি বিধান সহজ করা হবে। গনীমত ও সদকা তাদের জন্য হালাল করে দেয়া হবে। পূর্ববর্তী উম্মতের এর বিপরীত, তাদের জন্য গনিমত ও সদকা হালাল ছিলােনা। এ উম্মত খারাপ কাজের উদ্দেশ্য করলে তখন তা লিপিবদ্ধ করা হবে না, যতক্ষণ না সে খারাপ কাজ বাস্তবায়ন করবে। খারাপ কাজ সম্পাদন করলে একটি লিপিবদ্ধ করা হবে। তারা যখন কোন নেকীর কাজ করার নিয়ত করবে, তখনই তা লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তা বাস্তবায়িত করলে দশগুণ হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে। তাদেরকে পূর্ব ও পরের জ্ঞান দান করা হবে। আখেরী যমানায় যে দাজ্জাল আবির্ভূত হবে, তাকে এই উম্মতের লোকেরা হত্যা করবে।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |