আয়াতে কুরআনী ও হাদীছের আলোকে মহানবী (ﷺ) এর মর্যাদা


এই অধ্যায়ে হুজুর পাক (ﷺ) এর এমন মর্যাদা, সম্মান ও ফযীলত সম্পর্কে আলােচনা করা হবে যা কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত এবং সহীহ হাদীস সমূহের আলোকে প্রাপ্ত। কুরআনুল কারীমে নবী করীম (ﷺ) এর মহত্ত, শ্রেষ্ঠত্ব, উচ্চ মর্যাদা, সম্মান ও প্রশংসায় বিভিন্ন বর্ণনা পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম দলীল হচ্ছে ‘শাহেদ। যেমন আল্লাহপাক বলেছেন ان ارسلناك شاهدا 'ইন্না আরসালনাকা শাহেদান'। শাহেদ' শব্দের মর্মার্থ —উচ্চ মাকাম, সমুন্নত মর্যাদা, মহান শান এবং শিষ্টাচার সংরক্ষণ। এ আয়াত প্রমাণ করে যে, কোনাে বুজুর্গী এবং মর্যাদা তার বুজুর্গী ও মর্যাদার সমকক্ষ হতে পারে না। এ কেমন মর্যাদা? স্বয়ং আরশের অধিপতি আল্লাহতায়ালা যার প্রশংসা করেছেন। প্রকৃত অবস্থা এই যে, কুরআনে কারীমে নবী করীম (ﷺ) এর গুণাবলী, মর্তবা ও মর্যাদার যে বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করা হয়েছে তা সংখ্যার গণ্ডিতে সীমিত করা সম্ভব নয়। প্রথমে ঐ আয়াত সম্পর্কে আসা যাক যা হুজুর আকরম (ﷺ) এর রিসালাত, হৃদয় প্রেম ও তাঁর দয়া বা অনুগ্রহ সম্পর্কে জগদ্বাসীকে শুভ সংবাদ দেয়া হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তােমাদের মধ্যে একজন রাসূল এসেছেন, যিনি তােমাদের দুঃখ দুর্দশায় বড়ই ব্যথিত, তোমাদের সফলতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। আর মুমিন মুসলমানদের প্রতি অনুগ্রহ প্রবণ-বড়ই দয়ালু। আয়াতের মর্মার্থ এই যে, তোমাদের কাছে এমন একজন নবীর আগমন ঘটেছে, তিনি তোমাদের স্বগোত্রীয় এবং তোমাদের স্ব শ্রেণীভুক্ত। তিনি তোমাদের থেকে ভিন্ন কেউ নন! কাজেই তোমরা যার আমানতদারী, বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদিতার মাকাম ও মর্তবা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবহিত আছে। তিনি তাকে কোনদিন তোমাদের কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত হননি। তোমরা শুধু তার সম্পর্কেই অবহিত আছে এমনটি নয়, বরং তাঁর পিতা পিতামহ ও পূর্ব পুরুষদেরকেও খুব ভালোভাবে জানে। তারা তো সমগ্র আরব জাহান সর্বাধিক সন্ত্রান্ত, উত্তম, উচ্চ মর্যাদাশালী ও পবিত্রজন ছিলেন। তাঁরা কেউ রক্ত প্রবাহিত কারী ছিলেন না। ছিলেন না ব্যভিচারী বা অশ্লীল উক্তিকারী। মূর্খতার অপরিচ্ছন্নতা তাদেরকে কলংকিত করতে পারেনি। এমর্মে নবী করীম (ﷺ) স্বয়ং এরশাদ করেছেন, আমাকে পবিত্র পৃষ্ঠাসমূহ থেকে পবিত্র গর্ভসমূহে স্থানান্তরিত করে বাহ্যিক জগতে প্রকাশ করা হয়েছে।' হে মক্কাবাসী! তোমরা তারে তার সত্তাগত মর্যাদা, প্রশংসনীয় গুণাবলী, মহান আখলাক, সুন্দর ও মনোরম কার্যাবলী নিজের প্রত্যক্ষ করছে। অধিকন্তু তার কোন কোন গুণাবলী সম্পর্কে নিজের বর্ণনা করেন। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তার সম্পর্কে বলেন, তোমাদের দুঃখ কষ্টে পতিত হওয়া তার কাছে বড়ই মর্ম বিদারক ব্যাপার। দুনিয়া ও আখেরাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিক্ষেপকারী হবে, এটা তার কাছে অসহনীয়। তোমরা সঠিক পথে এসাে, হেদায়েত গ্রহণ করাে। এই বিষয়ে তাঁর বাসনা তীব্র এবং আত্মপ্রত্যয় অত্যধিক। তিনি মুসলমানগণের প্রতি পরিপূর্ণ দয়ার্দ্র, স্নেহশীলতা ও মায়া মমতা পোষণকারী। অন্য জায়গায় আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই ভিতর থেকে তাদের জন্য রাসূল প্রেরণ করার মাধ্যমে। আল্লাহপাক আরো বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাকে ঐ মহান সত্তা, যিনি উম্মীগণের ভিতর থেকে একজনকে তাদের জন্য রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আরও বলেছেন, যেমন আমি তোমাদের ভিতর থেকেই তোমাদের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেছি। স্বজাতী, স্বশ্রেণী, স্বগোত্র থেকে মানব জাতির জন্য রাসূল প্রেরণ করাটা আল্লাহতায়ালার বিরাট অনুকম্পা। এর ফলে তাকে স্বীকার করা, তার প্রতি ইমান আনা ও তার অনুসরণ করা মানুষের জন্য সহজ হয়ে গেলাে। অবোধগম্যতার বিপদ থেকে তারা নিষ্কৃতি লাভ করলো।


সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত জাফর সাদেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মারেফত ও ইবাদত থেকে মাখলুক অক্ষম দেখলাম। তাই তিনি চাইলেন মাখলুকের কাছে স্বীয় মারেফত প্রদান করতে এবং তাদেরকে যথাযথ জ্ঞান প্রদান করতে। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এমন একজন মাখলুক সৃষ্টি করলেন, যিনি তাদেরই স্বশ্রেণীভুক্ত। তাকে সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় গুণাবলী থেকে রহমত ও মেহেরবানী পোশাক পরিয়ে দিলেন। তার নাম রাখলেন নবীয়ে সাদেক এবং রসূলে হক। এবং আল্লাহতায়ালা তার বান্দাগণের পক্ষ থেকে তাঁর রসূলের প্রতি যে আনুগত্য করা হবে, তাকে আল্লাহর আনুগত্য হিশেবে কবুল করে নিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়েছেন, যে রাসূলে কারীম (ﷺ) এর আনুগত্য করে সে আল্লাহতায়ালারই আনুগত্য করে আপনাকে সারা জাহানের জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।' (ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) বক্তব্য এখানেই শেষ)।


হকতায়ালা শানুহু স্বীয় সত্তার অস্তিত্ব ও তাঁর শামায়েল ও সিফত সমূহকে মাখলুকের প্রতি একটি রহমত রঞ্জিত সত্তা বানিয়ে দিলেন। সুতরাং সে রহমতের অংশ যার ভাগ্যেই ঘটলাে সে-ই দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাত পেলাে। এবং যাবতীয় অপকৃষ্টতা ও অপকর্ষতা থেকে রক্ষা পেলাে। যার ফলে মানুষ মাহবুবে হাকীকী সাথে মিলন লাভে ধন্য হতে এবং কৃতকার্য হতে সক্ষম হলে। এরকম বলা হয়েছে কিতাবুশ শিফা গ্রন্থে। উপরোল্লেখিত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, হুজুর আকরাম (ﷺ) মুমিনগণের জন্য রহমত হওয়ার মর্মার্থ হলে তিনি মাযহাব ও মায়ারে রহমত। অর্থাৎ রহমতের উৎস ও প্রকাশস্থল। কেউ যদি এনকার, বিরুদ্ধাচরণ ও অহংকারের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দুর্ভাগ্য, পথভ্রষ্টতা ও লাঞ্ছনায় নিপতিত হয়, তাহলে সে নিজেই নিজের উপর যুলুম করলাে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই।


উপরোক্ত আলোচনা আল্লাহ তায়ালার এরশাদ - وما خلقت الجن والانس الاليعبدون এর মর্মার্থের অনুকূল। মুফাসসিরে কেরাম বলেন, আল্লাহতায়ালা জ্বীন ও ইনসানকে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে, তার ইবাদতের দিকে মুতাওয়াজ্জিহান আছে। যেন তাদের মধ্যে ইবাদত করার মত মুলাহিয়াত ও যােগ্যতা দিয়েই আল্লাহ পাক তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তারা যেনাে এবিষয়টি তাদের জ্ঞান ও বিবেক দিয়ে চিন্তা ফিকির করে দেখে। কামনা ও রােষের প্রাবল্য থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে মানুষের জ্ঞান ও বিবেক। জ্ঞানই মানুষের জন্য ইবাদতের উপযোগী উপায় উপকরণ ও আঙ্গিক প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যম। তাই হুজুর আকরাম (ﷺ) মুসলমানদের জন্য بالفعل ‘বিলফেল' (কাজের মাধ্যমে), আর অন্যান্য মানুষের জন্য بالقوة (শক্তির মাধ্যমে) রহমত। কেউ কেউ আবার হুজুর পাক (ﷺ) কে সকলের জন্যই بالفعل ‘বিলফেল’ রহমত মনে করে থাকেন। তারা এ'কথাটির ব্যাখ্যা এভাবে প্রদান করে থাকেন যে, হুজুর পাক (ﷺ) মুমিনদের জন্য রহমত হেদায়েত এর মাধ্যমে। মুনাফিকদের জন্য রহমত হত্যা থেকে নিরাপত্তাপ্রাপ্তির মাধ্যমে। কাফেরদের জন্য রহমত আযাব ও গজব বিলম্বিত হওয়ার মাধ্যমে। আবার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, রসূলে পাক (ﷺ) কে অমান্য করার কারণে দুনিয়াতে কাফেরদের উপর আযাব গযব তাড়াতাড়ি এসে যাওয়া, তাদেরকে হামলা করা, হত্যা করা, ফাসাদকারীদেরকে হালাক করে দেয়া এটাও রহমত। কেননা, এজগতের শৃংখলা ও সংশােধন এরই উপর নির্ভরশীল। যেমন একটি বৃক্ষ থেকে খারাপ ও শুকনো ডালপালা কেটে ফেললে দেখা যাবে অন্যান্য ভালাে ডালপালার জন্য এটা উপকারী হয়েছে। এতে করে উক্ত বৃক্ষের নতুন নতুন তাজা ডালপালা গজায় এবং ফলদানে তা সহায়ক হবে।


হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, হুজুর পাক (ﷺ) মুসলমানদের জন্য রহমত স্বরূপ। তেমনিভাবে কাফেরদের জন্যও রহমত সন্দেহ নেই। কাফেরদের জন্য রহমত এ হিসেবে যে, আগের জামানার কাফেরদের উপর যে সমস্ত আযাব ও গজব পতিত হবে, তা কিন্তু হুজুর পাক (ﷺ) জামানার কাফেরদের উপর পতিত হবে না।


হাদীস শরীফে এসেছে, হুজুর আকরাম (ﷺ) হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার রহমতের আশ আপনিও কি লাভ করেছেন? তিনি আরয করলেন, হাঁ। কেননা আমি সর্বদাই আমার পরিণাম সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতাম। এখন আমি শংকামুক্ত হয়েছি। কেননা, হকতায়ালা শানুহু আপনার উপর যে কালাম নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে আমার প্রশংসা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, জিব্রাইল (عليه السلام) শক্তির অধিকারী, তিনি আরশের অধিপতি নিকট অবস্থানকারী, অন্যান্য ফেরেশতাবৃন্দ তার আনুগত্য করে থাকেন,সেখানে তিনি আমানতদার। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর এই ভয় ভীতি ছিল হক তায়ালা শানুহুর অমুখাপেক্ষীতার শানের প্রতি লক্ষ্য করে। হকতায়ালা শানুহুর নৈকট্যভাজনগণ এ ভয়ভীতি থেকে কখনও মুক্ত হতে পারেন না।


আহলে আরেফিন বলেন, যে দিন ইবলিস মালাউন আল্লাহ তায়ালার দরবার থেকে বিতাড়িত হলো, সেদিন থেকে আলমে মালাকুতের অধিবাসীগণ নিশ্চিন্ত দূর হয়ে গেছে। সেদিন থেকে তারা সর্বদাই ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে। যদিও শান্তি ও নিশ্চিন্ত এর সত্য অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে কারা ছিলেন নিরাপদ। তথাপি তারা নিশ্চিন্ত ছিলেন না। যেমন সাহাবায়ে কেরামের বেলায় দেখা যায়। সাহাবী হওয়া সত্বেও তারা আখেরাতের ভয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। তাঁরা কেউ এরকম বলতেন, হায়! আমি যদি একটা বৃক্ষ হতাম, আর আমাকে কেটে ফেলা হতাে। আবার কেউ বলতেন, হায় আফসোস! আমি যদি একটা দুম্বা হতাম, মানুষেরা আমাকে জবেহ করে খেয়ে ফেলতাে।


বড় বড় পয়গম্বরগণের উক্তি, তোমরা যা শরীক করো তার ভয় আমার নেই। অবশ্য আল্লাহপাকের রেজামন্দি উপর আমি নির্ভরশীল। আরও বলেছেন, এ জগতে আমাদের সুরক্ষিত থাকার উপায় নেই, তবে আমাদের প্রভু যদি ইচ্ছা করেন। তাদের সমস্ত কথাও উপরোক্ত পর্যায়ে।


তাপসীরে কাশশাফ এর প্রণেতা যমখশরী

 ذي قوة عندذى العرش مكين

 আয়াতের অপব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে হজরত জিবরাইল (عليه السلام) কে নবী করীম (ﷺ) এর চেয়ে অধিকতর মর্যাদাশালী হিসেবে দলীল পেশ করে থাকেন। কিন্তু তার উক্ত দলিল নিতান্ত দুর্বল তাতে সন্দেহ নেই। এই সহজ কথাটা তার বোধগম্যতার বাইরে যে, হজরত জিবরাইল (عليه السلام) এর লব্ধ মর্যাদা হুজুর আকরম (ﷺ) এর মাধ্যমেই লাভ হয়েছে। একথাটিও তিনি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। উক্ত আয়াত দ্বারা হজরত জিব্রাইল (عليه السلام) যে মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, তা হুজুর পাক (ﷺ) এর গুণাবলীর পূর্ণতার এক পাশ্বতুল্যও নয়। সে তুলনায় তার এহেন মর্যাদা নেহায়েতই নগ্ন। হজরত জিবরাইল (আ) এর গুণাবলী গণনাযোগ্য। কিন্তু হুজুর পাক (ﷺ) এর গুণাবলী সংখ্যা ও গণনার মাধ্যমে সীমিত করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করা যেতে পারে যে, কোন এক ব্যক্তির কোনাে একটি বিশেষ গুণ রয়েছে বলে এরকম চিন্তা করার কোনাে যৌক্তিকতা নেই যে, অপর ব্যক্তির মধ্যে উক্ত গুণটি বিদ্যমান নেই। হা হজরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর মর্যাদা সম্পর্কে খুব বেশী বলতে গেলে এরকম বলা যেতে পারে যে, তার মর্যাদার কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখা যাক, হুজুর পাক (ﷺ) এর মর্যাদা সম্পর্কে কুরআনে কারীমে কি উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে কারীমে তাে তাকে রহমাতুল্লিল আলামীন উপাধি দেয়া হয়েছে। তিনি সমস্ত জগতের রহমত। ফেরেশতাকুলও তাে একটা জগতের অধিবাসী। সুতরাং তিনি সে জগতের জন্যও রহমত সন্দেহ নেই। সুতরাং এটাই সাব্যস্ত হয় যে, হুজুর পাক (ﷺ) এর মর্যাদা অধিক। উপরােক্ত আয়াত সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির তাই এরকম মত পেশ করে থাকেন যে, উক্ত আয়াত দ্বারা হুজুর পাক (ﷺ) এর শান ব্যক্ত করা হয়েছে।

انه لقول رسول كريم

(নিশ্চয় এটা একজন সম্মানিত রাসূলের মাধ্যমে প্রচারিত বাণী) এই আয়াতের রাসূল শব্দের দ্বারা তারা মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বুঝিয়ে থাকেন।


হুজুর আকরম (ﷺ) এর সত্তা থেকে সমস্ত জগতের অংশ সমূহ যে রহমতের ভাগ পেয়েছে এ সম্পর্কে কোনাে কোনাে উলামা এরকম বলে থাকেন যে, মাটি তার মাধ্যমে রহমতের অংশ পেয়ে মুতাহির' অর্থাৎ পবিত্রকারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। পানি রহমতের ভাগ এভাবে পেয়েছে যে, তুফান থেকে তাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাতাসের রহমত প্রাপ্তির বিবরণ এরকম, শয়তানের রাস্তায় ও সে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে সক্ষম। আবার ঘনঘটা সাজিয়ে কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার ব্যাপারে সে ক্ষমতাবান। অগ্নি রহমতের হিস্সা এভাবে লাভ করেছে যে, হুজুর পাক (ﷺ) এর জন্যই সদকার মাল জ্বালিয়ে দেয়ার মতাে যুলুম থেকে। সে বেঁচে গেছে। আকাশ রহমতের অংশ পেয়ে, আড়িপেতে শ্রবণকারী শয়তান থেকে নিরাপদ হয়ে গিয়েছে। এসবই লাভ হয়েছে হুজুর পাক (ﷺ) এর কারণে।


শায়খ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি এ অধমকে জিজ্ঞেস করলাে, হুজুরপাক (ﷺ) থেকে ইবলিস রহমতের কোন্ অংশ পেয়েছে? আমি জবাব দিয়েছি, হুজুর আকরম (ﷺ) এর শান শওকত, হাদারাত ও হাক্কানিয়াতের আঘাতে, তদুপরি আল্লাহর বাণী


جاء الحق وزهق الباطل ও فيد مغه فاذاهوزاهق


এর পরিপ্রেক্ষিতে ইবলিস মালাউন ধ্বংস হয়ে যেতো। নিশ্চিহ্ন, নাস্তানাবুদ হয়ে যেতে। কিন্তু হুজুর পাক (ﷺ) এর রহমতের পরিপ্রেক্ষিতে ধ্বংস হওয়া থেকে বেঁচে গেলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আযাবের অপেক্ষা করার সুযোগ লাভ করলে। এটা তার জন্য আপাতত রহমত বলা যেতে পারে। এই সৌভাগ্য লাভ হয়েছে হুজুর আকরম (ﷺ) এর খাতিরে।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top