নবী করীম (ﷺ) এর উপর দরূদ ও সালাম


আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি তাজিম ও সম্মান প্রদর্শন, তাঁর উচ্চ মর্যাদা, ফযীলত ও বারকাতের বহিঃপ্রকাশ এবং সুমহান মর্তবা প্রকাশের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আয়াত খানা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহতায়ালা এরশাদ ফরমান, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতাবৃন্দ নবী (ﷺ) এর উপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে ইমানদারগণ! তােমরাও তার উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করাে।


হে মুসলমানগণ! তোমরা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করো এবং ফেরেশতাবৃন্দের অনুরূপ আচরণ করাে, নবীকরীম (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ করে। তাদের এবং ফেরেশতা বৃন্দের দরুদ পাঠ করার প্রক্রিয়া হচ্ছে, তোমরা আপন পরওয়ারদেগারের নিকট এই দোয়া করি তিনি যেন তার হাবীব (ﷺ) এর উপর দরুদ ও রহমত প্রেরণ করেন। এছাড়া তোমাদের সে শক্তি ও সামর্থ্য কোথায়—যে তোমরা তার যথাযোগ্য দরুদ পাঠ করবে? আর তােমাদের এতাে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিদ্যাই বা কোথায় যে তাঁর প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে থাকবে? এবং সে মুতাবেক তার শানে দরুদ পাঠ করবে? তবে হ পরওয়ারদেগারে আলম তার যথাযথ মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত আছেন। যেমন এই দরুদ শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা উর্ধ ও নিম্ন উভয় জগতের হুজুর পাক (ﷺ) এর দোয়া ও ছানার সঙ্গে সমন্বিত করে তার ফযীলত ও মর্যাদার ঘোষণা করে দিলেন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের কাছে। পূর্ব পশ্চিম, জল, স্থল, সমুদ্র হিমাচল, আসমান যমীন, আরশ কুরসী সর্বত্রই তার প্রশংসার বাণী বিস্তৃত করে দিলেন। মুসলমানদের অন্তঃকরণে তার মহব্বত ও ভালোবাসা এমনভাবে গেঁথে দিলেন যে, তার নাম স্মরণের মাধ্যমে তারা আপন আপন অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে। তাঁর নাম শুনলে মুসলমানদের হৃদয়ে এমন পুলকানুভূতির সৃষ্টি হয় যে, সে নাম স্মরণ করতে ভালাে লাগে। তার ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে নিঝুম হয়ে বসে থাকে। হকতায়ালা ঘােষণা করেছেন যে, আমার হাবীব এর আনুগত্যের কারণে আমি সমস্ত মওজুদাত এমনভাবে আমার রহমত দিয়ে প্লাবিত করে দেবে, তারা যেন আরো বেশি তাঁর প্রশংসা ও আনুগত্য করতে পারে। এবং তার উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করতে পারে। ফরজ নামাজ সমূহের মধ্যে এমন কোনাে ফরজ নেই যাকে হুজুর পাক (ﷺ) সুন্নত বানাননি। কথাটির অর্থ এই যে, ফরজ আদায় করাটাও হুজুর পাক (ﷺ) এর একটি সুন্নত পুরা করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দার জন্য যা ফরজ তা আমার হুকুমে ফরজ হয়েছে আর আমার বন্ধুর হুকুমে যা সাব্যস্ত হয়েছে তা সুন্নত। প্রকৃতপক্ষে উভয়টির সঙ্গেই আমাদের দু'জনের অর্থাৎ আমি আল্লাহতায়ালা এবং আমার রাসূল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর হুকুম বিজড়িত। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ফরজের মধ্যে আমার হুকুমের সঙ্গে আমার হাবীব (ﷺ) এর হুকুম অন্তর্ভুত আছে। আল্লাহপাক আরও বলেন, আমার বন্ধুর অনুসরণ আমার। অনুসরণই আমি আমার বন্ধুর হাতে কৃত বায়াত আমার সাথে কৃত বায়াত হিসাবে সাব্যস্ত করেছে। আপনার নির্দেশের শব্দসমূহ আমি সংরক্ষণ করবে। মুফাসসিরগণ আমার কুরআনের তাফসীর করবেন আপনার মাধ্যমে। ওয়ায়েযগণ আপনার নসিহতের বাণী সমূহ মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেবে। শাহান শাহ সুলতান, ফকীর দরবেশ, মিসকিন গণ দূরদূরান্ত থেকে সফর করে আপনার দরবারে হাদিয়া পেশ করে সালাম প্রদান করবে। আপনার রওজায়ে আনওয়ারের পবিত্র মাটি মুখমন্ডলে লাগাবে এবং আপনার শাফাআতের আকাংখী হবে। আপনার মাহাত্ম ও আভিজাত্য সর্বদা বিদ্যমান থাকবে। ওয়ালহামদুলিল্লাহি রবৃবিল আলামীন।


কোন কোন উলামায়ে কেরাম হুজুর পাক (ﷺ) এর এরশাদ হচ্ছে 'নামাজে আমার শান্তি রয়েছে।' এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, এই হাদীছের মর্মার্থ হচ্ছে, হুজুর পাক (ﷺ) এর উপর দরুদ পাঠ করা। সালাত মানে দরুদ, অর্থাৎ দরুদ শরীফের মধ্যে হুজুর পাক (ﷺ) এর চোখের প্রশান্তি রয়েছে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতাবৃন্দ সকলেই তার উপর দরুদ পাঠ করে। তবে সুসাব্যস্ত কথা এটাই যে, সালাতের অর্থ  একানে হবে নামাজ। যেমন "হোসেন হুদা" ও "সীসা হুজুর পাক (ﷺ)" গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top