পবিত্র অলংকারপূর্ণ বাণী
হুজুর আকরাম (ﷺ) এর জবান মোবারক থেকে নির্গত ভাষার অলংকার, গভীর ভাব সম্পন্ন বাক্য, আশ্চর্য ধরনের প্রকাশ ভঙ্গিকে, বিস্ময়কর ও সূক্ষ্ম বিষয়ের নির্দশন ও সিদ্ধান্ত প্রদান ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী তার মধ্যে এত বিপুল ছিলাে যে, কেউ এই সমস্ত ব্যাপারে তার আশ পাশেও ঘেঁষতে সক্ষম নয়। তার গুণাবলীর বর্ণনা এবং তার বাচনভঙ্গি যে কিরূপ ছিলাে তার যথাযথ বর্ণনা প্রদান করা করে পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা হুজুর পাক (ﷺ) এর চেয়ে অধিক মিষ্টভাষী ও অলংকার গুণসম্পন্ন আর কাউকেই সৃষ্টি করেননি।
একদা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (ﷺ) আপনি কখনো বাইরেও তশরিফ নিয়ে যাননি বা মানুষের সঙ্গে তেমন উঠাবসা করেননি। তা সত্ত্বেও এরূপ অলংকৃত ভাষাগুণ আপনি কোথা থেকে লাভ করলেন? উত্তরে তিনি বললেন, হযরত ইসমাইল (عليه السلام) এর ভাষা ও পরিভাষা যা বিলুপ্ত ও নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিলাে সেগুলি হজরত জিব্রাইল (عليه السلام) আমার কাছে পৌছে দিয়েছিলেন আর আমি সেগুলি রপ্ত করে নিয়েছি। তদুপরি তিনি বলেছেন, আমার রব আমাকে আদব শিখিয়েছেন, সুতরাং আমার আদব সুন্দর। আরবী ভাষায় ঐ এলেমকে আদব বলা হয় যা ফাসাহাত (অলংকরণ) ও বালাগাত (অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত বাক্য প্রয়োগ বা হৃদয়স্পর্শী বাক্য) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, আমার প্রতিপালন হয়েছে বনী সাদ ইবন বকর গোত্র। আর এ গোত্র ছিল তার ধাত্রীমাতা হজরত হালিমা সা দীয়া (رضي الله عنه) এর গোত্র। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা সমস্ত আরবে অলংকৃত ভাষার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। একখানা হাদীছে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আরবি বর্ণ তার মাখরাজ (উচ্চারণস্থল ) থেকে উচ্চারণকারীদের মধ্যে আমিই শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ আমার মতাে সঠিক উচ্চারণ আর কেউ করতে পারে না। এই হাদীছের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যদিও কেউ কেউ আপন আপন নির্ধারিত পরিভাষার পরিমাপে নানারূপ মন্তব্য করেছেন। তথাপি এর অর্থ বিশুদ্ধ— এতে কোন সন্দেহ নেই। হাদীসের ভাবার্থ এদিকেই ধাবিত হয় যে, তিনি সমস্ত আরবে সর্বাধিক ভাষালংকার গুণে গুণান্বিত ছিলেন। ض 'দোয়াত' বর্ণটি কেবল আরবী ভাষায় পাওয়া যায়। দুনিয়ার অন্য কোন ভাষায় এর প্রতিবর্ণায়ন পাওয়া যায় না। হুজুর আকরাম (ﷺ) ছাড়া সারা আরবে এমন কেউ ছিলনা যে উক্ত বর্ণটি যথাযথ উচ্চারণ করতে পারেন। এই বর্ণটির উচ্চারণস্থল ডান বা বাম পার্শ্বের চোয়ালের দাত। তবে এরূপ বলা হয়ে থাকে যে, বাম পার্শ্বের চোয়ালের দাঁত থেকে উচ্চারণ করাটা অধিকতর সহজ। অবশ্য সাহাবাগণের মধ্যে কেউ কেউ দু' পার্শ্ব থেকেই উচ্চারণ করতেন।
হুজুর আকরাম (ﷺ) নেহায়েত পরিষ্কার এবং বিস্তারিতভাবে কথা বলেন। এমন পরিষ্কার করে বলেন যে, প্রতিটি শব্দ পৃথক পৃথক ভাবে গণনা করা সম্ভব হতাে। তিনি এক একটি শব্দ প্রয়ােজনে তিন তিন বার করে উল্লেখ করতেন। যাতে বুঝতে সুবিধা হয়। কথােপকথনকালে কখনও সন্দেহ বা দুর্বোধ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তিনি এরূপ করতেন। নতুবা সকল কথার ক্ষেত্রে এমনটি হতােনা।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী]
© | সেনানী এপ্স |