সুসংবাদ সম্বলিত কতিপয় বিবরণ
মোটামুটিভাবে জানা গেলো যে, সাইয়্যেদে আলম মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ (ﷺ) এর আলোচনা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে বিদ্যমান রয়েছে। আর আহলে কিতাবদেরও এ সম্পর্কে অকাট্য এলেম এবং দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো। পরবর্তীতে তারা হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার বশবর্তী হয়ে হতভাগ্যতার কাছে পরাভূত হয়ে অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান ও দূরবর্তীতার রাস্তা অবলম্বন করে পরিবর্তন ও রূপান্তরের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে গেলো। এখানে এদের হিংসা-বিদ্বেষ সংক্রান্ত কিছু বিবরণ উপস্থাপন করা প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।
হাদীসঃ
হজরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) তাঁর পিতা মালেক ইবন সিনান যিনি শুহাদায়ে উহুদগণের অন্যতম ছিলেন, তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি একদিন কথাবার্তা বলার উদ্দেশ্যে বনী আবদুল আশহাল গোত্রে গেলাম। ঐ সময় ইহুদীদের সঙ্গে আমাদের সন্ধিছিলো। সেখানে যাওয়ার পর ইউশা নামক জনৈক ইহুদীকে বলতে শুনলাম, এখন ঐ নবীর আত্মপ্রকাশের কাল নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছে, যাঁর নাম হবে আহমদ। তিনি মক্কার হেরেম থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তিনি এই শহর অর্থাৎ মদীনাতে হিজরত করে আসবেন। একথা শুনার পর আমি স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলাম। ইউশার কাছ থেকে যা শুনেছি, তাতে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমি আমার কাওমের জনৈক ব্যক্তিকে উক্ত কথা শুনালাম। তখন সে বললো, একথাতো শুধু একা ইউশাই বলছে না, বরং ইয়াছরিবের সমস্ত ইহুদীই একথা বলাবলি করছে।
এরপর আমি সেখান থেকে বনী কুরায়যা মহলায় গেলাম। সেখানেও শুনতে পেলাম, হুজুরপাক (ﷺ) সম্পর্কে একই আলোচনা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ইহুদীদের সরদার যুবায়র ইবন বাতা বলে উঠলো, নিশ্চয়ই অই লাল তারা উদিত হয়ে গেছে, যা কোনো নবীর আবির্ভাব ব্যতীত কখনও উদিত হয় না। সে আরও বললো যে, এখন আহমদ (ﷺ) ছাড়া তো আর অন্য কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না। এই শহর অর্থাৎ ইয়াছরিব হবে তাঁর হিজরতের স্থান। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেন, হুজুর পাক (ﷺ) হিজরত করে যখন মদীনা আলোকিত করলেন, তখন আমি এই ঘটনাটি তাঁর কাছে বর্ণনা করলাম। হুজুর পাক (ﷺ) বললেন, যুবায়ের এবং তার সাথী ইহুদীদের সরদাররা যদি মুসলমান হয়ে যেতো, তাহলে সমস্ত ইহুদীরাই ইসলাম গ্রহণ করতো। কেননা এরা সকলেই তাদের অনুসারী।
হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, ইহুদীরা যখন আরবের কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় কামনা করে বিভিন্ন দোয়া করতো, তখন তারা উক্ত দোয়ায় বলতো। হে আলাহ্! তৌরিত কিতাবের মধ্যে যে নবীয়ে আখেরুজ্জমানের সংবাদ আমরা পেয়েছি, সে নবীর আবির্ভাব ঘটাও।যাতে তিনি অত্মপ্রকাশ করে কাফেরদেরকে শায়েস্তা করতে পারেন, আর আমরা তাঁর সঙ্গী হয়ে এ সমস্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে মুকাবিলা করতে পারি। তাদের এই দোয়া করার কারণ এই ছিলো যে, তারা মনে করতো উক্ত নবী তাদের স্বজাতীয় হবেন অর্থাৎ বনী ইসরাইলদের মধ্যথেকেই আসবেন। পরবর্তীতে তারা যখন দেখলো যে, সে নবী তাদের স্বজাতীয় না হয়ে বনী ইসমাইল থেকে আগমন করেছেন, তখনই তারা প্রত্যাখ্যানের পথ গ্রহণ করলো এবং অস্বীকার ও অবিশ্বাসের দিকে অগ্রসর হলো।
হাদীসঃ
হযরত মুগীরা ইবন শুবা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি মাকুকাশ বাদশাহ্ কাছে গেলেন। বাদশাহ্ তাঁকে লক্ষ করে বললো, মোহাম্মদ (ﷺ) নবী ও রসূল ঠিকই। তবে তিনি যদি কিবত অর্থাৎ মিশর অথবা রোমের লোক হতেন, তাহলে সকলেই তাঁর অনুসরণ করতো। মুগীরা (رضي الله عنه) বলেন, এরপর আমি ইসকান্দারিয়াতে উপস্থিত করতো। সেখানে যাওয়ার পর এই অঞ্চলের এমন কোনো গীর্জা আমি বাদ রাখিনি যেখানে যাইনি। আমি কিবত ও রোমের সমস্ত ধর্মীয় নেতাদেরকে বলেছি যে, তোমরা তোমাদের আসমনী কিতাবসমূহে হুজুর আকরম (ﷺ) এর গুণাবলী সম্পর্কে যা কিছু পেয়েছো আমার কাছে বর্ণনা করো।
সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা ছিলো। লোকেরা রোগাক্রান্ত হলে তার আছে আসতো। সে তাদের জন্য দোয়া করতো। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আম্বিয়াগণের মধ্যে এমন কোনো নবী কি বাকি আছেন, যার আবির্ভাব এখনও হয়নি? অথচ ভবিষ্যতে আগমন করবেন? সে বললো, হাঁ! তিনি শেষ নবী। তাঁর মধ্যে এবং হযরত ঈসা (عليه السلام) এর মধ্যবর্তী আর কোনো নবী নেই। শুধু সেই নবী বাকি রয়েছেন। নিঃসন্দেহে হযরত ঈসা (عليه السلام) তাঁর অনুসরণ করার জন্য আমাদেরকে বলে গিয়েছেন। সে নবী হবেন আরবী উম্মী,উম্মী শব্দের অর্থ মূল। তাঁর নাম হবে আহমদ। তিনি খুব বেশী লম্বাও হবেন না আবার বেঁটেও হবেন না। তাঁর দু’চোখ হবে রক্তিম বর্ণের। সাদাও হবে না। কালোও হবে না। তাঁর চুল হবে থোকা থোকা। তিনি শক্ত ও মোটা কাপড় পরিধান করবেন। আহারের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ খাবার গ্রহণ করবেন। যখন যাই মিলবে তাই আহার করবেন। তার উপরই সন্তুষ্ট থাকবেন। তাঁর স্কন্ধে তলোয়ার থাকবে। কোনো ব্যক্তি তাঁর মুকাবেলা করতে এলে তিনি তাকে ভয় করবেন না। যুদ্ধে তিনি কখনও আগে আক্রমণকারী হবেন না। তাঁর আসহাবগণ তাঁর জন্য জীবন কুরবান করতে কুণ্ঠিত হবেন না।তারা আপন আপন পিতা মাতা ও সন্তান সন্তুতির চেয়ে তাঁকে বেশী ভালোবাসবেন। তাঁর আত্মপ্রকাশ হবে এমন স্থানে যেখানে ‘সলম’ নামক বৃক্ষ রয়েছে। তিনি এক হেরেম (পবিত্রস্থান) থেকে বের হয়ে অপর হেরেমের দিকে হিজরত করবেন। তিনি এক কোলাহলময় স্থান থেকে খেজুরের বনানীময় স্থানের দিকে হিজরত করে আসবেন। তিনি পায়েব গোছার আধাআধি স্থানে লুঙ্গি পরিধান করবেন। শরীরের অঙ্গসমূহের বিভিন্ন প্রান্ত ধৌত করবেন (অজু করবেন)। আর এহেন ধৌত কাজে এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকবে, যা অন্য কোনো নবীগণের বেলায় ছিলো না।
সমস্ত নবীগণই আপন আপন কওমের প্রতি আবির্ভূত হয়েছেন, কিন্তু তিনি সারা জাহানের জন্য আবির্ভূত হবেন। সমস্ত ভূখণ্ডকে তাঁর জন্যসেজদার স্থান বানানো হবে। তিনি মাটিকে পাক পবিত্রকারী হবেন। যেখানেই নামাজের ওয়াক্ত হবে, সেখানেই তিনি (পানিবিহীন অবস্থায়) মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করবেন। হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) উক্ত সফর থেকে যখন ফিরে এলেন, সে লোকটি তখন মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন এবং রাসূল করীম (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ সম্পর্কে তিনি যা শুনেছিলেন সব নবীকরীম (ﷺ) এর কাছে বর্ণনা করেছিলেন।
হাদীসঃ
হযরত সাঈদ ইবন যায়েদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর পিতা যায়েদ ইবন আমর একদা ধর্মের তালাশে বের হয়েছিলেন। এমতাবস্থায় ‘মুসেল’ নামক স্থানে একজন পাদ্রীর সাথে তাঁর সাক্ষাত হলো। পাদ্রী লোকটি যায়েদকে জিজ্ঞেসা করলো তুমি কোথেকে আসছো? যায়েদ বললেন, বাইতে ইব্রাহীম অর্থাৎ খানায়ে কাবা থেকে আসছি। পাদ্রী বললো, ‘কিসের তালাশে বের হয়েছো?’ যায়েদ বললেন, ‘দ্বীনের তালাশে বের হয়েছি।’ পাদ্রী বললো, ‘ফিরে যাও, তুমি যাঁর সন্ধানে বের হয়েছো তিনি অচিরেই তোমাদের ভূখণ্ড থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন।’ এ কারণেই যায়েদ ইবন আমর ইবন নুযায়েলকে জাহেলী যুগের তৌহিদবাদী বলা হয়। তিনি মুশরেকদের হাতে যবেহকৃত প্রাণীর গোশত্ ভক্ষণ করতেন না এবং আপন সম্প্রদায়ের নিকট তৌরিত কিতাব পাঠ করতেন না। এর আলোচনা সহীহ্ বুখারী শরীফেও বিবৃত হয়েছে।
হাদীসঃ
হযরত ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর নবী (ﷺ) কে একজন পুরুষকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য প্রেরণ করেছেন। উক্ত কথাটির মূল ঘটনা হচ্ছে এই যে, হুজুর আকরম (ﷺ) একদিন এক ইহুদীর গির্জায় তশরীফ নিয়েছিলেন। সেখানে যেয়ে তিনি দেখলেন, একজন ইহুদী তৌরিত কিতাব পাঠ করে কওমের লোকদেরকে শুনাচ্ছেন। উক্ত ইহুদী তৌরিত কিতাব পাঠ করতে করতে নবীয়ে আখেরুজ্জামানের বৈশিষ্ট্যর আলোচনায় পৌঁছেই চুপ হয়ে গেলো, আলোচনা ক্ষান্ত করে সে রোগাক্রান্ত বাচ্চার মতো প্রলাপ বকতে শুরুকরলো। তখন অপর একটি লোক সেখানে যেয়ে পূর্বোক্ত লোকটির কাছ থেকে তৌরিত কিতাব নিয়ে হুজুর পাক (ﷺ) এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ পাঠ করে বলতে লাগলেন যে, এগুলি হচ্ছে আপনার গুণাগুণ, আমি সাক্ষ্যদিচ্ছি যে, আলাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আলাহর রসূল। এ কলেমা পাঠ করার পর পরই লোকটির মৃত্যু হলো। এরপর হুজুর পাক (ﷺ) সাহাবাগণকে বললেন, তোমরা তোমাদের এ ভাইয়ের গোছল ও জানাযার ব্যবস্থা করো।
হাদীসঃ
হযরত ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, যখন তায়েফের বাদশাহ্ তুব্বা মদীনা শরীফের উপর চড়াও হলো। ইতিপূর্বে সে এলান করে দিয়েছিলো যে, আমি মদীনাকে বিরান করে দেবো। আর সেখানকার অধিবাসীদেরকে আমি হত্যা করবো, আমার ঐ পুত্রের জানের বিনিময়ে, যাকে তারা ধোঁকা দিয়ে হত্যা করেছিলো। তখন সে যমানার ইহুদীদের বড় আলেম সামউল বলেছিলো, ‘হে বাদশাহ্! এটাতো ঐ শহর যেখানে বনী ইসমাইলের মধ্য থেকে আগত আখেরী যমানার নবী হিজরত করবেন। সেই নবীর জন্মভূমি হবে মক্কা মুকাররমা। কিন্তু তাঁর রওজা শরীফ হবে এখানে।’ এসব কথা শুনামাত্র তুব্বা বাদশাহ্ মদীনা শরীফ ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বুখারী (رحمة الله) স্বীয় হাদীছগ্রন্থ বুখারী শরীফের কিতাবুল মাগাযীতে উলেখ করেছেন, পরবর্তীতে তুব্বা বাদশাহ্ নবীয়ে আখেরুজ্জামানের জন্য এক আলীশান মহল নির্মাণ করেছিলো। তুব্বার সাহচর্যে তৌরিত কিতাবের চারশ’ আলেম সর্বদাই অবস্থান করতেন। উক্ত বর্ণনা শুনার পর সেই চারশ’ আলেম তুব্বাকে ছেড়ে মদীনা শীরফে রয়ে গিয়েছিলেন এ আশায় যে, আখেরী যমানার নবীর সোহবতের মহান সৌভাগ্য হাসেল করবেন। তুব্বা বাদশাহ্ চারশ’ আলেমের প্রত্যেকের জন্য একেকটি করে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। একটি করে বাঁদী দান করেছিলেন এবং সকলকেই অঢেল ধনসম্পদ দিয়েছিলেন। তুব্বা তখন একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন যার মধ্যে তাঁর ইসলাম গ্রহণের সাক্ষ্য পাওয়া যায়। সেই চিঠির মধ্যে কতিপয় কবিতার উলেখ ছিলো। কবিতাগুলো এরকম -
‘আমি আহমদ (ﷺ) এর উপর সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তিনি অই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল, যিনি মৃত্তিকা থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আমি যদি তাঁর আত্মপ্রকাশের যমানা পর্যন্ত জীবিত থাকি, তাহলে আমি তাঁর ওযীর এবং চাচাতো ভাই হবো।’
অতঃপর তুব্বা বাদশাহ্ উক্ত চিঠিখানা মোহরযুক্ত করে উক্ত চারশ’ আলেমগণের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম যিনি, তাঁর কাছে প্রত্যার্পণ করে ওসীয়ত করলেন যে, তুমি যদি নবীয়ে আখেরুজ্জামানকে পাও তাহলে আমার এই চিঠি তাঁর খেদমতে পেশ করবে। অন্যথায় বংশানুক্রমে আপন আপন আওলাদদেরকে এই চিঠি পৌঁছানোর ব্যাপারে ওসীয়ত করে যাবে। তুব্বা বাদশাহ্ হুজুর আকরাম (ﷺ) এর জন্যও একখানা বাড়ি নির্মাণ করিয়ে রেখেছিলেন। সে বাড়িখানা হুজুর পাক (ﷺ) এর কদম স্পর্শ করা পযন্তর্ বিদ্যমান ছিলো। কথিত আছে, হিজরতের সময় হুজুর পাক (ﷺ) যে হজরত আবু আইয়্যুব আনসারী (رضي الله عنه) এর বাড়িতে তশরীফ এনেছিলেন, সেই বাড়িই উক্ত বাদশাহ কর্তৃক নির্মিত বাড়ি।
আরো বর্ণিত আছে, যুবায়ের ইবন বাতা ইহুদীদের একজন অন্যতম বড় আলেম ছিলো। সে বলেছে, আমার পিতা একদা একখানা চিঠি লিখেছিলেন। যার মধ্যে আহমদ মুজতবা (ﷺ) এর আলোচনা ছিলো। চিঠিখানা মোহরযুক্ত করে দিয়ে আমাকে বললেন, এ চিঠিতে যাঁর কথা উলেখ করা হয়েছে, তিনি একজন নবী। যিনি কিরত নামক স্থানে যাহির হবেন। তাঁর গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ এই। অতঃপর পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সে বিষয়ে আলোচনা করেছিলো। কিন্তু তখনও হুজুর পাক (ﷺ) আবির্ভূত হননি। কিন্তু সে যখন শুনতে পেলো যে, হুজুর আকরাম (ﷺ) মক্কাতে যাহির হয়েছেন, তখন সে উক্ত চিঠিখানা নষ্ট করেছিলো এবং হুজুর পাক (ﷺ) এর শান ও সিফতসমূহ গোপন করবার চেষ্টা করেছিলো।
বনু কুরায়যা, বনু নযীর ও ফেদেক কবীলা এবং খয়বরের ইহুদীরা হুজুর পাক (ﷺ) এর আবির্ভাবের পূর্ব থেকে তাঁর সম্পর্কে জানতো। এমনকি তারা বলতো, মদীনা শরীফে তিনি হিজরত করবেন। মক্কা মুকাররমায় যেদিন হুজুর পাক (ﷺ) ভূমিষ্ঠ হলেন, সেদিন তারা বলেছিলো, আজ রাতে আহমদ মুজতবা (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁর জন্মের তারকা উদয় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যখন তিনি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, তখন সে কাফেররা তাঁকে অস্বীকার করা শুরু করে দিলো। তাদের অস্বীকারের কারণ ছিলো তাদের হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা।
বিবরণঃ হিশাম ইবন উরওয়া আপন পিতা থেকে হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেন, মক্কা মুকাররমায় জনৈক ইহুদী ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিলো। যখন হুজুর আকরাম (ﷺ) এর জন্মরজনী সমাগত হলো তখন সে কুরাইশদের মজলিশে এসে বসলো এবং জিজ্ঞেস করলো, আজ রাতে তোমাদের কারও কোন সন্তান জন্ম নিয়েছে কি? কুরাইশরা বললো, আমাদের জানা নেই। সে বললো, না। হে কুরাইশগণ! তোমরা আমার কথামতো অনুসন্ধান করো। নিশ্চয়ই আজ রাত্রে সে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। তিনি এই উম্মতের নবী। তাঁর নাম আহমদ। তাঁর দু’কাঁধের মাঝামাঝিতে পশমাবতৃ একটি চিহ্ন থাকবে। একথা শুনে কুরাইশের লোকেরা মজলিশ থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং ইহুদীর বক্তব্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করতে লাগলো।
কুরাইশরা যখন সকলেই আপন আপন গৃহে ফিরে গেলো তখন পরিবারের লোকদের কাছ থেকে শুনতে পেলো, হজরত আব্দুলাহ্ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছেন যাঁর নাম রাখা হয়েছে মুহাম্মদ (ﷺ)। এরপর তারা উক্ত ইহুদী লোকটির কাছে এসে বললো, আমাদের ওখানে এটি ছেলে জন্মগ্রহণ করেছে। ইহুদী লোকটি কুরাইশদের কাছ থেকে এ খবর শুনার পূর্বে অথবা মতান্তরে খবর শোনার পর বললো, আমাকে সেই নবজাত সন্তানটির কাছে নিয়ে চলো। তারা তাকে হজরত আমেনার বাড়ীতে নিয়ে এলো। হুজুর আকরম (ﷺ) কে বাইরে নিয়ে আসা হলো।
ইহুদী লোকটি হুজুর আকরম (ﷺ) এর পৃষ্ঠদেশে সেই নিশানা অর্থাৎ মহরে নবুওয়াত দেখতে পেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে বেঁহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। লোকটি যখন সম্বিত ফিরে পেলো তখন কুরাইশরা বললো, আফসোস! কি হলো তোমার। ইহুদীটি বললো, বনী ইসরাইল থেকে নবুওয়াতের ধারা বিদায় নিতে চলেছে এবং তৌরিত কিতাব এখন তাদের হস্তচ্যুত হয়ে গেলো। এ নবজাত সন্তান বনী ইসরাইলদেরকে মেরে ফেলবে। আর তাদের আহবার ও ওলামাদেরকে কতল করবে। আরবীয়রা নবুওয়াতের নিয়ামত পেয়ে গেলো। হে কুরাইশ গোত্র! তোমাদের জন্য মুবারকবাদ। জেনে রাখো, খোদার কসম, মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ততোমাদের শান শওকত ছড়িয়ে পড়বে। এই ঘটনার শেষাংশের কিছু বর্ণনা বেলাদতে সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর অধ্যায়ে আসবে ইনশাআলাহ্।
হাদীসঃ
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) একদা বায়তে মাদরাসে তশরীফ নিলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে জ্ঞানী-বুদ্ধিমান তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তখন আব্দুলাহ ইবন সূরিয়াকে আনা হলো। হুজুর আকরম (ﷺ) নির্জনে তাকে নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে তোমার দ্বীনের কসম দিয়ে বলছি। শুধু তাই নয় বনী ইসরাইলদের উপর যেমন নেয়ামত দেয়া হয়েছিলোব্জ মান্না সালওয়া অবতীর্ণ হয়েছিলো, মেঘের ছায়া প্রদান করা হয়েছিলো এ সবের কসম দিয়ে বলছি। তুমি বলতো দেখি “আমি কি আলাহ্র রসুল?” সে তখন উত্তরে বললো, হ্যাঁ, শুধু আমি নই; আমার কওমের সকলেই একথা খুব ভালো করেই জানে। আপনার প্রশংসা, পরিচিতি, গুণাবলী ও সৌন্দর্যসমূহ যা কিছু আমি জানি তার সবকিছু তৌরিত কিতাবে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এ কওম আপনার উপর বিদ্বিষ্ট হয়ে প্রতিহিংসার কারণে আপনাকে অস্বীকার করে। হুজুর পাক (ﷺ) বললেন, এরপরও কোন্ জিনিস তোমাকে ইমান গ্রহণ করা থেকে বাধা দিচ্ছে? তুমি কেন মুসলমান হচ্ছো না? সে বললো, আমি আমার কওমের বিরুদ্ধাচরণ করাটাকে পছন্দ করি না। আমি এটা কামনা করিন তারা যেনো সকলেই আপনার আনুগত্য করে ইমান নিয়ে আসে, মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে আমি ও মুসলমান হয়ে যাবো।
হাদীসঃ
হযরত তালহা ইবন উবায়দুলাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমি একদা শাম দেশের বসরা এলাকার কোনো এক বাজারে ছিলাম। হঠাৎ এক পাদ্রীর আস্তানা থেকে শুনতে পেলাম জনৈক পাদ্রী বলছে ব্যবসায়ীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো, তোমাদের মধ্যে মক্কার কোনো লোক রয়েছে কিনা? তালহা (رضي الله عنه) বললেন, হ্যাঁ আমি ওখানকার বাসিন্দা। পাদ্রী বললো, মক্কাতে কি আহমদ (ﷺ) প্রেরিত হয়েছেন? আমি বললাম, কোন্ আহমদ? সে বললো, আব্দুল মুত্তালিবের নাতি। আজকের এই সময়েই সম্ভবতঃ তিনি আগমন করেছেন। তিনি আখেরী নবী। হেরেমের জায়গা হবে তাঁর প্রকাশিত হওয়ার স্থান আর তাঁর হিজরতের স্থান হবে খোরমা, পাহাড় ও কোলাহলমুখরিত স্থান অর্থাৎ ইয়াছরিব।
হযরত তালহা বলেন, পাদ্রীর কথাগুলি আমার মনে দাগ কাটলো। অতঃপর আমি সেখান থেকে মক্কা মুকাররমায় চলে এলাম। আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম নতুন ঘটনা ইতোমধ্যে সংঘটিত হয়েছে কিনা। লোকেরা বলল, হ্যাঁ মোহাম্মদ ইবন আব্দুলাহ (ﷺ) নবুওয়াতের দাবী পেশ করেছেন এবং ইবন কুহাফা অর্থাৎ হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) তাঁর আনুগত্য কবুল করেছেন। এরপর আমি হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর কাছে এসে পাদ্রীর কথাগুলি জানালাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ‘আপনি কি সে নবীর আনুগত্য কবুল করেছেন?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) হজরত তালহা (رضي الله عنه) কে নিয়ে হুজুর পাক (ﷺ) এর কাছে গেলেন এবং তিনিও নবী করীম (ﷺ) এর আনুগত্য কবুল করলেন।
হাদীসঃ
হযরত জুবায়র ইবন মুতয়িম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতন তিনি বলেছেন, যে সময়ে আলাহ্তায়ালা তাঁর নবী (ﷺ) কে প্রেরণ করলেন এবং তাঁর নবুওয়াত মক্কায় মশহুর হয়ে গেলো, তখন আমি শাম দেশের দিকে চলে গেলাম। আমি যখন বসরায় পৌঁছলাম তখন নাসারাদের একটি জামাত এলো এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি হেরেম মক্কা থেকে আসছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারা আমাকে আবার প্রশ্ন করলো, 'তুমি কি সেই লোকটিকে চেনো যে লোকটি নবুওয়াতের দাবী করেছে?’আমি বললাম, ‘হ্যাঁ আমি তাঁকে চিনি।’ তখন তারা আমার হাত ধরে ফেললো এবং আমাকে এমন একটি ইবাদতখানায় নিয়ে গেলো, যেখানে অসংখ্যা ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। তারা বললো, এ ছবিগুলি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখো দেখি, এগুলির কোনোটির সাথে তাঁর সাদৃশ্যআছে কিনা। আমি এক এক করে প্রত্যেকটি ছবি খুব ভালোভাবে পরখ করে দেখলাম। কিন্তু কোনোটির সাথে নবী করীম (ﷺ) এর আকৃতির মিল পেলাম না। তারপর তারা আমাকে আরও বড় একটি ইবাদতখানায় নিয়ে গেলো। সেখানে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি ছবি ঝুলন্ত ছিলো। তারা বললো, দেখো দেখি এসমস্ত ছবির কোনটির সঙ্গে সেই মুবারক আকৃতির মিল আছে? দেখতে দেখতে আকষ্মাৎ হুজুর আকরম (ﷺ) এবং হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর আকৃতি আমার দৃষ্টিগোচের হলো। দেখলাম হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) হুজুর পাক (ﷺ) এর হাঁটু মুবারক ধরে বসে আছেন। তখন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এ আকৃতি কি কখনও তোমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে?’ আমি বললাম হ্যাঁ, তবে সাথে সাথেই আমার মনে একটা চিন্তা জাগলো যে, এখনই সবকিছু খুলে বলা ঠিক হবে না। দেখা যাক, এরা আর কি বলে। তারা এরপর হুজুর পাক (ﷺ) এর প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করলো। এরপর আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিই সেই নবী যাঁর বর্ণনা প্রদান করা হলো। অতঃপর তারা আমাকে পুনরায় প্রশ্ন করলো, তুমি কি জানো এই লোকটি কে? যিনি তাঁর জানু মুবারক ধরে বসে আছেন। আমি বললাম, ইনি তাঁর খাছ সহচর এবং তাঁর পরে ইনিই হবেন তাঁর প্রধান খলীফা। তবে আমার ভয় হচ্ছে কুরাইশরা না জানি তাঁকে হত্যা করে ফেলে। আমার একথা শুনে তারা বললো, খোদার কসম! কুরাইশরা তাঁকে কক্ষণও হত্যা করতে পারবে না। তিনি আখেরী যমানার নবী। আলাহ্তায়ালা তাঁকে সকলের উপর বিজয়ী করে রাখবেন।
হাদীসঃ
আখতাবের পুত্র হুয়াই একজন ইহুদী ছিলো। তাঁর কন্যা হজরত সুফিয়া (رضي الله عنه) উম্মাহাতুল মুমিনীন এর একজন ছিলেন। তাঁর নিকট থেকে বর্ণিত আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) যখন কুবায় পদার্পণ করলেন এবং সেখানে অবস্থান করছিলেন, তখন আমার পিতা হুয়াই ইবন আখতাব এবং আমার চাচা আবু ইয়াসের ইবন আখতাব অর্ধরাত্রে অন্ধকারে হুজুর আকরাম (ﷺ) এর কাছে গেলেন এবং সেখান থেকে আর ফিরে এলেন না। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এলো। কিন্তু তারা ফিরলেন না।
অবশেষে তারা যখন ঘরে ফিরলেন আমি তাদেরকে খুব বিষন্ন ও চিন্তাক্লিষ্ট দেখতে পেলাম। তারা যে কতো বেশী চিন্তিত ছিলেন তা আমি অনুমান করতে পারছিলাম না। ঘরে প্রবেশ করেই তাঁরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। যেহেতু অন্যান্য সন্তানদের তুলনায় আমি তাদের নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিলাম, তাই আমার অভ্যাস মুতাবেক সর্বাগ্রে তাদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলাম। কিন্তু তারা দুশ্চিন্তায় এতো বেশী আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, আমার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করারও অবকাশ তাদের ছিলো না। এমনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যাতনাদগ্ধ অবস্থায় আমার চাচা আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ইনিই কি সেই নবী? ইনিই কি সেই আখেরী যমানার নবী যার গুণাবলীর বর্ণনা আমরা তৌরিত কিতাবে পেয়েছি?” আমার পিতা তখন চাচাকে বললেন, হ্যাঁ ইনিই সেই নবী, খোদার কসম, ইনিই সেই নবী। আমার চাচা আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি একীনের সাথে জানো যে, ইনিই সেই নবী? আমার পিতা বললেন, খোদার কসম! আমি একীনের সাথেই জানি যে, ইনিই সেই নবী? চাচা বললেন, তাঁর সম্পর্কে তোমার অন্তরের অবস্থা কী রকম? মহব্বত না দুশমনী ? আমার পিতা বললেন, দুশমনী। আলাহ্র কসম! যতদিন আমি জীবিত থাকবো তাঁর প্রতি আমার দুশমনী চালিয়ে যাবো। পরবর্তীকালে এ উভয় বদবখত্ হুজুর আকরম (ﷺ) এর চিরন্তন দুশমনীতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলো।
নাউযুবিলাহ্ মিন যালিক।
ঐ ইহুদীদের কতিপয় বদবখত দুনিয়ার নিকৃষ্ট ও হাকীর মাল অর্জনের অসীলায় দুনিয়াবী ধ্বংসশীল জিন্দেগীর হেফাযতের উদ্দেশ্যে নেফাকের মতো ঘৃণ্য নীতিকে মাধ্যমরূপে গ্রহণ করে আসফালা সাফেলীনদের স্তরে উপনীত হয়েছিলো। আবার এ সমস্ত ইহুদীদের মধ্যে এমন কতিপয় ওলামা ও আহবারও ছিলেন যাঁদের সৌভাগ্যের ললাটে প্রথম থেকেই আযলী রহমত ও সাআদাত অংকিত করা হয়েছিলো। তাঁরা ইসলাম গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন এবং আখেরাতের দৌলত ও সৌভাগ্য জমা করে নিয়েছিলেন। যেমন, হজরত আব্দুলাহ ইবন সালাম প্রমুখ। মাখবরীক যিনি ওলামায়ে ইহুদীদের মধ্যে বিরাট বড় আলেম, ধনী ও বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, তিনিই হুজুর আকরাম (ﷺ) এর সিফাত খুব ভালো করে জানতেন এবং তার উপর তিনি প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। উহুদের যুদ্ধের দিন তিনি স্বীয় কওমের লোকদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, হে ইহুদী সম্প্রদায়! খোদার কসম! তোমরা ভালো করে জানো যে, সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ্ (ﷺ) কে সাহায্য করা আমাদের সকলের উপরই ওয়াজিব। কাজেই তোমরা এ সৌভাগ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করো। ইহুদীরা বললো, আজ তো শনিবার সপ্তাহের পবিত্র দিন। তিনি বললেন, কোনো সপ্তাহ টপ্তাহ নেই। তোমরা বেরিয়ে এসো, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো।
একথার পর তাঁরা অস্ত্রধারণ করলেন। ইমান এনে ওসীয়ত করে গেলেন, আজকের এ যুদ্ধে যদি আমরা মৃত্যুবরণ করি, তাহলে আমাদের যাবতীয় ধন-সম্পদের মালিক হুজুর আকরাম মোহাম্মাদুর রসূলুলাহ (ﷺ)। তিনি যা চাইবেন তাই করবেন, যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে দান করতে পারবেন। অবশেষে তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে শাহাদতের সুরা পান করলেন এবং হুজুর আকরম (ﷺ) তাঁদের যাবতীয় মাল হস্তাগত করলেন। হুজুর পাক (ﷺ) যে আম সদকা দান করতেন তা তাঁদের এই মাল থেকেই করতেন। হজরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হযাঁর সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি তিনশ’ বৎসর ধরে আবার অন্য এক বর্ণনা অনুসারে তার চেয়েও অধিক কাল ধরে হুজুর পাক (ﷺ) এর আবির্ভাবের খবর শুনে তাঁর প্রতীক্ষায় দিবানিশি অতিবাহিত করছিলেন। এ সম্পর্কে মশহুর ঘটনা রয়েছে।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |