কিতাবঃ শব্দ ব্যবহারের শিষ্টাচার

✍ গ্রন্থনায়ঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

[সংকলক, অনুবাদক]

স্টুডেন্টঃ MBBS, ব্লগারঃ ইসলামী-বিশ্বকোষ, ইসলামিক রিসার্চার।








কিতাবঃ শব্দ ব্যবহারের শিষ্টাচার

সংকলক, অনুবাদকঃ

মাসুম বিল্লাহ সানি (০১৭১০৩৫৫৩৪২)

প্রথম প্রকাশকালঃ ১৯.১২.১৯

প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম

কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।









উৎসর্গঃ

পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.)। 




তথ্যসূত্রঃ 

১.হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) এর জা আল হক্ব।

২.বিভিন্ন বাংলা ইংরেজী ওয়েবসাইট। স্পেশালী কৃতজ্ঞতায়ঃ মদিনার গোলাম, ওমর ফারুক ওয়ার্ডপ্রেস। 

৩.সুন্নি-বিশ্বকোষ





 

সূচীপত্রঃ


প্রথম অধ্যায়ঃ গোলাম শব্দের প্রয়োগ।

❏ প্রমাণ ১ থেকে প্রমাণ ৬।


দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ মওলা ও মাওলানা শব্দের প্রয়োগ।


❏ মাওলানা শব্দের অর্থ।

❏ এক নজরে মওলা শব্দের প্রয়োগ।

❏ আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নাম দুই ধরণের।

❏ পবিত্র আল-কুরআন ও তফসীর এর আলোকে।


➥  সঙ্গী,অনুসারী ও সাহায্যকারী অর্থে।

➥  অভিভাবক, হিতৈষী বন্ধু ও সাহায্যকারী অর্থে। 

➥  মালিক ও অভিভাবক অর্থে।

➥  স্বজন ও আসাবা অর্থে।

➥  বন্ধু ও মিত্র অর্থে।

➥  মালিক ও তত্বাবধায়ক অর্থে।

➥  অভিভাবক ও সর্বময় কর্তা অর্থে।

➥  মুনিব অর্থে।

➥  উত্তরাধিকারী অর্থে।


আল-হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণঃ 


➥  আযাদকৃত গোলাম ও বন্ধু অর্থে।

➥  সাহায্যকারী ও অভিভাবক অর্থে।

➥  মনিব বা অভিভাবক অর্থে।

➥  বন্ধু ও কল্যাণের জিম্মাদার অর্থে।

➥  সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক অর্থে।

➥  কোন সাহাবীর নামে ‘মাওলানা’ নাই কেন?



প্রথম অধ্যায়ঃ গোলাম শব্দের ব্যবহার।


❏ গোলাম ( غلام ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, خادم (সেবক), عامل (কর্মচারী) প্রভৃতি। অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেই। যেমনঃ


❏ প্রমাণ ১:


মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের كتاب الالفاظ من الادب -এ বর্ণিত হয়েছে যে-


لايقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عبيد الله وكل نساءكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي


অর্থাৎ, নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ عبدي (আঁমার বান্দাহ) বলোনা।তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী। কিন্তু আঁমার গোলাম, আঁমার চাকরানী বলতে পার।

(মুসলিম শরীফ)


❏ প্রমাণ ২:


মুহাম্মদ ইবনু রাফি (رحمة الله) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা  (رضي الله عنه) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদিস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রবকে পান করাও, তোমার রবকে খাবার দাও, তোমার রবকে উযু করাও। তিঁনি আরও বলেনঃ “তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব বলবেনা বরং বলবে আমার সায়্যিদ-সরদার বা নেতা,আমার মাওলা-মনিব। আর তোমাদের কেউ বলবে না,আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।”


[সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার :৫৬৮১। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত]


এখানে সরাসরি গোলাম শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে এবং তা ব্যবহারের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে খাদেম বা চাকর বা কর্মচারী অর্থে পীরের গোলাম বলে তা অবশ্যই জায়িয। প্রসংগত, হাদীস শরীফে عبدي (আমার বান্দাহ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে।


কাজেই শরয়ী পরিভাষায় ইবাদাতকারী হিসেবে কেউ তার গোলামকে বা কর্মচারীকে বা খাদেমকে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে হক্কানী পীরের عبد (আবদ তথা বান্দাহ) বলতে পারবে না। কেননা ইবাদতের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাকই; এতে সন্দেহ নেই। অন্য যে কাউকেই হোক না কেন, ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য বা ইলাহ মনে করলে শিরক হবে; তবে এ অর্থ ছাড়া গোলাম অর্থে যদি عبد (বান্দাহ) শব্দটি কেউ তার কর্মচারী বা খাদেমকে বলে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে গোলাম অর্থে পীরের عبد (বান্দাহ) বলে এতে সমস্যা নেই। বরং তা হক্কানী পীরের প্রতি তা মুরীদের আদব ও ভক্তিরই বহিঃপ্রকাশ।


আর কোন সহীহ মুসলমান যখন নিজেকে নবীর বা পীরের عبد (বান্দাহ) বা গোলাম বলে, নিশ্চয় সে কখনো এটা মনে করে না যে, নবীজি ﷺ বা হক্কানী পীর ইবাদাতের মালিক বা আল্লাহ হয়ে গেছেন।গোলাম অর্থে আব্দ এর ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে স্বয়ং কুরআন শরীফেই এসেছে। 


❏ প্রমাণ ৩:


আল্লাহ তা’আলা বলেন-


قل ياعبادي الذين اسرفوا علي انفسهم لاتقنطوا من رحمة الله


অর্থাৎ, হে নবী! আঁপনি তাদেরকে সম্বোধন করুন, হে আঁমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ,আল্লাহ’র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।


এ আয়াতেقل ياعبادي (হে আঁমার বান্দাগণ) এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়।


➥  এক,আল্লাহ বলেন- ওহে আঁমার বান্দাহগণ;

➥  দুই,হুযুর পাক ﷺ কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,হে নবী আঁপনি বলুন,হে আঁমার (অর্থাৎ,আঁপনার) বান্দাহগণ।এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ’র বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত।


❏ প্রমাণ ৪:


অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন। আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন –


بندہ خود خواند احمد در رشاد * جملہ عالم را بخوان قل یا عباد


অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন قل ياعبادي বলা হয়েছে।


❏ প্রমাণ ৫:


ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব (رحمة الله) আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত উমর (رضي الله عنه) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-


قد كنت مع رسول الله صلي الله عليه وسلم فكنت عبده وخادمه


অর্থাৎ,আমি হুযুর (ﷺ)-এঁর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ ও খাদেম ছিলাম।


অতএব,প্রমাণিত হল যে, عبد (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়।


❏ প্রমাণ ৬:


হযরত উমর  (رضي الله عنه)'র একটা উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।খোলাফায়ে রাশেদিনে হযরত উমর  (رضي الله عنه) এর যুগ চলছে।একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন ইবনে আলী  (رضي الله عنه) এর মধ্যে কোনো এক ইস্যু নিয়ে শিশুসুলভ তর্ক হয়েছে। তর্কের এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন  (رضي الله عنه) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)কে বললেন ‘তুমি হচ্ছ আঁমার নানাজানের গোলামের বাচ্চা’।

এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর  (رضي الله عنه) রাগান্বিত হলেন এবং স্বীয় পিতা আমীরুল মো’মিনীন হযরত উমর  (رضي الله عنه) রাষ্ট্রীয় বিচারের আয়োজন করলেন। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সবাই উপস্থিত।রাষ্ট্রীয় প্রধানের ছেলেকে এত বড় কথা বলে ফেললেন হযরত ইমাম হুছাইন  (رضي الله عنه)! এটা বিনা বিচারে ছাড়া যায়না। তাই তাঁর বিচার হতে হবে,কিন্তু এতে সবাই হতবম্ভ। ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) বিচারের সম্মুখীন! এই বিচারে সবাই অবাক


নয়নে থাকিয়ে রইলেন,কিযে হয় সেই অপেক্ষায়। হযরত ইমাম হুছাইন  (رضي الله عنه) বিচার- আদালতে হাজির। বিচারপতি স্বয়ং ওমর ফারুক  (رضي الله عنه)। হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه),হয়রত ইমাম হুসাইন  (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস


করলেন,আঁপনি কি আমার ছেলে কে গোলামের বাচ্ছা গোলাম বলেছেন।দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ইমাম,হ্যাঁ আমি বলেছি, “।হযরত ওমর ফারুক  (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি এই কথা কেন বলেছেন,তখন হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) বললেন,আমি ভুল কি বললাম,আঁপনিতো,আঁমার নানাজানের গোলাম,তাই আপনার ছেলে,গোলামের বাচ্ছা গোলাম।


এই উত্তর শুনে হযরত ওমর ফারুক  (رضي الله عنه) বললেন,আঁপনি কি এইটা লিখে দিতে পারবেন? হযরত ইমাম হুসাইন  (رضي الله عنه) বললেন, হাঁ পারবো। হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এ লিখা নিয়ে উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে বললেন,আপনারা সবাই স্বাক্ষী থাকুন রাসূলের নাতী, জান্নাতের যুবকগনের সর্দার আমাকে “রাসূলের গোলাম” বলেছেন।সুতরাং এটাই আমার নাজাতের উছিলা। অতএব আপনারা আমার ইন্তিকালের পর কাফনের ভেতর এ লেখাটি দিয়ে দেবেন। এটাই আমার আরজী। [ইমাম সাখাবীঃ আল কউলুল বদী -৮৬৫ ]


লক্ষ্য করুন: একই শব্দ উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হল।এখন কেন ব্যবহৃত হল? কোন কারনে ব্যবহৃত হল? তা আগে বুঝতে হবে? কোন কিছু না জেনে বুঝে শিরকের ফতোয়া দিলে হয় না।যেমন কেউ বললেন আমি এ জায়গার মালিক।এখন এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কি নাস্তিক হয়ে গেল বা শিরক করলো বা আল্লাহর সাথে নিজেকে মালিক বলে ঘোষনা দিল।আর এখানে মালিক কথাটি কোন অর্থে ব্যবহার হল? তা বুঝতে হবে? অথবা ঐ ব্যক্তির মনে আদৌ এ ধরনের খেয়াল ছিল কি না? তাও জানা দরকার।আর আমাদের আপত্তি টা এখানেই।


আমরা তো নিজেদের “নবিজীর গোলাম বলি ” নবিজীকে খোদা হিসেবে নয় বরং আমরা এটা মনে করি যে,বরং আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে, নবীপ্রেমই খোদা প্রাপ্তির পুর্বশর্ত। কারন আল্লাহ পাক স্বয়ং কোরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আঁমাকে কেউ ভালবাসতে চাইলে কিংবা আঁমার ভালবাসা পেতে চাইলে,সে যেন আঁমার হাবীবের আনুগত্য করে,এক কথায় আঁমার নবীর গোলামী করে (অর্থাৎ,আল্লাহর বন্দেগী করা,এবং নবীর গোলামী করা)।




দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ 

মওলা ও মাওলানা শব্দের ব্যবহার।


মাওলানা শব্দের অর্থঃ


‘মওলানা’ শব্দটি আরবি। এটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুটি শব্দে ঘটিত। ‘না’ একটি সর্বনাম। এর অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০টি অর্থ আছে। যেমন—প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, দাস, চাচাতো ভাই, প্রতিনিধি, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার, প্রেমিক, প্রতিবেশী, আনুগত্য, প্রার্থনা, নীরবতা, ইবাদত,দণ্ডায়মান ইত্যাদি।


তথ্যসূত্র 

১. বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ : ৪/৯৭৮ 

২. ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া,পৃ: ৭০

৩. উমদাতুর রিআয়াহ : ২/৩২৮

৪. লিছানুল আরব : ৮/৪৫২

৫. আল-মিসবাহুল মুনির,পৃ: ৫৯১


❏ ইরানের প্রখ্যাত কবি রুমির নামের আগে ‘মওলানা’ ব্যবহূত হয়। ‘মাওলানা’ শব্দটির তুর্কি উচ্চারণ হলো ‘মেভলানা’। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের ‘হাউসা’ ভাষায় (Hausa language) ‘মাল্লাম’ ও ‘উলুফ’ ভাষার (Wolof language) ‘মাম্মে’ শব্দটি এসব ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়। ‘হাউসা’ ভাষার ‘মাল্লাম’ শব্দটি ইংরেজি শব্দের ‘মিস্টার’-এর সমার্থক। ‘হাউসা’ ভাষার ‘মাল্লাম’, শোয়হালি ভাষার ‘মুয়ালিমু’, আরবি ভাষার ‘মু’আল্লিম’ আর মরোক্কীয় আরবির ‘মা’আল্লাম’ শব্দটির  অর্থ Teacher বা শিক্ষক।


❏ ‘মাওলানা’ শব্দটি মুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিতের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাপূর্ণ অর্থ বহন করে। অন্যদিকে সাধারণ ধর্মীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপাধি হিসেবে ‘মৌলভি’ শব্দটি ব্যবহূত হয়।


❏ “মাওলা” শব্দটি আসমাউল হুসনার অর্ন্তভুক্ত।নিম্নে আসমাউল হুসনা সম্পর্কে শরীয়াতের নীতিমালা: 


এক নজরে মওলা শব্দের প্রয়োগঃ


❏ আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ‘মাওলা’ শব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।যেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন…


فَاِنَّ اللهُ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَا ئِكَةُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِيْر-


অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী (ﷺ)এর] ‘মাওলা’।হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁর ‘মাওলা’ এবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁর ‘মাওলা’। এছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। 


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ

“আমি যার মাওলা (সাহায্যকারী) আলীও তার মাওলা (সাহায্যকারী) । হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।”


তথ্যসূত্র:


 (১) সহিহ তিরমিযী, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 298, খন্ড 5, পৃষ্ঠা 63

 (২) সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড 1, পৃষ্ঠা 12,43

 (৩) ইমাম নাসায়ীঃ খাসাই'স, পৃষ্ঠা 4,21

 (৪) আল-মুস্তাদরাক,  আল-হাকিম, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 129, খন্ড 3, পৃষ্ঠা 109-110,116,371

 (৫) মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড 1, পৃষ্ঠা 84,118,119,152,330, খন্ড 4, পৃষ্ঠা 281,368,370, 372,378, খন্ড 5, পৃষ্ঠা 35,347,358,361,366,419 (বর্ণনাকারীদের 40 টি সনদ থেকে)

 (৬) ফাদ্বাইলুস-সাহাবা, আহমদ হাম্বল, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 563,572

 (৭) মাজমা ’আল জাওয়াইদ, আল-হাইসামি, খন্ড 9, পৃষ্ঠা 103 

 (৮) তাফসীর আল-কবির, ইমাম ফখরুদ্দীন-রাজি, খন্ড 12, পৃষ্ঠা 49-50

 (৯) তাফসীর আল-দুর আল-মনসুর, ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি, খন্ড 3, পৃষ্ঠা 19

 (১০) তারিক আল-খুলাফা, ইমাম সুয়ুতি, পৃষ্ঠা 169,173

 (১১) আল-বিদায়াহ ওয়াল-নিহায়াহ, ইমাম ইবনে কাসির, খন্ড 3, পৃষ্ঠা 213, খন্ড 5, পৃষ্ঠা 208

 (১২) উসদুল গাবাহ, ইবনে আসির, খন্ড 4, পৃষ্ঠা 114

 (১৩) মুশকিল আল-আছার, ইমাম আত-তাহাবি, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 307-308

 (১৪) হাবিব আল-সিয়ার, মীর খাঁনদ, খন্ড 1, অংশ 3, পৃষ্ঠা 144

 (১৫) সাওয়াইখ আল-মুহরিকাহ, ইবনে হাজার আল-হায়সামী, পৃষ্ঠা 26

 (১৬) আল-ইসাবাহ, ইবনে হাজার আল-আসকালানী, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 509;  খন্ড 1, পৃষ্ঠা 319, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 57, খন্ড 3, পৃষ্ঠা 29, খন্ড 4, পৃষ্ঠা 14,16,143

 (১৭) তাবারানী, যিনি ইবনে উমর, মালিক ইবনে আল-হাওইরথ , হাবশী ইবনে জুনাদাহ, জারি, সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস, আনাস ইবনে মালিক, ইবনে আব্বাস, আমারাহ, বুরেদাহ।

 (১৮) তারিক, আল-খতিব বাগদাদী, খন্ড 8, পৃষ্ঠা 290

 (১৯) হিলিয়াতুল আউলিয়া, আল-হাফিজ আবু নুয়াম, খন্ড 4, পৃষ্ঠা 23, খন্ড 5, পৃষ্ঠা 26-27

 (২০) আল-ইসতিয়াব, ইবনে আব্দিল বারের রচিত, "আয়িন" শব্দের অধ্যায় (‘আলী), খন্ড 2, পৃষ্ঠা 462

 (২১) কানজুল উম্মাল, আল-মুত্তাকী আল-হিন্দি, খন্ড 6, পৃষ্ঠা 154,397

 (২২) আল-মিরকাত, খন্ড 5, পৃষ্ঠা 568

 (২৩) আল-রিয়াদ আল-নাদিরাহ, আল-মুহিব আল-তাবারী, খন্ড 2, পৃষ্ঠা 172

 (২৪) দাখাই'রুল-উকবা, আল-মুহিব আল-তাবারি , পৃষ্ঠা 68

 (২৫) ফায়েদ আল কাদির, আল-মানাভী , খন্ড 6, পৃষ্ঠা 217

 (২৬) ইয়ানাবী ’আল-মাওয়াদদাহ, আল-কুদূজি আল-হানাফী , পৃষ্ঠা 297 ... এবং আরও কয়েক শতাধিক।  


আল কুরআনের তফসীরকারক যারা গাদির খুমের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: 


 ১. ইবনে জারির আল-তাবারী (মৃত্যু: 310), "তাফসির আল-বায়ান" -।

 ২. আল-জাসাসস (মৃত্যু: ৩০০), "আহকাম আল-কোরআন"।

 ৩. আল-হাফিজ আবু নুয়াম (মৃত্যু: ৪৩০), "আসবাব আল-নুজুল"।

 ৪. আল-থালাবী (মৃত্যু: ৪২৭ বা ৪৩৭), "তাফসির আল-থা'লাবি"। 

 ৫. আল-ওয়াহিদী (মৃত্যু: 468), "আসবাব আল-নুজুল"। 

 ৬. আল-কুরতুবী (মৃত্যু: 568), "তাফসীর জামিউল হুকাম আল-কোরআন"।

 ৭. আল-ফখরুদ্দিন আল-রাজি (মৃত্যু: ৬০৬), "আল-তাফসির আল-কবির"। 

 ৮. আল-খাজিন বাগদাদী (মৃত্যু: 741), "তাফসির আল-খাজিন"।

 ৯. আল-নিসাবুরি (অষ্টম শতাব্দী), "তাফসির আল-নিসাবুরি"।

 ১০. ইবনে কাসীর (মৃত্যু: ৭৪৪) তাঁর "তাফসীর" (সম্পূর্ণ সংস্করণ) আয়াত ৫: ৩ এর অধীনে (এটি মেলানো সংস্করণে বাদ যায়!) ইবনে মারদাওয়াহ থেকে বর্ণিত।

 ১১. আল-হাফিজ জালালউদ্দীন আল সুয়ুতি (মৃত্যু: 910), তাঁর "তাফসির"।

 ১২. আল-খতিব আল শারবিনী তাঁর "তাফসির"।

 ১৩. আবু আল সৌদ আল-হানাফি (মৃত্যু: 972), তাঁর "তাফসির"।

 ১৪. আল-আলোসি আল-বাগদাদি (মৃত্যু: 1270), তাঁর "তাফসির"। এবং আরও অনেক তফসীরে।


 গাদির খুমের বর্ণনার নিয়েছেন যে সমস্ত ঐতিহাসিকঃ 


 ১. ইবনে কুতায়বাহ (মৃত্যু: ২66) "মা'আরিফ" এবং "ইমামাহ ওয়াল সিয়াসাহ"।

 ২. আল-বালধুরী (মৃত্যু: 279), "আনসাব আল আশরাফ"।

 ৩. ইবনে জাওলাক আল-মিস্রি (মৃত্যু: ২77), তাঁর গ্রন্থে।

 ৪. ইবনে জারির আল-তাবারী (মৃত্যু: ৩১০), "কিতাবুল উইলিয়াহ"। 

 ৫. আল-খতিব আল-বাগদাদী (মৃত্যু: 463), "তারিখ বাগদাদ"। 

 ৬. ইবনে আবদ আল-বার (মৃত্যু: 463), "আল-ইসতিয়াব"।

 ৭. আল-শাহরিস্তিণী (মৃত্যু 548), "আল-মিলাল ওয়াল নিহাল"।

 ৮. ইবনে ‘আসাকির (মৃত্যু: 571),“ তারিখ ইবনে “আসাকির” এবং “ইয়াকূত আল-হামাভি”।

 ৯. ইবনে আল আতির (মৃত্যু 630), "উসদ আল গাবাহ"।

 ১০. সিব্বত ইবনে আল জাওযী (মৃত্যু 654), "তদকিরাত খাওয়াস আল-উম্মাহ"।

 ১১. ইবনে আবী আল-হাদিদ (মৃত্যু: 656), "শারহ নাহজুল বালাগা"।

 ১২. ইবনে খলকান (মৃত্যু: 681), "তারিখ ইবনে খলকান"।

 ১৩. আবুল ফিদা, তাঁর "তারিখ"।

 ১৪. আল-ধাবি (মৃত্যু: 748), "তদকিরাত আল-হাফধ"

 ১৫. আল-ইয়াফিআই (মৃত্যু: 768), "মীরাত আল-জিনান"

 16. ইবনে আল শায়খ আল-বালাভি, "আলেফ বা"।

 17. ইবনে কাসীর (মৃত্যু: 774) "আল-বিদায়াহ ওয়াল নিহায়াহ"।

 18. ইবনে খালদুন (মৃত্যু: 808), "আল-মুকাদ্দিমাহ"।

 19. আল-নুওয়াইরি (মৃত্যু: 3 833), "নিহায়াত আল-ইরাব ফি ফিনুন আল-আদাব" -।

 20. আল-মাকরিজি (মৃত্যু 845), "আল-খিতাত"।

 21. ইবনে হাজার আল-আসকালানী (মৃত্যু 852), "আল-ইসাবাহ" এবং "তাহহিদ আল-তাহধিব"।

 22. ইবনে আল-সাববাগ আল-মালেকী (মৃত্যু 855), "আল-ফুসুল আল-মুহিমাহ"।

 23. মীর খান্দ (মৃত্যু 903), "হাবিব আল-সিয়ার"।

 24. জালালুল উদ্দিন আল সুয়ুতি (মৃত্যু 910), "তারিখ আল খুলাফা"।

 25. ইবনে হাজার আল-হায়সামী, (ড। 974) "আল-সাওয়া'ইক-মুহুরিকাহ"।

 26. আল-হাফিজ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-আসিমি, "জয়ন আল-ফাতা"।

 27. আল-কিরমানি আল-দামাস্কি (মৃত্যু: 1019), "আখবার আল-দুওয়াল"।

 28. নূর আল-দীন আল-হালাবী (মৃত্যু: 1044), "আল-সিরাহ আল-হালাবিয়াহ"।

 ... এবং আরও অনেক ইতিহাসবিদ।


গাদির খুমের বর্ণনাটি (মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত) যা অস্বীকারকারীর ইমান থাকবে না।


সনদ ট্রান্সমিশনঃ

 ১. আহমদ ইবনে হাম্বল ৪০ টি সনদে থেকে বর্ণনা করেছেন;

 ২. ইবনে জারির আল-তাবারী ৭০ টিরও বেশি সনদে;

 ৩.আবু সাইদ আল-সিজিস্তিনি ১২০ টি সনদে থেকে;

 ৪. আবু বকির আল-জাবী ১২৫ টি চেইন থেকে;

 ৫. আল-আমির মুহাম্মদ আল-ইয়ামানী (২য় শতাব্দী) এর ১৫০ টি সনদে ছিল;

 ৬. আল-ধাবি তার সনদগুলো সহ একটি সম্পূর্ণ বই লিখেছেন এবং রায় দিয়েছেন যে এটি মুতাওয়াতির;

 ৭. আবুল আব্বাস ইবনে উকদাহ ১৫০ টি সনদের মধ্য দিয়ে বর্ণনা করেছেন।


আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নাম দুই ধরণের-


প্রথমত: 

যে সকল নাম শুধু আল্লাহ তা’আলার সাথে সুনির্দিষ্ট। যেমন,الله,الرحمن, الخالق ইত্যাদি শব্দে অন্যদেরকে নাম রাখা জায়েজ নয়। কেননা আল্লাহ তাআলার মু‘ছাম্মা তথা নামীয় সুনির্দিষ্ট।যা অংশিদারিত্বকে গ্রহণ করে না।


দ্বিতীয়ত: 

যে সকল নামের ব্যাপক অর্থ রয়েছে। অবস্থাভেদে যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, মালিক, আযীয, জাব্বার,মুতাকাব্বির ইত্যাদি শব্দ আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে ও ব্যাবহার করা জায়েজ আছে। এ সকল শব্দ আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে কোথাও নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন আবার কোথাও বা বান্দার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। যেমন:


১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ


অর্থাৎ“নিশ্চয়ই তিঁনি সকল কথা শোনেন,সকল কিছু জানেন।”➥[সুরা আনফাল,আয়াত নং ৬১]


❏ উক্ত আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তাআলা নিজের ক্ষেত্রে عَلِيمُ (তথা সব জান্তা) শব্দ ব্যবহার করেছেন আবার নিন্মোক্ত আয়াতে বান্দার ক্ষেত্রেও عَلِيمُ শব্দ ব্যবহার করেছেন।


২.আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,


وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ


অর্থাৎ“অতঃপর তারা তাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিল যে,বড় জ্ঞানী হবে।”➥[সুরা যারিআত,আয়াত নং-২৮]


উক্ত আয়াতে হযরত ইসহাক (عليه السلام) এঁর ঘটনার দিকে ইংগিত করা হয়েছে।তবে এটি সুস্পষ্ট বিষয় যে,আল্লাহ তাআলার ইলম আর বান্দার ইলমের মাঝে রয়েছে বিশাল ব্যাবধান ও পার্থক্য।কেননা আল্লাহ তাআলার ইলম হচ্ছে পুর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ।


৩.আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন


الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّر


“আল্লাহ তাআলা মহা ক্ষমতাবান,মহা প্রতাপশালী, গৌরবান্বিত।”➥[সূরা হাশর,আয়াত নং ২৩]


৪.উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিঁজের ক্ষেত্রে “আযীয” শব্দ ব্যবহার করেছেন। আবার বান্দার ক্ষেত্রেও “আযীয” শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমনঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-


قَالَتِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ الآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ


অর্থাৎ “আযীযের স্ত্রী বলল,এবার সত্য কথা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।”➥(সুরা ইউসূফ আয়াত ৫১)


অন্য আয়াতে বান্দার ক্ষেত্রেও ْجَبَّارও مُتَكَبِّر শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: 


৫.পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

كَذَلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍجَبَّارٍ


অর্থাৎ এভাবেই আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক অহংকারী, স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর করে দেন।”

➥[সূরা মুমিন,আয়াত নং ৩৫]


৬. আল্লাহ তাআলা নিঁজের ক্ষেত্রে حَلِيم শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন: পবিত্র কুরআনে ইরশাদে হয়েছে


إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا


অর্থাৎ“তিনি সহনশীল, ক্ষমাশীল।”

➥[সূরা ফাতির,আয়াত নং ৪১]


৭.আবার বান্দার ক্ষেত্রেও حَلِيم শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যেমন: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ


অর্থাৎ“সুতরাং, আঁমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।”

➥[সুরা আস-সফ্ফাত,আয়াত নং ১০১]


৮.পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا


অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।”

➥[সূরা নিসা,আয়াত নং ৫৮]


উক্ত আয়াতে করীমায় আল্লাহ তাআলা নিজের ক্ষেত্রে سَمِيعًও بَصِير শব্দ ব্যবহার করেছেন। আবার বান্দার ক্ষেত্রে ও উক্ত শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। 


৯.পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


إِنَّا خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا


অর্থাৎ আঁমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র হতে,তাকে পরীক্ষা করার জন্য। তারপর তাকে এমন বানিয়েছি যে,সে শোনেও দেখেও।

➥(সূরা দাহর, আয়াত ২)


১০. আল্লাহ তা’আলা নিঁজের ব্যাপারে الْمَلِكُশব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহর বাণী الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ অর্থাৎ তিঁনি (আল্লাহ) বাদশাহ পবিত্রতার অধিকারী।

➥[সূরা হাশর, আয়াত নং ২৩]


আবার বান্দার ক্ষেত্রেও উক্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন। 

১১.পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


َكَانَ وَرَاءَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا


অর্থাৎ (কেননা) তাদের সামনে ছিল এক রাজা। যে বলপ্রয়োগে সব (ভালো) নৌকা কেড়ে নিত।

➥[সুরা কাহ্ফ,আয়াত নং ৭৯]


১২. পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ


অর্থাৎ “বস্তুত আল্লাহ মানুষের প্রতি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।”➥[সুরা বাকারা,আয়াত নং ১৪৩]


উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিঁজের ক্ষেত্রে َرَءُوفٌও رَحِيمٌ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হয়েছে।আবার নিম্নোক্ত আয়াতে বান্দার ক্ষেত্রেও উক্ত শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। 


১৩.আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:


لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিঁনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।➥[সুরা তাওবা,আয়াত নং ১২৮]


মহব্বত শব্দটি আল্লাহ তাআলা নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন, আবার বান্দার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন।


১৪.পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ


অর্থাৎ “অচিরে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাকে ভালবাসবে।”➥[সূরা মায়েদা,আয়াত নং ৫৪]


১৫. অনুরূপভাবে “রিযা” শব্দটি নিজের জন্য এবং বান্দার জন্য ব্যবহার করেছেন।অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে

رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ


অর্থাৎ“ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।”➥[সুরা বাইয়্যিনাহ,আয়াত নং ৮]


উপরোক্ত এ সকল আয়াতে কারীমায় যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হল তা হচ্ছে।


১.একই শব্দ আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রেও ব্যাবহার হয়েছে আবার বান্দার ক্ষেত্রেও ব্যাবহার হয়েছে।

২.আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে যে অর্থে ব্যাবহার হয়েছে আর বান্দার ক্ষেত্রে যে অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে উভয়ের মাঝে রয়েছে মর্মার্থের দিক দিয়ে বিশাল পার্থক্য।



’মাওলা’ শব্দটা কোন ক্ষেত্রে, কোথায় কী কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা একটু আলোচনা করা যাক:



পবিত্র আল-কুরআন ও তফসীর এর আলোকেঃ



সঙ্গী,অনুসারী ও সাহায্যকারী অর্থেঃ


১.আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,


وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ


অর্থাৎ“কিন্তু তোমরা নবী (পত্নীগণ) যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর,তবে (জেনে রেখ) তাঁর সঙ্গী আল্লাহ,জিবরাঈল ও সৎকর্মশীল মুমিনগণ। তাছাড়া ফিরিশতাগণ তার সাহায্যকারী।”

[সূরা তাহরীম,আয়াত নং ৪]


ব্যাখ্যা-বিশ্লষণঃ


(ক.) তাফসীরে বায়যাবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে


فلن يعدم من يظاهره من الله والملائكة وصلحاء المؤمنين فإن الله ناصره وجبريل ريئس الكروبيين قرينه ومن صلح من المؤمنين أتباعه وأعوانه


অর্থাৎ তাঁর সাহায্যকারীরা তথা আল্লাহ,ফিরিশতা এবং নেককার মু’মিনগণ সর্বদা তাকে সাহায্য করবে।কেননা আল্লাহ হলেন তাঁর সাহায্যকারী আর মর্যাদাবান ফিরিশতাদের সর্দার জিবরাঈল (عليه السلام) হলেন তাঁর সহচর। আর নেককার মু’মিন বান্দারা হলেন তাঁর অনুসারী ও সাহায্যকারী।


(খ.) তাফসীরে রুহুল মা’য়ানীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-


فإن الله هو مولاه أي ناصره ..وجبريل مولاه أي قرينه وصالح المؤمنين مولاه أي تابعه


অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা নবীজীর ‘মাওলা’ তথা তাঁর সাহায্যকারী। জিবরাঈল (عليه السلام) নবীজীর ‘মাওলা’ তথা তাঁর সাথী।আর সৎকর্মশীল মুমিনগণ নবীজীর ‘মাওলা’ তথা তাঁর অনুসরণকারী।

[তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী,২৮/৪৬৪, ৪৬৫]


(গ.) তাফসীরে জালালাইন শরীফেও বলা হয়েছে যে-এখানে আল্লাহ,জিব্রাঈল (عليه السلام) ও মুমিনদেরকেও নবীর ‘মাওলা’ বলা হয়েছে।


লক্ষ্য করুন: আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে ‘মাওলা’ শব্দটি নিঁজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।



অভিভাবক, হিতৈষী বন্ধু ও সাহায্যকারী অর্থেঃ



২. পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا


অর্থাৎ “তারা কি পৃথিবীতে পরিভ্রমন করেনি এবং দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম।”


ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَامَوْلَى لَهُمْ


“তা এজন্য যে,আল্লাহ তো মুমিনদের অভিভাবক/হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের তো কোন অভিভাবক/হিতৈষী বন্ধু নেই।”

[সুরা মুহাম্মাদ ﷺ-আয়াত নং-১০, ১১]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ


(ক.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আলুছী (رحمة الله) বলেন,


بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا أي ناصرهم على أعدائهم

অর্থাৎ “আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের (ঈমানের কারণে) তাদের শত্রুদের মোকাবিলায় বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে সাহায্যকারী”।

[রুহুল মা‘আনী দারুল হাদিস ২৬/২৭৩,২৭৪]


❏ লক্ষ্য করুন: “মাওলা” মানে বন্ধু।১১ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে “যারা ইমান এনেছেন আল্লাহ তাদের মাওলা,কিন্তু কাফিরদের কোন ‘মাওলা’ নেই।” এই অর্থে যে কাউকেই ‘মাওলা’ বলা যাবে।


মালিক ও অভিভাবক অর্থেঃ


৩. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন


هُنَالِكَ تَبْلُو كُلُّ نَفْسٍ مَا أَسْلَفَتْ وَرُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ


“সেদিন তাদের প্রত্যেকে তার পূর্বকৃত কর্ম সম্বন্ধে অবহিত হবে এবং সকলকেই তাদের প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে এবং তারা যে মিথ্যা রচনা করেছিল, তার কোন সন্ধান তারা পাবে না।”

[সূরা ইউনূস,আয়াত নং ৩০]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ 


(ক.) উক্ত আয়াতে

وَرُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ

এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর (رحمة الله) বলেন,


أي: ورجعت الأمور كلها إلى الله الحكم العدل، ففصلها، وأدخل أهل الجنة الجنة، وأهل النار النار

অর্থাৎ সকল বিষয়ই আল্লাহর কাছে-যিঁনি মহান ন্যায় বিচারক- প্রত্যার্পিত হবে।তিনি ন্যায় মুতাবেক বিচার করে জান্নাত বাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর দোযখের উপযুক্ত ব্যক্তিদের দোযখে দাখিল করাবেন।

[ইবনে কাসির ২/৪১৪,দারুল মানার]


(খ.) ইমাম আবু মুহাম্মাদ আল হুসাইন ইবনে মাসউদ আল বাগাবী (رحمة الله) (৫১৬ হি:) বলেন,


الذي يتولى ويملك أمرهم: فإن قيل: أليس قد قال: ” وأن الكافرين لا مولى لهم “؟ قيل: المولى هناك هو الناصر، وههنا بمعنى: المالك،

অর্থাৎ যিঁনি তাদের সব বিষয়ের তত্বাবধায়ক ও প্রকৃত মালিক। যদি প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ তাআলা কি বলেন নি কাফেরদের কোন অভিভাবক নেই?।

[সূরা মুহাম্মাদ,আয়াত নং ১১]


উত্তরে বলা হবে সূরা মুহাম্মাদে মাওলা শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে এসেছে। আর এখানে এসেছে মালিক অর্থে।[অতএব কোন বৈপরিত্য থাকল না।]

[মাআলিমুত তানযীল ২/৩৫২ দারুল মা’রেফা, বৈরুত]


(গ.) ইমাম আবু হায়্যান আল উন্দুলুসী (رحمة الله) তার তাফসীরে আল বাহরুল মুহীত,(৫/২০০,দারু এহইয়াইত তুরাসিল আরাবী) বলেছেন-


مولاهم الحق ، لا ما زعموه من أصنامهم ، إذ هو المتولي حسابهم. فهو مولاهم في الملك والإحاطة ، لا في النصر والرحمة


অর্থাৎ তাদেরকে তাদের প্রকৃত অভিভাবকের নিকট ফিরিয়ে আনা হবে।তাদের ধারণা প্রসূত অভিভাবক তথা মূর্তির নিকট নয়।কেননা আল্লাহ তা’আলা তাদের হিসাব গ্রহণকারী । অতএব কর্তৃত্ব ও পরিবেষ্টনের দিক দিয়ে তিনি তাদের মাওলা।সাহায্য ও রহমতের দিক বিচারে নয়।


স্বজন ও আসাবা অর্থেঃ


৪. পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে


وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا


অর্থাৎ [হযরত যাকারিয়া (عليه السلام) দোয়া করেন] “আমি আমার পরে স্বজনদের ভয় করি।আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর উত্তারাধীকারী।” [সূরা মারিয়ম,আয়াত নং ৫]


১. অর্থাৎ তাঁর আত্বীয় স্বজন অযোগ্য হয়ে থাকবে।তাই আশংকা করেছিলেন,তাঁর ইন্তেকালের পর তারা অন্যায় অসৎ কর্মে লিপ্ত হয়ে সত্য -সরল পথকে বিগড়িয়ে না ফেলে এবং পুরাষানুক্রমে যে দ্বীনী ও আধ্যাত্বিক সম্পদ ইয়াকুব (عليه السلام) এ খান্দান হতে বদল হতে হতে যাকারিয়া (عليه السلام) পর্যন্ত এসে পৌছেছে তা নিজেদের দুষ্কর্ম ও অসদাচারণের কারনে খুইয়ে না বসে।

[তাফসীরে উসমানী]


২. এ আয়াতের আরেকটি তরজমা হল আঁমি আঁমার পর আমার চাচাত ভাইদের ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করছি এবং আঁমার স্ত্রী বন্ধ্যা।


অর্থাৎ আঁমার নিজেরতো কোন সন্তান নেই। আবার আঁমার চাচাত ভাইয়েরাও জ্ঞান গরিমা ও তাকওয়া ফরহেযগারীতে এ পর্যায়ে নয় যে, তারা আঁমার মিশন অব্যহত রাখবে। তারা দ্বীনের খেদমতকতটুকু আঞ্জাম দিতে পারবে সে ব্যপারে আমার যথেষ্ঠ ভয়। সুতরাং আঁমার নবুওয়াতী ইলমের উত্তরাধিকারী হতে পারে এমন এক পুত্র সন্তান আঁমাকে দান করুন।

[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ 


(ক.) হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (رحمة الله) (৭০০-৭৭৪ হি.) তার তাফসীরে ইবনে কাসীরে (৩/১১১, দারুল মানার ) উক্ত الْمَوَالِيَ শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেন-


قال مجاهد، وقتادة، والسدي: أراد بالموالي العصبة. وقال أبو صالح: الكلالة.


অর্থাৎ মুজাহিদ,কাতাদা,এবং সুদ্দী বলেন,মাওয়ালী দ্বারা উদ্দেশ্য আসাবা আর আবু সালেহ বলেন,এর দ্বারা কালালা তথা নিঃসন্তান ও পিতৃহীন উদ্দেশ্য ।


(খ.) তাফসীরে রুহুল মা’আনীতে (১৬/৫৩৪ দারুল হাদীস) বলা হয়েছে-


هم عصبة الرجل على ما روي عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما ومجاهد وعن الأصم أنهم بنو العم وهم الذين يلونه في النسب وقيل : من يلي أمره من ذوي قرابته مطلقا.

অর্থঃ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও মুজাহিদ থেকে বর্ণিত মত অনুযায়ী মাওয়ালী হল(যাকারিয়া (عليه السلام)) এঁর আসাবা। আর আসাম থেকে বর্ণিত মত অনুযায়ী তারা হলো তাঁর পিতৃব্য পুত্র, তথা তাঁর বংশের নিকটতম ব্যক্তিরা। কারো কারো মতে যেসব নিকটাত্মীয় তাঁর কর্তৃত্বাধিকারী হবে সাধারনভাবে (তারাই উদ্দেশ্য)


বন্ধু ও মিত্র অর্থেঃ


৫. আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন


يَوْمَ لَا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ

অর্থাৎ “যেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর সামান্য উপকারেও আসবে না এবং তারা সাহায্যও পাবে না।”

[সূরা দুখান,আয়াত নং ৪১]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ 


(ক.) উক্ত আয়াতের মাওলা শব্দের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসী (رحمة الله) বলেন

والمولى الصاحب الذى من شانه ان يتولى معونةصاحبه على أموره فيدخل فى ذلك ابن العم والحليف والعتيق والمعتق وغيرهم-


অর্থাৎ মাওলা ঐ সাথী ও বন্ধু যার কাজ হলো তার বন্ধুর কাজে সহায়তা করা। অতএব মাওলা এর মাঝে পিতৃব্য পুত্র,কোন বিশেষ অঙ্গীকারাবদ্ধ বন্ধু,আযাদকৃত গোলাম, ও আযাদকারী ইত্যাদি ব্যক্তি অর্ন্তভুক্ত।

[রুহুল মাআনী ২৫/১৭৬ দারুল হাদীস]


(খ.) তাফসীরে কাবীরে (২৭/২২২ আল মাকতাবাতুত তাওফীকিইয়াহ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) [৫৫৪-৬০৪ হি:] বলেন


والمعنى ان الذى يتوقع منه النصرة اماالقريب فى الدين أوفى النسب أوالمعتق, وكل هؤلاء يسمون بالمولى, فلمالم تحصل النصرةمنهم فبأن لاتحصل ممن سواهم أولى.


অর্থাৎ “যার থেকে সাহায্যের আশা করা যায়। চাই সে দ্বীন,বংশ কিংবা আযাদকারী ইত্যাদি দিক থেকে নিকটস্থ হোক না কেন।এদের সকলকে মাওলা বলা হয়। যখন এদের থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না তখন অন্যদের থেকেও না পাওয়াই অধিকতর উপযোগী বা যুক্তিযুক্ত”।


❏ এছাড়া সূরা আহযাবের ৫ নং আয়াতে “মাওলা” শব্দটি বন্ধু অর্থে এসেছে।


মালিক ও তত্বাবধায়ক অর্থেঃ


৬. আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন


قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللَّهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ


অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে কসম থেকে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা দান করেছেন। আল্লাহ তোমাদের কর্মবিধায়ক বা মালিক। তিঁনিই সর্বজ্ঞ,পরিপূর্ণ হেকমতের মালিক। [সূরা তাহরীম,আয়াত নং ২]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ  


(ক.) তাফসীরে বায়যাবীতে (৫/৩৫৫ দারুল ফিকর,বৈরুত,লেবানন)

والله مولكم

এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে

متولى أمركم

অর্থাৎ তিঁনি তোমাদের বিষয়ের তত্বাবধায়ক।


(খ.) তাফসীরে তাবারীতে (১২/১৫১ পৃ: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ)বলা হয়েছে,

يتولاكم بنصره أيهاالمؤمنون

অর্থাৎ হে মুমিনগণ তিঁনি তোমাদেরকে সাহায্যের দ্বারা তত্ত্বাবধান করেন (অর্থাৎ সাহায্য করেন)।


(গ.) ইমাম বাগাবী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন

وليكم وناصركم


অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক এবং সাহায্যকারী। [তাফসীরে বাগাবী ৪/৩৬৩ পৃ:,দারুল মা’রিফা বৈয়রুত]


অভিভাবক ও সর্বময় কর্তা অর্থেঃ


৭. পবিত্র কুরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-


رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ


অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের উপর করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর,আমাদের প্রতি দয়া কর।তুমি আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী,কাজেই কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।

[সূরা বাকারাহ,আয়াত নং ২৮৬]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ


(ক.) তাফসীরে রুহুল মাআনীতে (৩/৯৬ দারুল হাদিস) انت مولانا এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে

اى مالكناوسيدنا وجوز ان يكون بمعنى متولى الأمر

অর্থাৎ তুমি আমাদের একচ্ছত্র অধিপতি এবং আমাদের সর্দার। এখানে مولانا দ্বারা সর্ব বিষয়ের তত্ত্বাবধানকারী ও পরিচালনকারী অর্থ গ্রহণের ও অবকাশ রয়েছে।


(খ.) আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (رحمة الله) বলেন


وقوله انت مولاناأى انت وليناوناصرنا


অর্থ: انت مولانا অর্থাৎ তুমি আমাদের সর্বময় কর্তা এবং আমাদের সাহায্যকারী

[তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩২৯ দারুল মানার]


❏ এ ছাড়াও সূরা তাওবার ৫১ নং আয়াত ও সূরা হাজ্জের ৭৮ নং আয়াতে “মাওলা” শব্দটি অভিভাবক অর্থে এসেছে।


❏ এই “মাওলার” মানে হলো তিঁনি আমাদের অভিভাবক,যাঁর ওপর নির্ভর করা যায়।এই অর্থে আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলা বা মাওলানা বলা যাবে না।


মুনিব অর্থেঃ


৮.আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,


وضرب الله مثلارجلين احدهماابكم لايقدرعلى شيئ وهوكل على موله, اينما يوجهه لايأت بخير, هل يستوى هوومن يأمربالعدل وهوعلى صراط مستقيم-


অর্থাৎ আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন- দু’জন লোক,একজন বোবা,কোন কাজ করতে পারে না এবং সে তার মুনিবের জন্য একটা বোঝা,যেদিকেই তাকে পাঠায় সে ভাল কিছু করে আনতে পারে না। সে আর ওই ব্যক্তি কি সমান, যে ন্যায়ের আদেশ করে এবং সে সরল পথে প্রতিষ্ঠিত?

[সূরা নাহল,আয়াত নং ৭৬]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ


(ক.) উক্ত আয়াতের وهوكل على موله এর ব্যাখ্যায়,ইমাম আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) (৩১০ হি:) বলেন,


وهوعيال على ابن عمه وحلفائ هوأهل ولايته, فكذلك الصنم كل علي من يعبده يحتاج ان يحمله,ويضع هويخدمه, كالابكم من الناس الذى لايقدر على شيئ, فهو كل على اولياءه من بنى اعمامه وغيرهم


অর্থাৎ সে তার পিতৃব্য পুত্র, চুক্তিবদ্ধ মিত্র এবং অভিভাবকদের বোঝা স্বরূপ তথা পরনির্ভশীল। অনুরূপভাবে মূর্তি পুজকদের জন্য মূর্তি বোঝা স্বরূপ,পূজারীর বহন করা, রাখা ও তার সেবার মুখাপেক্ষী হলো মূর্তি। যেমন বোবা যে কোন কিছুরই শক্তি রাখে না সে তার অভিভাবক তথা পিতৃব্যপুত্র এবং অন্যদের জন্য বোঝা স্বরূপ। [তাফসীরে তাবারী ৭/৬২৩ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]


সাহায্যকারী ও অভিভাবক অর্থেঃ


৯. পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وان تولوافاعلمواا ن الله مولكم- نعم المولى ونعم النصير


যদি তারা না মানে তবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ্ই তোমাদের অভিভাবক, কতইনা উত্তম অভিভাবক তিনি এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।

[সূরা আনফাল,আয়াত নং ৪০]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ


(ক.) তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২/৩১০ দারুল মানার) বলা হয়েছে


ان الله مولكم وسيدكم وناصركم على اعدائكم


অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক ও প্রভূ এবং তোমাদের শত্রুদের মোকাবেলায় সাহায্যকারী।


(খ.) আল্লামা আলুসী (رحمة الله) বলেন


فاعلمواان الله مولكم أى ناصركم فتثقوابه, ولاتبالوابمعاداتهم


অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী তোমারা তাঁর প্রতি আস্থা স্থাপন করবে। আর তাদের (কাফির ও মুশরিকদের) শত্রুতা ও বিরোধিতার পরোয়া করবে না।


উত্তরাধিকারী অর্থেঃ


১০. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন


ولكل جعلناموالى مماترك الوالدان والاقربون

অর্থাৎ পিতা মাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট করেছি। [সুরা নিসা,আয়াত নং ৩৩]


❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণঃ


(ক.) موالى এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর (رحمة الله) বলেন


قال ابن عباس ومجاهد وسعيدبن جبيروابوصالح وقتادةوزيدبن اسلم والسدى والضحاك ومقاتل بن حيان وغيرهم فى قوله ولكل جعلناموالى أى ورثة


অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه),মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে যুবায়ের,আবু সালেহ, কাতাদাহ,যায়েদ ইবনে আসলাম, সুদ্দী, দাহহাক, মুকাতেল ইবনে হায়্যান প্রমুখ موالى এর ব্যাখ্যায় বলেন “উত্তরাধিকারী”

[ইবনে কাসীর,১/৪৭৩ দারুল মানার]


(খ.) তাফসীরে কাবীরে (১০/৭৭) ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন


أى ولكل واحدجعلناورثة فى تركته


অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্য আমি তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট করেছি।


১১. আবার দেখুন! জাহান্নাম কেও ‘মাওলা’ বলা হয়েছে।[সূরা হাদীদ,আয়াত নং ১৫]


❏ এই মাওলার অর্থ হলো ঠিকানা। এই অর্থে স্থান বিশেষে ‘মাওলা’ বা মাওলানা বলা যাবে।


লক্ষ্য করুন: প্রিয় পাঠকগন এসকল আয়াতে কারীমায় মাওলা বা মাওলানা শব্দটি কোথাও অভিভাবক ও বন্ধু অর্থে কোথাও স্বজন বা স্বগোত্র অর্থে কোথাও কর্মবিধায়ক ও মালিক অর্থে কোথাও পালন কর্তা অর্থে কোথাও বা মুনিব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব মাওলা শব্দের একাধিক অর্থ কুরআন মাজীদ দ্বারাই প্রমাণিত হল।কাজেই আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ার মত শিরকের ফতোয়া দিলেই হবে না। সেই সাথে প্রতিটি শব্দের তাত্তিক-বিচার বিশ্লেষণ জানতে হবে ও তুলে ধরতে হবে।



আল-হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণঃ 



আযাদকৃত গোলাম ও বন্ধু অর্থেঃ


১. বারা ইবনে আযিব (رحمة الله) বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ (رضي الله عنه) কে লক্ষ্য করে বলেন

انت اخوناومولانا


অর্থাৎ তুমি আমাদের ভাই ও আমাদের বন্ধু। [সহীহ বুখারী,১/৫২৮]


❏ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-


قوله أنت أخونا أي باعتبار أخوة الإسلام والمراد بقوله ومولانا المولى الأسفل لأنه أصابه سباء فاشتري لخديجة رضي الله تعالى عنها فوهبته للنبي وهو صبي فأعتقه وتبناه


(অর্থ) তুমি আমাদের ভাই অর্থাৎ ইসলামের ভ্রাতৃত্বের বিবেচনায়। আর مولاناদ্বারা উদ্দেশ্য হলো আযাদকৃত গোলাম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বন্দী অবস্থায় পেয়ে খাদীজা (رضي الله عنه) এঁর জন্য ক্রয় করেন। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য তাকে হিবা করে দেন। যায়েদ (رضي الله عنه) ছিলেন তখন বালক, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আযাদ করে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।


❏ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি অন্যত্র বলেন,


قوله وقال لزيد أنت أخونا يعني في الإيمان ومولانا يعني من جهة أنه أعتقه وهو المولى الأسفل. (عمدةالقارى۱۳/۲۷۷)


অর্থাৎ তুমি ঈমানের বিবেচনায় আমাদের ভাই। আর আযাদ করার বিবেচনায় “মাওলানা” কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আযাদ করেছেন, আর যায়েদ হলেন আযাদকৃত।


২.


عن انس بن مالك عن النبى صلى الله عليه وسلم قال مولى القوم من انفسهم .


অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) এর সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন কাওমের (আযাদকৃত) গোলাম তাদেরই অর্ন্তভুক্ত।

[সহীহ বুখারী,২/১০০০]


❏ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেন-


مولى القوم من انفسهم والمرادبه المولى الاسفل لاالاعلى.


অর্থাৎ مولى দ্বারা আযাদকৃত গোলাম উদ্দেশ্য,আযাদকারী উদ্দেশ্য নয়।[উমদাতুল কারী ১৬/৮৪]


❏ আল্লামা আইনী (رحمة الله) 

(باب امامةالعبدوالمولى) এর ব্যাখ্যায় বলেন


اى هذاباب فى بيان حكم امامةالعبدوالمولى وارادبه المولى الاسفل وهوالمعتوق وللفظ المولى معان متعددةوالمرادبه هناالمعتوق.


অনুচ্ছেদ: গোলাম ও আযাদকৃত গোলামের ইমামতি। অর্থাৎ এই অনুচ্ছেদ গোলাম ও আযাদকৃত গোলামের ইমামতির হুকুম বর্ণনা প্রসংগে, আর মাওলা দ্বারাা উদ্দেশ্য হলো আল মাওলাল আসফাল তথা আযাদকৃত গোলাম, মাওলা শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে এখানে মাওলা দ্বারা আযাদকৃত গোলাম উদ্দেশ্য।

[উমদাতুল কারী ৫/২২৫]


সাহায্যকারী ও অভিভাবক অর্থেঃ


৩. (উহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে) আবু সুফিয়ান বললো হুবালের জয়,তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগনকে বললেন,তোমরা তার উত্তর দাও।তারা বললেন,আমরা কি বলব? তিঁনি বললেন,তোমরা বল

الله اعلى واجل

অর্থাৎ আল্লাহ সমুন্নত ও মহান।


আবু সুফিয়ান বললো

لناالعزى ولاعزى لكم


আামদের উয্যা আছে তোমাদের উয্যা নেই, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কি জবাব দেব তিঁনি বললেন,বল


الله مولاناولامولى لكم


অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোন অভিভাবক নেই।

[সহীহ বুখারী,২/৫৭৯]


❏ আল্লামা আইনী রহ. (৮৫৫ হিঃ) তার বিখ্যাত বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারীতে (১৭/১৪৩) লিখেন-


قوله الله مولاناولامولى لكم اىالله ناصرناولاناصرلكم


অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী আর তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই।


মনিব বা অভিভাবক অর্থেঃ


৪. হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,


لايقل احدكم اطعم ربك وضئ ربك اسق ربك وليقل سيدى ومولاى ولايقل احدكم عبدى وامتى وليقل فتاى وفتاتى وغلامى.


অর্থ: তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে, তোমার রব তথা প্রভূকে আহার করাও। তোমার রবকে উযূ করাও।তোমার রবকে পান করাও। আর যেন (গোলাম বাদী বা অধীনস্থরা) এরূপ বলে “আমার মনিব” “আমার অভিভাবক” তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে “আমার আবদ” বা দাস, “আমার দাসী” বরং বলবে “আমার বালক” “আমার বালিকা” “আমার খাদিম”। [সহীহ বুখারী ১/৩৪৬]


❏ কাযী ইয়াজ (رحمة الله) (৫৪৪হি.) তাঁর অনন্য গ্রন্থ ‘ইকমালুল মু‘লিম ফী শরহি সহীহি মুসলিমে’ (৭/১৮৯ পৃ. দারুল ওয়াফা) উল্লেখ করেন-


……فإن المولى : الناصر ، والمولى والمنعم بالعتق والمنعم عليه وابن العم والحليف ، وهى لفظة منصرفة مستعملة فى القرآن والحديث فى هذه المعانى ، فأبيح هنا ذكرها فى حق العبد لسيده لكثرة استعماله فى المخلوقن فى معنى الولاية والقيام بالأمر والإنعام ،


অর্থাৎ মাওলা অর্থ সাহায্যকারী, অভিভাবক, গোলাম আযাদকারী, পুরুস্কৃত ব্যক্তি বা অনুগ্রহের পাত্র, পিতৃব্য পুত্র এবং কোন বিশেষ অঙ্গীকারাবদ্ধ বন্ধু। এ শব্দটি কুরআন ও হাদীসে এ সব অর্থে ঘুরে ফিরে ব্যবহার হয়। এখানে গোলাম তার মনিবকে মাওলা বলা বৈধ হয়েছে। কেননা এ শব্দটি মাখলুকের ক্ষেত্রে, কর্তৃত্ব বা শাসন, কোন বিষয়ের আঞ্জাম দেয়া বা তত্ত্বাবধান করা,দান ও অনুগ্রহ ইত্যাদি অর্থে অধিক ব্যবহার হয়।


❏ মাজমা’ আয-যাওয়ায়েদে (৯/১০৬) একটা সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়- একবার ‘রাহবা’ এলাকাতে একদল প্রতিনিধি হযরত আলী (رضي الله عنه) এঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন, যাদের মধ্যে হযরত আবু আইঊব আনসারী (رضي الله عنه)ও ছিলেন। তারা তাঁরা হযরত আলী (رضي الله عنه) কে সালাম দিয়ে বললেন ‘আসসালামু আলায়কুম ইয়া মাওলানা’। তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন- আমি তোমাদের ‘মাওলা’ হলাম কি করে- হে আরব সমাজ? তখন তারা বললেন- গাদীর খুমদের দিন আমরা রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি যে- আমি যার ‘মাওলা’ ইনি (আলী) ও তার মাওলা।


❏ তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাউফুর রহীম নবী কারীম ﷺ নিঁজেও নিঁজকে ‘মাওলা’ বলেছেন।


যেমনঃ আল কোর’আনের সুরা নাহলের ৭৬ নং আয়াতে মনিব অর্থে বলা হয়েছে “هو كل على مولاه” (সে তার মনিবের উপর বোঝা।)।


রাসুলে কারিম ﷺ যায়েদ ইবনে হারিসাকে বলেন- “أنت اخوانا ومولانا” অর্থাৎ তুমি আমাদের ভাই এবং মাওলানা তথা বন্ধু। [সূত্রঃ বুখারি শরিফ ১/৫২৮।]


 অন্যত্র নাবিয়ুল কারিম গোলামদেরকে শিখিয়েছেন, তারা যেন তাদের মনিবকে বলে- “سيدي و مولاي” (সায়্যিদি ওয়া মাওলায়ি) অর্থাৎ আমার নেতা এবং মনিব।

[সূত্রঃ বুখারি শরিফ ১/৩৪৬।]


মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের كتاب الالفاظ من الادب -এ বর্ণিত হয়েছে যে-


لايقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عبيد الله وكل نساءكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي


অর্থাৎ, নবীজী ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ عبدي (আঁমার বান্দাহ) বলোনা। তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী। কিন্তু আঁমার গোলাম আঁমার চাকরানী বলতে পার।

(মুসলিম শরীফ)


মুহাম্মদ ইবনু রাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদিস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রবকে পান করাও, তোমার রবকে খাবার দাও,তোমার রবকে উযু করাও। তিনি আরও বলেনঃ “তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব বলবেনা বরং বলবে আমার সায়্যিদ-সরদার বা নেতা,আমার মাওলা-মনিব।আর তোমাদের কেউ বলবে না,আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।”

[সহীহ মুসলিম,অধ্যায়,৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার :৫৬৮১। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত]


মনিব বা অভিভাবক অর্থেঃ


(ক.) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ইরশাদ করেন-


عبد اطاع الله , وأطاع مواليه ادخله الله الجنة قبل مواليه بسبعين خريفا, فيقول اليسد: يا رب هذا كان عبدى فى الدنيا, قال: جازيته بعمله وجازيتك بعملك. (انظر التيسير بشرح الجامع الصغير- (حرف العين) (2/126 مكتبة الامام الشافعى الرياض) طب عن ابن عباس باسناد حسن


অর্থ: যে গোলাম আল্লাহর ও তার মনিবদের আনুগত্য করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে তার মনিবদের সত্তর বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। মনিব বলবে, ইয়া রব, এ তো দুনিয়াতে আমার গোলাম ছিল। আল্লাহ বলবেন,আমি তাকে তার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। আর তোমাকে তোমার আমলের প্রতিদান দিয়েছি।

[আল মু’জামূল কাবীর হাদীস ৬/১১১ হাদীস নং ১২৬৩৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]


(খ.) অপর হাদিস শরীফে এসেছে


عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أيماأمرأةنكحت بغيراذن مواليهافنكاحهاباطل, ثلاث مرات


আয়শা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন স্ত্রীলোক অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কাউকে বিবাহ করে তবে তার বিবাহ বাতিল (পরিত্যক্ত) হবে। আর তিঁনি এই উক্তিটি তিন বার উচ্চারন করেন।

[সুনানে আবু দাউদ ১/২৮৪]


❏ এছাড়া নিম্নোক্ত হাদীস গ্রন্থে ও হাদীসটি بغيراذن مواليها শব্দে এসেছে।

১. বায়াহাকী,সুনানে কুবরা,১০/২৯২ হাদিস নং-১৩৮৯৫ ও ১৩৮৯৬

২. দারুল ফিকর ,মুসনাদে আহমদ- ৪২/২০০পৃ. হাদিস নং-২৫৩২৬

৩. মুয়াছ্ছাছাতুর রিছালাহ


❏ ইমাম নাসায়ীর সুনানে কুবরাতে হাদীসটি ايماامرأةنكحت بغيرمولاها শব্দে বর্ণিত হয়েছে।(হাদিস নং ৫৩৯৪)


❏ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) (সুনানে কুবরা বায়হাকীতে ১০/২৯২ পৃ. হাদিস নং-১৩৮৯৬) আবু উবায়দা (رضي الله عنه) এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন,ارادبالمولى الولى অর্থাৎ মাওলা দ্বারা অভিভাবক উদ্দেশ্য।


বন্ধু ও কল্যাণের জিম্মাদার অর্থেঃ


৫. হযরত আবু আইয়ুব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:


الانصار ومزينة وجهنية وغفار واشجع ومن كان من بنى عبد الله موالى دون الناس والله ورسوله مولاهم-


অর্থ: আনসার,মুযয়ানা,জুহায়না, গিফার,আশজা এবং বনু আব্দুল্লাহ আমার বন্ধু লোক,অন্যরা নয়। আর আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল এদের অভিভাবক।

[সহীহ মুসলিম,২/৩০৬]


ব্যাখ্যা: الله ورسولهم ولاهم এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন


اى وليهم والمتكفل بهم وبمصالحهم وهم مواليه اى ناصروه والمختصون به .


অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের বন্ধু, তাদের ও তাদের কল্যানের জিম্মাদার। আর তারা তাঁর মাওয়ালী তথা সাহায্যকারী এবং বিশিষ্ট জন। (সহীহ মুসলিমের সাথে সংযুক্ত ইমাম নববীর শারাহ ২/৩০৭)


সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক অর্থেঃ


৬. হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন


قريش والانصاروجهينه ومزينةواسلم واشجع وعفارموالى ليس لهم مولى دون الله ورسوله


অর্থঃ কুরাইশ, আনসার জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, আশজা, গিফার আমার বন্ধুলোক। আর আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ব্যতীরেকে তাদের কোন অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক নেই। সহীহ বুখারী ১/৪৯৭


ব্যাখ্যা: আল্লামা আইনী (রঃ) বলেন-


والمولى وان كان له معان كثيرة لكن المناسب هناالناصروالولى والمتكفل بمصالحهم والمتولى لامورهم


অর্থ: মাওলা শব্দের যদি ও অনেক অর্থ রয়েছে কিন্তু এ হাদিসে সাহায্যকারী, অভিভাবক, তাদের কল্যানের যামিন এবং তাদের তত্ত্বাবধায়ক ইত্যাদি অর্থই উপযোগী। (উমদাতুল কারী ১৬/৭৬)


৭. এছাড়াও নও মুসলিমরা গোত্রগত মর্যাদা লাভের জন্য কোন কোন গোত্রে সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সেই গোত্রের অর্ন্তভূক্ত হলে তাদেরকে সেই গোত্রের মওয়ালী আখ্যায় অভিহিত করা হয়। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) এর مولانا শব্দ ব্যবহার:

আত তাবাকাতুল কুবরা লি ইবনে,সা’দ (৫/২২৫ হাসান বসরীর জীবনী নং-৩০৪৮, দারুল ফিকর ) গ্রন্থে রয়েছে –

ان انس بن مالك سئل عن مسئلة قال:عيلكم مولاناالحسن فسلوه,فقالوايااباحمزةنسئلك وتقول سلوامولاناالحسن!فقال:اناسمعناوسمع فحفظ ونسينا .

আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) কে একটি মাসআলার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন। তোমরা “আমাদের মাওলানা” হাসানের কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করো। তারা বললো হে আবু হামযা (আনাস ইবনে মালিকের কুনিয়াত) আমরা আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করছি আর আপনি বলছেন “আমাদের মাওলানা” হাসানের কাছে জিজ্ঞাসা কর” তিনি বললেন,আমরাও শুনেছি আর তিনিও শুনেছেন,তিনি মুখস্থ করেছেন আর আমরা ভূলে গেছি।

[আরো দেখুন তাহযীবুল কামাল হাসান বসরীর জীবনী নং-১২১৬ ]


❏ ইমাম হাসান বসরি (رضي الله عنه) কে মানুষ শ্রদ্ধা করে মাওলানা হাসান বসরি বলে ডাকতো।

[সূত্রঃ তাহযিবুত তাহযিব ২/২৬৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯/২৬৬।]


৮. সুনানে আবু দাঊদে (হাদীস নং ২৯০০) একটা সহীহ সনদে পাওয়া যায় যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ব্যাপারে প্রিয় নবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন- যার কোন ‘মাওলা’ নেই, আমি তার ‘মাওলা’।

এখানে সম্পত্তির অভিভাবক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি যার শুধু মামা আছেন, হাদীসে তাকেও ‘মাওলা’ বলা হয়েছে।


৯. এছাড়াও দরুদ শরীফে ও ব্যবহৃত হয়েছে,


“اللهم صلي على سيدنا ومولانا محمد”


(আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদ) এই দরুদে তো রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله و سلم) কে ‘মাওলানা’ বলাই আছে।


১০. লামাযহাবী আলেমদের লিখিত কিতাবে “মাওলানা” শব্দের ব্যবহার: কিতাবটির নাম سبيل الرسول কিতাবটি প্রকাশিত হয়েছে ই’তেকাদ পাবলিকেশন্স হাউস, নিউ দিল্লী থেকে। প্রথম সংস্করণ ১৯৯৭ ঈ.। লেখকের নাম এভাবে লেখা হয়েছে حضرت مولاناحكيم محمدصاحب سيالكوٹیকিতাবের সূচীতে আলেমদের নামের পূর্বে মাওলানা লেখার কিছু নমুনা উখে করা হল।

حضرت مولاناثناءالله امرتسرى كاارشاد

حضرت مولانامحمدابراهيم صاحب سيالكوٹی كاارشاد

حضرت مولانااسماعيل كاارشاد

مولاناعبدالحى لكهنوى كاارشاد

লামাযাহাবীদের বড় আলেম ছানাউল্লাহ অমৃতসরী তার ফতওয়ায়ে ছানায়িআহ তে অসংখ্য জায়গায় আলেমদের নামের পূর্বে “মাওলানা” শব্দ ব্যবহার করেছেন। এমনকি তার নিজের নামের পূর্বেও “মাওলানা” শব্দ লেখা রয়েছে। তাদের লিখিত কিতাবে এ ছাড়া আরো অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।


মাওলা’ শব্দের অর্থ হচ্ছেঃ প্রভু, মনিব, বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক, মিত্র, আযাদকৃত দাস ইত্যাদি। ইমাম নভুভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই শব্দের ১৬টি অর্থ আছে। এই কারণে শব্দটি সালাফে সালেহীনের মধ্যে ব্যবহারের প্রচলন ছিল। যেমন দাসগণ তাদের মনিবদের উদ্দেশ্যে ‘মাওলা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এক হাদীছে দাসকে নিষেধ করেছেন মনিবকে ‘মাওলায়া’ বা আমার প্রভূ বলতে। আবার আরেক রেয়াওয়াতে অনুমতি দিয়েছেন যে দাস তার মনিবকে বলবে ‘সাইয়্যেদী ও মাওলায়া’। (উভয় বর্ণনা সহীহ মুসলিমে আছে)


এখানে ‘মাওলা’ শব্দের শেষে ‘ইয়া’ সর্বনাম যোগ করলে একবচন বক্তা বুঝায়, আর ‘না’ সর্বনাম যোগ করলে বহুবচন বক্তা বুঝায়।


১১. এখন হাদীসে এক বর্ণনায় নিষেধ আরেক বর্ণনায় অনুমতির তাৎপর্য কি?


এ সম্পর্কে উলামাগণ বলেছেন,যদি ‘মাওলা’ শব্দ দ্বারা রুবুবিয়্যাতের অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং তাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী উদ্দেশ্য করা হয়,তবে তা নিষেধ। কিন্তু যদি সাধারণভাবে দায়িত্বশীল বা অভিভাবক বা অন্য কোন অর্থ উদ্দেশ্য করা হয় তবে ব্যবহার করা নিষেধ নয়।

কেউ বলেছেন,দ্বিতীয় বর্ণনা দ্বারা এটি ব্যবহার জায়েয হওয়ার প্রমাণ দেয়া হয়েছে। আর প্রথম বর্ণনাটি দ্বারা আদব রক্ষার্থে ব্যবহার না করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবহার করা মাকরূহ।


এই জন্যে শাইখ বিন বায বলেছেন, যদিও শব্দটির ব্যবহার নাজায়েয নয় তবে তা যত্রতত্র ব্যবহার না করাকেই উত্তম।


শাইখ আবদুল মুহসেন আব্বাদ শব্দটি ব্যবহারে তাওহীদের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা না থাকলেও যার তার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ঠিক না।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি যার মাওলা, আলী (رضي الله عنه) ও তার মাওলা।” (আহমাদ,তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)


এর অর্থ সম্পর্কে মুবারকপুরী তোহফাতুল আহওয়াযীতে বলেছেন,আমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখি আলীও তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে। (শত্রুতার বিপরীত)।

কেউ বলেছেন,তার অর্থ হচ্ছে,আঁমি যাকে ভালবাসি আলীও তাকে ভালবাসে। কেউ বলেছেন,যে আঁমাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে আলীও তার সাথে সম্পর্কে রাখবে।


কিছুসংখ্যক লোক অনুসন্ধান না করে বলে ফেলেন যে ‘মাওলানা’ শব্দটি আল্লাহর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট। তাই মানুষের জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা ‘শিরক’! প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলেন, পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আনতা মাওলানা ফানছুরনা—অর্থাৎ আঁপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আঁপনি আমাদের সাহায্য করুন। [সুরা :বাকারা, আয়াত নং ২৮৬]


এ আয়াতে ‘মাওলানা’ বলে আল্লাহকে সম্বোধন করা হয়েছে।তাই কোনো মানুষকে ‘মাওলানা’ বলে সম্বোধন বা বিশেষিত করা জায়েজ নয়,বরং শিরক!


মাওলানা শব্দটি যদি আক্ষরিক অর্থে ব্যবহূত হয়, তাহলে নিশ্চয়ই এ শব্দ মানুষের জন্য ব্যবহার করা অন্যায়। কিন্তু এটা যদি একটা উপাধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো এর আক্ষরিক অর্থ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়ে না। ইসলামের ইতিহাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه)-এর উপাধি ছিল ‘সাইফুল্লাহ’।এ শব্দের অর্থ আল্লাহর তরবারি।অথচ কেউ কিন্তু কখনো প্রশ্ন করেনি যে খালিদ (رضي الله عنه) রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন না,খালিদ (رضي الله عنه) শুধু একটি তরবারির নাম! কেননা এটা একজন মানুষের উপাধি ছিল। তাই এ শব্দের আক্ষরিক অর্থ কেউ গ্রহণ করেনি। রূপক অর্থটাই গ্রহণ করেছে।


❏ এবার আসা যাক, আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ শব্দকে যে অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, আলেমদের ক্ষেত্রে সে অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ অর্থ হলো আমাদের প্রভু বা প্রকৃত অভিভাবক আর আলেমদের ক্ষেত্রে তার অর্থ হচ্ছে আমাদের ধর্মীয় অভিভাবক।

[কিতাবুল ফাতাওয়া : ১/২২৮, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ২/৬৩৮]


❏ যদি শুধু শব্দগত রূপ মিল থাকায়ই কোনো শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে ঈমানদারদের জন্য ‘মুমিন’ শব্দ ব্যবহারও ‘নাজায়েজ’ হতে বাধ্য। কেননা আল্লাহ তাআলার ৯৯ নামের একটি হচ্ছে ‘মুমিন’। অথচ কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ‘মুমিন’ বলে বিশেষিত করা হয়েছে। এর কারণ হলো, বান্দার ক্ষেত্রে ‘মুমিন’ শব্দ এক অর্থে আর আল্লাহর ক্ষেত্রে অন্য অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। একই কথা ‘মাওলানা’ শব্দটার বেলায় প্রযোজ্য।


অনুরূপভাবে ‘রউফ’ শব্দ আল্লাহর গুণবাচক নাম। কিন্তু সুরা তাওবার শেষ আয়াতে শব্দটি মহানবী (ﷺ)-এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা শব্দ এক হলেও তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য ভিন্ন অর্থে ব্যবহূত হয়েছে।


তা ছাড়া আরেকটা লক্ষণীয় বিষয়, উর্দু ভাষায় ‘মাওলানা’ শব্দটি উস্তাদ ও আলেমে দ্বিন অর্থেও ব্যবহূত হয়। [আল-হাদিয়্যাতুল মারযিয়্যা,পৃষ্ঠা ১১৭, ফিরুজুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৬৬৪]


❏ আরবী ভাষাবিদদের নিকট মাওলা শব্দের অর্থ :মাওলা শব্দটি মূলত মাসদার কিন্তু এর দ্বারা اسم فاعلউদ্দেশ্য। [দেখুন: তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৩/৯৬]


❏ আরবী অভিধানসমূহে মাওলা শব্দের রব তথা মহান প্রতিপালক অর্থ ছাড়াও আরো অনেক অর্থ রয়েছে। বিখ্যাত অভিধান গ্রন্থ “আল কামূসূল মুহীত”-(৪/৫৮৩ পৃ.) এ এ মাওলা শব্দের একুশটি অর্থ লিখা আছে, যা নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১। – المالكমালিক/কর্তা

২।العبد-গোলাম

৩।المعتق-গোলাম আযাদকারী

৪।المعتق-আযাদকৃত গোলাম

৫। – الصاحبসাথী বা বন্ধু

৬।- القريب নিকটাত্মীয়(যেমন, পিতৃব্য পুত্র বা এ জাতীয় অন্য কেউ

৭।- الجارপ্রতিবেশী

৮।الحليف-কোন বিশেষ অঙ্গীকারবদ্ধ বন্ধু ৯।- الابن পুত্র

১০। – العم চাচা বা পিতৃব্য

১১। – النزيل মেহমান বা আগন্তুক

১২।-الشريك অংশীদার

১৩। – ابن الاخت ভগ্নিপুত্র

১৪। -الولى অভিভাবক

১৫।- الربমহান প্রতিপালক

১৬। – الناصر সাহায্যকারী

১৭।- المنعم পুরুষ্কার দাতা বা অনুগ্রহকারী ১৮।- المنعم عليه পুরুস্কৃত ব্যক্তি বা অণুগ্রহের পাত্র

১৯।- المحب প্রেমিক

২০।- التابع অধীনস্থ

২১। – الصهر বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা।


❏ এ গুলোর মধ্যে একমাত্র রব তথা মহান প্রতিপালক ছাড়া অন্য সকল অর্থেই যে কোন মানুষই ‘মাওলা’ হতে পারে।

যে অর্থে আমরা ‘মাওলানা’ শব্দটি ব্যাবহার করে থাকি।


মাওলা শব্দের ভিন্ন ভিন্ন রূপ এবং প্রত্যয়যুক্ত শব্দ সচারচার পদবী ও সম্মান সূচক সম্বেধনের শব্দরূপে ব্যবহার মুসলিম জগতের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আছে। আর আলেমদেরকে যে “মাওলানা” বলা হয় তা নেতা,সাহয্যকারী বা অভিভাবক অর্থেই বলা হয়। কেননা উলামায়ে কিরামই আমাদের ধর্মীয় নেতা বা অভিভাবক এবং শরয়ী বিষয়ে অজ্ঞ মানুষদের জন্য সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে তারাই সাহায্যকারী।


আবার “অসাধারন গুণগরিমার স্বীকৃতি হিসাবেও এ শব্দটি ব্যবহার হয়। যেমন জালালুদ্দীন রুমীকে তার নানাবিধ অপূর্ব গুনের অধিকারী হওয়ার কারনে “মাওলানা” পদবীতে ভূষিত করা হয়। যেমনটি করেছেন তুর্কি লেখক সাদুদ্দিন”। (দেখুন সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ ২/১২৭।)


অতএব এ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেল যে, ‘মাওলানা উপাধি ব্যবহারে কোনরূপ শিরক, কুফুর বা গুনাহের আশংকা নেয়। কেননা মানুষ রব অর্থে মাওলানা শব্দ ব্যবহার করে না।


❏ মনিবকে মালিক তথা কর্তা অর্থে রব বলা এবং দাসকে সেবক অর্থে বান্দা বলা মূলত বৈধ হলেও এ বৈধতার সুযোগে যেন মানুষ শব্দগত ও অর্থগত কোন ভাবেই শিরকী বিশ্বাসের দিকে ধাবিত না হয় সে পথ রোধ কারার জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যেদী তথা আমার নেতা ‘মাওলায়া’ তথা আমার অভিভাবক ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন করতে শিক্ষা দিলেন আর এখন এ মাওলা শব্দ ব্যবহার করা হয়ে গেল শিরক!!


মোট কথা: উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথা দীবালোকের ন্যায় পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হল যে, আলেম উলামাদের “মাওলানা” বলা সম্পূর্ণ জায়েজ। এতে কোন সন্দেহ নেই। লা-মাযহাবীরা অহেতুক মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ প্রোপাগান্ডা করে যে, মাওলানা বলা জায়েজ নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের লা-মাযহাবীদের ধোঁকা প্রতারণা ও ওয়াসওয়াসা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।


❏ কোন সাহাবীর নামে ‘মাওলানা’ নাই কেন?


আমাদের শুভাকাঙ্খী ( = মাওলানা) সাহাবী (رضي الله عنه) এঁর নামের সাথে ‘মাওলানা’ তো আছেই। রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর সাথে থাকার প্রমাণ নিন।


এই যেঃ (আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা) সৈয়দুনা মাওলানা মুহাম্মাদ (صلى الله عليه و آله و سلم) পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে এ ধরাতে তাশরীফ আনেন,আবার এই পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসেই মুবারাক ওফাত শরীফ লাভ করেন।


[মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুজ দান করুন।আমিন]




Top