ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব 

প্রচণ্ড শীতের দিনে ফরজ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা


প্রশ্ন: প্রচণ্ড শীতের দিনে গোসল ফরজ হলে আমি কি তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারি? উল্লেখ্য, যে সরঞ্জামাদি থাকলে আমি অবিলম্বে পবিত্র হতে পারি সেগুলো আমার কাছে নেই। তাছাড়া আমি ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত; আমার পিঠ রোগগ্রস্ত, আমাকে সাংঘাতিক কষ্ট দিচ্ছে।


উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ।

(১) সম্ভব হলে পানি দ্বারা ফরজ গোসল সেরে নেয়াঃ


যে ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়েছে সে ব্যক্তি নামায পড়তে চাইলে তার উপর ফরয হচ্ছে–পানি দিয়ে গোসল করে নেয়া। দলিল হচ্ছেঃ আল্লাহ্‌র বানী: “আর তোমরা জুনুবী (অপবিত্র) হলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] 


(২) পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করবেঃ


পানি না থাকার কারণে কিংবা পানি থাকলেও এর ব্যবহারে রোগে ক্ষতি হতে পারে কিংবা তীব্র ঠাণ্ডার কারণে (তার কাছে পানি গরম করার মত কিছু নেই) এমতবস্থায়, সে ব্যক্তি পানি দিয়ে গোসল করার পরিবর্তে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে পারেন। এর দলিল হচ্ছেঃ 


আল্লাহ্‌র বাণী: “আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] 


এ আয়াতে দলিল রয়েছে যে, অসুস্থ ব্যক্তি পানি ব্যবহার করার ফলে যদি তার মৃত্যু হওয়ার কিংবা অসুস্থ বেড়ে যাওয়ার কিংবা আরোগ্য লাভে বিলম্ব হওয়ার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে তিনি তায়াম্মুম করবেন। 

আল্লাহ্‌ তাআলা তায়াম্মুমের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে।”

[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] 


আল্লাহ্‌ তাআলা এ বিধান প্রদান করার গূঢ় রহস্যও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: “আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর কোন কাঠিন্য রাখতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]


আমর বিন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘যাতুস সালাসিল’ এর অভিযানে এক ঠাণ্ডার রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়ে গেল। আমি আশংকা করলাম, আমি যদি গোসল করি তাহলে ধ্বংস হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করলাম। এরপর আমার সাথীদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলাম। আমার সাথীরা বিষয়টি নবী (ﷺ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন: হে আমর! তুমি কি জুনুবী (গোসল ফরজ হওয়া) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে নামায পড়েছ? তখন আমি তাঁকে জানালাম কি কারণে আমি গোসল করিনি এবং আমি আরও বললাম: আমি শুনেছি আল্লাহ্‌ বলেন: ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের প্রতি দয়ালু’ [সূরা নিসা, আয়াত: ২৯] তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে দিলেন, কোন কিছু বললেন না। [সুনানে আবু দাউদ (৩৩৪), হাদিসটি সহিহ]


হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন: এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, পানি ব্যবহার করলে যে ব্যক্তি মারা যাওয়ার আশংকা রয়েছে; সেটা ঠাণ্ডার কারণে হোক কিংবা অন্য কোন কারণে হোক– তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয। তায়াম্মুমকারীর জন্য ওজুকারীদের ইমাম হওয়াও জায়েয। [ফাতহুল বারী (১/৪৫৪)]

(অর্থাৎ, যিনি তায়াম্মুম করেছেন তিনি তাদের ইমাম হয়ে নামাজ পড়াতে পারবেন যারা ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করেছেন।)


জেনে রাখা ভাল যে, তায়াম্মুম শুধুমাত্র পানির অনুপস্থিতিতে করা যায়। যদি পানি দ্বারা ওযু করা সম্ভব থাকে তবে তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য হবে না। 


আব্দুল আযিয বিন বায বলেন:

যদি আপনার পক্ষে গরম পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় কিংবা আপনি গরম করতে পারেন কিংবা প্রতিবেশি বা অন্য কারো থেকে কিনে নিতে পারেন তাহলে সেটা করা আপনার উপর আবশ্যকীয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর।”[সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬] 

তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে পানি কেনা বা গরম করা কিংবা অন্য যেভাবে শরিয়তের বিধান মোতাবেক ওজু করা যায় সেটা করা। যদি আপনি অপারগ হন এবং ঠাণ্ডা অতি তীব্র হয়, পানি ব্যবহারে বিপদ ঘটার আশংকা থাকে, পানি গরম করা বা আশপাশে কারো থেকে গরম পানি কেনার কোন উপায় না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ওজর গ্রহণযোগ্য এবং তায়াম্মুম করাই আপনার জন্য যথেষ্ট। যেহেতু আল্লাহ্‌ বলেছেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর” এবং তিনি আরও বলেছেন: 

“পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে: তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]


যে ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অক্ষম সে ব্যক্তির হুকুম যে ব্যক্তি পানি পায়নি তার হুকুমের অনুরূপ।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১০/১৯৯-২০০)]


আপনি আপনার শরীরের যতটুকু ধৌত করতে পারেন ততটুকু ধৌত করা আপনার উপর আবশ্যকীয়। যেমন- হাতদ্বয়, পাদ্বয় ইত্যাদি ধৌত করা; যদি এতে আপনার কোন ক্ষতির আশংকা না থাকে। এরপর আপনি তায়াম্মুম করবেন। 


অর্থাৎ, 

গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি ঠান্ডা পানি দ্বারা গোসল করতে সমস্যা হলে গরম পানি দ্বারা গোসল করবে।

সেটা যদি সম্ভব না হয়, তবে পানি দ্বারা ওযু করবে, যদি সেটাও সম্ভব না হয় তবে যতটুকু সম্ভব হাত, পা ধৌত করে তায়াম্মুম করে নিবে অথবা পানি না থাকলে, সফরে থাকলে পানির পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। অতঃপর যখনই সুযোগ হবে দ্রুত গোসল করে পবিত্র হয়ে নিবে।


আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Top