মর্যাদা, শান শওকত, নীরবতা ও ব্যক্তিত্ব


وقار

'ওয়াকার' শব্দের আভিধানিক অর্থ ধীরতা। তবে এর ভাবার্থ হচ্ছে মর্যাদাসূচক ভয় ভীতি ও শান শওকত। صمت'সিমত' এর অর্থ নীরবতা। مروت 'মরুওয়াত’ এর অর্থ ব্যক্তিত্ব।


হুজুর পাক (ﷺ) এর ব্যক্তিসত্তায় حلم 'হেলেম'

(ধৈর্য) ও وقار 'ওয়াকার' (মর্যাদা) ছিলাে। তার চলা-ফিরা, উঠা-বসা ও স্থিরতায় ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, ধীরস্থিরতার মাত্রা এমন ছিলাে যা আর কারও মধ্যেই ছিলাে না। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, তিনি যখন কোনাে মজলিশে উপস্থিত থাকতেন, তখন তিনিই হতেন সেখানকার সর্বাধিক ধীর ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। সাধারণতঃ মানুষ চলাফেরা করার সময় যে রকম হাত পা নাড়া চাড়া করে হাঁটে, হুজুর (ﷺ) এর বেলায় কিন্তু এরকম ছিলাে না। চলাফেরা করার সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার শরীর মুবারকের বরাবর থাকতাে। শরীরের পরিসীমার বাইরে কখনও হাত বা পা বেরিয়ে যেতােনা। অধিকাংশ সময় হুজুর পাক (ﷺ) এহতেবা এর ভঙ্গিতে উপবেশন করতেন। এহতে বলা হয় দু'হাঁটু উঠিয়ে পায়ের গােড়ালীদ্বয় একত্রে মিলিয়ে নিতম্বের উপর বসাকে। হুজুর পাক (ﷺ) এভাবে বসতেন। কখনও চাদর বিছিয়ে আবার কখনও চাদর ছাড়াও এমনিভাবে উপবেশন করতেন। আবার কখনও مربع 'মোররবা' অর্থাৎ চার জানু হয়েও বসতেন। ফজরের নামাজের পর এভাবে বসে ওযীফা কালাম ইত্যাদি আদায় করতেন। আবার কখনও তিনি فرخصا 'ফরুকসা' এর ভঙ্গিতেও বসতেন। ফরুকসা এর ব্যাখ্যা এরকম করা হয়েছে যে, দু'জানু উচু করে তা পেটের সঙ্গে মিলিয়ে নিতম্বের উপর ভর করে বসা। 

হুজুর (ﷺ) যখন এভাবে উপবেশন করতেন, তখন দু'হাত মুবারক দিয়ে হাঁটু দ্বয়কে বেষ্টন করে নিতেন। আবার কেউ কেউ এরকমও বর্ণনা করেছেন যে, হুজুর (ﷺ) উপরােক্ত নিয়মে যখন উপবেশন করতেন তখন হস্তদ্বয়কে বগলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতেন।


হযরত কাইলা বিনতি মাখযামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি হুজুর (ﷺ) কে কুণ্ড খুযুর হালতে ফারুক এর ভঙ্গিতে বসা অবস্থায় দেখলাম। তাকে এমন অবস্থায় বসে থাকতে দেখে আমার মধ্যে কম্পন এসে গিয়েছিল। খুৎ এর অর্থ হচ্ছে বিনয়ের সাথে চোখ বুজে বসা। খুযুর অর্থও প্রায় কাছাকাছি। কেউ কেউ বলেন, খুৎ এর সম্পর্ক অঙ্গের সাথে আর খুযু এর সম্পর্ক আওয়ায ও চাহনির সাথে। কোন কোন হাদীসে আবার খুন বাতেনী বিনয় আর খুযুকে যাহেরী বিনয়ের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে।


হুজুর আকরম (ﷺ) খুব বেশী নীরবতাপ্রিয় ছিলেন। প্রয়ােজনের সময়ই কেবল বাক্যালাপ করতেন। তাঁর সামনে কেউ কখনও অসুন্দর কথাবার্তা বলতে থাকলে তিনি তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। তাঁর কথা সর্বদাই সিদ্ধান্তমূলক হতাে। ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে শব্দ খুব বেশী ব্যবহার করতেন না, আবার শব্দ এমন কমও হতাে না যাতে বােধগম্য না হয়।


হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, হুজুর আকরম (ﷺ) এমনভাবে কথা বলতেন যে, তাঁর পবিত্র মুখ থেকে নির্গত শব্দগুলিকে গণনা করা সম্ভব হতাে। হজরত জাবের (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) তরতীল ও তরসীল এর সাথে কালাম করতেন। 'সাররাহ' গ্রন্থে তরতীলের অর্থ করা হয়েছে, সহজসাধ্যভাবে ভারসাম্যময় স্বরে স্পষ্ট উচ্চারণে কোন কিছু পাঠ করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, কুরআন পাঠ করো সহজসাধ্য ভাবে, ভারসাম্য মন্ডিত স্বরে ও স্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে। তরল এর অর্থ প্রায় এর কাছাকাছি।


হযরত ইবনে আবী হালাহ (رضي الله عنه) এর হাদীসে উল্লেখ আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) নীরবতাকে পছন্দ করতেন চার কারণে। 

(১)হেলেম বা সহিষ্ণুতা, (২)হাযার বা আল্লাহর ভয়, (৩) তাকদীর ও (৪) তাফাকুর । 

হুজুর পাক (ﷺ) এর হাসি সীমা অতিক্রম করে না। তার উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরামের হাসিও তাঁর অনুকরণ অনুসরণ অনুযায়ী হতো। হুজুর আকরাম (ﷺ) এর মজলিস মুবারক ছিল হেলেম, হায়া, খায়ের ও আমানতের মজলিস, যে মজলিসে কখনো উচ্চ আওয়াজ ধ্বনিত হতো না। মন্দ কথা থেকে পরহেজ করা হতাে। হুজুর পাক (ﷺ) যখন কথা বলতেন, সাহাবীগণ কখন মস্তকসমূহ এমনভাবে অবনত করে রাখেন, যেনাে তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। মাথা একটু উঁচু করলেই যেনাে সে পাখি উড়ে চলে যাবে। আসিফা কিতাবের গ্রন্থ কার উল্লেখ করেছেন, সাহাবায়ে কিরামের উপরোক্ত অবস্থা হুজুর পাক (ﷺ) এর কথা বলার সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ছিলে। তবে অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত অবস্থা কেবল কথা বলার সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ছিলাে না। বরং হুজুর পাক (ﷺ) এর সামনে সাহাবীগণ উপস্থিত থাকলে এরকম অবস্থায় থাকতেন। চাই হুজুর (ﷺ) তখন কথা বলুন বা নাই বলুন।


এক হাদীসে বর্ণিত আছে, সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন হুজুর পাক (ﷺ) এর মজলিশে বসতেন, তখন মুখ চাপা দিয়ে বসে থাকতেন, যাতে নির্গত শ্বাস বাইরে না ছড়ায় এবং কোনাে কথা যাতে না বের হয়। তিনি জামালে মােহাম্মদী (ﷺ) এর প্রতি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন।


হুজুর পাক (ﷺ) এর চলার গতি কী রকম ছিলাে তার বর্ণনা হুলিয়া মুবারকের বর্ণনায় উপস্থাপন করা হয়েছে। হুজুর পাক (ﷺ) এর ব্যক্তিত্ব বা সংযত আচরণের মধ্যে এটাও অন্যতম যে, তিনি খাদ্য বা পানীয় বস্তুতে ফু দিতে নিষেধ করতেন। সামনে যে খাবার রাখা হয়, তাই খাওয়ার জন্য হুকুম করতেন। মেসওয়াক করা, মুখ ও আঙ্গুলের ফাক ও জোড়াসমূহ ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য হুকুম করতেন।


হুজুর আকরাম (ﷺ) এর সীরাত মুবারক সর্বোত্তম সীরাত বা জীবনাদর্শ। হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর হাদীসে এরকম বর্ণনা এসেছে, সর্বোত্তম কালাম আল্লাহ পাকের কালাম আর সর্বোত্তম জীবনাদর্শ মােহাম্মদ (ﷺ) এর জীবনাদর্শ।


নবী করীম (ﷺ) সুগন্ধিময় পরিবেশ খুব ভালোবাসতেন। নিজে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং অপরকেও ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি এ মর্মে এরশাদ করেছেন, তােমাদের দুনিয়ার দুটি জিনিস আমার কাছে খুবই প্রিয়, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে নারী আর অপরটি হচ্ছে খুশবু। আর নামাজের মধ্যে রয়েছে আমার চোখের শীতলতা। (অর্থাৎ নামাজের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে আমার চোখ জুড়ায়)। নবী করীম (ﷺ) এর উক্ত হাদীছের তাৎপর্য এই যে, আল্লাহতায়ালা উক্ত তিনটি বস্তুকে আমার নিকট পছন্দনীয় করে দিয়েছেন। এমন নয় যে, আমি নিজের অভ্যাস এবং ইচ্ছায় ও দুটি বস্তুকে পছন্দ করেছি। নামাজকে আমার চোখের জন্য শীতলতা সাব্যস্ত করা হয়েছে। বর্ণিত আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) নামাজে আনন্দ, নুর, আন্তরিক সান্ত্বনা, স্বাদ ও আত্মিক দর্শন লাভ করতেন। যা অন্য কোনাে সময় অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে লাভ হতাে না قرةالعين  'কুররাতুল আইন' কথা দ্বারা আত্মিক উৎফুল্লতা, কাম্য বিষয়ের অবহিতি এবং অদৃশ্যের ভেদ উন্মােচিত হওয়া ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। قرة 'কুররাহ' শব্দটির উৎপত্তি قر 'কাররুন' থেকে। যার অর্থ প্রতিষ্ঠিত হওয়া, সাব্যস্ত হওয়া। যেহেতু নামাজের মাধ্যমে মাহবুবের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলীর আত্মিক দর্শন হয় এবং হৃদয়ে প্রশান্তির অনাবিল ধারা জারী হয়, তাই তাকে কুররাতুল আইন বলা হয়েছে। হুজুর পাক (ﷺ) আনন্দের সময় ডানে বামে নযর ফিরাতেন। আত্মার আনন্দিত অবস্থায় স্বস্থানে স্থির হয়ে যেতেন। স্বীয় মাহবুব ছাড়া অন্য কোনােকিছুর প্রতি দৃষ্টি ফেরাতে চাইতেন না। পেরেশান হয়ে যেতেন। এমনিভাবে যখন চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়তেন তখনও এদিক সেদিক তাকাতেন এবং তার মধ্যে মৃদু অস্থিরতা প্রকাশ পেতাে। এছাড়া কুররাতুন শব্দটি কুররুন থেকে উদ্ভূত হতে পারে। তখন তার অর্থ হবে শীতলতা। মাহবুবের দর্শনের মাধ্যমে চোখ শীতল হয় এবং আম্বাদ লাভ হয়। আর এ অর্থেই সন্তানকে قرةالعين 'কুররাতুল আইন' বলা হয়ে থাকে। হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে في الصلاة 'ফিসসালাতে' নামাজের মধ্যে চোখের শীতলতা। الصلاة  'আসসালাত' অর্থাৎ নামাজই চোখের শীতলতা, এমন বলা হয়নি। এছাড়া একটি সূক্ষ্ম বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নামাজের মধ্যে চোখের শীতলতা ও শান্তি হচ্ছে মুশাহাদায়ে হক (আল্লাহ তায়ালার আত্মিক দর্শন)। যেমন হাদীস শরীফে বলা হয়েছে كانك تراه 'কা আন্নাকা তারাহু' (যেনাে তুমি আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছো।)


মুশাহাদায়ে হক নামাজের অবস্থায় হাসিল হয়। স্বয়ং নামাজ বা তার ছওয়াব ও পুরস্কারের মধ্যে এটা নিহিত নয়। নামাজ অবস্থায় যে মুশাহাদা হয়ে থাকে এবং তা থেকে যে আত্মিক প্রশান্তির সৃষ্টি হয় তা কিন্তু অন্যকিছুর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে রহিত হয়ে যায়। নামাজ কিন্তু আল্লাহ্ নয়। যদিও তা আল্লাহ তায়ালার দান এবং অনুগ্রহ। আর আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও ফযল প্রাপ্তিতে খুশী হওয়ার এটাই সুন্নত মাধ্যম বটে। যেমন আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন রাসূল (ﷺ) আপনি বলে দিন তারা যেনাে আল্লাহ তায়ালার ফযল ও রহমতের মাধ্যমে খুশী হয়। ফযল এবং রহমতের মাকাম যাতে বারি তায়ালার মুশাহাদার মাকাম চেয়ে নিম্নে। রহমত ও ফযলের সঙ্গে খুশী ও আনন্দ জড়িত থাকে। হুজুর আকরম (ﷺ) এর মাকাম তার চেয়ে আরও অধিকতর উর্ধে অবস্থিত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, তারা যেনাে খুশী হয়। আপনি খুশী হন এরূপ বলা হয়নি। আপনি খুশী হন বললে হুজুর (ﷺ) কে সম্বােধন করা হয়। অথচ হুজুর (ﷺ) কে লক্ষ্য করে একাজটি করার জন্য বলা হয়নি। কারণ উম্মতের মাকাম বা মর্যাদা নবী (ﷺ) এর মাকামের নিয়ে। কাজেই তাদের জন্য উপযোগী যে, তারা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও ফল পেয়ে আনন্দিত থাকবে। নবীগণের মর্যাদা বা মাকাম তদপেক্ষা উর্ধে, বিশেষ করে সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর মাকাম তত সর্বাধিক উন্নত। কাজেই তার খুশী ও আনন্দ তাে নিহিত রয়েছে যাতে বারীতায়ালার মুশাহাদার মধ্যে। প্রকাশ থাকে যে উপরোক্ত বাক্য,

حبب الى الطيب والنساء

وجعلت قرة عيني في الصلاة


এই হাদিসের অংশ বিশেষ। মিশকাত শরীফের গ্রন্থকার বলেন এ হাদীস খানা ইমাম আহমদ ও নাসায়ী হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। সাহাবী (رضي الله عنه) مقاصد الحسناة ‘মাকাসেদে হাসানা' নামক কিতাবে উল্লেখ করবেন, তাবারানী এই হাদীস اوصات ‘আওসাত’ ও الصغير‘অস্সগীর কিতাব দ্বয়ে মরফু হিসাবে বিবৃত করেছেন। এই হাদীস খতিব (رحمة الله) এর কিতাব تاريخ بغداد ‘তারীখে বাগদাদ' ও ابن عدير القامل 'ইবনে আদীর আল কামেল' কিতাবে উল্লেখ করেছেন। মুস্তাদরাক কিতাবের এক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তবে সেখানে جعلت 'জুয়িলাত' শব্দটির উল্লেখ নেই। মুস্তাদরেক কিতাবে বলা হয়েছে যে, এ  হাদীছ ইমাম মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ। নাসায়ী শরীফে অন্য এক সনদের সূত্রে হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর মাধ্যমে এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে সেখানে من الدنيا 'মিনাদ্দুনিয়া' কথাটি অতিরিক্ত আছে। অনেক মুহাদ্দেছীনে কেরামই উপরােক্ত তরীকায় এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবন কাইয়ুম বলেন, 'ইমাম আহমদ যুহদ' নামক কিতাবে এই হাদীছ একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। বাড়ানাে অংশটুকু হচ্ছে -


اصبر عن الطعام والشراب ولا اصبر عنهن


অর্থাৎ আমি খানা পিনা বাদ দিয়েও থাকতে পারি, কিন্তু স্ত্রীগণকে বাদ দিয়ে থাকতে পারি না। 

(তার কারণ এই যে খানা পিনা হচ্ছে সত্তাগত হক। আর স্ত্রীগণের হক তাে অন্যের হক (অর্থাৎ স্ত্রীগণেরই হক)। নিজের অধিকার তাে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাদ দেয়া যায়। কিন্তু অন্যের অধিকারের বেলায় নিজের ইচ্ছা খাটেনা। অন্যের হক আদায় করতেই হয়।-অনুবাদক।


সাহাবী (رحمة الله) বলেন, উপরােক্ত হাদীসে ثلاث 'ছালাত' ‘তিন' শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ শব্দটির ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে দুস্থানে তা পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হলাে, এহইয়া কিতাব আর অপরটি তাফসীরে কাশশাফ এর সূরা আল এমরানে। তবে এ শব্দটির অতিরিক্ততার ব্যাপার নিয়ে আমি খুব ভালােভাবে অন্বেষণ করেও দেখিনি। যারকাশী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় বলেন, হাদীছ শরীফে الصلاة 'সালাত' শব্দটি উল্লেখিত হয়নি। হাদীছের অতিরিক্ত এ শব্দটি ধরলে অর্থের মধ্যে ক্রুটি সৃষ্টি হয়। কেননা নামাজ কাজটি দুনিয়াবী কাজের অন্তর্ভূত নয়। যদিও এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। 

শায়খ ইবন হাজার আসকালানী (رحمة الله), রাফেয়ী (رحمة الله) এর বর্ণনার ভিত্তিতে বলেন যে, الصلاة 'সালাত' শব্দটি মানুষের মুখে মুখে বহুল প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আমি এ শব্দটি কোনাে ছনদে পাই নি। ওলীউদ্দীন ইরাকী (رحمة الله) স্বীয় কিতাব 'আমালে উল্লেখ করেছেন এই শব্দ কোনাে হাদীসের কিতাবে নেই। আর নামাজ কাজটি কোনাে দুনিয়াবী কাজ নয়। (উপরােক্ত হাদীস সম্পর্কে সাখাবী (رحمة الله)এর বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত)। কাজেই জানা গেলো যে, হাদীছের মতনে (ভাষ্য) হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণের ঐকমত্য এই যে, হাদীছ খানা হবে এরকম -


حبب إلى الطيب والنساء وجعلت قرة عيني في الصلاة


এ মনের মাঝে কোনাে সমস্যা নেই।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী] 


© | সেনানী এপ্স |

Top