কে সে সৌভাগ্যবান কবি !
যার জন্য মসজিদে মিম্বার নির্মিত হয়েছিল।
▪▪▪▪✍ ইমরান বিন বদরী।

নাহমাদুহু  ওয়ানূসাল্লি  আলা  রাসুলীহিল  কারীম  আম্মা  বা'দ। কে  সে  সৌভাগ্যবান  ব্যক্তি  যার  কবিতা শুনার  জন্য  মসজিদেই  আলাদা  একটি  মিম্বার  তৈরী করা  হয়েছিল।

আসুন  شاعر النبي  অর্থাৎ  রাসুলুল্লাহ  ﷺ  এর  কবিখ্যাত  সেই  মহাকবি  সম্পর্কে  কিছুটা  অবগত  হই। তিনি  আর  কেউ  নন; তিনি  ছিলেন  হজরত  হাসসান  ইবনে  সাবিত  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু (حسان بن ثابت) ।  সত্যিই  তিনি  সৌভাগ্যবান,  কারণ  তিনি    ছিলেন  মহাবিশ্বের  সর্বাধিক  সম্মানিত  ব্যক্তিটির একজন  সভাকবি।

ইয়াসরিবে  তথা  বর্তমান  মদিনার  খাজরাজ  গোত্রের বনু নাজ্জারে  জন্মনেয়া  এই  হাসসান  ইবনে  সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  যে  সময়  রাসুলুল্লাহ  ﷺ  মক্কা  থেকে  সাহাবী  এ  রাসুল  ﷺ  হজরত  আবুবকর  সিদ্দিক  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে  নিয়ে  মদিনায়  হিজরত  করেন  তখন  উনার  বয়স  ছিলো  প্রায় ৬০ এর  কাছাকাছি। মদিনায়  ইসলাম  প্রচারের  সূচনালগ্নে  সেখানে  যেসমস্ত  আনসারী  সাহাবী  বার্ধক্যে  ইসলামের  ছায়াতলে  আশ্রয়  নিয়েছিলেন  তিনি তাঁদের  অন্যতম।

ইসলামের  ইতিহাসে  তাঁর  রচিত  কাব্যিকতা  সাহিত্যে  জগতে  অনন্যস্থান  দখল  করে  নিয়েছে।  তিনি ছিলেন  একাধারে  কথাসাহিত্যিক এবং স্বরচিত কবিতার  ফুলঝুরি  ছড়ানো  কবি।  মানুষের  মনের খোরাক  জোগাতে  সুন্দর  ও  সত্য  উপস্থাপনে  সাহিত্য  সংস্কৃতিতে  তিনি  ছিলেন  অদ্বিতীয়।  তৎকালীন  আমলে  কবিদের  শ্রেষ্ঠত্ব  ছিলো  স্বরণে রাখার  মত । এখানে  একটি  কথা  বলতে  হয়  যে- হজরত  হাসসান  বিন  সাবিত  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু  সেই  সময়ে  কাফিরেরা  মহানবী  ﷺ  কে  নিয়ে  ব্যঙ্গকরে  কোন  কবিতা  লিখলে  তার  উত্তরে  তাঁরই  কবিতা  ছিলো  অপ্রতিরোধ্য।

শুধু  কি  তাই!  রাসুল  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামও  তাঁর  কবিতা  শুনতে  অত্যন্ত  ভালোবাসতেন ।  তবে  সেই  কবিতার  অর্থ  সমার্থ আর  ভাবধারা  আমাদের  দেশের  কিছু  কিছু  কবিদের  কাব্যের  নামে  নষ্টামি  মেশানো  কোন কবিতা  নয় । ইসলামিক  ভাবধারায়  সেসব  কবিতা রচিত হতো।

▪ সর্বাধিক  হাদিস  বর্ণনাকারী  হজরত  আবু  হুরাইরা  রাদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা  আনহু  রাসুলে  পাক  ﷺ  হতে  বর্ণনা  করেন ।  তিনি বলেছেন,  আরব্য  কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বাণী হচ্ছে লাবীদের এই চরণঃ

أَلا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلا اللَّهَ بَاطِلٌ

অর্থাৎ; সাবধান  আল্লাহ  ছাড়া  সব  কিছুই ধ্বংসশীল। (মুসলিম ৬০২৫/ইবনে হিব্বান ৫৭৮৩)

এতেই স্পষ্ট  যে ইসলামিক ভাবধারার  কবিতা রচনায় সাধারণ  মুসলমানরা  বরং  সুপথগামীই হয়।

হজরত  হাসসান  বিন সাবিত  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম  গ্রহণের পূর্বেও  ততকালীন  সময়ের বিবেচনায়  ছিলেন  আরবের শ্রেষ্টতম কবি । তাঁর খ্যাতি  ছিলো  গোটা  আরব জুড়ে । সেসময়  আরবের  কবিতা  প্রেমিকদের  মুখে  মুখে  উচ্চারিত  হতো  তাঁর কবিতার পংক্তি। তিনি  রাহমাতুল্লীল  আলামীন নবী  ﷺ  কে পেয়েছেন, দেখেছেন  আর মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছেন  খুব কাছ  থেকেই । সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ  ঘটেছে তাঁর  রচিত কবিতা  সমুহে । রাসুল ﷺ কে  ভালোবেসে  তিনি  লিখেছিলেন;

وأحسن منك لم ترقط عيني،
وأجمل منك لم تلد النساء،
خلقت مبرأ من كل عيب،
كأنك قد خلقت لما تشاء.
وضم الإله اسمه إلى اسمه،
إذا قال في الخمس المؤذن أشهد،
وشق له من اسمه ليجله،
فذو العرش محمود وهذا محمد.

এছাড়াও  বহুল  প্রচারিত নাতে  রাসুল  ﷺ

🖌আসসুবহু বাদা মিন তা'য়াল আতিহী,
ওয়াল্লাইলু দাজা মিও্যয়াফরাতিহী।

🖌কানজুল কারামি মাওলান নিয়ামী,
হাদি'ল উমামী লে শারিয়াতিহী।

এর মূল রচয়িতাও নাকি হজরত হাসসান ইবনে সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

হজরত  হাসসান  ইবনে  সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কবিতা  রচনা  করে  বুঝিয়ে দিয়েছেন, বস্তুত কবিতার মূল উদ্দেশ্য  হচ্ছে  সত্যে  প্রচারে  সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মানে কার্যকরী  ভূমিকা  রাখা । অন্যায় ও অসত্যের প্রতিবাদে, সত্য ও  ন্যায়কে  বিজয়ী করার মানসেই কবিতা রচিত  হওয়া  উচিৎ বলে মনেকরি । তিনি হজরত  মুয়াবিয়া  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুর খেলাফত এর সময় শতাধিক  বয়সে  ইন্তেকাল করেন।

তিনি এমন এক  অদ্বিতীয় কবি  ছিলেন যাঁর কেবল কবিতা পাঠের জন্য  মসজিদের মাঝে  একটি মিম্বার স্থাপন  করেছিলেন।  আসুন সেটি  উম্মুল মু'মিনীন হজরত  আয়িশা সিদ্দিকা  রাদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহার জবানে শুনি।

: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ لِحَسَّانَ بْنِ ثَابِتٍ مِنْبَرًا فِي الْمَسْجِدِ يَقُومُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ قَالَ : يُنَافِحُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَقُولُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ اللَّهَ يُؤَيِّدُ حَسَّانَ بِرُوحِ الْقُدُسِ , مَا يُنَافِحُ أَوْ يُفَاخِرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " .

তিনি  বলেন, রাসূলুল্লাহ  ﷺ  হাসসান ইবেন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর  জন্য মসজিদে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন যেন  তিনি রাসূলুল্লাহ  ﷺ  এর প্রশংসার কবিতা  পাঠ করেন অথবা  তিনি বলেছেন, যেন  তিনি  রাসূলুল্লাহ  ﷺ  এর পক্ষ হতে কাফিরদের নিন্দাবাদের উত্তর দেন।  রাসূলুল্লাহ  ﷺ  বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ!  রূহুল কুদস ( হজরত জিবরীল আলাইহিসসালাম )  দ্বারা  হাসসানকে সাহায্য করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে রাসূলুল্লাহ  ﷺ  এর প্রশংসা করবে কিংবা কাফিরদের  নিন্দার  উত্তর দেবে।
(আবু দাউদ ৫০১৭ / মুস্তাদারাকে হাকেম ৬০৫৮)

আমার রাসুল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য  করে  তিনি  বলেছিলেন ;

👉 তোমার চোখের মত ভালো চোখ পৃথিবীতে নেই,
এবং কোনোও মাতা এমন সুন্দর পুত্র আর
প্রসব করেনি জানি বিশ্বে কোথাও।

👉 তোমার সৃজন সে তো একেবারে দোষমুক্ত করে
এবং তুমিও তাই চেয়েছিলে আপন ইচ্ছায়;
তোমার তারিফ এই পৃথিবীতে বেড়েই চলেছে
যেমন কস্তুরী ঘ্রাণ বাতাসে কেবলি ছুটে চলে।

সুবহানাল্লাহ!
কতইনা প্রেমময় কবিতা তিনি লিখেছিলেন সরদারে কায়েনাতের উদ্দেশ্যে । সত্যিই তিনি ছিলেন ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক বাহক একজন সাহাবী এ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । আজ এ পর্যন্ত। আল্লাহ হাফিজ।
......
Top