আউলিয়া কেরামকে সৃষ্টি করা হয়েছে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে
[Bengali translation of www.aqdas.co.uk’s online article “The friends of Allah are created to remove our difficulties”;  Translator: Kazi Saifuddin Hossain]
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা

❏ হাদিস ১ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) উদ্ধৃত করেন রাসূলুল্লাহ   (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান:

إِنَّ اللَّهَ لَيَدْفَعُ بِالْمُسْلِمِ الصَّالِحِ عَنْ مِائَةِ أَهْلِ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِهِ الْبَلَاءَ.

নিশ্চয় আল্লাহতা’লা কোনো প্রতিবেশী পুণ্যবান মুসলমানের জন্যে ১০০ জন প্রতিবেশীর দুঃখকষ্ট দূর করেন।  [১]
[১] তবরানী :  আল মু‘জামুল আওসাত, ৪:২৩৯ হাদীস নং ৪০৮০।

❏ হাদিস ২ :
  
হুযূর পূর নূর (ﷺ) এরশাদ করেন,

لَوْلَا عَبَّادٌ لِلَّهِ رُكَّعٌ، وَصِبْيَةٌ رُضَّعٌ، وَبَهَائِمُ رُتَّعٌ لَصُبَّ عَلَيْكُمُ الْعَذَابُ صَبًّا، ثُمَّ رُضَّ رَضًّا.

সালাত (নামায) আদায়কারী আল্লাহর বান্দাগণ, দুধ পানকারী শিশুরা এবং তৃণভোজী চারপায়া জন্তুরা না হলে আল্লাহ পাক অবশ্যই তোমাদের শাস্তি দিতেন এবং এই শাস্তি খুবই কঠোর হতো। [২]
[২] (ক) তবরানী : আল মু‘জামুল কবীর, ২২:৩০৯।
(খ) তবরানী : আল মু‘জামুল আওসাত, ৬:৩২৭ হাদীস নং ৬৫৩৯।

❏ হাদিস ৩ :

হযরত সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি ফরমান:

هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلَّا بِضُعَفَائِكُمْ.

তোমাদের মধ্যে দুর্বল বা গুরুজনের কারণেই তোমরা সাহায্য ও রিযিক পেয়ে থাকো? [৩]
[৩] বুখারী : আস সহীহ, ৪:৩৭, হাদীস নং ২৮৯৭।

❏ হাদিস ৪ :

হযরত উবায়দা (رضي الله عنه) উদ্ধৃত করেন নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী:

لَا يَزَالُ فِي أُمَّتِي ثَلَاثُونَ بِهِمْ تَقُومُ الْأَرْضُ، وَبِهِمْ تُمْطَرُونَ، وَبِهِمْ تُنْصُرُونَ.

আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন ‘আবদাল’ রয়েছেন। তাঁদের অসিলাতেই পৃথিবী বহাল আছে। একমাত্র তাঁদের কারণেই তোমাদের জন্যে বৃষ্টিপাত হয় এবং তোমরা সাহায্য পেয়ে থাকো। [৪]
[৪] আল হায়সামী : আল মাজমাউস যাওয়ায়েদ, ১০:৬৩ হাদীস নং ১৬৬৭৩।

❏ হাদিস ৫ :

হযরত আলী (رضي الله عنه) রওয়ায়াত করেন সাইয়্যেদুল মোরসালীন (ﷺ)-এর কথা, যিনি বলেন:

الأَبْدَالُ يَكُونُونَ بِالشَّامِ ، وَهُمْ أَرْبَعُونَ رَجُلاً ، كُلَّمَا مَاتَ رَجُلٌ أَبْدَلَ اللَّهُ مَكَانَهُ رَجُلاً ، يُسْقَى بِهِمُ الْغَيْثُ ، وَيُنْتَصَرُ بِهِمْ عَلَى الأَعْدَاءِ ، وَيُصْرَفُ عَنْ أَهْلِ الشَّامِ بِهِمِ الْعَذَابُ.

শাম (সিরিয়া) দেশে ৪০ জন ‘আবদাল’ আছেন। তাঁদের কেউ একজন বেসালপ্রাপ্ত হলে আল্লাহতা’লা অন্যজনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন। একমাত্র তাঁদের কারণেই বৃষ্টিপাত হয় এবং শত্রুপক্ষ পরাভূত হয়। সিরিয়াবাসীর শাস্তিও মওকুফ হয় কেবল তাঁদেরই অসিলায়। [৫]
[৫] আহমদ : মুসনাদু আলী ইবনে আবী তালিব, ১:১১২ হাদীস নং ৮৯৬।

❏ হাদিস ৬ :

হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

فِيهِمُ الْأَبْدَالُ، وَبِهِمْ تُنْصَرُونَ، وَبِهِمْ تُرْزَقُونَ.

আবদালবৃন্দ সিরিয়ায় আছেন। তাঁদের বরকতে মানুষেরা (খোদায়ী) সাহায্য পায় এবং একমাত্র তাঁদের কারণেই রিযক মঞ্জুর হয়। [৬]
[৬] তাবারানী : আল মু‘জামুল আল কবীর, ১৮:৬৫।

❏ হাদিস ৭ :

হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) উদ্ধৃত করেন হুযূর পাক (ﷺ)-এর বাণী:

لَنْ تَخْلُوَ الْأَرْضُ مِنْ أَرْبَعِينَ رَجُلًا مِثْلَ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ الرَّحْمَنِ، فَبِهِمْ يُسْقَوْنَ وَبِهِمْ يُنْصَرُونَ.

হযরত ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ (عليه السلام)-এর মতো (আধ্যাত্মিক ক্ষমতাধর) ৪০ জন আউলিয়া কেরাম পৃথিবীতে সবসময় থাকবেন। তাঁদের কারণেই কেবল তোমরা বৃষ্টি এবং খোদায়ী মদদ পাবে। [৭]
[৭] তবরানী : আল মু‘জামুল আওসাত, ৪:২৪৭ হাদীস নং ৪১০১ ।

❏ হাদিস ৮ :

হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) রওয়ায়াত করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি বলেন:

لَنْ تَخْلُوَ الْأَرْضُ مِنْ ثَلاَثَيْنَ مِثْلَ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ الرَّحْمَنِ بِهِمْ تُغَاثُوْنَ، وَبِهِمْ تُرْزَقُوْنَ، وَبِهِمْ تُمْطَرُوْنَ.

ত্রিশজন (আউলিয়া) হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর মতো (আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবান) হবেন এবং সবসময় পৃথিবীতে থাকবেন। একমাত্র তাঁদের ব-দৌলতেই তোমাদের আরযি কবুল হবে এবং তাঁদের বরকতেই বারিপাত  হবে।[৮]
[৮] ইবনে হিব্বান : আত তারিখ।

❏ হাদিস ৯ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) উদ্ধৃত করেন রাসূলে খোদা (ﷺ)-কে, যিনি বলেন:

لَا يَزَالُ أَرْبَعُونَ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ إِبْرَاهِيمَ، يَدْفَعُ اللهُ بِهِمْ عَنْ أَهْلِ الْأَرْضِ، يُقَالُ لَهُمُ الْأَبْدَالُ.

আমার উম্মতের মধ্যে সব সময়ই ৪০ জন বিরাজ করবেন, যাঁদের অন্তর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর মতো। তাঁদের বরকতে মানুষের দুঃখকষ্ট আল্লাহতা’লা দূর করবেন। তাঁদের খেতাব হবে ‘আবদাল’। [৯]
[ ৯] (ক) তবরানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১০:১৮১ হাদীস নং ১০৩৯০।
(খ) আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলিয়াতুল আউলিয়া ।

❏ হাদিস ১০ :

হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর হাদীস:

আল্লাহ যখন তাঁর কোনো বান্দার ভালাই চান, তখন তিনি তাঁর মাধ্যমে মানুষের দুঃখকষ্ট দূর করেন। [১০]
[১০] বায়হাকী : শুয়াব আল-ঈমান।

❏ হাদিস ১১ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) উদ্ধৃত করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান:

আল্লাহ পাক তাঁর এমন কিছু বান্দাকে বেছে নিয়েছেন যাঁদের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁদের শরণাপন্ন হবে। এই সকল বান্দা আল্লাহর শাস্তি থেকে সুরক্ষিত। [১১]
[১১] তবরানী কৃত ‘আল-কবীর’।

❏ হাদিস ১২ :

হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা হুযূর পাক (ﷺ)-এর কথা, যিনি বলেন:

আল্লাহ যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল চান, তখন সকল মানুষকে তাঁর কাছে প্রয়োজন পূরণের জন্যে প্রেরণ করেন। [১২]
[১২] মুসনদ আল-ফেরদৌস।

❏ হাদিস ১৩ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (ﷺ) উদ্ধৃত করেন মহানবী (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান:

إِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْخَلْقِ ثَلَاثَمِائَةٍ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَلِلَّهِ تَعَالَى فِي الْخَلْقِ أَرْبَعُونَ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَلِلَّهِ تَعَالَى فِي الْخَلْقِ سَبْعَةٌ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَلِلَّهِ تَعَالَى فِي الْخَلْقِ خَمْسَةٌ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَلِلَّهِ تَعَالَى فِي الْخَلْقِ ثَلَاثَةٌ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ مِيكَائِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَلِلَّهِ تَعَالَى فِي الْخَلْقِ وَاحِدٌ قَلْبُهُ عَلَى قَلْبِ إِسْرَافِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , فَإِذَا مَاتَ الْوَاحِدُ أَبْدَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مَكَانَهُ مِنَ الثَّلَاثَةِ , وَإِذَا مَاتَ مِنَ الثَّلَاثَةِ أَبْدَلَ اللهُ تَعَالَى مَكَانَهُ مِنَ الْخَمْسَةِ , وَإِذَا مَاتَ مِنَ الْخَمْسَةِ أَبْدَلَ اللهُ تَعَالَى مَكَانَهُ مِنَ السَّبْعَةِ , وَإِذَا مَاتَ مِنَ السَّبْعَةِ أَبْدَلَ اللهُ تَعَالَى مَكَانَهُ مِنَ الْأَرْبَعِينَ , وَإِذَا مَاتَ مِنَ الْأَرْبَعِينَ أَبْدَلَ اللهُ تَعَالَى مَكَانَهُ مِنَ الثَّلَاثِمِائَةِ , وَإِذَا مَاتَ مِنَ الثَّلَاثِمِائَةِ أَبْدَلَ اللهُ تَعَالَى مَكَانَهُ مِنَ الْعَامَّةِ. فَبِهِمْ يُحْيِي وَيُمِيتُ , وَيُمْطِرُ وَيُنْبِتُ , وَيَدْفَعُ الْبَلَاءَ .

সৃষ্টিকুলে আল্লাহর ৩০০ জন আউলিয়া কেরাম আছেন, যাঁদের অন্তর হযরত আদম (عليه السلام)-এর মতো। চল্লিশজন আছেন যাঁদের অন্তর হযরত মূসা (عليه السلام)-এর মতো। সাতজন আছেন যাঁদের অন্তর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর মতো। পাঁচজন আছেন যাঁদের অন্তর হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام)-এর মতো। তিনজন আছেন যাঁদের অন্তর হযরত মিকাঈল ফেরেশতার মতো; আর একজন আছেন যাঁর অন্তর হযরত ইসরাফিল ফেরেশতার মতো। যখন ওই একজন (ইসরাফিলের অন্তরের মতো অন্তরবিশিষ্ট জন) বেসালপ্রাপ্ত হন, তখন মিকাইলের মতো অন্তরবিশিষ্ট তিনজনের মধ্য থেকে একজন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আর জিবরাইল আমীনের মতো অন্তরবিশিষ্ট পাঁচজনের মধ্য থেকে একজন (পদোন্নতি লাভ করে) ওই তিনজনের স্তরে উন্নীত হন। একইভাবে সাতজনের স্তর থেকে পাঁচজনের স্তরে পদোন্নতি হয়, এবং চল্লিশজনের মধ্য থেকে কেউ একজন সাতজনের স্তরে উন্নীত হন; আর তিন’শ জনের থেকে কেউ একজন ৪০জনের স্তরে উন্নীত হন। অতঃপর সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে কাউকে ৩০০জনের স্তরে উন্নীত করা হয়। এই ৩৫৬ জন আউলিয়ার জন্যেই সৃষ্টিকুলের হায়াত-মওত নির্ধারিত হয়, ধরণীতে বৃষ্টিপাত হয়, জমিতে ফসল জন্মায় এবং দুঃখকষ্ট দূর হয়। [১৩]
[১৩] আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলিয়াতুল আউলিয়া, যায়েদ ইবন ওয়াহাব, ২/১৭২।


                                         সমাপ্ত     

Top