বিষয়ঃ ইলমে দ্বীন অর্জনের ফজিলত

🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


🕋 বিষয়ভিত্তিক আয়াতঃ ইলমে দ্বীনের ফজিলত


❏ আয়াত ১ :


আল্লাহ সুবহানু তা'য়ালা বলেন,

وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ.

‘সুতরাং এমন কেন হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বের হবে, যাতে তারা দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়।’ (সূরা তওবা ৯/১২২)


❏ আয়াত ২ :


আল্লাহ সুবহানু তা'য়ালা বলেন,

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)। 


❏ আয়াত ৩ :




إِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ إِقْرَأْ وَ رَبُّكَ الْأَكْرَامُ الّذِيْ عَلَّمَ بَالْقَلَمِ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ


‘পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন,সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে,পাঠ কর,আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত,যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’● সূরা আলাক : ১-৫


❏ আয়াত ৪ :


আল্লাহ সুবহানু তা'য়ালা বলেন,

يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

‘তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।’ (সূরা বাকারাহ ২/২৬৯)


❏ আয়াত ৫ :


ইবরাহিম (আ:) প্রার্থনা করে বলেন,

رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ

‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর।’(শু‘আরা ২৬/৮৩) 


❏ আয়াত ৬ :


অনুরূপ মুসা (আ:) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي- وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي- وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي- يَفْقَهُوا قَوْلِي

‘হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজকে সহজ করে দাও এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (ত্বহা ২০/২৫-২৮) 


❏ আয়াত ৭ :


...قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ إنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُوا الْأَلْبَابِ

...‘(হে নবী!) বলুন, যারা মূর্খ ও যারা বিদ্বান তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ ● সূরা যুমার : ৯



🕋 বিষয়ভিত্তিক হাদিসঃ ইলমে দ্বীনের ফজিলত



হাদিস ১:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ قَال أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ{رواه الترمذي

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। 

(তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইখনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৮, সনদ সহিহ, বাইহাকি, শুআবুল ঈমান : ৫৩৬৭)।


হাদিস ২ :


আবু উমামা আল-বাহিলি (رضي الله عنه) বলেন,

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِى جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হলো। যাদের একজন আলিম অপরজন আবিদ। তখন তিনি বলেন, আলিমের মর্যাদা আবিদের ওপর। যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের ওপর। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই তার প্রতি আল্লাহ রহমত করেন এবং তার ফেরেশতামন্ডলী, আসমান-জমিনের অধিবাসী, পিপীলিকা তার গর্তে থেকে এবং এমনকি মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দোয়া করেন। (তিরমিজি হা/২৬৮৫; মিশকাত হা/২১৩, সনদ হাসান।)


হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِى الأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِى جَوْفِ الْمَاءِ .

‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাকে জান্নাতের কোন একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকরীর ওপর খুশি হয়ে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। এ ছাড়া আলেমদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল অধিবাসী আল্লাহর নিকট দোয়া ও প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছও (তাদের জন্য দোয়া করে)। 

(আবুদাউদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ, কানযুল উম্মাল : ২৮৭৩৭)।


হাদিস ৩:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ। (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ হাসান।)


হাদিস ৪:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّين مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ

আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’। (ইবনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ)


হাদিস ৫:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.

‘আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল। (সহিহুল বুখারী হা/৭১)


হাদিস ৬:


রাসূল (ﷺ) প্রতি ফজর সালাতের পর প্রার্থনা করতেন এই বলে যে,

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রুজি প্রার্থনা করছি।’ (আহমাদ ইবনে মাজাহ, তাবারানি, মিশকাত হা/২৪৯৮) 


হাদিস ৭:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً

‘আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকটে পৌঁছে দাও, যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়’। (বুখারী হা/৩৪৬১; তিরমিজি হা/২৬৬৯)


হাদিস ৮:


হাদিসে এসেছে,

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمِ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ بِهِ أَقْتَابُهُ فَيَدُورُ بِهَا فِى النَّارِ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيُطِيفُ بِهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلاَنُ مَا لَكَ مَا أَصَابَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنِ الْمُنْكَرِ فَقَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.

ওসামা ইবনু যায়েদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। 

(সহিহুল বুখারী হা/৩২৬৭; মিশকাত হা/৫১৩৯)


হাদিস ৯:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল (ও ছওয়াব) বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত (যেগুলোর ছওয়াব বন্ধ হয় না) : (১) ছাদাকায়ে জারিয়া, (২) ইলম যার দ্বারা (লোকের) উপকার সাধিত হয় এবং (৩) সুসন্তান, যে তার (পিতা-মাতা) জন্য দো‘আ করে।’  

(মিশকাত হা/২০৩, মুসলিম হা/১৬৩১)


হাদিস ১০:


রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘জ্ঞানের মর্যাদা আমার নিকট ইবাদতের চেয়ে বেশী। তোমাদের দ্বীনের সর্বোত্তম দিক হলো তোমাদের আল্লাহভীতি’ (হাকেম, ত্ববারানী, বায্যার, ছহীছুল জামে‘ হা/ ৪৩১৪)।


হাদিস ১১:


রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন। আর আমি নিছক বণ্টনকারী। মূলতঃ দান করেন আল্লাহই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০)।


হাদিস ১২:


রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সহজ করে দিবেন। তাদের সম্মানে ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয় এবং তাদের জন্য যমীন ও আসমানের সকল কিছু এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে। একজন ইবাদতকারীর উপর জ্ঞানীর মর্যাদার তুলনা হল সমস্ত তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার তুলনা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীগণ উত্তরাধিকার হিসাবে দীনার বা দিরহাম (অর্থ-সম্পদ) রেখে যান না বরং তারা জ্ঞানকে রেখে যান। যে তা গ্রহণ করলো সে যেন পূর্ণ অংশই পেল’ (আবুদাঊদ, তিরমীযী, ইবনে মাজাহ, সনদ ছহীহ) ।


হাদিস ১৩:


রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যখনই কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং ঐ বিষয়ে পরস্পর আলোচনা করে তখনই তাদের উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে। আল্লাহর রহমত তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে। ফেরেশতারাও তাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাদের কথা তার ফেরেশতাদের নিকট উল্লেখ করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)।


হাদিস ১৪:


রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, মিশকাত হা/২১০৯)।



হাদিসের শিক্ষা :

১. ‘ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার সম্মান ও মর্যাদা অত্যধিক।

২. ‘ইলম (জ্ঞান) অর্জনের উদ্দেশ্যে যে পথ চলবে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সুগম ও সহজ করে দেবেন।

৩. ‘ইলম অনুযায়ী আমল তথা কাজ হতে হবে।

৪. ‘ইলম প্রচার করতে হবে।


আকিদা রক্ষায় ইলমের তাৎপর্য

═══════════════

ইলম কারো জন্য আশির্বাদ কারো জন্য অভিশাপ। এই নূর হেদায়াত প্রাপ্ত বান্দার ক্বলবকে ঈমান ও আমলের জ্যোতি দ্বারা আলোকিত করে। যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তাদেরকে অন্ধ করে। 


❏ "শরীয়তের জ্ঞানই শুধু অর্জন করবে যেজন,

কবীরা গুনাহে লিপ্ত হবে সে জন।

শুধু তাসাউফের জ্ঞানই যার সাধন, 

কুফরী তারই বন্ধন।

(ইমাম মালেক (رحمة الله) এর বাণী।,মােল্লা আলী কারী : মিরকাতুল মাফাতীহ, কিতাবুল ইলম, ১:৩৩৫।)


❏ "যদি ওলামায়ে কেরাম না থাকতেন তবে মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর কাতারে নেমে যেত। (হাসান বসরী (رحمة الله) এর বাণী)


❏ "অন্তরকে যদি ইলম থেকে বঞ্চিত করা হয় তবে তার মৃত্যু ঘটবে। (ফাতহ আল-মুসিলী (رحمة الله) এর বাণী।)

❏ "আলেমের কলমের কালিকে শহীদের রক্তের সঙ্গে ওজন করা হবে, তা শহীদের রক্ত অপেক্ষা ভারি হবে।" 

(হাসান বসরী (رحمة الله) এর বাণী।)


ইলম দুই প্রকার। যথাঃ

(i) ইলমে শরীয়ত।

(ii) ইলমে মারিফত।


❏ "তবে কি তােমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? (সূরা বাকারা, ২:৮৫)


❏ "বেশি বেশি বর্ণনা ও আক্ষরিক জ্ঞান হাসিল করার নাম ইলম নয়। (আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) এর বাণী)


❏ "বেশি বেশি মাসআলা জানার নাম ইলম নয়।

(ইমাম মালেক (رحمة الله) এর বাণী।)


❏ "এই ইলম দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং কার থেকে দ্বীন শিখতে যাচ্ছ তাকে আগে দেখে নাও।"

(মুসলিম ১/১৪ পৃঃ)


❏ "হাদিস জানার চেয়ে তার ব্যাখ্যা জানা আগে জরুরি। (ইমাম ইবনে সীরীন (رحمة الله) এর বাণী।)


হাদিস ১৫:

রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
"ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।"➡1

হাদিস ১৬:

"আলিমের ঘুম মূর্খ আবিদের (ইবাদতকারীর) নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” ➡2

হাদিস ১৭:

"আলিমগণ নবীদের ওয়ারিছ (উত্তরাধিকারী)।” ➡3
হাদিস ১৮:
"পথভ্রষ্ট আলিমগণ দাজ্জাল অপেক্ষা অধিক ভয়ংকর।" 

[আবূ যার (رضي الله عنه) সূত্রে, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০৩৩৫]

হাদিস ১৯:

"তারা ইলম ছাড়া ফাতওয়া দিয়ে নিজেও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।" ➡4


ফিত্না বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল ইলমহীন, অপরিপক্ক যুবকদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা।



তথ্যসূত্রঃ

🔺(1.)
হযরত আনাস (رضي الله عنه) সূত্রে।
১.ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ২য় খন্ড,৭২৪ পৃ: হজরত আনাছ (رضي الله عنه) থেকে ৬টি সনদে উল্লেখ আছে।
২.মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ২৮৪৭।
৩.ইমাম তাবারানী তাঁর ‘আওছাতে আনাস (رضي الله عنه) থেকে, ২য় খন্ড, ৪৮ পৃ: ও ৬ষ্ঠ খন্ড, ২১৯, ২৯৮ ও ২৩১ পৃ।
৪.খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১ম খন্ড, ৪০৭ পৃঃ।
৫.সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪।
৬.মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৬৭৪৬।
৭.মিসকাত শরীফ : ইলিম অধ্যায়ে হাদিস নং ২১৮।
৮.ইমাম ইবনে আদী তার কামিলে' ৫ম খন্ড, ২৪২ পৃ
৯.ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওসাত, হাদিস/৯; হজরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে।
১০.ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১০ম খন্ড, ৫৭-৬০ পৃ: এরূপ মােট ৮টি হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত রয়েছে।
১১.হাফিজ ইমাম উকাইলী (رحمة الله) তাঁর কিতাবুদ দ্বোয়াফায়’ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে।
১২.ইমাম আবু নুয়াইম তাঁর হুলিয়াতে’ ৮ম খন্ড, ৩২৩ পৃঃ।
১৩.ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৫৬ পৃঃ; হা: নং ১৬৬৫।

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত হাদিসটির বিভিন্ন সূত্রঃ

- ইমাম ইবনে সিরিন (رحمة الله) সূত্রে।
- মুছান্না ইবনে দিনার (رحمة الله) সূত্রে।
(মুজামে ইবনে আরাবী, হাদিস নং ২০৯৫)
- আছিম আহওয়াছ (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ২০০৮)।
- যিয়াদ ইবনে মায়মুন (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ২৪৬২)।
- ইমাম যুহুরী (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানা: মুজামুল আওছত, হাদিস নং ৮৩৮১)
- ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবী ত্বলহা (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২০৮৪)
- মাকহুল (رحمة الله) এর সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ৩৩৭৫)।


🔺(2.) 

সূত্রসমূহঃ
হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) সূত্রে।
হযরত আলী (رضي الله عنه) সূত্রে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (رضي الله عنه) সূত্রে।

i) হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আলিমের ঘুম অজ্ঞ লোকের নফল নামাজের চেয়েও উত্তম।”

১.ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৪র্থ খন্ড, ৩৮৫ পৃঃ।
২.আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদির, হদিস নং ১২৭৪১।
৩.আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৯২৭৫।
৪.ইমাম সুয়ূতী, ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ২৩।
৫.ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৮৭১১।
৬.ইমাম আযলুনী; কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২৮৬৭।

ii) উক্ত হাদিসের অন্যান্য রেফারেন্স।
১.মুসনাদে ফেরদৌস, হাদিস নং ৬৭৩১।
২.ইমাম গাজ্জালী: এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ১ম খন্ড, ৩৪৩ পৃ:।
৩.ইমাম মােল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ৫৬৭।
৪.গাউছে পাক: সিররুল আছরার, ৬০ পৃ।
৫.তাফছিরে রুহুল বয়ান, সূরা যারিয়াতের ১৫-১৯ নং আয়াতের তাফছিরে।
৬.বাহরুল মাদিদ ফি তাফছিরিল কুরআনিল মাজিদ, ৫ম খন্ড, ৫৬৯ পৃ:।
৭.তাফছিরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ, খন্ড, ১৮৯ পৃঃ।
৮.ইমাম সূয়ূতী: শরহু সুনানু ইবনুে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃঃ।
৯.ইমাম মােল্লা আলী কারী : মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৩৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়।
১০.আল্লামা মানাভী: আত, তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৪৬২ পৃ:।
১১.আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৫৪৫ পৃ:।
১২.তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, হাদিস নং ৫।
১৩.ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, হাদিস নং ২৮৩৯।
১৪.মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া, ৭ম খন্ড, ৪৪ পৃঃ।
১৫.কুওয়াতুল কুলুবে ফি মুয়ামালাতিল মাহবুব, ১ম খন্ড, ৬৭ পৃ:।
১৬.তাফছিরে কবীরের” ২য় জি: ১৮৯ পৃ:

iii) “হজরত আলী (رضي الله عنه) সূত্রে।
(ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৯৩৮৬)।

iv) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (رضي الله عنه) থেকে জয়ীফ সনদে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম অজিলুনী (রঃ) তিনি ইমাম বায়হাকী (রঃ) সূত্রে : কাশফুল খফা।

🔺(3.)
১.সুনানে আবী দাউদ, হা: নং ৩৬৪১।
২.তিরমিজি শরিফ, ২৬৮২ নং হা।
৩.সুনানে ইবনে মাজাহ, হা: নং ২২৩।
৪.মুসনাদে আহমদ, ৫ম খন্ড, ১৯৬ পৃ:।
৫.ইমাম তাহাবী: শরহে মুশকিলুল আছার, হাদিস নং ৯৮২।
৬.মুজামে ইবনে আরাবী, হাদিস নং ১৬০৯।
৭.ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, ১ম খন্ড, ২৮৯ পৃ:।
৮.ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ১২৩১।
৯.মুসনাদে শিহাব, হাদিস নং ৯৭৫।
১০.ইমাম বায়হাক্বী: আল আদাব, হাদিস নং ৮৬২।
১১.ইমাম বায়হাকী: মাদখাল, হাদিস নং ৩৪৭।
১২.তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৬ তম খন্ড, ৬২৭ পৃ:।
১৩.তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ৫৮৫ পৃ।
১৪.ইমাম গাজ্জালী: মুকাশাফাতুর কুলুব, ১ম খন্ড।

🔺(4)
১.সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৪৫৭১,
২.বুখারী শরীফ, হাদিস নং-১০০,
৩.সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৬৯৭১,
৪.মুসনাদুস শিহাব, হাদিস নং-৫৮১






Top