কিতাবঃ হাত তোলে দোয়া : ফরজ নামাজ ও সম্মিলিত মুনাজাত
সংকলনঃ সুন্নি-বিশ্বকোষ
সম্পাদনাঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
❏ ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষে আল-কুরআনের তফসীর।
❏ ফরজ নামাজ ও প্রত্যেক নামাযের পর দোয়া।
❏ প্রত্যেক নামাজের পর হাত উঠিয়ে দোয়া।
❏ হাত উঠিয়ে দোয়া।
❏ হাত উঠিয়ে দোয়া এবং চেহারায় মুছা।
❏ সম্মিলিত মুনাজাত।
❏ উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা যায়।
ফরজ ও প্রত্যেক নামাজের পর মুনাজাতের স্বপক্ষে আল-কুরআন ও তফসীর
❏ আয়াত :
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ94.7
৯৪.৭ অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হও।
وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ 94.8
৯৪.৮ আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও।
(সূরা ইনশিরাহ ৭-৮)
❏ তফসীর ১ :
(عن الضحاک فإذا فرغت قال من الصلاۃ المکتوبۃ، وإلی ربک فارغب، قال في المسئلۃ والدعاء۰ (الدر المنثور : ۶/۳۶۵
হযরত যাহ্হাক (رضي الله عنه) সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন আপনি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবেন তখন আল্লাহর দরবারে দু’আতে মশগুল হবেন। (তাফসীরে দূররে মানছূরঃ ৬/৩৬৫)
❏ তফসীর ২ :
(إذا فرغت من الصلاۃ المکتوبۃ فانصب في الدعاء۰ (تفسیر ابن عباس : ۵۱۴
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন আপনি ফরজ নামায হতে ফারেগ হন, তখন দু’আয় মশগুল হয়ে যাবেন।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه),৫১৪ পৃঃ)
❏ তফসীর ৩ :
والدعاء، وار غب إلیہ في المسئلۃ۰
(تفسیر مظہري : ۱/۲۹۴)
হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী (رضي الله عنه) হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু’আয় লিপ্ত হবেন’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)
عن ابن عباس عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم إن اللہ تعالی قال : یا محمد! إذا صلیت فقل : اللہم إني أسئلک فعل الخیرات وترک المنکرات وحب المساکین۰
(رواہ الترمذي : ۲/۱۵۹ الحدیث ۳۲۴۹)
❏ তফসীর ৪ :
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দু’আ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি....।
(তিরমিযী শরীফঃ- ২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯)
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুসল্লীদের জন্য দু’আ বিদআত নয় বরং সুন্নাহ। যেহেতু ফরজ নামাজের পর ইমাম একা একা দোয়া করেন না বরং সম্মিলিতভাবেই সকল মুসল্লিকে নিয়ে দোয়া করেন।
ফরজ নামাজ ও প্রত্যেক নামাযের পর দোয়া
❏ হাদিস ১ :
عن أبي أمامۃ الباہلي قال قیل یا رسول اللہ! أي الدعاء أسمع؟ قال : جوف اللیل الأخر ودبر الصلوات المکتوبۃ۰ رواہ الترمذي : ۱/۰۸۷ وکذا۰
( وابن ماجۃ : ۹۳ الحدیث ۳۴۹۹)
হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দু’আ কবূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী? ইরশাদ হলো, শেষ রাত্রে (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামায সমূহের পরে। (তিরমিযী শরীফ পৃঃ ১/৮৭ হাঃ নং ৩৪৯৯)
❏ হাদিস ২ :
عن معاذ بن جبل رض أن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال لہ أوصیک یا معاذ! لا تدعن أن تقول دبر کل صلاۃ، اللہم أعني علی ذکرک وشکرک وحسن عباد تک۰
(رواہ النساءي : ۱/۱۴۶، وأبو داود : ۱/۲۱۳ الحدیث ۱۵۲۲)
হযরত মু‘আয বিন জাবাল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) তাকে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ওসীয়াত করছি যে, প্রত্যেক নামাযের পর এ দু’আ পড়াকে তুমি কখনো ছাড়বে না-হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির, শোকর এবং উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর।
(নাসাঈ শরীফ ১/১৪৬, আবু দাউদ শরীফ ১/২১৩ হাঃ নং ১৫২২)
❏ হাদিস ৩ :
عن المغیرۃ بن شعبۃ رضي اللہ عنہ کان النبي صلی اللہ علیہ وسلم یدعو في دبر صلاتہ
(التاریخ الکبیر : ۶)
হযরত মুগীরা বিন শু’বা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, নবীজী (ﷺ) স্বীয় নামাযের শেষে দু’আ করতেন।
(ইমাম বুখারী (رحمة الله) তারীখে কাবীরঃ ৬/৮০)
❏ হাদিস ৪ :
عن أنس رض کان النبي صلی اللہ علیہ وسلم إذا انصرف من الصلاۃ یقول : اللہم اجعل خیر عمري أخرہ وخیر عملي خاتمہ، وخیر أیامي یوم ألقاک۰
(رواہ الطبراني في الأوسط : ۱/۱۸۷الحدیث ۹۴۱۱)
হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে,
নবী কারীম (ﷺ) যখন নামায থেকে ফারেগ হতেন তখন এ দু’আ করতেন। হে আল্লাহ! আমার জীবনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কর শেষ জীবনকে এবং আমার আমলের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কর শেষ আমলকে এবং আমার দিন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মনোরম কর তোমার সাথে সাক্ষাতের দিনকে।
(তাবারানী আউসাতঃ ১০/১৮৭ হাঃ নং ৯৪১১)
❏ হাদিস ৫ :
بہن دبر کل صلاۃ۰
(رواہ النساءي : ۱۵۱ الحدیث ۵۴۶۵)
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে,
নবী কারীম (ﷺ) প্রত্যেক নামাযের পর এ দু’আ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর, অভাব অনটন এবং দোযখের আযাব থেকে মুক্তি চাই।”
(নাসাঈ শরীফঃ ১/১৫১ হাঃ নং ৫৪৬৫)
❏ হাদিস ৬ :
عن زید بن أرقم سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یدعو في دبر کل صلاۃ اللہم بنا ورب کل شيء۰
(رواہ أبو داود : ۱/۲۱۱ الحدیث ۱۵۰۸)
হযরত যায়েদ বিন আরকাম (رضي الله عنه) বলেন যে,
নবী (ﷺ) কে প্রত্যেক নামাযের পর এ দু’আ করতে শুনতাম, হে আল্লাহ যিনি আমাদের প্রতিপালক এবং প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক।
(আবু দাউদ শরীফ, ১/২১১ হাঃ নং ১৫০৮)
প্রত্যেক নামাজের পর হাত উঠিয়ে দোয়া
❏ হাদিস ৭ :
عن أنس رض عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال : قل بعد صلاۃ بعد ما ترفع یدک : اللہم إلہي إلہ إبراہیم۰
(ابن السني في عمل الیوم واللیلۃ : ۶۱ ضعیف ۱۳۸)
হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) তাকে নির্দেশ করেন যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর হাত উঠিয়ে এ দু’আ করবে, হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহীম (عليه السلام)-এর মাবূদ। (ইবনুস সুন্নীঃ ৬১)
❏ হাদিস ৮ :
عن المطلب قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : صلاۃ اللیل مثنی مثنی، وتشہد في کل رکعتین، وتبائس وتمسکن، وتقنع وتقول اللہم اغفر لي فمن لم یفعل ذلک فہو خداج۰
(رواہ ابن ماجۃ : ۹۳، ورواہ أیضا أبو داود : الحدیث ۱۲۹۶)
হযরত মুত্তালিব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “রাত্রের নামাযে দু-দু রাকাআতের পর বসবে, এবং প্রত্যেক দু রাকাআতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নামাযের মধ্যে নিজের নিঃস্বতা এবং বিনয়ীভাব প্রকাশ করবে। তারপর নামায শেষে দু হাত উঠাবে এবং দু’আ করবে, হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার নামায অসম্পন্ন থাকবে। (আবু দাউদ শরীফঃ- ১/১৮৩, ইবনে মাজা শরীফ পৃঃ ৯৩ হাঃ নং ১২৯৬)
❏ হাদিস ৯ :
عن فضل بن عباس قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم الصلاۃ مثنی مثنی تشہد في کل رکعتین وتخشع وتضرع وتمسکن وتقنع یدیک یقول ترفعہما إلی ربک مستقبلا بطونہما وجہک وتقول : یارب! یا رب! فمن لم یفعل ذلک فہو کذا
(رواہ الترمدی الحدیث ۳۷۵)
হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, ‘নামায দুই দুই রাক’আত; প্রত্যেক দুই রাক’আতে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনত হয়ে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে-প্রভু হে! প্রভু হে! যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। (তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্থ হবে)। (তিরমিযী ১৮৭ হাঃ নং ৩৮৫)
❏ হাদিস ১০ :
ما من عبد مؤمن بسط کفیہ في دبر کل صلاۃ ثم بقول : اللہم إلہي ۰۰۰
(ابن السنی فی عمل الیوم ۱۳۸)
হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) বলেন, যে বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দু’আ পড়বে- “আল্লাহুম্মা ইলাহী ......... “আল্লাহু তা’আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত ফেরত দিবেন না।
(ইবনুস সুন্নী হাঃ নং ১৩৮)
❏ হাদিস ১১ :
حدثنا محمد بن یحي الأسلمي قال : رأیت عبد اللہ بن الزبیر ورأي رجلا رافعا یدیہ یدعو قبل أن یفرغ من صلاتہفلما فرغ منہ۰ قال لہ إن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ
৫। হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া (رحمة الله) বলেন,
‘আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (رضي الله عنه) কে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন,
‘রাসূলে পাক (ﷺ) কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুনাজাত করতেন; আগে নয়।’
(ই’লাউস সুনান, ৩/১৬১)
হাত উঠিয়ে দোয়া
❏ হাদিস ১২ :
عن أبي موسی الأشعري أنہ قال : دعا النبي صلی اللہ علیہ وسلم ثم رفع یدیہ ورأیت بیاض إبطیہ۰
(رواہ البخاري : ۲/۹۳۸ الحدیث)
হযরত আবু মূসা আশআরী (رضي الله عنه) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’আর জন্য উভয় হাত উত্তোলন করেন। যার ফলে আমি তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখতে পাই।
(বুখারী শরীফ ২/৯৩৮ হাঃ নং ৬৩৪১)
❏ হাদিস ১৩ :
عن عبد اللہ بن عباس رض قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم إذا فرغت من الدعاء فامسح بیدیک وجہک۰
(رواہ ابن ماجۃ : ۲۷۵، وأبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۹۲)
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, দু’আ করার তরীকা হল যে, তুমি উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলবে। (আবু দাউদ ১/২০৯ )
❏ হাদিস ১৪ :
عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : إن ربکم حي کریم یستحي أن یرفع العبد یدیہ فیردہما صفرا۰
(رواہ أبو داؤد عن سلمان ۱/۷۰۹ برقم ۱۴۸۸)
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভূ অত্যন্ত লাজুক, এবং দয়ালু। কোন বান্দা তার হাত দুটি উঠিয়ে মুনাজাত করলে, তার হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ হাঃ নং ১৪৮৮)
হাত উঠিয়ে দোয়া এবং চেহারায় মুছা
❏ হাদিস ১৫ :
عن عمر بن الخطاب کان رسول اللہ صلی اللہ علہ وسلم إذا رفع یدیہ في الدعاء لم یحطہما حتی یمسح بہما وجہہ۰
(رواہ البخاري : ۲/۱۷۶ الحدیث ۶۳۴۱)
হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে,
নবী কারীম (ﷺ) দু’আর জন্য যখন হাত তুলতেন তখন চেহারায় মুছার পূর্বে হাত নামাতেন না।
(বুখারী শরীফ ২/১৭৬ হাঃ নং ৬৩৪১)
❏ হাদিস ১৬ :
عن السائب بن یزید عن أبیہ أن النبي صلی اللہ علہ وسلم کان إدا دعا فرفع یدیہ مسح وجہہ بیدیہ۰
(رواہ أبو داود : ۱/۲۰۹الحدیث ۱۴۹۲)
হযরত সায়িব বিন য়াযীদ (رضي الله عنه) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
নবী কারীম (ﷺ) যখন দু’আ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন এবং দু’আ শেষে হস্তদ্বয়কে চেহারায় মুছতেন।
(আবু দাউদ শরীফ ১/২০৯ হাঃ নং ১৪৯২)
❏ হাদিস ১৭ :
عن ابن عباس أن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم قال : المسئلۃ أن ترفع یدیک حذو منکبیک۰
(رواہ أبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۸۹ صیحح)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, যখন তুমি দু’আ শেষ করবে তখন উভয় হাতকে চেহারার মধ্যে মুছবে।
(ইবনে মাজাহঃ ২৭৫ হাঃ নং ১৪৮৯)
সম্মিলিত মুনাজাত
❏ হাদিস ১৮ :
عن حبیب ابن مسلمۃ ۔۔۔ قال سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یقول : لا یجتمع ملأفیدعو بعضہم ویؤمن البعض إلا أجابہم اللہ ۔۔۔
(رواہ الحاکم فی مستدرکہ : ۳/۳۴۷ الحدیث ۵۴۷۸)
হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু’আ করে যে, তাদের একজন দু’আ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের দু’আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন।’
(তালখীসুয যাহাবী, ৩ঃ৩৪৭ পৃঃ, মুস্তাদ্রাকে হাকেমঃ- হাঃ নং ৫৪৭৮)
❏ হাদিস ১৯ :
عن ثوبان عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم لا یحل لامرإ أن ینظر فی جوف بیت امرء حتی یستأذن، فإن نظر فقد دخل ولا یؤم قوما فیخص نفسہ بدعوۃ دونہم فإن فعل فقد خانہم ولا یقوم إلی الصلاۃ وہو حقن
(رواہ الترمذي : ۱/۸۲ الحدیث ۳۵۷)
হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দু’আতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল।”
(তিরমিযী শরীফঃ- ১ঃ৮২ হাঃ নং ৩৫৭)
❏ হাদিস ২০ :
عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : ما رفع قوم أکفہم إلی اللہ تعالی یسألونہ شیئا إلا کان حقا علی اللہ أن یضع فی أیدیہم الذي سألوا۰
(رواہ الطبر انی في الکبیر : ۶/۲۵۴ الحدیث ۶۱۴۲)
হযরত সালমান (رضي الله عنه) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন জামাআত কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ তাআলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে তুলে দেয়া। (তাবারানী কাবীরঃ ৬/২৫৪ হাঃ নং ৬১৪২)
উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা যায়
(১) ফরজ নামাযের পর দু’আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। তাই ফরজ নামাযের পর সকলের জন্য দু’আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছণীয়।
(২) নবী কারীম (ﷺ) প্রত্যেক নামাযের পর একাকী অথবা সম্মিলিত উভয় ক্ষেত্রেই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতেন। চাহে তা ফরজ হোক কিংবা নফল এবং মুনাজাত করার সময় দু’আর আদব হিসাবে উভয় হাত তুলতেন এবং শেষে উভয় হাত চেহারার মধ্যে মুছতেন। অন্যদেরকে এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। সাহাবাগণও সেই আমলের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন।
(৩) একজন দু’আ করবে; আর অন্যরা সবাই আমীন বলবে; এভাবে সকলের দু’আ বা ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক। আর ইমাম সাহেব শুধু নিজের জন্য দু’আ করবেন না। দু’আতে মুসল্লীদেরকে শামিল করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী সাব্যস্ত হবেন।
(৪) উল্লেখিত হাদীস সমূহের সমষ্টিগত বর্ণনা দ্বারা নামাযের পর একাকী মুনাজাতের পাশাপাশি ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অতএব, তা মুস্তাহাব হওয়াই হাদীস সমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সার কথা।