জশনে জুলূস বা শোভা যাত্রা ব়্যালী, মিছিল
বের করা সম্পূর্ণ হাদিস সম্মত
====================
🖋আলহাজ্ব মুফতী এস এম সাকীউল কাউছার
🖋কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
একত্রিকরণঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
❏ হাদিস ১ :
হযরত বরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, হুজুর (ﷺ) যখন মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন তাঁকে কী রকম স্বাগত জানানো হয়েছিল তা হাদিসের ভাষায় শুনুন:
فصعد الرجال والنساء فوق البيوت وتفرق الغلمان والخدم فى الطرق. ينادون يا محمد يا رسول الله يا محمد يا رسول الله.
অর্থাৎ: তখন মদীনার নারী-পুরুষ, ঘরের ছাদ সমূহের ওপর আরোহণ করেন ৷ ছোট ছেলে-মেয়ে ও ক্রীতদাসগণ মদিনার অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েন, সবাই ‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলেন ৷
(মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ডের শেষে ' হাদিসুল হিজরত ' শিরোনাম অধ্যায়)
মুসলিম শরীফের এ হাদিসে ' নারায়ে রেসালত ' ধ্বনি তোলার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়৷ জানা গেল যে, সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) 'নারায়ে রেসালত ' ধ্বনি তুলতেন ৷ এই হাদিসে হিজরতে এ কথাও আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম 'জুলুস ' বা শোভাযাত্রা ব়্যালী বা মিছিলও বের করেছেন৷
❏ হাদিস ২ :
হুজূর (ﷺ) যখনই কোনো সফর থেকে মদীনা শরীফে ফিরে আসতেন, তখন মদীনাবাসীগণ তাঁকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও সম্বর্ধনা জানাতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে জুলূস বের করতেন৷ [ বোখারী ও মেশকাত দ্রষ্টব্য ]
উল্লেখ্য যে, আরবী 'জলসা ' শব্দের অর্থ হলো বৈঠক বা উপবেশন করা৷ এ শব্দটির বহুবচন হচ্ছে 'জুলূস', যেমন ( جلده ) জলদাহ বহুবচন হচ্ছে (جلود ) জুলূদ, যার অর্থ হচ্ছে বেত্রাঘাত৷
নামাজ-ও আল্লাহর জিকিরের 'জলসা ', যা এক-ই জায়গায় বসে সম্পন্ন করা হয় ৷
আর হজ্ব হচ্ছে জিকিরের 'জুলূস', যা এক বৈঠকে সম্পন্ন করা যায় না, বরং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে সম্পন্ন করতে হয়৷
❏ প্রমাণ :
কুরআন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, 'তাবুতে ছকীনা ' ( বনী ঈসরাঈলের অতি বরকত-মণ্ডিত 'সমশাদ ' কাঠের নির্মীত একটি বাক্স, যেখানে মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام)-এর লাঠি, পাগড়ী, পাদুকা ও কাপড়-চোপড় রক্ষিত ছিল) ফিরিস্তগণ জুলূস সহকারে নিয়ে এসেছিলেন৷
হুজুর (ﷺ)-এর বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমনের লগ্নে এবং মিরাজের রাতে ফিরিস্তাগণ তাঁর সম্মার্থে 'জুলূস ' বের করেছিলেন৷
যে নবী (ﷺ)-এর জন্য আসমানের ফেরেশতাগণ জুলুশ বের করতে আদিষ্ট হনঃ
❏ হাদিস ৩ :
নুযহাতুল মাজালিস গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নরূপ:
আল্লাহতা’লা জিবরীল (عليه السلام)-কে আদেশ করেন, ওহে জিবরীল (عليه السلام)! হেদায়াতের নিশান তথা পতাকা, কল্যাণের বোররাক, মহাসম্মানের পোশাক, নবুওয়্যতের আলখেল্লা ও (অাধ্যাত্মিক) রাজসিকতার পাগড়ী (এমামা) নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হও! তাঁর দ্বারে দাঁড়িয়ে তাঁরই সুরক্ষা প্রার্থনা করো। এ রাতে তোমাকে তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরতে হবে। ওহে মিকাঈল! তুমি (খোদায়ী) রেযামন্দির ঝাণ্ডা নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হও! ওহে ইসরাফিল ও আজরাঈল! তোমরা দু’জন-ও প্রিয়নবী (ﷺ)-এর প্রতি একই রকম খেদমত পেশ করো।
[ইমাম সাফুরী (رحمة الله) নুযহাতুল মাজালিস]
প্রিয়নবী (ﷺ)-এর প্রতি মহব্বত প্রকাশ ও জশনে জলূস
❏ হাদিস ৪ :
হযরত সাইয়্যেদুনা আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: মহানবী (ﷺ) মদীনায় হিজরত করে এলে আবিসিনীয় (আফ্রিকী) লোকেরা এই খুশিতে বর্শা নিয়ে (ঐতিহ্যবাহী) খেলায় মেতে ওঠে।
[সুনানে আবি দাউদ, ৪১তম বই, হাদীস নং ৪৯০৫]
❏ হাদিস ৫ :
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: ....মদীনার মুসলমানবৃন্দ (হিজরতের সময়) যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মক্কা ছেড়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ পান, তখন তাঁরা প্রতিদিন সকালে হাররায় গমন করতে থাকেন। তাঁরা সেখানে অপেক্ষা করতেন যতোক্ষণ না মধ্যাহ্ন সূর্যের খরতাপ তাঁদেরকে ফেরত আসতে বাধ্য করতো। একদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁরা বাড়ি ফিরলে জনৈক ইহুদী কোনো জিনিস খুঁজতে তাঁর গোত্রের দুর্গের একটি ছাদে ওঠেন এবং দূরে মরু-মরীচিকার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসা সাদা পোশাক পরিহিত আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের দেখতে পান। ওই ইহুদী তাঁর সাধ্যানুযায়ী উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলেন, “ওহে আরবকুল! তোমাদের সেই মহান ব্যক্তিত্ব এখানে উপস্থিত, যাঁর জন্যে তোমরা অপেক্ষা করছো।” এমতাবস্থায় সকল মুসলমান ব্যক্তি হাররার চূড়ায় ছুটে যান এবং সেখানে মহানবী (ﷺ)-কে স্বাগত জানান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁদের সাথে ডান দিকে ফেরেন এবং বনূ আমর বিন আউফ গোত্রের বসতস্থানে (সওয়ার হতে) নেমে যান; আর এটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের এক সোমবার দিন।.....(একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ এটি)। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৪৫]
❏ হাদিস ৬ :
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: ....হুযূর পাক (ﷺ)-এর মদীনায় আগমনের খবর প্রচার হয়ে যায়। মানুষেরা ঘর থেকে বেরিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতে থাকেন এবং বলতে থাকেন, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এসেছেন! আল্লাহর নবী এসেছেন!” এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) চলতে থাকেন যতোক্ষণ না তিনি হযরত অাবূ আইয়্যুব আনসারী (رضي الله عنه)-এর ঘরের সামনে (সওয়ার থেকে) নামেন।...(একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ এটি)। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৫০]
❏ হাদিস ৭ :
হযরত আল-বারা’ বিন আযিব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: মদীনায় আমাদের কাছে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিবৃন্দ আসেন তাঁরা হলেন সর্ব-হযরত মুস’আব বিন উমর (رضي الله عنه) ও ইবনে উম্মে মাকতুম (رضي الله عنه); এঁরা মানুষদেরকে কুরআন মজীদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এর পর এলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه), সা’দ (رضي الله عنه) ও আম্মার ইবনে এয়াসীর (رضي الله عنه)। অতঃপর হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) তাঁর সাথে আরো বিশজন সাহাবী (رضي الله عنه)-কে নিয়ে মদীনায় আসেন। এরই পরবর্তী পর্যায়ে মহানবী (ﷺ) মদীনায় তাশরীফ আনেন এবং তাঁর আগমন উপলক্ষে মদীনাবাসী মানুষ যতোখানি আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন, অতোটুকু উৎফুল্ল হতে আমি তাঁদেরকে আগে কখনোই দেখিনি। এমন কি দাসী মেয়েরাও গান করছিল, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগমন করেছেন।” তাঁর তাশরীফ আনার আগেই আমি “আপন রবের নামের পবিত্রতা বর্ণনা করো, যিনি সবার ঊর্ধ্বে” (আল-কুরঅান, ৮৭:১)-সহ মুফাসসিলের অন্যান্য সূরা পাঠ করেছিলাম। [সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, ৫৮তম বই, হাদীস নং ২৬২]
❏ হাদিস ৮ :
সহীহ বোখারী শরীফ ও অন্যান্য সীরাহ-গ্রন্থে উদ্ধৃত এসব হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে মহানবী (ﷺ) যখন মক্কা মোয়াযযমা হতে মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করেন, তখন ওই নগরীর মানুষ তাঁকে মহা উৎসাহে স্বাগত জানান। মদীনায় এক আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার নজির ইতিপূর্বে কখনোই দেখা যায়নি। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে সর্বসাধারণ রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হন; নারী-পুরুষ ও শিশু সবাই উৎফুল্লচিত্তে তাঁকে সম্ভাষণ জানান। এই সময় অবিরাম দফ বাজিয়ে গান করা হয় -
“হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র আমাদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’ এলাকায় হয়েছেন উদিত
যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী থাকবেন আমরা শোকর করতে হবো বাধিত
হে রাসূল, আপনি আমাদের মাঝেই হয়েছেন (খোদা কর্তৃক) লালিত, পালিত
এসেছেন নিয়ে এক কর্তব্য যা হতে হবে মান্যকৃত
আপনি এনেছেন এ নগরীর জন্যে মাহাত্ম্য
তাই স্বাগতম, আল্লাহর রাস্তার দিকে সেরা (ওই) আহ্বান, উদাত্ত।"
অপর বর্ণনায়,
[রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করেন মদিনাবাসি এইভাবে দলবদ্ধভাবে জুলুসে নেমেছিল আর এই নিম্নোক্ত ইসলামী কবিতা/গজলের সাথে সম্বোধন জানিয়েছিলঃ
(ক).তা’লা আল বাদরু আলাইনা।➡طلع البدر علينا
অর্থাৎ, পূর্ণিমার চাঁদ আমাদের উপর (কাছে) এসেছে।
(খ).মিন ছানি’য়া তিল–ওয়া’দা।➡من ثنيات الوداع
অর্থাৎ, ওয়া'দা‘ উপত্যকা থেকে। [যে উপত্যকা দিয়ে হযরত মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় প্রবেশ করেন।]
(গ).ওজাবাশ শুক’রু আলাইনা।➡وجب الشكر علينا
অর্থাৎ, এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
(ঘ).মা দা আ লিল্লাহি দা।➡ما دعى لله داع
অর্থাৎ, যতদিন আল্লাহর অস্তিত্ব/ আল্লাহকে ডাকার মত কেউ থাকবে।
(ঙ).আইয়্যু হা’ল মাব উ’ছু ফিনা।➡أيها المبعوث فينا
অর্থাৎ, ওহ, আমাদের পথ প্রর্দশক আজকে আমাদের মধ্যে।
(চ).জি’তা বি’ল-আম্রিল -মু’তা।➡جئت بالأمر المطاع
অর্থাৎ, যিনি (আল্লাহর পক্ষ থেকে )আদেশ/উপদেশ নিয়ে এসেছেন যার প্রতি আমাদের কর্ণপাত করতে হবে।
(ছ).জি’তা শার’রাফ তা’ল-মদিনা।➡جئت شرفت المدينة
অর্থাৎ, আপনি এই শহরের জন্য প্রশংসা/মর্যাদা বয়ে নিয়ে এসেছেন।
(জ).মারহাবান ইয়া খাইরা দা'।➡مرحبا يا خير داع
অর্থাৎ, স্বাগতম আপনাকে, যিনি আমাদের সঠিক পথ দেখাবেন/ সথিক পথ সমন্ধে বলবেন।-সূত্রঃ Wikipedia]
ইনশা’আল্লাহ, পুনরুত্থান দিবসেও রাস্তাগুলো মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-এর ভালোবাসার সাক্ষ্য প্রদান করবে।
সোবহানাল্লাহ! আর ভেবে দেখুন কতো তারিখে মহানবী (ﷺ) মদীনায় প্রবেশ করেন এবং সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه) উৎসবে মাতেন! এটি ছিল সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, ঠিক একই তারিখ যেদিন তাঁর ধরাধামে শুভাগমন হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাহাত্ম্যকে স্বীকার করার উদ্দেশ্যে এ দিনটিতে উৎসবের আয়োজন করাটা এই দলিলে সিদ্ধ ও জায়েয প্রমাণিত হয়।
সোবহানাল্লাহ! জুলূস তথা মিছিলসহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রশংসাসূচক না’ত-পদ্য-নাশীদ ইত্যাদি করা যে জায়েয, তার অনুমতি হিজরতের সময় স্বয়ং হুযূর পাক (ﷺ)-ই দিয়েছেন (কেননা, মদীনার আনসার সাহাবীবৃন্দ খুশিতে মিছিল করছিলেন - অনুবাদক)।
❏ হাদিস ৯ :
অধিকন্তু, মক্কা বিজয়ের সময়ও তিনি সেখানে প্রবেশ করলে সাহাবা-এ-কেরাম (রা.) আনন্দে তাঁরই প্রশংসাসূচক না’ত/পদ্য উচ্চস্বরে আবৃত্তি করেন। এই শুভলগ্নে হযরত আবদুল্লাহ বিন রওয়াহা (رضي الله عنه) ইসলামী বাহিনীর অগ্রভাগে হাঁটছিলেন এবং উচ্চস্বরে না’ত-পদ্য গাইছিলেন। হযরত উমর তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে এতো জোরে না’ত গাইছো, তা কি যথার্থ?” এমতাবস্থায় খোদ মহানবী (ﷺ) হযরত উমর (رضي الله عنه)-কে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “ওকে বাধা দেবে না। কেননা, তার পদ্যগুলো কাফেরদের অন্তরে তীরের মতো বিঁধছে।”
[সর্ব-ইমাম তিরমিযী, নাসাঈ ও ‘সুনানে কুবরা’; ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীও এটি উদ্ধৃত করেন]
সৎ ও পুতঃপবিত্র মাখলুকের (সৃষ্টিকুলের) অনুকরণ করাও পুণ্যের কাজ৷ সুতরাং বর্তমানে জুলূসের যে প্রচলন আছে, তা পূর্বসুরীদের অনুকরণ বিধায় এটি একটি সওয়াব তথা পুণ্যদায়ক কাজ৷
❏ হাদিস ১০ :
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনা মোনাওয়ারায় (হিজরতস্বরূপ) আগমন করেন, তখন সেখানকার নারী ও শিশুরা গান ধরেছিলো:
طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا ــ مِنْ ثَنِيَاتِ الْوِدَاعِ
হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র মোদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’আ উপত্যকা হতে হয়েছেন উদিত,
وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا ــ مَا دَعَا لِلَّهِ دَاعِ
যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী আছেন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হবো বাধিত।
১.ফাদাল ইবনে হিবা’ব হতে উদ্ধৃত করেন আবূল হাসান আল-খুলাঈ নিজ ‘আল-ফাওয়া’য়েদ’ গ্রন্থে (২:৫৯)
২.আল-বায়হাক্বী তাঁর ‘দালা’য়েল আল-নুবুওয়াহ’ পুস্তকে (২:২৩৩)। হিবা’ব বলেন:
আমি শুনেছি উবায়দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ‘আয়েশাহ’কে বলতে..এবং তিনি হাদীসটি উল্লেখ করেন।
“ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) এবং অন্যান্যরা এই বিবরণটি একটি বিচ্ছিন্ন এসনাদ-সহ লিপিবদ্ধ করেন, যেমনটি আল্লামাহ ‘এরাক্বী ও হাফেয ইবনে হাজর (রহমতুল্লাহে আলাইহিম) উল্লেখ করেন।
১.বায়হাকীঃ দালা’য়েলুন্ নুবুওয়াহ, ৫ম খণ্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা;
২.আল-খুলাঈ কৃত ‘আল-ফাওয়া’য়েদ’, হাদীস নং ১১৯৪।
৩.‘আল-মুগনী ‘আন হামলিল্ আসফার’, হাদীস নং ২১৯১;
৪.ইবনে হাজার আস্কালানীঃ 'ফাতহুল বারী’, হাদীস নং ৩৯২৫, ৭ম খণ্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা।
৫.ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) তাঁর ‘এহইয়া’ গ্রন্থে।
৬.ইমাম ইঊসুফ নাবহানী নিজ ‘আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া’।
টিকাঃ
“এই রওয়ায়াত/বর্ণনার এসনাদ দুর্বল কিন্তু রাবী তথা বর্ণনাকারীবৃন্দ সিক্বা (আস্থাভাজন), কিন্তু এর এসনাদ তথা পরম্পরায় তিন কিংবা ততোধিক বর্ণনাকারীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এটাকে ‘মু’দাল’ বিবেচনা করা হয়।”
ইবনে আয়েশাহ হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ও ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله)’এর শুয়ূখদের একজন; আর তিনি এই বিবরণটি ইরসা’ল (মানে তাঁর শায়েখবৃন্দের নাম উল্লেখ ছাড়াই) বর্ণনা করেন। বস্তুতঃ এ কথাই হাফেয এরাক্বী নিজ ‘আল-এহইয়া’র পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন (২:২৪৪)।
হাফেয ইবনে হাজর (رحمة الله)-ও এই বিবরণকে ‘মু’দাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ করেন (এসনাদে পরপর দুই বা তিন জন বর্ণনাকারী সংযুক্ত না থাকার দরুন দুর্বল সাব্যস্ত)। [ফাতহুল বারী, ৭:২৬১]