প্রশ্নঃ তাহের শাহ হুজুর আওলাদে রাসূল হলে কেক কেটে কেন জন্মদিন পালন করেন? যে ব্যক্তি নবীর সুন্নাত মানে না সে কেমন আওলাদে রাসূল? এসব তো ইহুদী-খৃষ্টানদের কাজ। এসব সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।
জবাবঃ
🖋লেখকঃ Masum Billah Sunny
❏ প্রথমত,
উক্ত অভিযোগ কোন জন্মদিন কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে Cake কাটা হয় নি এটা একটা মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর উদ্ভোদন কালে Cake কাটা হয়েছে। সুতরাং প্রথমেই মূর্খ জাহেলদের অপবাদ সাব্যস্ত হয়ে গেল।
[যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি ২০১৭ সালের দায়েম নাজির পাড়া জামে মসজিদের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের সময়।]
❏ দ্বিতীয়ত,
Cake কোন হারাম খাদ্য নয়। যদি হারাম খাদ্যই হত তবে বাংলাদেশের ৯০% মুসলমান Cake খাওয়া থেকে সারাজীবন বিরত থাকতেন। কিন্তু আমার জানামতে ও দেখা মতে এমন কোন মুসলমান নেই যারা Cake -কে হারাম খাদ্য বলতে পারে৷ হ্যাঁ এটা তখনই হারাম হবে যদি কোন হারাম উপাদান দিয়ে তৈরি হয় কিংবা হারাম উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত হয়। যেমনঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন দেব দেবীর উদ্দেশ্যে যেকোন কিছু উৎসর্গ করলে তা খাওয়া মুসলমানের জন্য হারাম।
❏ তৃতীয়ত,
ফিক্বাহের কোন কিতাবে Cake খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা নেই। আফসোসের বিষয় হল যারা অন্ধের মত বিদআত বিদআত বিদআত বিদআত বলে বলে চিৎকার চেচামেচী করছে সেই সব শিক্ষিত সমাজ যাদের ধর্মীয় জ্ঞান খুবই স্বল্প এক কথায় অতিব সামান্য সেসব যবক-যুবতীরা এসব ফতোয়া দিচ্ছে। আর ফতোয়া তো দিচ্ছেই অথচ নিজেরাও আবার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের জন্মদিনে Cake কেটে খায়। আল্লাহর কসম এমন প্রমাণ দুই চক্ষে বহু দেখেছি।
❏ চতুর্থত,
কোনটা হালাল হারাম তার জন্য ফিক্বাহের বিস্তারিত জ্ঞান থাকা অতিব জরুরি। যেমন উদাহরণস্বরূপ, আমরা সবাই জানি যে কাক খাওয়া হারাম। কিন্তু ফিক্বাহের কিতাবে এটাও বলা আছে কাক খাওয়া হালাল। সেটা কোন প্রজাতির কাক সেটার ব্যাপারেও বিস্তারিত বর্ণনা আছে হেদায়া/কদুরীতে।
সেটা বিস্তারিত না জানলে/অর্ধেক জানলে,
▪ একদল বলবে, ফিক্বাহের কিতাব ভুল।
▪ একদল বলবে, জীবনের প্রথম এই অদ্ভুত তথ্য শুনলাম।
▪ আরেকদল বলবে, সব কাক খাওয়াই মনে হয় হালাল।
▪ আরেকদল বলবে, সব ভন্ডামী এসব শিরিক কারণ এরা নিজেরা আল্লাহর পরিবর্তে আইন বানিয়ে নিয়েছে।
▪ আরেকদল বলবে, এসব মাযহাব পূজারীদের কাজ। নে এবার কাক খা!!!
এবার বুঝে নিন প্রতিটি কথা থেকে এক একটি জবাব আর যুক্তি-তর্ক উদ্ভাবন ঘটে। তাই তর্ক না করে কুরআন, হাদিসে যা পাই তাই মেনে নেয়া উচিত। সেই সাথে ব্যাখ্যাগ্রন্থ থাকলে তো আরও ভাল।
❏ পঞ্চমত,
ইহুদীদের মত জন্মদিন পালন করা হারাম কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে হুকুম করেছেন ইহুদীদের বিপরীত করার জন্য। তাই তারা যেই হারাম পদ্ধতিতে জন্মদিন পালন করে আমাদেরকে সেই পদ্ধতির বিপরীত করতে হবে। আর ইসলামিক নিয়মে পালন করা ১০০% জায়েজ। কারণ ইহা কুরআন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
আল-কুরআনে জন্মদিন ও মৃত্যুদিন উদযাপন
🕋 হযরত ইয়াহইয়া (عليه السلام) সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
سلم عليه يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا
অর্থ: তাঁর প্রতি সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক) যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং যেদিন তিনি ওফাত লাভ করেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ১৫)
🕋 হযরত ইসা (عليه السلام) সম্পর্কে আল-কুরআনে আছে, ইসা (عليه السلام) বলেন,
"আমার প্রতি সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক) যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন ওফাত লাভ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। (সুরা মারইয়ম, আয়াত ৩৩)
আল-হাদিসে জন্মদিন ও মৃত্যুদিন উদযাপন
🕋 হযরত আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
– أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: ” فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ ” أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ فِي الصَّحِي
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-
"সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে।"
তথ্যসূত্রঃ
● মোসান্নাফে আবদ্ আল-রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৮৬৫
● সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৬; ২৬০৩ হাদীসেও বিদ্যমান।
● মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড-৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮,
● সুনানে আবি দাউদ, ৭ম খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৪২৮
● মিশকাত পৃঃ১৭৯,
● বায়হাকীঃ সুনানে বায়হাকী, খন্ড ১ম, পৃ-৭২,
● ইমাম বায়হাকী কৃত সুনানে কুবরা, ৪র্থ খণ্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮১৮২ ও ৮২৫৯
● ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:
͏● ইমাম মোল্লা আলী কারীঃ মিরকাত শরহে মিশকাত, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯১,
● আসাদ আল-গাবা ফী মা’আরফাতেস্ সাহাবা, ১ম খণ্ড, ২১-২২ পৃষ্ঠা; ১৯৮৭ সালে লাহোর, পাকিস্তানে প্রকাশিত
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে স্পষ্ট জন্মদিন শব্দটা দেখে নিলেন। সুতরাং জন্মান্ধ কোন শয়তানের অনুসারী ব্যতীত কেউ তর্ক করবে না বলে আশাবাদী।
❏ ষষ্ঠত, (জবাব সংগ্রহিত, লেখকের নাম জানা নেই)
⊕◑☞ ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে যদি কেক কাঁটা হতো,
▪ তাহলে সুন্নিয়া মাদরাসার বড় স্টেজে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কেক কাঁটার ব্যবস্থা করা হতো।
▪ সুফি মিজান সাহেব, ফিনলের মালিক এ.কিউ.চৌং সহ বড় বড় শিল্পপতিগণ কেকের বন্যা বসায় দিতেন মাদরাসার সামনে।
▪ সি.ডি.এ'র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সাহেব Well Food'র অস্থায়ী স্টল বসায় দিতেন।
▪ ১৯৭৪ সাল হতে জশনে জুলুসে কেক কাঁটা হলে, মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আল্লাহর নামে আর গরু-মহিষ কুরবানী হতোনা চট্টগ্রামে।
▪ সুন্নিয়া মাদরাসার সামনে Well Food, সুমি’স হট কেক, ফ্ল্যাভার্স, হাইওয়ে সুইটস'র দোকান দিতো।
সুতরাং, এই ভিডিও যারা প্রচার করেছে তারা নিজেদের অজ্ঞ বলে পরিচয় দিচ্ছে।
বিঃদ্রঃ ভাল কাজে মিষ্টি বিতরন হাদিস দ্বারা স্বাব্যস্ত।
যাদের এখনো চুলকানী রয়ে গিয়েছে তাদের জন্য আবারো আমাদের পক্ষ থেকে ফ্রি "পেভিসন মলম" ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।