কিতাবঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
মূলঃ আশরাফ আলী থানভী 
🖋সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
উক্ত কিতাবটি পড়ে আপনার কি কি ধারণা হবে তা সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি।

উক্ত কিতাবের সারাংশ :

১) প্রথম থেকে পড়া শুরু করলে মনে হবে পাক্কা সুন্নী। শুরুতেই উসীলা, কালিমা, শানে রিসালাত নিয়ে বয়ান করেছে। এমনকি জাবের (رضي الله عنه) এর নূর সম্পর্কিত হাদিস ও মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর সময় মাতা আমেনা (رضي الله عنه) গর্ভ থেকে নূর বিচ্ছুরিত হয়ে শ্যাম দেশের অট্টালিকাগুলোকে আলোকিত করেছে এ মর্মেও হাদিস বর্ননা করেছে।

২) এরপর প্রতি পৃষ্ঠা পড়বেন আর তার যুক্তিগুলো দেখবেন। এক পর্যায়ে মনে হবে সে বিশাল যুক্তিবিদ ছিল।

৩) শানে রিসালাতের উপর খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেছে। যেমন ধরুনঃ 
●আমরা নির্দিষ্ট এক দিন নয় ৩৬৫ দিনই মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করি।
●এই দিন রোজা রাখা সুন্নত।
●এই নিয়ামত পেয়ে খুশি হওয়া অত্যাবশ্যক।এটা আল্লাহর হুকুম। এটা অমান্য করার সাধ্য কার আছে?
●রাসুলের চেয়েও বড় নিয়ামত আর কি হতে পারে? 
●আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি অস্তিত্ব সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন।
তা হলাে তার নূরের অস্তিত্ব। তিনি তাঁর নূরের অস্তিত্বের দিক থেকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন।
●যারা বলে আমরা পালন করি না তাদের এই দাবী অবান্তর।
●রওজা মুবারকের যে অংশটুকু রাসূলের দেহ মোবারকের সাথে লেগে আছে তা আরশে আজিম থেকেও শ্রেষ্ঠ।
●রাসুলকে কোন মাখলুকের সমতুল্য মনে করা কুফরী। 
●রাসুলকে কোন মানুষের সাথে তুলনা করে খাটো করার চেষ্টা করাও কুফরী। 
●তাঁর ইলমের সাথে কোন মাখলুকের ইলমকে যে তুলনা করবে কিংবা  অভিশপ্ত শয়তানকে (নাউজুবিল্লাহ) (যদি) রাসুল (ﷺ) এর থেকে বড় আলেম বলে এ ধরনের ব্যক্তি কাফির ও অভিশপ্ত।

৪) এমন ব্যক্তিই আবার এক পৃষ্ঠায় মানি বলে, অপর পৃষ্ঠায় তার সেই মতবাদের বিরোদ্ধে শত শত যুক্তির বুলেট ছুঁড়ে দিয়েছে।

৫) বারবার একি কথা এতবার পুনরাবৃত্তি করেছে যে, আপনে অতিষ্ট হয়ে যাবেন।

৬) যুক্তি দেখাতে অনেক বেয়াদবীও করেছেঃ
●ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে মসজিদকে হিন্দুদের প্রথার ন্যায় সুসজ্জিত করা হয়। এমনভাবে সাজানো হয়, যেমন হিন্দুদের বিবাহোত্তর বাসরঘর সাজিয়ে থাকে (নাউজুবিল্লাহ) 
●সকলে সম্মিলিত ভাবে দোয়ার জন্য এই দিনকে নির্ধারণের কোন যৌক্তিকতা আছে কি?
●এটা জনৈক বাদশার আবিষ্কার, তিনি খ্রিষ্টানদের বিপরীতে চিন্তা করলেন, তারা যেমন বড়দিনে উৎসব পালন করে, আলোকসজ্জা করে।
●ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) নবুওয়াতে অংশীদারিত্বের শামিল।

৭) অবশেষে, তার যুক্তির ভান্ডার আর বেয়াদবীর ইতিহাস গুলো নিয়ে অবাক হয়ে যাবেন, তখন একটা কথাই মনে হবে শয়তান তাকে বেয়াদবীমূলক যুক্তিগুলো লিখতে সাহায্য করেছিল।

ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর পক্ষে বিস্তারিতঃ

আশরাফ আলী থানভী রচিত "শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) কিতাবের ভাষ্য মিলাদুন্নবীর পক্ষে অভিমত সমূহঃ


❏ পৃষ্ঠা নং ৩৬ :


ইলাহী— যার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি পাওয়া যাবে, জান্নাত লাভ হবে, দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জিত হবে এবং যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পেরেছি, তা আজ আলােচনার বিষয়বস্তুই থাকে না। মানুষ তা সম্পূর্ণই ছেড়ে দেয়। অথচ এ বিষয়গুলাে
আলােচনা করা বেশি প্রয়ােজন। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবির্ভাবের বরকত ও কল্যাণ তাে সুস্পষ্ট। তাঁর "নূরের" ওসীলাতেই সমগ্র বিশ্বজগত অস্তিত্ব লাভ করেছে। পক্ষান্তরে ঈমান ও আমলে সালেহ্-এর কল্যাণ কিয়ামত দিবসে এবং জান্নাতে প্রকাশিত হবে। আর দুনিয়ায় এতদুভয়ের প্রতি মানুষ চরম উদাসীন। তাই এ বিষয়গুলাে আলােচনা করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আবির্ভাবের নিদর্শন তাে এই যে, তাঁর ওসীয়লায় আমরা দুনিয়ায় অস্তিত্ব লাভ করেছি।

❏ শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর আগমন অনেক বিরাট নিয়ামতঃ

সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা'আলার প্রতিটি নি'আমত শােকর ও কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে। 
বিশেষতঃ যদি তা বড় কোন নি'আমত হয়। উপরন্তু যদি তা দ্বীনী নি'আমত হয়, আবার দ্বীনী নি'আমতসমূহের মধ্যেও সর্বশ্রেষ্ঠ নি'আমত। তন্মধ্যেও যদি এমন বিশেষ নি'আমত হয়, যা সমস্ত দ্বীনী ও দুনিয়াবী নি'আমতের উৎস। এ নিআমত হলাে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ আগমন। কারণ, জাগতিক সকল নিআমতের উৎসও তিনিই। শুধু মুসলমানদেরই জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য। যেমন আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

“হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া ১০৭)

এর থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমতস্বরূপ; চাই তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগের পূর্বের হােক বা পরের হােক। কারণ, আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি অস্তিত্ব সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন।
তা হলাে তার নূরের অস্তিত্ব।


❏ পৃষ্ঠা নং ৩৭ঃ


তিনি তাঁর নূরের অস্তিত্বের দিক থেকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন।
এ উম্মতের জন্য সৌভাগ্য যে, উক্ত নূর দৈহিক তিতে রূপান্তরিত হয়ে গােটা বিশ্বজাহানকে আলােকিত করে দিয়েছে।

সুতরাং, রাসলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত এবং তার আগমন সর্বশ্রেষ্ঠ নি'আমত হওয়া প্রমাণ ও যুক্তির নিরিখে সুপ্রমাণিত। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অস্তিত্ব সকল নি'য়ামতের উৎস। আর যে কোন নি'আমতের ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন,

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থাৎ, (হে রাসূল ﷺ !) আপনি বলে দিন, তারা যেন শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার ওপর আনন্দিত হয়। কারণ, তা দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।

এ আয়াতে আদেশসূচক ক্রিয়াপদ বিদ্যমান। তাতে আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং এ আনন্দ প্রকাশের ওপর কে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করতে পারে? এমন কোন মুসলমান আছে, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমণের ওপর আনন্দিত হবে না কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?”

আয়াতের পূর্বাপর অবস্থার আলােকে যদিও প্রতীয়মান হয় যে, তাতে বিদ্যমান "রহমত" ও "ফজল" শব্দদ্বয়ের অর্থ হলাে কুরআনুল কারীম'। কিন্তু যদি এমন ব্যাপক অর্থ উদ্দেশ্য করা হয় যে ব্যাপক অর্থের একটি অংশ কুরআনুল কারীম, তাহলে তা অধিক সমীচীন হবে। উক্ত ব্যাপক অর্থ হলাে, "ফজল" ও "রহমত" দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন উদ্দেশ্য। 
এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী দ্বীনী ও দুনিয়াবী সমস্ত নি'আমত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বত্ত্বা সর্বপ্রকার নি'আমত, অনুগ্রহ ও রহমতের মূল উৎস । আয়াতের এ ব্যাখ্যাটি অন্য সব ব্যাখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আয়াতের সারকথা এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সত্তার ওপর, চাই তা তার নূরের সত্তা হােক কিংবা বাহ্যিক অবয়বগত হােক, আনন্দিত হওয়া আবশ্যক। কারণ, 'রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য সমস্ত নি‘আমতের মাধ্যম। আমরা যে দু'বেলা আহার লাভ করছি, সুস্থ-সবল থাকছি এবং আমাদের যাবতীয় ইলম ও জ্ঞান সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উসীলায়। সকল অনুগ্রহ ও রহমতের আঁধার হলেন হুযূর পাক (ﷺ) এর সত্তা। সুতরাং এমন বরকতপূর্ণ সত্তার আগমনে যতই আনন্দ প্রকাশ করা হোক না কেন, তা যথেষ্ট নয়। মোটকথা, উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এ মহান নি'য়ামতের উপর আনন্দিত হওয়া অতি আবশ্যক।
[পৃষ্ঠা নং ৩৬,৩৭,৩৮ এর ভাষ্য সমাপ্ত]


❏ পৃষ্ঠা নং ৪০ :


"আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন সম্পর্কে এমন ধারণা করা যে, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা কিংবা তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ করতে বাধা দেন, এটা সম্পূর্ণ অপবাদ ও মিথ্যা আরােপ ব্যতীত কিছুই নয়। আল্লাহ মাফ করুন। আমরা কিছুতেই বাধা প্রদান করি না। বরং বলি যে, প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যদি তা উক্ত নিয়ম অনুযায়ী করা হয়, তবেই গ্রহণযােগ্য হবে। অন্যথা তা অগ্রহণযােগ্য ও নিষিদ্ধ গণ্য হবে।
-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা অবশ্যই ইবাদত। কিন্তু দেখতে হবে যে, ইসলামী আইনজ্ঞগণ- অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম, যাদের অনুসরণ করা আমাদের ওপর আবশ্যক, তারা এ ইবাদত কিভাবে করেছেন। যদি তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে করে থাকেন, তাহলে তা থেকে নিষেধ করার সাধ্য কার আছে? আর যদি এ পদ্ধতিতে না করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা নিষিদ্ধ হওয়ার যােগ্য। 
এবার বলুন, আমরা কিভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবন ও জন্মবৃত্তান্ত আলােচনায় বাধা দানকারী হলাম?

❏ শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শুভাগমনে আমরা অধিক আনন্দ প্রকাশ করিঃ

সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের ওপর আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ আমরা অধিক পালন করি। কারণ, প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালনকারীগণ গােটা বছরে একবারই শুধু আনন্দ প্রকাশ করে। অন্য সময় তাদের আনন্দ শেষ হয়ে যায়। আর আমরা সদা আনন্দিত থাকি।"

[আশরাফ আলী থানভী রচিত "শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) " পৃষ্টা নং ৪০ সমাপ্ত হল]


❏ পৃষ্ঠা নং ৮০ : শিরোনামঃ বারই রবিউল আউয়াল সােমবার রােযা রাখাঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে যে সব কাজের অনুমতি রয়েছে, তা অবশ্যই করা উচিত। যেমন, তিনি তাঁর জন্মগ্রহণের দিন রােযা রেখেছেন এবং বলেছেন—

"এটি এমন দিন, যে দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।"

সুতরাং আমাদের জন্যও উক্ত দিন (সােমবার) রােযা রাখা সুন্নাত। তা ছাড়া সােমবার দিবসে আল্লাহ তা'আলার সামনে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। ফলে এ উভয়ের সমষ্টি রােযা রাখার কারণ হতে পারে। আর যদি শুধু এককভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণকেই কারণ বলা হয়, তাহলেও দোষের কিছু নেই। তবে শুধু ততটুকু করারই অনুমতি থাকবে, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত রয়েছে।

❏ আবু লাহাব-এর ঘটনা দ্বারা যুক্তি পেশ ও তার জবাব:

বিদ্আতপন্থীরা আরেকটি যুক্তি পেশ করতে পারে যে, আবু লাহাব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের সংবাদ শুনে আনন্দের অতিশয্যে একটি কৃতদাসী মুক্ত করে দিয়েছিলাে । এ কারণে তার ওপর শাস্তি লাঘব করে দেয়া হয়েছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের ওপর আনন্দ প্রকাশ জায়েয ও বরকত লাভের উপায়। তার কথাগুলাে পড়ে এ যুক্তির জবাবও সুস্পষ্ট। আমরা নিছক আনন্দিত হতে নিষেধ করি না। আনন্দ তাে আমরা প্রতি মুহূর্তেই বােধ করি। আমাদের বক্তব্য তাে সেই বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে, যা নিজেরা আবিষ্কার করে রেখেছে।


❏ পৃষ্ঠা নং ৮৮ : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওযা শরীফ আরশে ইলাহী থেকে শ্রেষ্ঠ 

বিদগ্ধ আলিমগণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, পৃথিবীর সেই ভূখণ্ড, যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শায়িত রয়েছেন আরশ থেকেও শ্রেষ্ঠ। কারণ, আরশের ওপর আল্লাহ তা'আলা (নাউযুবিল্লাহ) উপবিষ্ট নন। যদি উপবিষ্ট থাকতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে উক্ত স্থান সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ হতাে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিরাকার। স্থানের সীমাবদ্ধতা থেকে তিনি পবিত্র ।


❏ পৃষ্ঠা নং ৮৯ : আমাদের আক্বীদা বা বিশ্বাসঃ

আমাদের ও আমাদের মহান পূর্বসূরীগণের আক্বীদা বা বিশ্বাস এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মাখলুকের সমতুল্য মনে করা সুস্পষ্ট কুফরী। নিঃসন্দেহে দু’জাহানের সরদার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইলমের সাথে কোন মাখলুকের ইলমকে তুলনা করবে কিংবা বলবে, (নাউযুবিল্লাহ) অভিশপ্ত ইবলীস, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বড় আলিম, তাহলে এ ধরনের ব্যক্তি কাফির ও অভিশপ্ত এমন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত বর্ষিত হােক।


❏ ৯০ নং পৃষ্ঠাঃ শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মানুষের সাথে তুলনা করাঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মানুষের সাথে তুলনা করে খাটো করার চেষ্টা করা যেমন কুফরী তেমনি তাঁকে শানে রিসালাত ও আবদিয়াতের চেয়ে ঊর্ধ্বের মনে করাও কুফরী।............।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমতস্বরূপ, চাই তা মানুষ হােক বা অন্য প্রাণী হােক, মুসলিম হােক বা অমুসলিম হােক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্বজাহানের জন্য রহমতস্বরূপ। এমন কোন্ মুসলমান আছে, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভাগমনে আনন্দিত নয় কিংবা কৃতজ্ঞ নয়? এটা আমাদের ওপর নিছক অপবাদ ও মিথ্যা অভিযােগ ব্যতীত কিছুই নয়। 
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবন চরিত আলােচনা ও তার আগমনে আনন্দিত হওয়া থেকে যারা নিষেধ করে, তাদের থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনবৃত্তান্ত। আলােচনা তাে আমাদের ঈমানের অংশ |


❏ পৃষ্ঠা নং ৭০ : শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মদিবস পালন তাঁর প্রতি অবমাননাঃ

কেউ বলতে পারে, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মদিবস হিসেবে উৎসব পালন করি। আমি বলবাে, এরূপ যারা করে, তারা বস্তুত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে চরম বে-আদবী করে। সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কি দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সাথে, যাদের তার সাথে কোন তুলনাই হয় না, এভাবে তুলনা করা যায় যে, তাঁর জন্মদিনের আনন্দের জন্য দুনিয়ার অতি নগণ্য পন্থা অবলম্বন করা হবে, যা রাজা-বাদশাহদের জন্য করা হয়?

[নিজেই বিরোদ্ধে দিল ফতোয়া। দেখুন সে একথা বলেছে যে, জন্মদিন উপলক্ষে তারা সারা বছর আনন্দিত হয় এবং তা অত্যাবশ্যক। পূর্বে এর যথেষ্ঠ প্রমাণ দিয়েছি। আবার নিজেই বলছে অবমাননা। রাসূল (ﷺ) এর অবমাননা হল কুফরী, তাহলে কি তার খুশির নমুনা এই ছিল? নাকি অবমাননা মনে করে বলে মিলাদুন্নবী পালন করে না? কিন্তু সে বারবার বলেছে যারা বলে আমরা পালন করি না তারা অপবাদ দিল। তারা কেমন পালন করে তারা নিজেরাই জানে। এর প্রমাণ দেখাই যায় তাদের শিষ্য ও অনুসারীগণ তাকেও মানে না। সুষ্পষ্টভাবে মিলাদুন্নবীর (ﷺ) বিরোধীতা করে যায়। উক্ত বইয়ে থানভী সাহেব যে এমন শত শত যুক্ত দিয়েছেন যা তার নিজের বিরোদ্ধেই যায়]


তাফসীরঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, প্রসঙ্গঃ শানে রিসালাত, মীলাদুন্নবী (ﷺ)
মূলঃ মাওলানা মুহাম্মদ শফী (তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতা) 
অনূবাদকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দীন খান (তাবলিগ)
অর্থায়ন ও অনুমোদনঃ সউদি বাদশাহ

নবী করিম (ﷺ)-এর নুর

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আন্ নুরের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৯৪৪-৯৪৫-এ "নবী করিম (ﷺ)-এর নুর" শিরোনামের আলোচনায় রয়েছেঃ

"ইমাম বগাভী বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে, একবার হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কা'ব আহবারকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এই আয়াতের তাফসীরে আপনি কি বলেন? কা'ব অাহবার তাওরাত ও ইঞ্জিলে সুপণ্ডিত মুসলমান ছিলেন। তিনি বললেনঃ এটা রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পবিত্র অন্তরের দৃষ্টান্ত। মিশ্কাত তথা তাক মানে তাঁর বক্ষস্থল, زُجَاجَةٍ তথা কাঁচপাত্র মানে তাঁর পুতঃপবিত্র অন্তর এবং مِصْبَاحٌ তথা প্রদীপ মানে নুবুয়্যাত। এই নুবুয়্যাতরুপি নুরের বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রকাশিত ও ঘোষিত হওয়ার পূর্বেই এতে মানবমণ্ডলীর জন্যে আলো ও ঔজ্জল্য ছিল। এরপর ওহী ও ঘোষণা এর সাথে সংযুক্ত হলে এটা এমন নুরে পর্যবসিত হয়, যা সমগ্র বিশ্বকে আলোকজ্জল করে দেয়।

রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নুবুওয়াত প্রকাশ বরং তাঁর জন্মেরও পূর্বে তাঁর নুবুওয়াতের সুসংবাদবাহী অনেক অত্যাশ্চর্য ঘটনা পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে। হাদীসবিদগণের পরিভাষায় এসব ঘটনাকে 'এরহাসাত' বলা হয়। কেননা, 'মুজেযা' শব্দটি বিশেষভাবে এমন ঘটনাবলী বোঝাবার জন্যে প্রয়োগ করা হয়, যেগুলো নবুওয়তের দাবীর সত্যতা প্রকাশ করার জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পয়গম্বরের হাতে প্রকাশিত হয়। পক্ষান্তরে নবুওয়ত দাবীর পূর্বে এ ধরনের অনেক অত্যাশ্চর্য ঘটনা প্রকাশ পেলে তার নাম দেয়া হয় 'এরহাসাত'। এ ধরনের অনেক অত্যাশ্চর্য ঘটনা সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। শায়খ জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) 'খাসায়েসে কোবরা' গ্রন্থে, অাবু নায়ীম 'দালায়েল-নবুওয়াত' গ্রন্থে এবং অন্যান্য আলেমগণও স্বতন্ত্র গ্রন্থাদিতে এসব ঘটনা সন্নিবেশিত করেছেন। তাফসীরে মাযহারীতেও অনেক তথ্য বর্ণিত হয়েছে।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আন্ নুরের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৯৪৪-৯৪৫-এ "নবী করিম (ﷺ)-এর নুর" শিরোনামের আলোচনা।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, আয়াত ৭-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১০৭২-এ ডান কলামে লাইন ২৩ থেকে লাইন ২৯-এ রয়েছেঃ

" وَمِنكَ وَمِن نُّوح- 
সাধারণভাবে সমস্ত নবীগণের কথা উল্লেখের পর পাঁচ জনের নাম বিশেষভাবে এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবীকূলের মধ্যে তাঁরা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। এঁদের মধ্যে রসুলে মকবুল (ﷺ)-এর আবির্ভাব সকলের শেষে হয়ে থাকলেও وَمِنك শব্দের মাধ্যমে নবীজীকে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যার কারণ হাদীসে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ আমি (নবীকূলের মাঝে) সৃষ্টিগত দিক দিয়ে আগে, কিন্তু আবির্ভাব ও নবুওয়াত প্রাপ্তির দিক দিয়ে সকলের পরে।-(মাযহারী)
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, আয়াত ৭-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১০৭২-এ ডান কলামে লাইন ২৩ থেকে লাইন ২৯।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল-আনআম, পৃষ্ঠা ৪২৮, ডান কলামে লাইন ৮ থেকে লাইন ১৫-এ রয়েছেঃ

"আর আমি সর্বপ্রথম মুসলমান। উদ্দেশ্য এই যে, এ উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলমান আমি। কেননা, প্রত্যেক উম্মতের প্রথম মুসলমান স্বয়ং ঐ পয়গম্বরই হন যাঁর প্রতি ওহী অবতরণ করা হয়। প্রথম মুসলমান হওয়া দ্বারা এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, সৃষ্টজগতের মধ্যে সর্বপ্রথম রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর নুর সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর সমস্ত নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও অন্যান্য সৃষ্টজগত অস্থিত্ব লাভ করেছে। এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।- (রুহুল-মা'আনী)
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল-আনআম, পৃষ্ঠা ৪২৮, ডান কলামে লাইন ৮ থেকে লাইন ১৫।]

রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মিলাদ/জন্ম বৈশিষ্ট্য

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বাকারাহ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬৪ এর বাম কলামে "রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য" শিরোনামের আলোচনায় রয়েছেঃ

"রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্যঃ মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে উদ্ধৃত এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (ﷺ) বলেনঃ 'আমি আল্লাহর কাছে তখনও পয়গম্বর ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام)-ও পয়দা হয়নি; বরং তাঁর সৃষ্টির জন্য উপাদান তৈরি হচ্ছিল মাত্র। আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছিঃ আমি পিতা হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর দোয়া, ঈসা (عليه السلام)-এর সুসংবাদ এবং স্বীয় জননীর স্বপ্নের প্রতীক। ঈসা (عليه السلام)-এর সুসংবাদের অর্থ তাঁর এ উক্তি وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ (আমি এমন এক পয়গম্বরের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ। ৬১/৬।) তাঁর জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর পেট থেকে একটি নুর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জল করে তুলেছে। কোরআনে হুযুর (ﷺ)-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসঙ্গে দু'জায়গায় সুরা আলে-ইমরানের ১৬৪ তম আয়াতে এবং সুরা জুমু'আয় ইবরাহীমের দোয়ায় উল্লেখিত ভাষারই পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) যে পয়গম্বরের জন্যে দোয়া করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বাকারাহ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬৪-এর বাম কলামে "রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য" শিরোনামের আলোচনা।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল আহজাবের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১০৮৮-এ বাম কলামের লাইন ২৬ থেকে লাইন ৩৮-এ রয়েছেঃ

"سراج
অর্থ প্রদীপ منير অর্থ জোতির্ময়। রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পঞ্চম গুণ ও বৈশিষ্ট্য এই বলা হয়েছে যে, তিনি জোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ। আবার কতক মনিষী سراج منير এর মর্মার্থ কোরআন পাক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোরআন পাকের বর্ণনাধারা ও প্রকাশভংগী দ্বারা এই কথায় বোঝা যায় যে, ইহাও হযরত (ﷺ)-এরই বৈশিষ্ট্য ও গুণ বিশেষ।
কোরআনে বর্ণিত রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর এই গুণাবলী তাওরাতেও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, ইমাম বুখারী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه) এরশাদ করেন যে, আমি একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আসের (رضي الله عنه)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে অনুরোধ করলাম যে, তাওরাতে রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর যেসব গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে মেহেরবাণী পূর্বক আমাকে সেগুলো বলে দিন। তিনি এরশাদ করলেন, আমি তা অবশ্যই বলবো। আল্লাহর কসম! রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর যেসব গুণাবলীর বর্ণনা কোরআনে রয়েছে তা তাওরাতেও রয়েছে।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল আহজাবের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১০৮৮-এ বাম কলামের লাইন ২৬ থেকে লাইন ৩৮।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৩ এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬১৬-এ ডান কলামের লাইন ২০ থেকে শেষ লাইন পর্যন্ত রয়েছেঃ

"বিস্ময়ের বিষয় যে, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাবের পূর্বে তো এরা শেষ নবীর উপর বিশ্বাস পোষণ করত, তার নিদর্শনসমূহ ও তাঁর আগমনের সময় নিকটবর্তী হওয়ার সংবাদ লোকদেরকে বলত, নিজেরাও দোয়া করতে গিয়ে শেষ যামানার নবীর ওসীলা দিয়ে দোয়া করত, কিন্তু যখন শেষ যমানার নবী (ﷺ) তাঁর যাবতীয় প্রমাণাদি এবং তওরাতের বাতলানো নিদর্শনসহ আগমন করলেন, তখন এরা পরষ্পর মতবিরোধ করতে লাগল এবং কিছু লোক ঈমান আনলেও অন্যান্য সবাই অস্বীকার করল। এ আয়াতে রাসুলে কারিম (ﷺ)-এর আগমনকে جَاءَهُمُ الْعِلْم শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এখানে ُ الْعِلْم বলতে 'নিশ্চিত বিশ্বাস'ও উদ্দেশ্য হতে পারে। তাহলে অর্থ হবে এই যে যখন প্রত্যক্ষ করার সাথে সাথে বিশ্বাসের উপকরণসমূহ সংযোজিত হয়ে গেল, তখন তারা মতবিরোধ করতে লাগল।
কোন কোন তাফসীরবিদ একথাও বলেছেন যে, এখানে الْعِلْم অর্থ যখন সে সত্তা সামনে এসে উপস্থিত হল, যা তওরাতে ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে পূর্বাহ্নেই জানা ছিল, তখন তারা মতবিরোধ করতে আরম্ভ করল।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৩ এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬১৬-এ ডান কলামের লাইন ২০ থেকে শেষ লাইন পর্যন্ত।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৩০২-এ ডান কলামের লাইন ১ থেকে লাইন ৮ পর্যন্ত রয়েছেঃ

"আলোচ্য আয়াত نور (নুর) শব্দ দ্বারা কোরআন শরীফকে বোঝানো হয়েছে।-(রুহুল-মা'আনী) যেমন, সুরা মায়েদার আয়াত قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ অর্থাৎ, তোমাদের কাছে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে এক উজ্জল আলো তথা এক প্রকৃষ্ট কিতাব অর্থাৎ, কোরআন এসেছে।- (বয়ানুল কোরআন)
আবার নুর অর্থ রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এবং কিতাব অর্থ আল-কোরআনও হতে পারে।- (রুহুল মা'আনী) তবে তার অর্থ এই নয় যে, রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) মানবীয় দৈহিকতা থেকে পবিত্র শুধু নুর ছিলেন।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৩০২-এ ডান কলামের লাইন ১ থেকে লাইন ৮ পর্যন্ত।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আত্ তাগাবুনের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১৩৭৭-এ ডান কলামের লাইন ২৩ থেকে লাইন ২৬ এ রয়েছেঃ

"মানব হওয়া নবুওয়তেরও পরিপন্থী নয় এবং রেসালাতের উচ্চ মর্যাদারও প্রতিকূল নয়। রসুল (ﷺ) নুর হলেও মানব হতে পারেন। তিনি নুরও এবং মানবও। তাঁর নুরকে প্রদীপ, সূর্য ও চন্দ্রের নুরের নিরীখে বিচার করা ভুল।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আত্ তাগাবুনের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ১৩৭৭-এ ডান কলামের লাইন ২৩ থেকে লাইন ২৬।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বনী ইসরাঈলের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃৃষ্ঠা ৭৯৩-এ বাম কলামের লাইন ২ থেকে লাইন ৫-এ রয়েছেঃ

"প্রশ্ন হয় যে, রসুল ও উম্মতের সমজাতি হওয়া যখন শর্ত, রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) জ্বিন জাতির রসুল নিযুক্ত হলেন কিরুপে! জ্বিন তো মানুষের সমজাতি নয়। উত্তর এই যে, রসুল শুধু মানবই নন; বরং তিনি ফেরেশ্তাসূলভ ব্যক্তিত্ব এবং মর্যাদারও অধিকারী  এ কারণে তাঁর সাথে জ্বিনদেরও সম্পর্ক থাকতে পারে।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বনী ইসরাঈলের তাফসীর প্রসঙ্গে পৃৃষ্ঠা ৭৯৩-এ বাম কলামে লাইন ২ থেকে লাইন ৫।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল্ মুনাফিকুন এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃৃষ্ঠা ১৩৭১-এ রয়েছেঃ

"কা'ব ইবনে লুবাই রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পূর্বপুরুষদের অন্যতম। আল্লাহ্ তায়ালা মুর্খতাযুগেও তাঁকে প্রতিমা পুঁজা থেকে রক্ষা করেন এবং একত্ববাদের বিশ্বাস রাখার তৌফীক দান করেন। তিনি রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর আবির্ভাবের সুসংবাদও মানুষকে শুনিয়েছিলেন। কোরাইশ গোত্র তাঁকে একজন মহান ব্যক্তি হিসেবে সম্মান করত। ফলে রসুলুল্লাহ্ (ﷺ) নবুওয়ত লাভের পাঁচশত ষাট বছর পূর্বে যেদিন তাঁর মৃত্যু হয়, সেদিন থেকেই কোরাইশরা তাদের বছর গণনা শুরু করে। শুরুতে কা'বা গৃহের ভিত্তি স্থাপন থেকে আরবদের বছর গণনা আরম্ভ করা হত। কা'ব ইবনে লুবাই- এর মৃত্যুর পর তাঁর মৃত্যুদিবস থেকেই বছর গণনা প্রচলিত হয়ে যায়। এরপর রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্মের বছর যখন হস্তিবাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হয়, তখন এদিন থেকেই তারিখ গণনা আরম্ভ হয়। সারকথা এই যে, ইসলাম পূর্বকালেও কা'ব ইবনে লুবাই -এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দান করা হত। তিনিই এই দিনের নাম জুমুআর দিন রেখেছিলেন।- (মাযহারী)"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা আল্ মুনাফিকুন এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃৃষ্ঠা ১৩৭১।]

❏ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ২১৫-এ "মহানবী (ﷺ)-এর আগমন সমগ্র মানবতার জন্য সর্ববৃহৎ অনুগ্রহ" শিরোনামের আলোচনায় রয়েছেঃ

"মহানবী (ﷺ)-এর আগমন সমগ্র মানবতার জন্য সর্ববৃহৎ অনুগ্রহঃ  لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ আয়াতে বর্ণিত বিষয়বস্তুর প্রায় অনুরূপ বিষয়েরই একটি আয়াত সূরা বাক্বারায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ আয়াতে একটি শব্দ অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে-
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
এ প্রসঙ্গে প্রথম লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, কুরআন কারীমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মহানবী (ﷺ) হচ্ছেন সমগ্র বিশ্বের জন্য সবচাইতে বড় নেয়ামত ও মহা অনুগ্রহ। কিন্তু এখানে এই আয়াতে শুধুমাত্র মু’মিনেদের জন্য নির্দিষ্ট করাটা কুরআনের অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে কুরআন সমগ্র বিশ্বের জন্য হিদায়াত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত থাকা সত্ত্বেও هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ বলারই অনুরূপ যে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাকে মুত্তাকীনেদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তার কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই এক। তা হল এই যে, যদিও রসূলে মকবূল (ﷺ)-এর অস্তিত্ব মু’মিন-কাফের নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্বের মহা নেয়ামত এবং বিরাট অনুগ্রহ, তেমনিভাবে কুরআন কারীমও সমগ্র বিশ্ব-মানবতার জন্য হিদায়াত, কিন্তু যেহেতু এই হিদায়াত ও নেয়ামতের ফল শুধু মু’মিন-মুত্তাকীরাই উপভোগ করছে, সেহেতু কোন কোন স্থানে একে তাঁদেরই সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে।"
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ২১৫-এ "মহানবী (ﷺ)-এর আগমন সমগ্র মানবতার জন্য সর্ববৃহৎ অনুগ্রহ" শিরোনামের আলোচনা।]
Top