জিজ্ঞাসা–৬২৩কসর নামাজের শর্ত কি? ৬ থেকে ১০ ঘন্টার যাত্রায় কি কসর আদায় করতে হবে? কসর শর্ত পূরণ হলেও কসর নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে?–ওয়াহিদুজ্জামান।
জবাব:
এক. কসর পড়ার জন্য শর্ত হল, মুসাফির হওয়া। ৪৮ মাইল (৭৭.২৪৬৪কিলোমিটার) বা এর বেশি সফর করার নিয়তে কেউ যদি নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানা অতিক্রম করে তবে সে তখন থেকে মুসাফির গণ্য হবে এবং নামায কসর করবে। অর্থাৎ যোহর, আসর ও ইশার ফরয নামায দুই রাকাত করে আদায় করবে। আর সফর অবস্থায় কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফির থাকবে। কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম গণ্য হবে এবং পূর্ণ নামায পড়তে হবে। (শরহুল মুনয়াহ ৫৩৫, ৫৩৬, ৫৩৯ আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭, ২/৩৮৮-৩৮৯ আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮, ২/১৩১ আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১, ২/১২৪-১২৫ জাওয়াহিরুল ফিক্হ ৩/৪২৮)
কেননা, ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ  বলেছেন,
يَا أَهْلَ مَكَّةَ ، لا تَقْصُرُوا الصَّلاةَ فِي أَدْنَى مِنْ أَرْبَعَةِ بُرُدٍ
হে মক্কাবাসী! চার বারীদের কমে কসর করবে না।(দারা কুতনী ১/৩৮৭)
ইমাম বুখারি রহ. বলেন,
 وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، يَقْصُرَانِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهِيَ سِتَّةَ عَشَرَ فَرْسَخًا
ইবনে উমর রাযি এবং  ইবনে আব্বাস রাযি চার বারীদ সফরের সময় কসর পড়া এবং রোযা ভাঙ্গার কথা বলেছেন। আর সেটি হল, ১৬ ফরসখ। (সহিহ বুখারি, নামায কসর করা অধ্যায়)
এক ফরসখ তিন মাইল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক বারীদ হয় ১২ মাইল। আর চার বারীদকে ১২ দিয়ে গুণ দিলে কিংবা ষোল ফরসখকে তিন দিয়ে গুণ দিলে হয় ৪৮ মাইল। অতএব, সফরের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৪৮ মাইল। ( কামুসুল ফিকহ ২/৩১৪ আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৭৫)
দুই. মুসাফিরের জন্য যোহর আসর ও ইশার ফরয নামায দুই রাকাত পড়া (কসর) ওয়াজিব;  চার রাকাত (পূর্ণ পড়া) নাজায়েয। কারণ মুসাফিরের নামাযের বিধান হল কসর।
তবে যদি ভুলে ৪ রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে ২ রাকাত পড়ে যদি বৈঠক করে থাকে তাহলে প্রথম ২ রাকাত ফরয হবে, আর বাকি ২ রাকাত নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। কিন্তু সালাম ফিরাতে দেরী হওয়ায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। যদি নামাযের শেষে সেজদায়ে সাহু দেয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে। আর যদি সেজদায়ে সাহু না দেয়, তাহলে নামায পুনরায় পড়তে হবে।
যদি ২ রাকাতের পর বৈঠক না করে থাকে, তাহলে নামায হয় নি, নামাযটি পূণরায় পড়তে হবে।
এর দলিল হল, আয়েশা রাযি. বলেন,
فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ
মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামায দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের নামায ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের নামাযে বৃদ্ধি করা হল। (বুখারী ১০৪০ মুসলিম ৬৮৫)
অপর হাদিসে এসেছে,
عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ –  – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ  এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি  উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ  এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)
Top