হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ) কে নিয়ে জাহেলদের উত্থাপিত কিছু প্রশ্নের জবাব।

🖋লেখকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


১।প্রশ্নঃ উনারে আওলাদে রাসূলের সার্টিফিকেট কে দিল?


🖋জবাবঃ 

প্রথমত, এর জন্য কি কুরআন হাদিসে খুঁজবেন নাকি বংশীয় শাজরা খুঁজবেন? হ্যাঁ এখন বলতে পারেন টাকা দিয়েও এসব জাল বানানো যায়। আরে মিয়া জাল তো জালই। আজকে যদি আপনে আওলাদে রাসূল সাজেন আপনার উপর গজব আসতে বেশি দেরী হবে না।


দ্বিতীয়ত, আপনে যে আপনার দাদার দাদার দাদার আওলাদ আপনার নিকট তার কি প্রমাণ আছে? আওলাদে রাসূল যারা তাদের সবার বংশীয় শাজরা রাসূলের যুগ থেকে একে একে সংরক্ষিত আছে। এটাই হল আওলাদে রাসূলের সত্যতা। এখন শাজরা দেখানোর পরও বিশ্বাস করা না করা তো সেটা আপনার বিষয়। আমি এও জানি শয়তানের যুক্তির শেষ নেই। জবাব যদি হাজারটাও দেই আপনার ফিত্নায় জর্জরিত ক্বলব ঠান্ডা হবে না।


২।প্রশ্নঃ উনি আওলাদে রাসুল (ﷺ) হলে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) সৌদিআরবের মদীনাতে রাসূলের রওজা পাকে পালন না করে চট্টগ্রামে পালন করতে আসেন কেন?


🖋জবাবঃ 

দ্বীন প্রচারের জন্য নবীগণ, সাহাবীগণ এক দেশে জন্ম নিয়ে অন্য দেশে গেলেন কেন? দ্বীনের খেদমত সারা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে গিয়ে করুন কুরআন হাদিসে এর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। 


৩।প্রশ্নঃ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর আদেশ অনুযায়ী ৩ মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদে সফর করা নিষিদ্ধঃ ক। মাসজিদুল হারাম, খ। মাসজিদুল মানোওয়ারা, গ। মাসজিদুল আক্বসা।

তাহলে আওলাদে রাসূল (ﷺ) হয়ে এই ব্যক্তি কিভাবে রাসূলের আদেশ অমান্য করে বাংলাদেশের মাসজিদুল শিয়াতে সফর করছেন?


🖋জবাবঃ 

যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। আপনারা যখন সারা বাংলার মসজিদগুলোতে গাট্টি-বস্তা কাঁধে নিয়ে সফরে বের হন তখন এই হাদিস কি চোখে পড়ে না? যখন বিশ্ব ইজতেমায় সফর করেন তখন এই হাদিস কোথায় যায়? যাই হোক, এই হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা আপনারাই করেন কখনও এই হাদিসকে ব্যবহার করে মসজিদের হাদিস নিয়ে মাযার জিয়ারতে ঢুকিয়ে মাযার জিয়ারত করতে নিষেধ করেন, কখনও অন্য কোথাও স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য প্রয়োগ করেন। এসব নিয়ে হাজার দিন তর্ক করতে পারেন অথচ উক্ত হাদিসটি [মিশকাতুল মাসাবিহঃ বাবুল মসজিদে] বর্ণিত আছে তার শরাহগ্রন্থ খুজে দেখতে কষ্ট লাগে। ঠেকা যখন আপনার আপনিই এর ব্যাখ্যা খুঁজে বের করবেন নিম্নোক্ত কিতাব থেকে - 

▪ মিরকাত শরহে মিশকাত (মুহাদ্দিস ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী রহ.)  

▪ মিরআতুল মানাজিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবিহ (হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী রহ.)


তাও আমি মাসুম, এখানে অল্প করে কিছু ব্যাখ্যা উল্লেখ করছি, যা মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর থেকে নেয়া হয়েছে,

▶‘‘তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন (মসজিদের) দিকে সফর করবে না। এ তিন মসজিদগুলো হলো বায়তুল্লাহ, বায়তুল মুকাদ্দিস ও আমার এ মসজিদ।’’(বুখারী, মুসলিম)

অথচ এ হাদিসের ভাবার্থ হচ্ছে, 

[এ তিন মসজিদে নামাযের ছওয়াব বেশী পাওয়া যায়। যেমনঃ 

▶মসজিদ বায়তুল্লাহ এক নেকীর ছওয়াব অন্যান্য জায়গায় এক লাখের সমান। (বুখারী) এবং 

▶বায়তুল মুকাদ্দাস ও মাদীনা পাকের মসজিদে এক নেকীর ছওয়াব পঞ্চাশ হাজারের সমান। (ইবনে মাযাহ) সুতরাং এসব মসজিদসমূহে এ নিয়তে দূর থেকে সফর করে আসা কল্যাণকর ও জায়েয। কিন্তু অন্য কোন মসজিদের দিকে একই নিয়তে সফর করা অনর্থক ও নাজায়েয। নাউযুবিল্লাহ!_কিতাব ফতোয়ায়ে আহলুস সুন্নাহ]


▶ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) বলেছেন-

 وَالصَّحِيحُ إبَاحَتُهُ،

-‘‘বিশুদ্ধ হল তিন মসজিদ ছাড়াও অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ।’’

{ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, ২/১৯৫পৃ. মাকতুবাতুল কাহেরা, মিশর, প্রকাশ}


▶ফাত্ওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ডে ‘যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লিখিত আছে-


وَهَلْ تُنْدَبُ الرِّحْلَةُ لَهَا كَمَا اُعْتِيدَ مِنْ الرِّحْلَةِ إلَى زِيَارَةِ خَلِيلِ الرَّحْمَنِ وَأَهْلِهِ وَأَوْلَادِهِ، وَزِيَارَةِ السَّيِّدِ الْبَدَوِيِّ وَغَيْرِهِ مِنْ الْأَكَابِرِ الْكِرَامِ؟ لَمْ أَرَ مَنْ صَرَّحَ بِهِ مِنْ أَئِمَّتِنَا، وَمَنَعَ مِنْهُ بَعْضُ أَئِمَّةِ الشَّافِعِيَّةِ إلَّا لِزِيَارَتِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قِيَاسًا عَلَى مَنْعِ الرِّحْلَةِ لِغَيْرِ الْمَسَاجِدِ الثَّلَاثَةِ. وَرَدَّهُ الْغَزَالِيُّ بِوُضُوحِ الْفَرْقِ،


-‘‘কবর যিয়ারত উপলক্ষে সফর করা মুস্তাহাব। যেমন আজকাল হযরত খলিলুর রহমান (রহ.) ও হযরত ছৈয়দ বদ্দবী (রহ.) এর মাযার যিয়ারতের জন্য সফর করা হয়। আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামদের কারো ব্যাখ্যা দেখিনি। তবে শাফেঈ মাযহাবের কয়েকজন আলিম তিন মসজিদ ব্যতীত ভিন্ন সফর নিষেধ এ হাদীসের উপর অনুমান করে নিষেধ বলেছেন। কিন্তু ইমাম গাযযালী (রহ.) এ নিষেধাজ্ঞাকে খন্ডন করেছেন এবং পার্থক্যটা বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন।’’

{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন}


▶এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) মিশ্কাত শরীফের অপর ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

وَفِي شَرْحِ مُسْلِمٍ لِلنَّوَوِيِّ قَالَ أَبُو مُحَمَّدٍ: يَحْرُمُ شَدُّ الرَّحْلِ إِلَى غَيْرِ الثَّلَاثَةِ وَهُوَ غَلَطٌ، وَفِي الْإِحْيَاءِ: ذَهَبَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ إِلَى الِاسْتِدْلَالِ بِهِ عَلَى الْمَنْعِ مِنَ الرِّحْلَةِ لِزِيَارَةِ الْمَشَاهِدِ وَقُبُورِ الْعُلَمَاءِ وَالصَّالِحِينَ، وَمَا تَبَيَّنَ فِي أَنَّ الْأَمْرَ كَذَلِكَ، بَلِ الزِّيَارَةُ مَأْمُورٌ بِهَا لِخَبَرِ: ( كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ أَلَا فَزُورُوهَا ) . وَالْحَدِيثُ إِنَّمَا وَرَدَ نَهْيًا عَنِ الشَّدِّ لِغَيْرِ الثَّلَاثَةِ مِنَ الْمَسَاجِدِ لِتَمَاثُلِهَا، بَلْ لَا بَلَدَ إِلَّا وَفِيهَا مَسْجِدٌ، فَلَا مَعْنَى لِلرِّحْلَةِ إِلَى مَسْجِدٍ آخَرَ، وَأَمَّا الْمَشَاهِدُ فَلَا تُسَاوِي بَلْ بَرَكَةُ زِيَارَتِهَا عَلَى قَدْرِ دَرَجَاتِهِمْ عِنْدَ اللَّهِ، ثُمَّ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ يَمْنَعُ هَذَا الْقَائِلُ مِنْ شَدِّ الرَّحْلِ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ كَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَيَحْيَى، وَالْمَنْعُ مِنْ ذَلِكَ فِي غَايَةِ الْإِحَالَةِ، وَإِذَا جُوِّزَ ذَلِكَ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْأَوْلِيَاءُ فِي مَعْنَاهُمْ، فَلَا يَبْعُدُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ مِنْ أَغْرَاضِ الرِّحْلَةِ، كَمَا أَنَّ زِيَارَةَ الْعُلَمَاءِ فِي الْحَيَاةِ


-‘‘ইমাম নববী (রহঃ) এর শরহে মুসলিমে বর্ণিত আছে-ইমাম আবু মুহাম্মদ (রহ.) বলেছেন যে, ওই তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য দিকে সফর করা হারাম। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। ইমাম গাযযালীর ‘ইহ্ইয়াউল উলুমুদ্দীন’ কিতাবে উল্লেখিত আছে “কতেক আলিম বরকতময় স্থানসমূহ ও উলামায়ে কিরামের মাযারে যিয়ারত উপলক্ষে সফর করাকে নিষেধ বলে। কিন্তু আমি যা বিশ্লেষণ করে পেয়েছি, তা এরকম নয় বরং কবর যিয়ারতের নির্দেশ আছে যেমন হাদীসে আছে أَلَا فَزُورُوهَا  (এখন থেকে যিয়ারত কর) ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করার থেকে নিষেধ এজন্য করা হয়েছে যে বাকী সব মসজিদ ফযীলতের দিক দিয়ে একই বরাবর। কিন্তু বরকতময় স্থানসমূহ একই বরাবর নয় বরং মর্তবা অনুযায়ী ওগুলোর বরকত ভিন্ন ভিন্ন। এসব নিষেধকারীরা কি নবীদের মাযার, যেমন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) প্রমুখের মাযার যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করতে পারবে কি? নিশ্চয়ই না, কারণ এটা অসম্ভব। আর আল্লাহর ওলীগণের বেলায়ও একই হুকুম প্রযোজ্য। সুতরাং বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে যদি ওনাদের সেখানে সফর করে যাওয়া হয়, যেমনি উলামায়ে কিরামের জীবদ্দশায় তাঁদের কাছে যাওয়া যায়, কি অসুবিধে আছে?।’’

{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৫৮৯পৃ. হাদিস নং.৬৯৩}


৪।প্রশ্নঃ কসর হল সফরের নামাজ। উনি যখন বাংলাদেশে পৌঁছে গেছেন, তখন সফর শেষ। তাহলে আবার কিসের সফরের নামাজ?


🖋জবাবঃ

প্রশ্নকর্তা আবারও তার প্রশ্নের মাধ্যমে নিজের জাহেলিয়াত তথা মূর্খতার পরিচয় দিলেন। সফরের বিধিবিধান সম্পর্কে শত শত মাসায়েল ফিকাহের কিতাবে মওজুদ আছে। সর্বাঙ্গে ব্যাথা ওষুধ দিব কোথায়? 

প্রথমত, তিনি যখন দেশ থেকে সফরের নিয়্যতে বের হয়েছেন, আসা যাওয়ার পথে অবশ্যই কসর নামাজ পড়বেন।

দ্বিতীয়ত, তিনি আর আসার পর থেকেও সফরের উপরই থাকেন। আর সফর অবস্থায় কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফির থাকবেন। যেমন ফিক্বাহের কিতাবগুলোতে বর্ণিত আছে,


"কসর পড়ার জন্য শর্ত হল, মুসাফির হওয়া। ৪৮ মাইল (৭৭.২৪৬৪কিলোমিটার) বা এর বেশি সফর করার নিয়তে কেউ যদি নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানা অতিক্রম করে তবে সে তখন থেকে মুসাফির গণ্য হবে এবং নামায কসর করবে। অর্থাৎ যোহর, আসর ও ইশার ফরয নামায দুই রাকাত করে আদায় করবে। আর সফর অবস্থায় কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফির থাকবে। কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম গণ্য হবে এবং পূর্ণ নামায পড়তে হবে। 

(শরহুল মুনয়াহ ৫৩৫, ৫৩৬, ৫৩৯ আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭, ২/৩৮৮-৩৮৯ আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮, ২/১৩১ আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১, ২/১২৪-১২৫ জাওয়াহিরুল ফিক্হ ৩/৪২৮)


৫।প্রশ্নঃ আওলাদে রাসূল হলেই কি তাকে ইমামতির ভার দিতে হবে, ঐ মসজিদের ইমাম কই?


🖋জবাবঃ 

রাসূলের যুগে রাসূলের উপস্থিতিতে সাহাবীগণ কখনও ইমামতি করতেন না যদি না রাসূলের হুকুম পেয়েছেন। পরবর্তী যুগে বিজ্ঞ আলেম ও ইমামগণ জ্ঞানের গভীরতা দেখে কিংবা খোদাভিরু তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তিদের অথবা আল্লাহর কোন অলী/বুজুর্গ ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে সেখানে তাদেরকে ইমামতির জন্য ছেড়ে দেয়া সেটা আদবের পর্যায়ভুক্ত। শয়তান সাত আসমান জমিনের সর্বস্থানে সিজদা দিয়েও আল্লাহর নবীর শানে গোস্তখী/বেয়াদবী করাতে সে ফেরেশতাদের সর্দার থেকে শয়তান হিসেবে বিতারিত হয়। সুতরাং বেয়াদবদের সর্বপ্রথম ও আদি উস্তাদ হল শয়তান।


৬।প্রশ্নঃ ইমাম ২ রাকআত পড়ে নামাজ শেষ করবে, আর মুসুল্লীরা নিজে নিজে বাকী ২ রাকআত নামাজ পড়বে---এরকম বিদআতি নামাজ কই পাইল এই আওলাদে রাসূল? হাদীস কি বলে?


🖋জবাবঃ 

প্রশ্নকর্তা আবারও স্বীয় প্রশ্নের মাধ্যমে নিজের অজ্ঞতার পরিচয় দিলেন। 

[হানাফী মাযহাবের মতে, "মুসাফির ইমাম দু'রাকাত (ফরজ) নামাজ শেষ করে সালাম ফিরাবেন। বাদায়িউস সানা ও আল হিদায়াতে আছে, "মুসাফির ইমামের উচিত যে, প্রিয় রাসূল (ﷺ)'এর অনুসরণে মুকিম মুকতাদিগণের উদ্দেশ্যে বলে দেয়া যে, আমি মুসাফির তোমরা নিজেদের নামাজ পূর্ণ করে নাও।"]

▪ বাদায়িউস সানা, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০১।

▪ আল হিদায়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৭।

▪ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (রহঃ), ফতোয়ায়ে আজিজিঃ ১ম খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা।

তাছাড়াও মুসাফির ব্যক্তির নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত মাসায়েল (কুদুরী, ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ফতোয়ায়ে রজভিয়্যাহ) সহ যেকোন ফিক্বাহের কিতাবে দেখতে পারেন।


৭।প্রশ্নঃ আওলাদে রাসূলের গাড়ি বহর কি হিন্দুদের রথযাত্রা বা শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের সাথে মিলে যায় না? বিধর্মীদের অনুসরণ করে মুসলিম উম্মাহ থেকে বের হয়ে যাওয়া এই ব্যক্তি কিভাবে আওলাদে রাসূল হতে পারেন?


🖋জবাবঃ 

আল্লাহর রাসূলের সাথে কোন কিছুর তুলনা নেই কিন্তু জাহেলের দল যেহেতু রাসূলের মিলাদকে এমন হারাম কাজের সাথে তুলনা করেছে তাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। 


প্রথমত, 

সুন্নীরা গাড়ি বহর করলেই যদি রথযাত্রা হয়। আপনাদের জামাতপন্থী হেফাযতে ইসলামের কর্মীরা যখন গাড়ি বহর করে সেদিন লাখো মানুষ একত্র হয়েছিল সেদিন কোথায় ছিল রথযাত্রার ফতোয়া? বিশ্ব ইজতেমায় যখন গিয়ে সবাই একত্রিত হোন কোথায় থাকে বিদআতের ফতোয়া? বাংলাদেশে ইজতিমা করার হুকুম কোন হাদিসে পাইসেন? তখন তো ঠিকই বিদআতে হাসানা মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছু পারেন না।


দ্বিতীয়ত, 

1.রথযাত্রা কাদের উৎসব? কারা অংশ নেয়?➡ হিন্দুদের উৎসব, হিন্দুরা।

2.রথযাত্রায় কি কি স্থান পায়?➡ নারী পুরুষের সম্মিলিত জোয়ার আর পর্দাবিহীন পোশাক, নাচ, গান, বিভিন্ন প্রাণীর ছবি কিংবা মূর্তি।

3.এর উদ্দেশ্য কি?➡ দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে আয়োজিত উৎসব।


পক্ষান্তরে,

1.জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) কাদের উৎসব?➡ মুসলমানদের।

2.কি কি স্থান পায়? দলবদ্ধ জুলুস। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করেন মদিনাবাসি এইভাবে দলবদ্ধভাবে জুলুসে নেমেছিল আর এই নিম্নোক্ত ইসলামী কবিতা/গজলের সাথে সম্বোধন জানিয়েছিলঃ


(ক).তা’লা আল বাদরু আলাইনা।➡طلع البدر علينا

অর্থাৎ, পূর্ণিমার চাঁদ আমাদের উপর (কাছে) এসেছে।

(খ).মিন ছানি’য়া তিল–ওয়া’দা।➡من ثنيات الوداع

অর্থাৎ, ওয়া'দা‘ উপত্যকা থেকে। [যে উপত্যকা দিয়ে হযরত মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় প্রবেশ করেন।]

(গ).ওজাবাশ শুক’রু আলাইনা।➡وجب الشكر علينا

অর্থাৎ, এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

(ঘ).মা দা আ লিল্লাহি দা।➡ما دعى لله داع

অর্থাৎ, যতদিন আল্লাহর অস্তিত্ব/ আল্লাহকে ডাকার মত কেউ থাকবে।

(ঙ).আইয়্যু হা’ল মাব উ’ছু ফিনা।➡أيها المبعوث فينا

অর্থাৎ, ওহ, আমাদের পথ প্রর্দশক আজকে আমাদের মধ্যে।

(চ).জি’তা বি’ল-আম্রিল -মু’তা।➡جئت بالأمر المطاع

অর্থাৎ, যিনি (আল্লাহর পক্ষ থেকে )আদেশ/উপদেশ নিয়ে এসেছেন যার প্রতি আমাদের কর্ণপাত করতে হবে।

(ছ).জি’তা শার’রাফ তা’ল-মদিনা।➡جئت شرفت المدينة

অর্থাৎ, আপনি এই শহরের জন্য প্রশংসা/মর্যাদা বয়ে নিয়ে এসেছেন।

(জ).মারহাবান ইয়া খাইরা দা'।➡مرحبا يا خير داع

অর্থাৎ, স্বাগতম আপনাকে, যিনি আমাদের সঠিক পথ দেখাবেন/ সথিক পথ সমন্ধে বলবেন।


3.এর উদ্দেশ্য কি?➡রাসূলে খোদা ﷺ এর আগমনে আনন্দ উদযাপন করা। আমরা ওহাবীদের মত ঘরের কোণে মুখে তালা দিয়ে আনন্দ করতে শিখি নি কি করব! যেমন আল্লাহ পাক হুকুম করেছেনঃ


🕋 [হে রাসূল ﷺ]! আমি তো আপনাকে সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। [আল আম্বিয়া ১০৭]

🕋 [হে রাসূল ﷺ]! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহর ফযল ও রহমত প্রাপ্তির কারণে তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এটি তাদের সমুদয় সঞ্চয় অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা উত্তম। [সুরা ইউনুস ১০:৫৮]


🔺সূরা ইউনুস ৫৮ নং আয়াতের তফসীরঃ

------------------------------------------------

🕋 সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, 

এখানে আল্লাহর "ফাদ্বল" দ্বারা ইলম এবং "রহমত" দ্বারা নবীজী (ﷺ)-কে বুঝানো হয়েছে।" 

১.ইমাম তিরমিযী-মাজমাউল বায়ান,৫/১৭৭-১৭৮পৃ

২.ইমাম হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারুল মুহিত, ৫/১৭১ পৃ.


🕋 বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (রাঃ) ও তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (রাঃ) সহ আহলে বাইয়াতের ইমাম আবু জাফর বাকের (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,

عن قتادة رضى الله تعالى عنه ومجاهد وغيرهما قال ابو جعفر الباقر عليه السلام فضل الله رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم .

-“আল্লাহর "ফদ্বল" দ্বারাও রাসূল (ﷺ)-কে বুঝানো হয়েছে।” [তিবরিমী, মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.]


তৃতীয়ত, 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করে তোমরা তোমাদের মজলিশ সমূহকে সজ্জিত করো, কেননা তোমাদের দরূদে পাক পাঠ করা কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্য নূর হবে।” 

[ফিরদৌসুল আখবার, ১ম খন্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা,হাদীস ৩১৪৯]


আলহামদুলিল্লাহ, আমরা মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে দরূদ পড়ি, মিলাদ পড়ি, কাসীদা পড়ি, নাত পড়ি, মাহফিল করি আর সবগুলো সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করতে পছন্দ করি।


৮।প্রশ্নঃ উনি পাকিস্তানী। পরাজিত শক্তির একটি লোককে নিয়ে বাংলাদেশের শিয়া সম্প্রদায় এইভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার সময় আমাদের চেতনাধারীরা চুপ থাকে কিভাবে? তারা এখন কোথায়?


🖋জবাবঃ 

প্রথমত, ইসলামে এমন কোন শিক্ষা নেই যে কোন মুসলমান জাতি, গোত্র, সম্প্রদায় কিংবা দেশকে বিদ্বেষ পোষণ করা। এটা পৃথিবীর সকল সুবিবেচক মানে যে, একজন অপরাধীর জন্য অপর একজন নির্দোষকে কখনও সাজা দেয়া যায় না। আর আল্লাহর বিধানে তো জাররা পরিমাণও অবিচার নেই। এ ব্যক্তির উক্ত কথায় কেবল মাত্র ইসলাম বিদ্বেষী ভাব ফুটে উঠল। এভাবে মুসলমান তো দূরে থাক কোন বিধর্মীকেও ঢালাও ভাবে গণহারে দোষী বলা যাবে না, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী উক্ত কাজের দায়ে দোষী হয়।


দ্বিতীয়ত, 

পূর্বের সব ভন্ডামীর প্রমাণ দেয়ার পর এখন এইটুকু পানির মত সুষ্পষ্ট যে আপনে গিরগিটির মত বহুরূপী। কারণ এটা নিশ্চিত যে আপনে জামাতী কিংবা লা মাযহাবী আহলে হাদিস নামধারী ফির্কা। 

তাই রাজাকারদের মুখে এইসব দেশপ্রেমের মায়াকান্না মানায় না। আপনাদের গুরুজনেরা বাঙ্গালী হয়েও কেন ফাঁসিতে ঝুলেছেন? কারণ হল জামার মধ্যে ইসলাম ক্বলব ফাঁকা।


তৃতীয়ত,

জাহেলিয়্যাতের কোন পর্যায়ে পৌঁছালে এমন অভিযোগ আনতে পারে যে, সুন্নীরা শিয়া! যে ব্যক্তি শিয়া সুন্নির তফাৎ বুঝে না তার সাথে তো এসব নিয়ে কথাই বলাই উচিত না। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া কোন ছাত্র হলে Wikipedia তে যে ভাষায় ইচ্ছা সে ভাষায় [Shia-Sunni Islam] লিখে সার্চ দেন। ইতিহাস সহ সব চলে আসবে।

৭৩ ফির্কার মধ্যে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল (আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত)- যা বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ওনার লেখা (গুনিয়াতুত তালেবীন) কিতাবে আজ থেকে ৯০০ বছর পূর্বে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে গেছেন। যে ব্যক্তি নিজেকে বড়পীরের চাইতেও বেশি ইনসানে কামেল মনে করে সেই কেবল এই জাহেল প্রশ্নকারী শয়তানের কথা মানতে পারে।


৯।প্রশ্নঃ দেশের পুদিনাপাতা মুখে বলেন পাকিস্তানের কথা তিনি শুনতে পারেন না, কিন্তু পাকিস্তানী আওলাদকে তিনি কিভাবে স্বাধীন দেশের মাটিতে এভাবে ঘোরার অনুমতি দেন?


🖋জবাবঃ 

হাহাহা বলেছিলাম না। এই জাহেল নিশ্চই ওহাবী জামাত হবে। প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিয়ে সে তা প্রমাণ করে দিল।


১০।প্রশ্নঃ শেষ জামানায় মুসলমানদের একমাত্র রক্ষাকবচ কোরআন ও হাদীস হলে, আওলাদে রাসূলের তকমার পিছে ছুটে মুসলমানরা কেন বিভ্রান্ত হচ্ছে?


🖋জবাবঃ

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,"আমি তোমাদের মধ্যে দুটি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি, যা তোমরা আঁকড়ে ধরলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল "আল-কুরআন ও আমার আহলে বাইআত।"

(আমি মাসুম বিল্লাহ সানি, এই হাদিসের ৩০ এর অধিক সনদ পেয়েছি)


হাদিস ১:

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) সূত্রে।

১.মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৬০০৯

৩.সূনান আত তিরমিজী, হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮৮ | পরিচ্ছদঃ ৩২. আহলে বাইত-এর মর্যাদা।


হাদিস ২:

হযরত ইয়জিদ বিন হাইয়্যান (রাঃ) সূত্রে।

১.সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৯২০, ৫৯২৩। অধ্যায়ঃ হযরত আলী (রাঃ) এর জ্ঞান।

২.মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪,১৭,২৬,৫৯; ৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,৩৭১; ৫ম খণ্ড,পৃ: ১৮২,১৮৯;


হাদিস ৩:

হযরত আবু সাঈদ খুরদী (রাঃ) সূত্রে।

১.ইমাম আহামাদ ইবনে হাম্বলঃ 'মুসনাদে আহমদ',৩য় খন্ড, ১৭ ও ২৬ পৃষ্ঠা।

২.কাঞ্জুল উম্মাল ১ম খন্ডের ৪৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৯৪৫।


হাদিস ৪ :

যায়দ ইবনে সাবিত (রাঃ) সূত্রে।

১. তিরমিজি ; আস সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৩৭৮৬, ৩৭৮৮।

২. মুসলিম; আস-সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৬০০৭, ৬০১০। 


হাদিস ৫: 

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) সূত্রে।

১.সূনান আত তিরমিজী, পরিচ্ছদঃআহলে বাইআত-এর মর্যাদা, হাদিসঃ ৩৭৮৬।

২.মিশকাত শরীফ - ৫৬৫ পৃঃ

Top