সহিহ হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) 
🖋মাসুম বিল্লাহ সানি

এখানে জেনে রাখা ভাল যেঃ
(I) শরীয়তের হুকুম এই যে,
ইমানহীন ব্যক্তির কঠোর সাধনার ইবাদতও জাহান্নামে দগ্ধ হবে অর্থাৎ ইমান ছাড়া আমলের কোন মূল্য হয় না।
(II) এই স্বপ্নের সত্যতা নিয়ে সমস্ত ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
(III) ইমামগণের বক্তব্যের সারাংশ এই যেঃ
মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খুশি হওয়ায় কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব লাঘব হয়ে থাকে, যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং আল্লাহ সুরা লাহাব নাজিল করেছেন, যে কাফিরদের কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হয়না। তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করলে বড় পুরষ্কার থাকতে পারে তা আল্লাহই ভাল জানেন । 

❏ মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে কাফির আবু লাহাবের আযাব লাঘব

🕋 হাদিস : 

হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
হযরত সুহাইবাহ (رضي الله عنه) আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে [রাসুল ﷺ] এর বেলাদাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কৃতদাসী সুহাইবাহ (رضي الله عنه) কে আযাদ করে দিয়েছিল। যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন,“তোমার অবস্থা কেমন?” 
আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বেলাদতের খুশিতে] দাসী সুহাইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে প্রতি সোমবার আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ঐদিন (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।” 
(ব্রেকেটযুক্ত টিকা ও অনুবাদঃ মাসুম বিল্লাহ সানি)

তথ্যসূত্রঃ

● সহিহ বুখারী : ২৬৪৪, ২৬৪৫, ২৬৪৬, ৩১০৫, ৪৭৯৬, ৫০৯৯, ৫১০০, ৫১০১, ৫১০৩, ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৪, ৫১৩৩, ৫২৩৯, ৫৩৭২, ৬১৫৬
●ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২৫৯৫৩ উক্ত শিরোনামে لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن পুনরায় হাদিস ২৬৮৬৫, মতন :
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة  ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনানুল কুবরা : হাদিস ৫৩৯৪, ৫৩৯৫
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনান আস-সুগরা : হাদিস ৩২৮৪, ৩২৮৫, ৩২৮৬, ৩২৮৭
●ইবনে মাজাহ : হাদিস ১৯৩৯ শিরোনাম( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
● মুসলিম : হাদিস ২৬৩৪, ২৬৩৫।
● সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪১১০, ৪১১১ হাদিসের মতন :
  إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
●ইমাম বায়হাকী : সুনান আল কুবরা : বিবাহ অধ্যায়। 
●জামেউল হাদিস : মাসানিদুস সাহাবা : হাদিস ৪৩৫৪৫।
●ইমাম বাগবি : শরহুস সুন্নাহ : ৯ম খন্ড : ৭৫ পৃ।
●ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : ৬ খন্ড, হাদিস ১৫৭২৫।
●মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৭ম খন্ড, হাদিস ১৩৫৪৬।
●ইমাম আঈনী : উমদাতুল কারী শরহে বুখারী : ১৪ খন্ড, পৃ ৪৫।
●ইমাম ইবনে কাসীর : সিরাত আন নববিয়্যাহ : ১ম খন্ড , পৃ ২২৪।
●শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ।
●সুবলুল হুয়া ওয়ার রশদ : ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃ।
●ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৭ম জিলদের ১২৫। 
●ইবনুল কাইয়্যুম : তোহফাতুল মাওদুদ বি আহকাম আল মাওলুদ, ১৯ পৃ।
●ইবনে আব্দুল ওহাব, মুখতাসার সিরাতুর রাসূল, মাওলিদুন্নবী।

যেমন উক্ত ঘটনাটি বর্ননা করেছেন যেসকল ইমামঃ

❏ ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (رحمة الله) 
❏ বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (رحمة الله)
❏ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) 
❏ ইমাম ইবনে দাহইয়া (رحمة الله)
❏ ইমাম সুহাইলী (رحمة الله)
❏ ইমাম ইবনে কাছির (رحمة الله)
❏ ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (رحمة الله)
❏ ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله) 
❏ ইমাম জালালুদ্দিন মুয়ূতী (رحمة الله) 
❏ ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (رحمة الله)
❏ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) 
সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। 

মিলদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আবু লাহাবের আযাব লাঘব উক্ত ঘটনা সমর্থনে মুহাদ্দিসে কেরামের বিবৃতি তোলে ধরা হলঃ

❏ ইমাম শামসুদ্দিন দামিস্কি (رحمة الله) বলেনঃ
قد صح أن أبا لهب يخفف عنه عذاب النار في مثل يوم الاثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وسلم ثم أنشد:إذا كان هذا كافرا جاء ذمه - وتبت يداه في الجحيم مخلدا أتى أنه في يوم الاثنين دائما - يخفف عنه للسرور بأحمدا فما الظن بالعبد الذي طول عمره - بأحمد مسرورا ومات موحدا
এটি প্রমাণিত যে আবু লাহাবের (পারলৌকিক) অনলে জ্বলবার শাস্তি প্রতি সোমবার লাঘব করা হয়, কেননা সে মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদতে খুশি হয়েছিল এবং তার দাসী সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিল (সুসংবাদ দেয়ার জন্যে)। আবু লাহাবের মতো অবিশ্বাসী, যার চিরস্থায়ী আবাস দোযখ এবং যার জন্যে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়েছে, সে যদি আযাব থেকে তাখফিফ (নিষ্কৃতি) পায় প্রতি সোমবার, তাহলে ভাবুন সেই মো’মেন ব্যক্তির কী শান যিনি সারা জীবন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদতে খুশি প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
● ইমাম দামেশকী কৃত ‘মওরিদ আস-সাফা ফী মওলিদ আল-হাদী’।
● ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৬ পৃষ্ঠা।

❏ বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (رحمة الله) উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبي صلي الله عليه و سلم رايت ابا لهب في النار يصيح العطش العطش فيسقي من الماء في نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقي ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ : হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক (ﷺ) তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে | আমি বললাম, কি কারনে এ পানি দেয়া পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা (رضي الله عنه) উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুগ্ধ মুবারক পান করিয়েছেন !"
[তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা]

❏ ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) লিখেন :
وذكر السهيلي ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عني في كل يوم اثنين وذلك ان النبي صلي الله عليه و سلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে আমি স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, [হে ভাই হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)] আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই। 
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার ! সেই সোমবারে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) এর বিলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা (رضي الله عنه) তিনি আবু লাহাবকে খবরটি জানালেন তখন আবু লাহাব মিলাদুন্নবীর সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা (رضي الله عنه)-কে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !"
● ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা
● ইমাম বদরুদ্দিন আঈনীঃ ওমদাতুল কারী শরহে বুখারীঃ ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠা।
● ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড !
● ইমাম জুরকারীঃ জুরকানী শরহে মাওয়াহেব : ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা

❏ ইমাম ইবনুজ জাওযী (رحمة الله) বলেন-

ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻯ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﺑﻮﺍﻟﻬﺐ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺍﻟﺬﻯ ﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﻤﺆﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩﻭﻳﺒﺬﻝﻣﺎﺗﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻰ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰﺍﺅﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﺍﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪﺑﻔﻀﻠﻪ ﺍﻟﻌﻤﻴﻢ ﺟﻨﺎﺕ ﺍﻟﻨﻌﻴﻢ ০ ( ﻣﻮﺍﻫﺐ ﺍﻟﻠﺪﻧﻴﻪ ﺝ ১ ০ ﺹ২৭ ﺯﺭﻗﺎﻧﻰ ﺝ ০১ ﺹ১৩৯ )
"যে কাফের আবু লাহাবের বিরোদ্ধে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশি হওয়াতে সুফল পায়, তাহলে তাঁর উম্মতের মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে (ﷺ) আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে যে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’
● ইবনে জাওজীঃ বয়ানুল মিলাদুন্নবী
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ ২৭ পৃঃ,  
● ইমাম জুরকানীঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ

❏ ইমাম ইবনে দাহইয়া (رحمة الله) বর্ননা করেন,
عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي
͏হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
● ইমাম ইবনে দাহইয়াঃ আত-তানবীর। 

❏ ইমাম ইবনে কাছির (رحمة الله) উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
"এমন জঘন্য কাফের যার দোষ বর্ণনায় (আল-কুরআনে) এসেছে যে, তার হাত ধ্বংস হয়েছে, তার স্থায়ী নিবাস চির জাহান্নাম। আহমদ (ﷺ) এর আবির্ভাবে খুশী হয়ে সর্বদা সোমবার আসলে তার (মত কাফির) থেকে (যদি) আজাব হালকা করা হয়, তবে কিরূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তির ব্যাপারে, যার জীবন আহমদ (ﷺ) বিষয়ে আনন্দিত ছিল এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তেকাল করেছেন?

❏ ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কাস্তালানী (رحمة الله) বর্ননা করেন,
আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর ﷺ)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। [হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন] তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা (رضي الله عنه) যখন আমাকে নবী (ﷺ) এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং তিনি হুযুর (ﷺ) কে দুগ্ধপান করিয়েছেন।

❏ ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কাস্তালানী (رحمة الله) আরো বলেন-
এতদভিত্তিতে, আল্লামা মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে জাযরী (رحمة الله) বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মিলাদুন্নবী (ﷺ) এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর (ﷺ) এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াঃ হুযুর (ﷺ) এর "দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়"।
● জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২

❏ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন,
ﺟﻨﺎﻧﺠﻪ ﺩﺭ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻣﺪﻩ ﺍﺳﺖ ﻭﺩﺭﻳﻨﺠﺎ ﺳﻨﺪﺍﺳﺖ ﻣﺮﺍﻫﻞ ﻣﻮﺍﻟﻴﺪ ﺭﺍﻛﻪ ﺩﺭﺷﺐ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﻭﺳﻠﻢ ﺳﺮﻭﺭ ﻛﻨﻨﺪ ﻭﺑﺬﻝ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﻧﻤﺎﻳﻨﺪ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻛﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺩ ﻭﻗﺮﺍﻥ ﺑﻤﺬﻣﺖ ﻭﻯ ﻧﺎﺯﻝ ﺷﺪﻩ ﺟﻮﻥﺑﺴﺮﻭﺭ ﺑﻤﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﻭ ﺑﺬﻝ ﺷﻴﺮ ﺟﺎﺭﻳﻪ
ﻭﻯ ﺑﺠﻬﺔ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺟﺰﺍ ﺩﺍﺩﻩ ﺷﺪ ﺗﺎﺣﺎﻝ ﻣﺴﻠﻤﺎﻥ ﻛﻪ ﻣﻤﻠﻮﺳﺖ ﺑﻤﺤﺒﺖ ﻭﺳﺮﻭﺭ ﻭﺑﺬﻝ ﻣﺎﻝ ﺩﺭ ﻃﺮﻳﻖﻭﻯﺟﻪ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﻟﻴﻜﻦ ﺑﺎﻳﺪﻛﻪ ﺍﺯ ﺑﺪﻋﺘﻬﺎ ﻛﻪ ﻋﻮﺍﻡ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻛﺮﺩﻩ ﺍﻧﺪﺍﺯ ﺗﻐﻨﻰ ﻭﺍﻻﺕ ﻣﺤﺮﻣﻪ ﻭ ﻣﻨﻜﺮﺍﺕ ﺧﺎﻟﻰﺑﺎﺷﺪ ০ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻮﺕ ﺝ ২ ০ ﺹ২৬ )
"উক্ত ঘটনা মিলাদ শরীফ পাঠকারীদের জন্য একটি বৃহত্তম দলিল, যারা মিলাদুন্নবীর রাতে আনন্দ উৎসব ও দান খয়ারাত করে থাকেন। আবু লাহাব কাফের এবং তার বিরোদ্ধে কোরআন নাজিল হওয়া সত্বেও নবী পাক (ﷺ) জন্মের সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে নূরবীকে দুধপান করানোর নিমিত্তে বাদী [হযরত সুয়াইবাহ (رضي الله عنه) কে] আজাদ করে দেয়, সে কারণে তাকে পুরস্কার স্বরূপ প্রতি সোমবারে তার আজাব নিরসন করা হল। এখন যারা ঈমানদার নবীপ্রেমিক আনন্দ উৎসব ও দান খয়রাত করেন তাঁদের পুরস্কার কীরূপ হবে? অবশ্য সে মিলাদকে শরীফে গান ও হারাম বাদ্যযন্ত্র হতে পবিত্র রাখতে হবে। 
[ইমাম আব্দুল হক দেহলভী (رحمة الله) : মাদারিজুন নবুয়ত ২য় খণ্ড ২৬ পৃঃ]

❏ ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (رحمة الله) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে লিখেন,
রাসূল (ﷺ) এর জন্ম দিন উপলক্ষে (প্রভুর শুকর আদায় স্বরূপ) যারা আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করে তাদের পরকালে শাস্তি হালকা ও কম হওয়ার কারণে পরিণত হয়।
[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪]  

❏ ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (رحمة الله) 

ফতহুল বারী শরহে বুখারী শরীফের মধ্যে এ মাসআলা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে তিনি বলেনঃ
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﺎﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ ﺑﺪﻟﻴﻞ ﻗﺼﺔ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻛﻤﺎﺗﻘﺪﻡ ﺍﻧﻪ ﺧﻔﻒ ﻋﻨﻪ ০
"যদিও কোন স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হয় না, কিন্তু এখানে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর স্বপ্ন আবু লাহাবের আজাব লাঘব হওয়ার ব্যাপারে কেবলমাত্র নবী করিম (ﷺ) সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দরুণ দলিলরূপে গণ্য হতে পারে। অন্য কারো স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হবে না। তারপর আবু তালেবের আজাব কম হওয়ার প্রসঙ্গ দলিলরূপে উল্লেখ করেছেন।"
[ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ১৫৪ পৃ:]

👉 যেমন উল্লেখ আছে"আবু তালিব কাফের, আজীবন নূরনবী (ﷺ) লালন-পালন ও সাহায্য করার দরুণ স্বয়ং আল্লাহর হাবিব (ﷺ) তার আজাব খুব কম হচ্ছে এবং হবে এ বলে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।"

[মুসলিম শরীফের ১ম জিল্দের ১১৫ পৃষ্ঠায়]

যদিও আবু তালেবের এই ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর কতিপয় আলেমদের মত বিরোধ আছে। কেউ কেউ দলিল দিয়ে বলেছেন যে,

[ওনাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হয়েছে এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর বিদায় হজ্জ্বের সময় দোয়া করলে রাসুল (ﷺ) এর পিতা, মাতা, আবু তালেব, আব্দুল মোত্তালেব ওনারা সবাই জীবিত হয়ে ইমান আনিয়া পুনরায় মৃত্যুবরণ করেন]
এমন বিশাল বিশাল বর্ননা রয়েছে। এতকিছু লিখা সম্ভব হল না বিধায় সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। [নবী করিম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের নাযাত সম্পর্কে বর্ণনা : লেখক - মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (মা.জি.আ) ওনার লিখিত নিচের সবগুলো  রেফারেন্স এ আছে এগুলো। যেমনঃ

● তফসীরে সাবী : ৩য় খন্ড ১৩৮ পৃ
● ইমাম কুরতুবী : তফসিরে মাওয়াহিবুর রহমান : ১১ পারা : সূরা তওবার তফসীর : ৪১ পৃ
● তফসীরুল খাতের
● মুফতি আমীমুল ইহসান বারাকাতী (رحمة الله) : সিরাতে হাবিবে ইলার হাশিয়ায় : ৩৭ পৃ তে-
এ বিষয়ে অর্থাৎ কুফর ও ইমানের বিষয়ে মতবিরোধ আছে জানিয়েছেন।
● ইবনে ইসহাক (رحمة الله) এর বর্ননা অনুযায়ী সিরাতে ইবনে হিশাম : ১৪৬ পৃ : ইমানের সহিত মৃত্যুবরণ করেছেন বলে মত দিয়েছেন। 
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ২য় খন্ড : ৯৪২ পৃ
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ১৪৭ পৃ
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৭১ পৃ (সূরা তওবার তফসীরে)
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৬২ পৃ
● হযরত সৈয়দ গীসুদারাজ (رحمة الله) (কেল্লা শাহ রহ.) "আখবারুল আখয়ার বা আনুয়ারে ছুফিয়া" গ্রন্থে ২৮৭ পৃ : 
● মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله) : রাহাতুল মুহিব্বীন : ১১৬ পৃ
● আশরাফ আলী থানভী : তফসীরে বয়ানুল কুরআন : ৮ম খন্ড, ১১৪ পৃ (ইন্নাকা লা তাহদি আল-আখের) আয়াতে।

আব্দুল ওহাব শারানী (رحمة الله) এর "কাশফুল গুম্মাহ" ২য় খন্ডের ২৫৬ পৃষ্টায় লিখেছেন,
হুজুর (ﷺ) যখন শেষকালে হেদায়াত করিলেন তখন আবু তালেব তাহার উষ্ঠদ্বয় আন্দোলিত করিলেন। সে সময় হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তাহার মুখের নিকটে কর্ণ লাগাইলেন। অতঃপর বলিলেন, হে আমার ভাইপো হুজুর (ﷺ)! আমি খোদার শপথ করিয়া বলিতেসি যে, আপনি আমার ভাই আবু তালেবের পক্ষ হইতে যেই কালিমা ছাহিয়াছিলেন সে তাহা বলিয়াছে। হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে চাচা যে খোদা আপনাকে পথ প্রদর্শন করিয়াছেন আমি সেই খোদার প্রশংসা করিতেসি। এতদ্যতীত অধিকাংশ জ্ঞানীগণ তাহার মুখ থেকে কালিমা বাহির হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।"


Top