বিধান সাত প্রকার:
✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (১০৬)
১. ঈমানদারকে হত্যা না করা
২. মু’মিনকে অন্যায়ভাবে যুলুম না করা
৩. মু’মিনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ না করা
৪. মু’মিনকে অন্যায়ভাবে কষ্ট না দেওয়া
৫. কোন মু’মিনের উপর খারাপ ধারণা না করা।
৬. এ পাঁচটি দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক। আর দু’টি পরকালের সাথে সম্পর্ক।
❏ মাসয়ালা: (১০৭)
১. কিছু লোকেরা আদমকে ফেরেশেতারা সিজদা করা দ্বারা একজন মানুষ অপর মানুষেকে সিজদা করার বৈধতা দিয়ে থাকে। তাদেরকে বলি আদম (عليه السلام)কে ফেরেশতারা সিজদা করেছে তা ঠিক, তবে তা কখন ও কোথায় তাও বলা জরুরী।
➠মহান আল্লাহ বলেন,
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
আমি যখন তাকে তৈরী করেছি এবং তার মাঝে রূহদান করেছি তখন তারা সিজদায় পড়ে গেলেন।(৪৭)
➥ [হিজর:২৯]
এখানো আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হয়নি আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, যখন আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হবে এবং তার মাঝে রূহ আসে তখন আমার আদেশ হল তোমরা তাকে সিজদা করবে। আদেশটি দিয়েছেন আদম সৃষ্টির পূর্বে এবং এই সিজদা আদমের সম্মানের জন্য। তার উপর কিয়াস করা যাবে না; কেননা ফেরেশতারা আমাদের দলের নন। যেমন সাহাবায়ে কেরামরা রাসূলকে সিজদা করার অনুমতি তালাশ করেছিলেন তখন তাদের আবেদন পূর্ণ হয়নি। সেখানেও একই কথা।
২. দ্বিতীয়ত:
তখন আদম (عليه السلام) নবী হননি শরীয়তের ভেতরে ছিলেন না। তাই তার উপর কিয়াস করা যাবে না বা তার উপর বিধানের ভিত্তি স্থাপন করা যাবে না।
৩. তৃতীয়ত: তা যমীনের সীমারেখাতে ছিল না কেননা; জগত কয়েকটি রয়েছে যেমন মেছালী জগত, রূহ জগত, কবর জগত, পরকাল জগত। আখরাতে তাযীমের যে সিজদা ফেরেশতারা করেছে তার সাথে শরীয়তের কোনো সম্পর্ক নেই, তার উপর মাসায়েল কিয়াস করা যাবে না ও সমাধান বের করা যাবে না। হযরত আদম (عليه السلام) যিনি হাকায়েকে লাহুতিয়া, মালাকুতিয়া, মাসুতিয়া এবং আল্লাহর একটি নিদর্শন ও ফেরেশতাদের সিজদার স্থান তার প্রশংসা কিভাবে করা যায়। আহলে সুন্নাতের সকল মাশায়েখ কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বালীর নিকট গাইরুল্লাহর জন্য সিজদা করা হারাম। তারা এ ব্যাপারে তাদের অনুসারীদের সতর্ক করেন। এ ব্যাপারে অসংখ্য রেফারেন্স আলা হযরত আহমদ রেযা খান বর্ণনা করেছেন।
তবে অজ্ঞ পীর সূফী ও হটকারী গবেষক হয়ে তার পক্ষে দলীল পেশ করে ফেরেশতাদের সিজদা দিয়ে। তাদের দুনিয়া তো ভিন্ন তাদের শরীয়ত ভিন্ন। তাই এ থেকে বুঝা গেল আদম (عليه السلام) কে সিজদা দেওয়া হয়েছে ঊর্ধ্ব জগতে আর আমরা থাকি নিম্ন জগতে তাই সূফীদের নিয়মনীতি হল, ঊর্ধ্ব জগতের নিয়মনীতি নিম্ন জগতে ব্যবহার করা যাবে না।
বুদ্ধিমানরা একটু চিন্তা করুন! জমহুর আলিমগণ যে মাসয়ালায় একমত একজন সাধারণ মানুষ যেমন শরয়ী উসূলের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনা তার লিখার কি মান? আল্লাহ সকলকে বুঝ দান করুন! হযরত সূফিয়ায়ে কেরাম ও সলফে সালেহীনের নিয়মনীতি বিধান ও সমাধান সত্য। কিন্তু অজ্ঞ সূফী ও পীর তাদেরকে ভূল পথে পরিচালিত করেন। তাই আমি বলি, মাথা ও কপাল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট যদি শরীরের সকল অঙ্গ অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন কোন অঙ্গ আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা হবে। যদি অন্যদের জন্য কপাল ব্যবহার করা হয় তখন তো তা ব্যপক হয়ে গেল।
❏ মাসয়ালা: (১০৮)
আল্লাহ জাল্লা শানুহু এবং হুজুর (ﷺ) এর উপর ঈমান গ্রহণ করা একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত তথা এক ও অভিন্ন, এর মধ্যে একটি অপরটি ব্যতীত জিকির ও তছবীহ হতে পারে না। যেমন- কালেমায়ে শাহাদাত, আজান-ইকামত সহ অপরাপর তাছবীহ- তাহলীলে রয়েছে।
❏ মাসয়ালা: (১০৯)
নিজ আক্বীদা ও মছলকের খেলাফ তথা পরিপন্থীদের পিছনে নামাজ আদায় করা মাকরূহ।
كراهة الصلوة خلق المخالف حيث امكنه خلف غيرهم ومع ذالك الصلوة معهم افضل من الانفراد وتحصل له فضيلة الجماعة, وذكر الفاسق والمبتدع قال لان الصلوة خلف هؤلاء مكروهة مطلقًا. (الاشباه والنظائرمع شرح الحموى جلد-৪, صفحه ৩৭৮-৩৭৯)
❏ মাসয়ালা: (১১০)
শরীয়তের হুকুম আটটি:
(১) ফরজ
(২) ওয়াজিব
(৩) সুন্নাত
(৪) মুস্তাহাব
(৫) হালাল
(৬) মোবাহ
(৭) মাকরূহ
(৮) হারাম।
❏ মাসয়ালা: (১১১)
ফরজ তিন ভাগে বিভক্ত:
(১) ফরজ যাহা কোরআন শরীফ দ্বারা সাবেত। যেমন: اقيمو الصلوة واتوالزكوة অর্থাৎ নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর।
(২) ফরয, যাহা- حديث متواتر তথা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাবেত ও প্রমাণিত। যেমন- হুজুর (ﷺ)-এর ওফাত শরীফের পর সকল সাহাবায়ে কেরামদের সন্দেহ হয়েছে যে- আল্লাহপাক জাল্লা শানুহু কোরআন শরীফে এরশাদ করেছেন ১৪টি স্থান, যাতে সিজদা করার জন্য। এ সমস্ত আয়াত দ্বারা একটি সিজদা করার হুকুম প্রমাণিত হয়েছে। নামাজে কিয়াম একটি রুকু একটি আর সিজদা দু’টি। কেননা তখনকার সময় সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেন যে, হুজুর (ﷺ) নামাজের মধ্যে কখনো এক সিজদা করেননি আর যদি দু’টি সিজদা ফরজ না হত তাহলে কখনো কখনো একটি সিজদার উপরই নামাজ আদায় করতেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে- দ্বিতীয় সিজদাও করতে হবে এবং এটিই ফরজ হওয়ার দলিল। তবে এই দলিলই সমস্ত মুসলমানের জন্য যথেষ্ট। প্রথম সিজদাটি হচ্ছে কোরআন দ্বারা প্রমাণিত আর দ্বিতীয় সিজদা اجماع امت (ঐক্যমত) দ্বারা প্রমাণিত।
(৩) ফরজ, যাহা ফরয হওয়াই حديث متواتر অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) যে কাজ সম্পর্কে বারংবার এরশাদ করেছেন সে কাজও ফরজ। এই তিন প্রকারের ফরজের মধ্যে কোন একটিকে অস্বীকার করা কাফের।
❏ মাসয়ালা: (১১২)
শরীয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফের হবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদাও অনুরূপ। শরীয়তের কোন ওজর বা আপত্তি (অজুহাত) ব্যতীত নামাজ তরক করা (ছেড়ে দেওয়া) কবীরা গোনাহ। কিন্তু তদাপিও এই কবীরা গোনাহর কারণে কোন ব্যক্তি কাফির হবে না। আর উক্ত হাদীস যাতে রয়েছে যে, নামাজ পরিহারকারী কাফির। শরীয়তের দলিলের ভিত্তিতে এর সারকথা হচ্ছে; যে ব্যক্তি ফরয নামাজকে অস্বীকার করে কিংবা নামাজ তরক করাকে জায়েয মনে করে এবং নামাজ পরিহার করাকে গোনাহ মনে না করে। যেমন বর্তমান মুসলমানদের অবস্থা এই যে, বেনামাজী মুসলমানও নামাজকে ফরজ হিসাবে জানে এবং পরিহার করাকে গোনাহ বলে জ্ঞান রাখে তারপরও মানবীয় অভ্যাস হিসাবে নামাজ আদায় করে না, সে সমস্ত ব্যক্তি কাফের হবে না। তবে বড় গোনাহগার হবে।
➥ [বরকাতুল উলুম]
❏ মাসয়ালা: (১১৩)
নবী আলাইহিস্সালাম হাজের-নাজের ও সর্বত্র বিরাজমান, অর্থাৎ নবুওয়াত ও রেছালাতের পদ মর্যাদা হিসেবে মুহাম্মদ (ﷺ) সব সময় ও সর্বস্থানে বিরাজমান। ➠পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে:
وعلموا ان فيكم رسول الله
তবে বশরীয়াতে মুহাম্মদী (ﷺ) পর্দা ও বেছাল ফরমায়েছেন।
انك ميت وانّهم ميتون
❏ মাসয়ালা: (১১৪)
আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুকে ভয় না করা ও অভয় হওয়া কুফুরী।
❏ মাসয়ালা: (১১৫)
আল্লাহপাক সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপর ভরসা না করা কিংবা নৈরাশ হওয়া কুফুরী।
❏ মাসয়ালা: (১১৬)
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র শানে কোন প্রকার দোষ-ত্রুটি তালাশ করা কিংবা বর্ণনা করা কুফুরী।
❏ মাসয়ালা: (১১৭)
মিথ্যা বলা ঈমানে অন্ধকার বাড়ায়, নামায পড়লে ঈমান শক্তিশালী হয়, সবসময় পবিত্র থাকা ঈমানে শক্তি আনে, ঈমানের স্থান আশা ও নিরাশার মাঝখানে। ঈমান সংক্ষেপ ও বিস্তারিত আকারে বিশ্বাস করতে হয়। সংক্ষেপ ঈমান হল, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আনা তার পবিত্র নাম ও তার উচুঁমানের গুণাবলিসহ এবং তার সকল বিধানকে মেনে নেওয়া।
আর বিস্তারিত হল, আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি যার কোন উপমা নেই এবং ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা তাদেরকে আল্লাহ নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন তারা নিষ্পাপ, তারা আল্লাহর আনুগত্যে হুঁশিয়ার। ফেরেশতাদের গণনা একমাত্র আল্লাহই জানেন। কিন্তু
তাদের মাঝে চারজন ফেরেশতা বড়
১, হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) তিনি নবীদের নিকট অহী পাঠান।
২. হযরত মিকাইল (عليه السلام) তার উপর বৃষ্টি বর্ষনের দায়িত্ব রয়েছে।
৩. হযরত ইসরাফিল (عليه السلام) তার উপর সিঙ্গা ফুঁক দেওয়ার দায়িত্ব অর্পিত।
৪. হযরত আযরাইল (عليه السلام) তাকে রূহ কব্জ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ চার ফেরেশতা সকলের চেয়ে বড়। তাদের নাম সম্মানের সাথে নেওয়া যারা তাদের প্রতি সামান্যতম ঘৃণা পোষণ করে সে কাফির।
তৃতীয়ত, নাযিলকৃত সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনা তা হল একশ চারটি তা থেকে চারটি বড় বড়। ছোট কিতাবকে সহীফা বলা হয়।
১. তাওরাত যা হযরত মুসা (عليه السلام) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
২. যাবুর যা হযরত দাঊদ (عليه السلام) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে
৩. ইঞ্জিল যা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
৪. কোরআন শরীফ যা আমাদের বিশ্বনবী (ﷺ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
এ সকল কিতাব সত্য। তবে আমাদেরকে আমল করতে হবে আমাদের কিতাব কোরআনের উপর এবং ঈমান আনতে হবে সকল নবী রাসূলদের প্রতি। হাদিসে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল এসেছে আল্লাহর বান্দাহদের হিদায়ত করার জন্য। কিন্তু তাদের থেকে ৩১৩ জন রাসূল কিছু কিছু নবী রাসুলদের নাম কোরআন ও হাদিসে এসেছে তাদের মধ্যে থেকে প্রধান প্রধান হল:
১. হযরত আদম সফিউল্লাহ (عليه السلام)
২. হযরত নূহ (عليه السلام)
৩. হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)
৪. হযরত মুসা (عليه السلام)
৫. হযরত দাউদ (عليه السلام)
৬. হযরত ঈসা (عليه السلام)
৭. হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।
তারা সকলে সত্য। তার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। এদের সকলের প্রতি ঈমান আনতে হবে। তবে আমল শেষ নবী হিসাবে করতে হবে।
ঈমান আনতে হবে কিয়ামতের উপর যা সত্য, তাকদিরের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তা সব আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং ঈমান আনতে হবে মৃত্যুর পরের উপর অত:পর জীবিত করা হবে তা সব সত্য। এগুলিই ঈমানকে মুফাস্সাল বা বিস্তারিতাকারে ঈমান আনা। তা ঈমানের শর্তও এবং গুণাবলীও। ঈমান মুখে স্বীকার করতে হয় ও অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। তা বান্দাহর কাজ। সেখানে তাওফীক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। একজন আকেল বালেগ কাফির পুরুষের উপর ঈমান আনা ফরয, মু’মিনদের জন্য সুন্নাত।
ইসলাম বলা হয় অনুগত্যকে। অর্থাৎ, আল্লাহর বিধানের সামনে নত হওয়া।
ইসলামের আট সুন্নাত:
১. খতনা করা
২. দাড়ি রাখা
৩. গোঁফ কাটা
৪. নাকের পশম তোলা
৫. হাত পায়ের নখ কাটা
৬. মাথায় পুরোপরি চুল রাখা বা পুরো মাথা মুন্ডানো কিছু রাখা ও কিছু মুন্ডানো তা হারাম। ইহুদী ও মুশরিকদের তরীকা
৭. বগলের নিচে পরিষ্কার করা
৮. লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা এগুলির ইসলামের কাজ। ইসলাম ধর্ম থেকে ইসলামী শরীয়ত উদ্দেশ্য।
শরীয়তে ওয়াজিব:
১. রমযান শরীফে ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা দু’কেজি গম বা তার মূল্য দেওয়া এটিই উত্তম।
ফায়দা: নাবালেগ ছেলে হোক মেয়ে হোক যদি সে ঈদের দিন সকালের পূর্বে জন্মগ্রহণ করে বা কেউ মুসলমান হল তেমনি নিজের দাস-দাসী ও গরীব আত্মীয় স্বজন যাদের খরচ সে বহন করে তাদের সকলের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। তবে বিবির পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব নয়। কেননা সে তো নিজ মোহরের মালিক বরং সে নিজে নিজের ফিতরা আদায় করবে বা স্বামীকে নিজের মোহর থেকে আদায় করতে বলবে। যদি কোন স্বামী নিজের পক্ষ থেকে আদায় করে দেয় তখনও তা বৈধ হবে। কোন পাপ হবে না তবে তা তার উপর আদায় করা ওয়াজিব নয়।
২. কোরবানী করা।
৩. প্রতিরাতে বিতরের নামায আদায় করা।
৪. নিকট গরীব আত্মীয়দের খরচ বহন করা।
❏ মাসয়ালা: (১১৮)
রাসূল (ﷺ) এর কথা ও কাজকে সুন্নাত বলে।
সুন্নত তিন প্রকারঃ
১. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, যে কাজ তিনি সবসময় করেছেন এবং আদেশও দিয়েছেন এবং সে কাজকে ঈচ্ছাকৃতভাবে মাঝে মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন যাতে উম্মতের উপর তা ফরয হয়ে না যায়। তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামে পরিচিত।
২. আর যে কাজকে তিনি দু’একবার আদায় করেছেন বা মাঝে মাঝে করেছেন তাকে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়।
৩. যে কাজকে সাহাবায়ে কেরাম রাসুলের সামনে করেছেন তিনি তা দেখে নিশ্চুপ ছিলেন বা খুশি প্রকাশ করলেন ও নিষেধ করলেন না তাকে সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা বলা হয়।
❏ মাসয়ালা: (১১৯)
➠প্রখ্যাত আলিমগণ বের করলেন যে, ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল যে, যারা তাদের বিরোধী তাদেরকে কষ্ট দেওয়া পূর্ণের কাজ, তারা সাধ্যমতে তাদেরকে হত্যা করা, সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া, বিভিন্ন পন্থায় তাদেরকে কষ্ট দেওয়া ওয়াজিব মনে করে। একই বিশ্বাস রয়েছে মুসলমানদের মাঝে কিছু শিয়া ও রাফেযীদের নিকট। কিন্তু যে সকল মুসলমান তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর প্রতিষ্টিত তারা কিন্তু তা অত্যন্ত খারাপ মনে করেন, এরকম জালিমদেরকে দোযখী মনে করেন। তাই ইহুদীরা তাদের সে খারাপ বিশ্বাসের কারণে মুসলমানদের বিরোধিতা করেন। কিন্তু খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস ইহুদীদের বিপরীত তাদের নিকট কাউকে কষ্ট দেওয়া হারাম।
➥ [মওয়াহেব, পারা:৬, মায়েদাহ]
❏ মাসয়ালা: (১২০)
➠তিরমিযী শরীফে রয়েছে, হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, বিদায় হজ্বের সময় নবী (ﷺ) কাসওয়া নামক উঠের উপর সওয়ার হয়ে বলেছিলেন। হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তা তোমরা আকড়ে ধর তখন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল, আল্লাহর কিতাব ও আমার পরিবার।
আমি বলি, এখানে রাসূল (ﷺ) তাঁর পরিবারের দিকে ইশারা করেছেন; কেননা তারা বেলায়তের স্তম্ভ। তাদের প্রথম হল, হযরত আলী (رضي الله عنه) অত:পর তার সন্তানরা, তাদের শেষ হল গাওছুস ছাকালাইন মহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী। তাই দুনিয়াতে কেউ তাদের মাধ্যম বিহীন বেলায়তের মর্যাদা অর্জন করতে পারে না। মুজাদ্দেদী (رحمة الله) এটাই বলেছেন। তাই এ উম্মতের সকল অলী ও আলিমগণ তার পরিবারের অনুসারী উত্তরাধিকার সুত্রে।
➥ [মাযহারী, খ, ৪ পৃ:১০৩]
আমি বলি, এ উম্মতের পুরুষরা অধিক শক্তিশালী ও হিদায়তপ্রাপ্ত পূর্বের উম্মতের চেয়ে। বেলায়তের কুতুব হলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) পূর্বের সকল উম্মতের অলীরাও তার আত্মার মাধ্যমে বিভিন্ন মর্যাদা লাভ করেছেন। সেই মর্যাদা তার পরে তার ছেলে হাসান ও পরে আব্দুল কাদের জিলানীতে বিদ্যমান ছিল। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সে মর্যাদায় ভূষিত থাকবেন। তাই বলা হয়, সকলের সূর্য ডুবে গেছে; কিন্তু আমাদের সূর্য কখনো অস্তমিত হবে না। (৫১)
➥ [তাফসিরে মাযহারী, খ, ৪, পৃ:১২০]
❏ মাসয়ালা: (১২১)
মাযহাব ও মুরীদ কিসের?
মাযহাব হযরত ইমাম আবু হানিফার এবং মুরীদ সায়্যিদুনা গাউছে আযম আব্দুল কাদের জীলানী (رحمة الله) এর ।
➠যেমন কবি বলেন, অর্থ: আমরা আল্লাহর বান্দাহ, আহমদ (ﷺ) এর উম্মত। চারখলিফার অনুসারী ও আলীর বংশের অনুসারী। মাযহাব হানাফী মিল্লাত ইব্রাহীম খলিলের। গাউছে আযমের মাটি সকল অলীদের উপরে।