কিতাবঃ ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আকিদাহ ও তাদের বিধান। 

মুলঃ আ’লা হযরত ইমামে আহলে ছুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনে মিল্লাত, ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে বেরলভী (রহঃ)। 

ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহাম্মদ ইছমাইল। 

এম,এম, বি,এ, অনার্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরবী প্রভাষকঃ কদলপুর হামিদিয়া সিনিয়র (ফাজিল) মাদ্রাসা, রাউজান, চট্টগ্রাম। 


Text Ready

Masum Billah Sunny

Fatimatuj Juhara Sakila


প্রুফ রিডিংঃ

Fatimatuj Juhara Sakila


প্রকাশকালঃ রবিউল আউয়াল ১৪২১ হিজরী জ্যৈষ্ঠ ১৪০৭ বাংলা, জুন ২০০০ ইং 

সম্পাদনায়ঃ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান 

প্রকাশকঃ মুহাম্মদ মনছুরুল আলম চৌধুরী 

নামকরণঃ মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান আরবী প্রভাষক-কদলপুর হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। 

সহযােগিতায়ঃ

কাজী মুহাম্মদ মােয়াজ্জেম হােসেন।

সুন্নিয়া মাদ্রাসা বাইলেইন, ষােলশহর, চট্টগ্রাম 

মুহাম্মদ ইলিয়াছ ও মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ মুয়াল্লিম-জামেয়া আহমদিয়া দুনিয়া আলীয় 

প্রচ্ছদ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম রেজভী 

শব্দবিন্যাসঃ শাহ্ এমরান চৌধুরী 

মুদ্রণ তত্ত্বাবধান। | শব্দনীড়, ৪৫৮ আন্দরকিল্লা মােড় (পাঠক বন্ধু লাইব্রেরীর ৩য় তলা), চট্টগ্রাম 

শুভেচ্ছা বিনিময় 

১০/- (দশ) টাকা মাত্র 



উৎসর্গঃ



● শায়খুল মাশায়েখ হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ বােগদাদী আল্ আজহারী (রাহঃ) 


● রাহুনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রাহঃ) 


● অলিয়ে কামিল শাহ ছুফী হযরত শাহ্ আমির (রাহঃ) ও


● আমীরে শরীয়ত ও তরীকৃত হযরতুল আল্লামা আব্দুল আজীজ নক্সবন্দী (রাহঃ) 



সূচীঃ



● অনুবাদকের কথা ॥


● ওয়াহাবীদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ॥


● ওয়াহাবীদের আলামত ॥


● শেখ নজদী প্রসংগে ॥


● সালাতাে-সালাম পড়ার কারণে হত্যা ॥


● নবী (ﷺ) এর মানহানিকর কতেক উক্তি ॥


● কৌলির বিশ্বাস মতে-বেহেশত, দোযখ ইত্যাদি অসার ॥


● কাদিয়ানীর কুফরী কথন ॥


● ফিক্বাহবিদের প্রতি কটুক্তি ॥


● মাযহাবের ইমামদের সাথে ধোঁকাবাজি ॥


● চার ইমামের মুকাল্লিদগণ ও চার তরীকার অনুসারীরা কাফির ॥


● আহলে কুরআনদের দলীল ॥


● কুসভুরীর মতে-প্রচলিত বায়আত ফ্যাসাদের উদ্ভাবক ॥


● ইমাম আজমের প্রতি অপবাদ ॥


● ‘আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন' বলা তেমন অপরাধ নয় ॥


● নানুতুভী সর্বশেষ নবী মানে না ॥


● থানভী রাসুল হওয়ার দাবীদার ॥


● ওহাবী মতবাদের বিধান ॥


● কুফরী ঢেকে রাখার প্রচেষ্টা ॥


● ওয়াহাবীরা খারেজী ও রাফেজীদের থেকে মারাত্মক ॥ 


● ভ্রান্ত-আক্কীদা সম্পর্কে আ'লা হযরতের লিখিত কয়েকটি কিতাব ॥


● বাতিলদের সাথে সংশ্রব রাখা নিষিদ্ধ ॥


● বাতুলতা থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য হওয়ার দলীল ॥


● পরিশিষ্ট 



কটি কথা 



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 



হামদাল্লাহি ওয়াছালাতাওঁ ওয়া সালামান আলান নবীয়ী। 


আল্লাহর লাখাে-কোটি শুকরিয়া, যার অশেষ মেহেরবাণীতে অল্প পরিসর ও অতি স্বল্প সময়ে এ পুস্তিকা প্রকাশিত হল । দরূদ ও সালাম বর্ষিত হােক ছরকারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ (ﷺ), তাঁর সাহাবা, পরিবার বর্গ ও নেক বান্দাদের প্রতি। 


কালে কালে ইসলামে যে অন্যায়, অবিচার, অনাচার ও কুসংস্কারের অনুপ্রবেশ ঘটে, তা নির্মূল করার লক্ষ্যে মহা করুণাময় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরােভাগে উম্মতে মুহাম্মদ (ﷺ)'র জন্য একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) হিসেবে শুভাগমন করেন ইমামে আহলে সুন্নাত, কলম-সম্রাট, মুফতীয়ে আজম, হযরতুল আল্লামা আ’লা হযরত শাহ মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রা.)। 


তাঁর ক্ষুরধার লেখনিতে বাতিলদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। তার লিখিত রচনাবলীর মধ্যে অন্যতম হল ফতওয়ায়ে রেজভীয়া'। 


এ বিশ্বনন্দিত গ্রন্থ থেকে সংকলিত ..। (আহকামে ওয়াহাবীয়া) পুস্তিকাটির সাথে সাযুজ্য রেখে ওয়াহাবী মতবাদ প্রসংগে আ’লা হযরতের গবেষণায় শরয়ী বিধান সম্পর্কীয় আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। অনুবাদ কর্মে ভাষার দৈন্যতা মােছনে ও পরামর্শ দানে আন্তরিকভাবে সহযােগিতা করেছেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়ার আরবী প্রভাষক অগ্রজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জমান । 


প্রাথমিকভাবে এ কার্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন সহকর্মী জনাব মাষ্টার মুহাম্মদ মনছুর আলম চৌধুরী। আমি এ কাজে সাহায্য সহায়তা দানকারী সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষতঃ মৌলানা মুহিউদ্দীন, ইসমাঈল রেজভী, মুহাম্মদ ছাঈদ ফয়জী, মুরশেদুল হক সকলের শুকরিয়া আদায় করছি। ভাষার দৈন্যতা কিংবা মুদ্রণ প্রমাদ জনিত যে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি দৃষ্টি গােচর হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সংশােধনের স্বার্থে অবহিত করার অনুরােধ জানাই। এ পুস্তিকা পাঠে ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদা সম্পর্কে অবহিত হয়ে মুসলিম ভাইদের ঈমান আকীদা সংরক্ষণে ফলদায়ক হলেই আমার এ সামান্য প্রচেষ্টা সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদেরকে আ’লা হযরতের ফয়ুজাত নসীব করুন। আমিন। 


- অনুবাদক 



ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আকিদাহ ও তাদের বিধান



আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। 



সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি গােটা জাহানের সৃষ্টিকর্তা এবং লাখাে-কোটি সালাত ও সালাম শরীয়ত প্রবর্তক হাবীবে পাক (ﷺ) হেদায়েতের সমুজ্জল নক্ষত্র আসহাবে কেরাম এবং খাস বান্দাদের খেদমতে, যাঁদের জীবন সাফল্য মন্ডিত। 



ওয়াহাবীদের ক্রমধারা ওয়াহাবী একটি বিধর্মী ফের্কা, যারা রাসুল (ﷺ) ’র মান-মর্যাদার কথা শুনে জ্বলে উঠে এবং বিভিন্নভাবে মাহবুবে খােদার (ﷺ)  শান মান নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এ দলের মূল-উৎস হল ইবলীস-শয়তান, যে সায়্যিদুনা হযরত আদম (আ.) কে সম্মান করার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে বসে এবং অভিশপ্ত হয়। পরবর্তীতে সে ইবলীসের পদাংকানুসারী যুল-খুওয়াইসারা তামীমী নামক এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। সে নবীর (ﷺ)  সুমহান মর্যাদাকে অবজ্ঞা করে। এরপর খারেজী ফের্কা সে রাস্তা বেয়ে চলতে থাকে। 


● যাদেরকে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রা.) হত্যা করলে মুসলমানরা স্বস্তিবােধ করেন এবং খােদার প্রশংসা করেন। এজন্য যে, খােদা এসব অপবিত্র ব্যক্তি হতে যমীনকে পাক করেছেন। হযরত আলী (রা.) এ কথা শুনে বললেন যে, এ তাে শেষ নয়; বরং মায়ের জরায়ু ও বাপের পিঠে আরাে অনেক রয়েছে। 

যখন একটি শিং কর্তিত হয় আরেকটি শিং গজায়। এমনিভাবে তাদের শেষটি দাজ্জালের সাথে বের হবে। 


এ হাদিস শরীফ অনুপাতে বুঝা যায় প্রত্যেক যুগে এ বদ আকীদায় বিশ্বাসীরা নতুন নতুন নাম ধারণ করতঃ প্রকাশিত হতে থাকবে। 


● এমনকি দ্বাদশ শতাব্দীতে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব। নজদী সে ফেরকার ধারক-বাহক হয়। সে কিতাবুত তাওহীদ' রচনা করে নবী, ওলীগণ এবং খােদ ছরকারে দো'আলম (ﷺ)  এর শানে ইচ্ছা মাফিক কটুক্তি করে। তারই দিকে সম্পর্কিত করে এ ফেরকার নাম হয় নজদী-ওয়াহাবী । 


● ভারতবর্ষে এ বাতিল ফের্কার প্রাদুর্ভাব হয় মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর মাধ্যমে। সে কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তাকুবিয়াতুল ঈমান' এর কয়েক (প্রায় সত্তর) জায়গায় তাঁর ভ্রান্ত আকীদা এ বলে ব্যক্ত করেছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ও মানাে না, অন্যদের মান্য করা বােকামী। এদের অনুসারীরা সকলেই আকীদাগত অভিন্ন কিন্তু আমলগতভাবে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কেউ তাকলীদ (ইমামের আনুগত্য করা) কে মানে আর কেউ মানে না। গায়রে মুকাল্লিদীনদের ওয়াহাবী নেতা হল নযীর হােছাইন দেহলভী, আর মুকাল্লিদীনদের মধ্যে রয়েছে রশীদ আহমদ গাংগুহী, কাসেম নানুতুভী এবং তাদের উত্তরসূরী আশরাফ আলী থানভী প্রমুখ। 



ওয়াহাবীদের কয়েকটি আলামতঃ



সে বে-দ্বীন ওয়াহাবীদের আলামত সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ


(১) "তােমরা তােমাদের নামায, রােযা ও আমলকে তাদের নামাজ, রােযা ও আমলের সামনে তুচ্ছ মনে করবে ।"


(২) "কোরআন পড়বে, অথচ তা তাদের কণ্ঠনালীর নীচে অবতরণ করবে না অর্থাৎ অন্তরে মােটেই প্রভাব সৃষ্টি করবে না।"


(৩) "তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। ধর্ম থেকে তারা এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে পড়ে। অতঃপর আর প্রত্যাবর্তন করবে না।"


(৪) "তাদের অন্য একটি আলামত হল মাথা মুন্ডানাে। আকীকা, হজ ও ওমরা ছাড়া অযথা মাথা মুণ্ডানাে সুন্নতের পরিপন্থী, এটা সম্প্রদায় বিশেষের আলামত।"


(৫) পরনের লুঙ্গি প্রয়ােজনের বেশী দৃষ্টি কটুভাবে উঁচু করে পরা। 


লাহাের থেকে সূফী আহমদ দ্বীন (আ'লা হযরত (রাঃ) এর খেদমতে) আরজ, 

হে মুসলিম মিল্লাতের আলেম সমাজ ও কর্ণধার! আপনাদের জ্ঞানে আমাদেরকে ফয়ূজপ্রাপ্ত করুন। 

আল্লাহ রাব্বল আলামীন আপনাদের ফয়ুজাত স্থায়ী করুন। 



এক || শেখ নজদী প্রসংগেঃ



এ অত্যাচারী সম্প্রদায়ের বিধান কি? যাদের প্রথম নেতা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী (১১১১ হিজরী-১২০৬ হি.), 

● যে তৎকালীন বাদশাহের সাথে বিদ্রোহ করে মক্কা শরীফের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করেছে। 

● তথাকার আলেম সমাজের উপর চালিয়েছে বেপরওয়া হত্যাযজ্ঞ। 

● আউলিয়া কেরামের মাজারসমূহকে বানিয়েছে শৌচাগার। 

● হযরত রাসুলে করীমের (ﷺ)  রাওযায়ে আক্বদসকে বৃহত্তম প্রতিমা রূপে আখ্যায়িত করেছে। 

● আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং ফুকাহায়ে মুকাল্লিদীনকে (তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অপরকে পথভ্রষ্ট করেছে) এ বাণীর আওতাভুক্ত করেছে।

● নিজের কুপ্রবৃত্তিকে স্থির করেছে সত্য মিথ্যার মাপকাঠি। 

● বিভিন্ন অলংকারিক বর্ণনা দ্বারা হুজুর পুর নূর (ﷺ) ’র অবমাননা করতাে। 

● এ বদ আকীদার উপর নিজ বংশধর এবং অনুসারীদেরকে লাগিয়ে রাখত। 

● নিজ অনুগামী ব্যতীত অন্যদেরকে মনে করতাে মুশরিক। 

● দরূদ শরীফ পড়াতে অনেক কষ্টদায়ক শাস্তি পেতে হত । এমনকি এক অন্ধ ব্যক্তি আযানের পর মসজিদের মিনারায় সালাত সালাম পড়ার কারণে তাকে শহীদ করে দিয়েছে। 

● আর সে বজ্র কণ্ঠে ঘােষণা দিয়েছেঃ


একজন পতিতার ঘরে বাদ্য-বাজনা করা মসজিদের মিনারায় দরূদ শরীফ পাঠ করার গুনাহর চেয়ে অধিকতর কম। 

অর্থাৎ নবী (ﷺ) ’র উপর দরূদ পড়া পতিতার ঘরে বাদ্য-বাজনা করার চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। (আদুরারুস্ সানিয়া ফীররদ্দে আলাল ওয়াহাবিয়া পৃঃ নং ৪১) 

● তাঁর শিষ্যরা বিভিন্ন ভাবে নবী (ﷺ) ’র শানে মানহানিকর উক্তি করতাে আর সে তা শুনে আনন্দিত হতাে। যেমনিভাবে উল্লেখ করা হয়েছেঃ


"শেখ নজদীর এক অনুসারী বলেছিল আমার এ লাঠি মুহাম্মদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম। কেননা তা সাপ ইত্যাদি নিধনে উপকারে আসে, আর মুহাম্মদ (ﷺ)  নিশ্চয় মরে গেছেন। তাঁর মধ্যে আদৌ কোন ফায়দা অবশিষ্ট নেই; তিনি শুধুমাত্র একজন দূত। আর তিনি তাে চলেই গেছেন। 

[কৃতঃ আল্লামা ছৈয়্যদ আহমদ ইবনে যিনী দাহলান (রহঃ) : আদুরার সানিয়া ফীররদ্দি আলাল ওয়াহাবিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং-৪২]


● রাসুলের (ﷺ) শানে কটুক্তি করার মধ্যেই তার বেয়াদবী সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং সে মাযহাবের ইমামদের সাথেও প্রতারণা করেছে। বাহ্যিকভাবে সে (শেখ নজদী) হাম্বলী মতাবলম্বী দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলায়হির সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিলনা। 

নবুয়ত দাবী করার অভিলাষী ছিল বটে, তবে তা ব্যক্ত করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করতঃ মন্দ কর্মের পরিনাম ভােগ করে। আর নিম্নোক্ত আয়াত শরীফের আওতায় গণ্য হয়ে যায়। 


"নিশ্চয়ই যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে।(সুরা আল আহযাব ৫৭) 



দুই || মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী



সে ওয়াহাবীদের দ্বিতীয় গুরু মৌং ইসমাঈল দেহলভী (১৭৭৯ খ্রীঃ১৮৩১খ্রীঃ) তাদের। 


● প্রথম ইমামের (মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব নজদী) লিখিত “কিতাবুত তাওহীদ” এর ভারতীয় সংস্করণ করে তাকবিয়াতুল ঈমান' নাম দিয়েছে। ঐ ফেরকার নাম দিয়েছে তাওহীদপন্থী । 


● আর শেখ নজদীর পদাংক অনুসরণ করে সকল উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) কে কাফির-মুশরিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নবী (ﷺ) ও নবীগণ আলাইহিমুস সালাম,  এমন কি স্বয়ং খােদা তায়ালার শানেও মানহানিকর উক্তি এবং গালমন্দ করতে কুণ্ঠাবােধ করেনি। 


● নবীগণ আলাইহিমুস সালামকে মেথর, চামার, অকর্মন্য এবং অকেজো লােকদের সাথে তুলনা করেছে।' (তাকবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং ১০,১১,২৯, কৃত- ইসমাঈল দেহলভী)


● আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা এবং গুণাবলীতে দুষনীয় ও অসংহতিপূর্ণ শব্দ প্রয়ােগকে বৈধ সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ তায়ালা আপন উঁচু মর্যাদা রক্ষার্থে এবং লােক জানাজানির ভয়ে মিথ্যা বলা থেকে বিরত রয়েছে বলে জঘন্য মন্তব্য করেছে। 

[এক রােযী পৃঃ নং ১৪৪, ১৪৫ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]। 


● নামাযের মধ্যে নবী (ﷺ) ’র খেয়াল আসা গরু ও গাধার খেয়াল আসার চেয়ে নিকৃষ্টতম। [সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ নং ৯৫, অন্য সংস্করণে পৃঃ নং ৮৬ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী]


● নবুয়ত দাবীর ভিত্তি স্থাপন করতঃ এ স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রাথমিকভাবে এ মন্তব্য উপস্থাপন করেছে যে, শরীয়তের পুংখানুপুংখ বিধিমালা কতেক মানুষের নিকট নবীগণের মাধ্যম ব্যতীত কলবী নূর দ্বারা সরাসরি পৌঁছে থাকে, এ প্রেক্ষিতে একদিকে ওরা নবীগণের ছাত্র, ডেকে নবীর সমপর্যায়ের। কখনাে শিক্ষক ও বটে। (সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ নং-৩৯ কত-মৌং ইসমাঈল দেহলভী) 


● মাহবুবে খােদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র সম্মান বড়জোর বড় ভাইয়ের মত। (তাকুবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-৬০ কৃত-মৌং ইসমাঈল দেহলভী।) 


● ছরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা হায়াতুন্নবী নন, মৃত্যু বরণ করতঃ মাটি হয়ে গেছেন। (তাবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-৬০ কৃত-ঐ)। 


● নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কোন কুদরত নেই। তিনি দূর থেকে শুনতে ও পাননা। (তাক্বীয়াতুল ঈমান-পৃঃ নং-২৯, ২৩)


● রাসুলল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র নিকট আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়ব আছে বলে মনে করা ও শির্ক। (তাক্বীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-২৭, ২৬, ১০ কৃত- প্রাগুক্ত।)

 

● অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ যদি বলতে না পারেন, তাহলে মানুষের শক্তি খােদার শক্তির চেয়ে বেড়ে যাবে। (এক রােযী পৃঃ নং-১৮,১৭, মুলতান থেকে মুদ্রিত কৃত- প্রাগুক্ত।) 


● হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথাও গায়ব জানে মনে করা শির্ক। (তাক্বীয়াতুল ঈমান পৃঃনং-২৭)। 


● শুধুমাত্র মাহবুবে খােদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র রওজা শরীফের যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা শির্ক ।( তাকবীয়াতুল ঈমান পৃঃ নং-১০)

 

● রাসুলে পাকের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রওজায়ে আত্বহারের সামনে দন্ডায়মান হওয়া শির্ক; সম্মান করার উদ্দেশ্যে হলে। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃঃ-৪০, ৪১কৃত- ঐ)। 


● উম্মতের কান্ডারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইয়া মুহাম্মদু! অথবা ইয়া রাসুলাল্লাহ! আহবান করা শির্ক। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃঃ-২৩)। 


● নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমতুল্য অন্য কেউ জন্ম লাভ করা সম্ভব। (তাকূবীয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা নং- ৩১)।


অবশেষে সে দেহলভী সম্পদের মােহে ও বাদশাহীর নেশায় শিখদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং পরাজয়ের আশংকায় পলায়ন করতে গেলে আফগানীদের ক্ষুরধার তরবারীর আঘাতেই সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এ কাপুরুষােচিত কেলেংকারীতে মৃত্যু বরণকারীকে ও অনেক ভ্রান্ত ঐতিহাসিক শহীদ বলে চালাতে চায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদেশে সুন্নী বলে পরিচয়দাতাদের অনেকেও এ তথ্যকে দলীল মনে করে। لَعَنَةُ اللّٰهِ عَلٰی الکَاذِبِينَ  (মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত)। 



তিন- স্যার সৈয়্যদ আহমদ খান কৌলীঃ



যখন ভারতীয় ওয়াহাবীদের নেতা ও গুরুজন সৈয়্যদ আহমদ বেরলভীর (মৃত্যু ১৮৩১ খৃঃ) মৃত্যুতে তাদের প্রলাপ বকনী এবং ভবিষ্যদ্বাৰ্তা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়, তখন তার বংশধর থেকে স্যার সৈয়দ আহমদ খান কৌলী (১৮১৭ খ্রীঃ - ১৮৯৮ খ্রীঃ) নামক এক ব্যক্তি তার অনুগামী ও উত্তরসূরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সে তাফসীর, হাদিস, ফিক্‌হ সংক্রান্ত গ্রন্থরাজীকে অস্বীকার করে বসে। ধর্মের সকল আবশ্যকীয় বিধিবিধান থেকে বিমুখ হয়ে নির্লজ্জ ভাবে বলেছেঃ 


(১) কিয়ামত দিবস, পুণঃরুথান, স্বর্গ, নরক, ফিরিশতা, জিব্রাইল এবং পুলসিরাত বলতে কিছুই নেই। 

(২) ফিরিশতা এক প্রকার শক্তির নাম। 

(৩) বেহেস্ত, দোযখ, কিয়ামত, পুনঃরুত্থান এ সবগুলাে আধ্যাত্মিক, আক্তগত বা শারীরিক কিছু নয়। 

(৪) কারামত (অলৌকিক ঘটনা), মুজিযা (ঐশ্বরিক ঘটনা) এসব বাজে কথা। 

(৫) যে কেউ আপন চেষ্টার বদৌলতে নবী হতে পারে। 

(৬) স্বয়ং আল্লাহ রাব্বল আলামীন ও প্রকৃতির শৃংখলে আবদ্ধ। 

(৭) সর্বনিম্ন পর্যায়ের চিন্তাগ্রস্থতার নামই দোযখ। তাইতাে সে সৈয়দ আহমদ খান কৌলী নিজ কল্পিত নরকের পথ বেয়ে নিম্ন থেকে নিম্নতম স্তরের দিকে পৌঁছেছে। জীবনের ইতি সে এভাবে টানল যে, তার খাজাঞ্চী (ক্যাশ সংরক্ষক) অনেক সঞ্চিত টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করার সংবাদ পেলে সে এমন চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে পানাহার বন্ধ হয়ে ঐ মমঘাতেই তার জীবনাবসান হয়। 



চার- মির্যা গােলাম আহমদ কাদিয়ানীঃ 



সৈয়দ আহমদ খান কৌলীর অনুসারীদের মাঝে মির্যা গােলাম আহমদ কাদিয়ানী জন্ম লাভ করে ১৮৩৫ খ্রীস্টাব্দে। সে সুস্পষ্টভাবে নবুয়তের দাবী করতঃ সুরাহ্ সাফ- এ বর্ণিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র সু-সংবাদ সম্পর্কিত ১৫ (ইছমুহ আহমদু) আয়াতাংশকে নিজের প্রতিই সম্পর্কিত করে প্রচার করেছে। এমনিভাবে জাহান্নামের সর্বস্তর অতিক্রম করে সর্বনিম্নে পতিত হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেনি— 

آنچہ داد است ہر نبی را جام     داد آں جام را مر اد ہتمام

پر شد از نور من زمان وز مین    سر ہنوزت بہ آسمان از کیں

باخدا اجنگہا ہیہات     ایں چہ جور وجفا کنی ہیہات 

  (نزول مسیح)

অর্থাৎ প্রত্যেক নবীকে যে শরবতের পেয়ালা দেয়া হয়েছে, ঐ পেয়ালাকে পরিপূর্ণতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত হয়েছে। আমার দূর থেকে যমীন (স্থান) ও যমান (কাল) পূর্ণ হয়েছে। কখনাে তার (মির্যা গােলাম আহমদ কাদিয়ানী) ভেদ আসমান পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ (ভেদ) থেকে একটি হল যে, তুমি (মির্যা গােলাম আহমদ কাদিয়ানী) খােদার সাথে যুদ্ধ করেছে। আফসােস! আফসােস! তুমি এটা জুলুম- অত্যাচার করেছাে। 

(নুযূলে মসীহ)। 

এই শিষ্য (গােলাম আহমদ কাদিয়ানী) জন্ম লাভের সময় বলা হয়েছে । 

کَانَ اللّٰهُ نَزَلَ مِنَ السَّمَاءِ 

(আল্লাহ আসমান থেকে তাকে নাযিল করেছে)

পরবর্তীতে সে ব্যক্ত করেছে যে, আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এলহাম বা অন্তকরণে জানিয়ে দেয়া। হয়েছে যে-


اَنتَ مِنّٸ بِمُنزَلَةِ اَولاَدِی اَنتَ مِنّی وَاَنَا مِنكَ 


অর্থাৎ তুমি আমার তুলনায় আমার সন্তান-সন্ততির পর্যায়ে, তুমি আমার থেকে প্রকাশিত আর আমি তােমার থেকে প্রকাশিত। (ওয়াকিউল বলদ পৃঃ নং-৭৭৬) 

(হযরত ইমাম মাহদী (আ.) এর আহবান পৃঃ নং -২১ সংযােজিত)।


মােদ্দাকথা কুরানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, সকল নবীদের (আলাইহিমুসসালাম) মানহানি করা, বিশেষতঃ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে বিশ্রীভাবে গালমন্দ করার ক্ষেত্রে সে কার্পন্য করেনি। শেষকালে কলেরা রােগে আক্রান্ত হয়ে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি- 


فَلاَ یَستَطِیعُونَ تَوصِیَةً وَلاَ اِلٰی اَھلِھِم یَرجِعُونَ

(যখন তারা না ওসীয়ত করতে পারবে এবং না আপন ঘরে ফিরে যেতে পারবে)। 

(সুরা ইয়াসীন আয়াত নং- ৫০)। 


এ আয়াতের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। আর নিজ মতের বিরােধী ওলামায়ে কেরামের মােকাবেলায় সে (কুখ্যাত কাদিয়ানী) ফেরআউনের মত জাহান্নামে পৌঁছে যায়। তার এ ঘটনা মুসলমানদের সম্মুখে 

وَاَغرَقنَا اٰلَ فِرعَونَ وَاَنتُم تَنظُرُونَ 

(আর ফিরআউনী সম্প্রদায়কে তােমাদের চোখের সামনে ডুবিয়ে দিয়েছি।) (সুরা বাকারাহ আয়াত নং- ৫০)। 


এ বাণীর বাস্তব প্রমাণ হয়ে রয়েছে। চতুর্দিক থেকে মুসলমানরা এমনকি হিন্দুরা পর্যন্ত তার ধিকৃত লাশের উপর তাকে ঘৃণা প্রকাশ করে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠে এবং 


اُولٰٸِكَ عَلَیھِم لَعنَةُ اللّٰهِ وَالمَلاَٸِکَةِ وَالنَّاسِ اَجمَعِینَ 

অর্থাৎ তাদের উপর অভিশম্পাত রয়েছে আল্লাহ, ফিরিশতাকুল এবং মানবকুল সবারই। (সুরাহ বাক্বারাহ্ আয়াত নং-১১১)। 

এ আয়াতের বাস্তব চিত্র মানসপটে অংকিত হয়ে থাকে। 


(হে চক্ষুঃম্মানেরা ! তােমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।) 

فَاعتَبِرُوا یَااُولِي الاَبصَارِ 



পাঁচ - সৈয়্যদ ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালীঃ 



দ্বিতীয় নেতা (দেহলভী)'র উত্তরসুরীদের মধ্যে সৈয়্যদ ছিদ্দিক হাসান খান ভূপালী জন্ম লাভ করে । সে ওয়াহাবী মতবাদ প্রচার প্রসারে উঠে পড়ে লাগে। মুসলমানদেরকে বিভিন্ন প্রলােভন দেখিয়ে বিশেষতঃ বিনামূল্যে কিতাব বিতরণ করার মাধ্যমে বিপথগামী করে । আল্লাহ জাল্লা শানুহুর জন্য দিক, জায়গা এবং (কল্পিত) দেহ সাব্যস্ত করতঃ এ ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে যায়। (রেসালা আল্ ইহতিওয়া)। 

ফুকাহায়ে মুকাল্লিদীনকে (ইমাম অনুসারী আইনজ্ঞগণ) গালমন্দ করার ক্ষেত্রে আপন 

পূর্বসূরীদেরকেও ডিঙ্গিয়ে যায়। তার মারাত্মক উক্তিগুলাে হলঃ


(১) মিথুক, ধোঁকাবাজ, প্রতারক এবং সকল কু-কর্মশীলদের উৎস হল ফিকহ শাস্ত্র। 

(২) এসব নষ্টামীর মূল কেন্দ্রবিন্দু হল ফুকাহা ও মুকাল্লিদীনদের মতাদর্শ (তরজুমানে ওয়াহাবিয়্যাত পৃ: নং- ৩৫,৩৬)।

(৩) সকল সাহাবায়ে কেরাম বিশেষতঃ হযরত সায়ুিদুনা ওমর ফারুক (রা.)-কে বিদয়াতে ছায়্যিয়াহর (অনিষ্টকর নিয়মের প্রবর্তন) উদ্ভাবক হিসেবে আখ্যায়িত করে। (ইনতিকাদুর রাজীম) 


এ কটুক্তির পরিণামে অধঃপতিত ও প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যায় । خَسَرَ الدُّنیَا وَالاَخِرَةِ  ( উভয়কালেই ক্ষতিগ্রস্থ) এর বাস্তব নমুনায় পরিণত হয়।) 



ছয়-ইসমাইল দেহলভীর বংশধরঃ



যখন গায়রে মুকাল্লিদীন ও ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত মতবাদ ও বিদয়াত পুরােপুরি ভাবে প্রকাশ পেয়ে যায় এবং প্রত্যন্ত এলাকার ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক তার খন্ডনে কিতাব রচিত হতে থাকে, তখন তাদের দ্বিতীয় ইমাম (ইসমাইল দেহলভী) এর বংশধরেরা অন্য একটি চক্রান্ত এঁটে বসে। তারা নিজেদেরকে হানফী ও মুকাল্লিদ সাজিয়ে উপস্থাপন করে। একদিকে তাক্ববিয়াতুল ঈমান’ এ লিখিত বদ্ আকীদার উপর অটল থেকে ঐ সমস্ত কুফরী মতবাদকে সার্বিকভাবে সহযােগিতা করে চলেছে, অপরদিকে আমলগত বিষয়সমূহে হানাফী মতাবলম্বী রূপে নিজদের প্রকাশ করেছে। এটা ঠিক এরূপ বিষয়, যেরূপ তাদের। প্রথম দলপতি শেখ নজদী বাহ্যিকভাবে হাম্বলী মতাবলম্বীর দাবীদার হয়ে (প্রকৃতপক্ষে সে কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলনা) 


গায়রে মুকাল্লিদীনের বিরুদ্ধে অনেক কিতাব রচনা করেছে। গায়রে মুকাল্লিদীনের স্বপক্ষে সে জোরালাে বক্তব্য রেখেছে যে, শরীয়তের অনেক মাসআলার ক্ষেত্রে তৎসময়ে সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও মতানৈক্য ছিল। কাজেই মাযহাব না মানার কারণে গায়রে মুকাল্লিদীন ও ওয়াহাবীদের সমালােচনা করা বৈধ নয়। (ছাবীলুর রাশাদ ও অন্যান্য মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী)


হুজুর (ﷺ) এর এলম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মৌলভী খলিল আহমদ আন্বিটভী লিখেছে যে, 


● ছরকারে দো আলম (ﷺ)’র জ্ঞান থেকে শয়তানের জ্ঞান অধিক। (বারাহীনে কাত্বিয়া পৃঃ ন- ৫১ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)

● আল্লাহর হাবীব সমস্ত আদম সন্তানের সম-মর্যাদাবান। (বারাহীনে কৃাত্বীয়াহ পৃঃ নং- ৩ কৃত- মৌঃ খলিল আহমদ)। 

● রাসুলে খােদার মিলাদ করা এবং সম্মানসূচক কিয়াম করা বিদয়াত ও শির্ক। (ফতওয়ায়ে রশীদিয়াহ পৃঃ নং- ১৩ কৃত- মৌঃ রশীদ আহমদ বারাহীনে ক্বাত্বীয়াহ পৃঃ নং- ২২৮ কৃত- ঐ) 

● আরাে প্রলাপ বকেছে যে, নবী (ﷺ)র নিকট দেওয়ালের পিছনের ইলম কি তা জানা নেই। (নাউযুবিল্লাহ) 


এ ধরনের মন্তব্যকারী নিজের শেষাবস্থা কি হবে জানে না। তাদের এ ভ্রান্ত মতবাদের প্রত্যুত্তরে অনেকগুলাে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। 



সাত- গােলাম মুহিউদ্দীন নামক হরিচাঁন্দঃ



ভূপালী অনুসারীদের মধ্যে এক হিন্দু (মুসলমানী নাম হল গােলাম মুহিউদ্দিন) জন্ম লাভ করে। যদিও সে মুর্খ কিন্তু কতেক শিক্ষিত ওয়াহাবীর মাধ্যমে কিছু গ্রন্থ রচনা করেছে। যেমন,“

● জাফরুল মুবীন ফী রদ্দে মুগালাত্বাতিল মুকাল্লিদীন” নামক গ্রন্থ প্রনয়ন পূর্বক তাতে ইমাম হুম্মাম (রা.) এবং তাঁর যুক্তিভিত্তিক দলীলের যথেষ্ট সমালােচনা করা হয়েছে। চার ইমামের মুকাল্লিদগণ এবং চার ত্বরীকার অনুসারীদেরকে মুশরিক, কাফির ইত্যাদি বানিয়ে ছেড়েছে। (জফরুল মুবীন পৃঃ নং- ১৮৯, ২৩০, ২৩২ আরও অন্যান্য)


পরিনামে ‘বেরীবেরী' (اِبلاَٶُس) সে রােগে এমনভাবে আক্রান্ত হয়েছিল যে, অনবরত পাঁচ সাত দিন মুখ থেকে মল বের হয়েছে, মৃত্যুকালে অন্তিম উপদেশ দিয়েছে যে, আমাকে মুশরিক (হানাফী) গণের গােরস্তানে দাফন করবে না। শেষতক কুকুরের মত মৃত্যু বরণ করেছে এবং লাহাের 'পাকা দরজা নালা’ এর পার্শ্বে তার দাফন কার্য সমাপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত নালার নাপাক পানির খরস্রোতে তার কবর ও নিশ্চিহ্ন হয়ে নালার সাথে একাকার হয়ে যায়। 


فَاعتَبِرُو یٰااُولِی الاَبصَارِ 


(হে জ্ঞানী লােকেরা! তােমরা শিক্ষা গ্রহণ 

র) আল কোরআন।  



আট-আবদুল্লাহ চাকঢ়ালুভীঃ



এই ভূপালীপন্থীদের মধ্যে আবদুল্লাহ চাকড়ালুভী নামক এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। চলাফেরায় অক্ষম, পঙ্গু এবং যথার্থ শিক্ষা হতে বঞ্চিত, দিকভ্রান্ত হওয়া সত্বেও সে আহলে কুরআন দাবী করতঃ কুরআন, হাদিস, ফিকাহ্ শাস্ত্রের সমস্ত গ্রন্থাদিকে অস্বীকার করে বসে। এ নরাধম উল্লেখ করেছে যে, হাদিস বা ফিকাহ্ শাস্ত্রানুযায়ী আমলকারী কুরআন বিরােধী। (নাউযুবিল্লাহ) মুনাফিকরা তাদের এ মতের সপক্ষে দলিল উপস্থাপন করে যে, কুরআনের

 

(রাসুল ﷺ এর অনুগত হও) এর মধ্যস্থিত الرسول দ্বারা কুরআনুল করীম উদ্দেশ্য।


 مَا اٰتُکُمُ الرَّسُول 


(যা রাসুল ﷺ তােমাদের প্রদান করেছেন।) এ আয়াতে ও অনুরূপভাবে রাসুল দ্বারা কোরআন উদ্দেশ্য। যদি রাসুল (ﷺ) উদ্দেশ্য হয়ও, তবে তা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বেলায়ই প্রযােজ্য হবে, সাধারণ বিধিবিধানের ক্ষেত্রে নয়। 

নামাজের বেলায় ও নতুন (ভ্রান্ত) অর্থের আবিস্কার করতঃ একে নাম করণ করেছে 


صَلٰوةُ القُراٰنِ بِاٰیَاتِ الفُرقَان


(সালাতুল কুরান বি আয়াতিল ফোরকান) পরবর্তীতে ঐ আবদুল্লাহ চাকঢ়ালুভী অন্যের মারফত কোরআনের ক’টি পারার ব্যাখ্যা লিখিয়ে সেটার নাম 


تَفسِیرُ القُراٰنِ بِاٰیَاتِ الرَّحمٰنِ


(তাফসীরুল কুরান বি আ-য়া-তির রাহমান) রাখে। এতে ব্যক্ত করে যে, নবী (ﷺ) নিছক একজন দূত মাত্র, নাম ও সংবাদের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কোন অধিকারই বাহকের নেই। (নাউযুবিল্লাহ)।


অবশেষে আবদুল্লাহ চাকঢ়ালুভী লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে লাহাের থেকে নির্বাসিত হয়। চাকঢ়ালুভী বিপথগামী ভন্ড ও নিরেট মুর্খ হওয়া সত্বেও কতেক ওয়াহাবীদের সহযােগিতায় পীর বনে যায়। অতঃপর মুলতানে গমন করতঃ নিজের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে অপকর্মে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে ভীষণ শাস্তি ভােগ করে এ আঘাতেই সে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং সর্বশেষে জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছে। 


নয়- মােল্লা গােলাম আলী ক্বসভুরী ও পাঞ্জাবী কবিঃ 


সে ভূপালীদের মধ্যে মােল্লা গােলাম আলী ক্বসভুরী এবং এক হাফেজ, পাঞ্জাবী কবি জন্ম গ্রহণ করে। ইবনে তাইমিয়া মুজাচ্ছামীয়াহর (আহমদ বিন আবদুল হালিম ইবনে তাইমিয়া ১২৬৩ খ্রীঃ - ১৩২৮ খ্রীঃ) লিখিত عَلٰی العَرشِ اِستَوٰی (আলাল আরশিছ তাওয়া) নামক পুস্তিকাটি মােল্লা ক্বসভুরী প্রকাশ করে। 

তার ঈমান বিধ্বংসী আচরনের মধ্যে রয়েছে—

 

(১) সে সুফী তত্ত্ববিদগণের বিরুদ্ধে বড় গুরুত্ব সহকারে حَقِیقَةُ البَیعَةِ وَالاِلهَامِ (হাক্বীকাতুল বায়আত ওয়াল ইলহাম) পুস্তকটি লিখে এ কুফরী বাক্য উচ্চারণ করেছে যে, প্রচলিত বায়আত অর্থাৎ পীর মুরীদি দ্বারা ইসলাম ধর্মে এমন ফ্যাসাদ ও বিভ্রাট প্রবিষ্ট হয়েছে যা গননা করাও অসম্ভব। 


(২) উপাস্য মর্মে শির্ক, প্রতিপালকত্বে শির্ক, এমনিভাবে শির্কের যত প্রকারভেদ রয়েছে। সবগুলাে উহা (প্রচলিত বায়আত) থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। (হাক্বীক্বাতুল বায়আত ওয়াল এলহাম), (পৃঃ নং- ২৮ কৃত- মােল্লা গােলাম আলী ক্বসভুরী) 


(৩) মােল্লা কুসভুরী ছরকারে দো-আলমের শানে কটাক্ষ করে লিখেছে, নবীর ((ﷺ)) সমস্ত কার্যাদি প্রশংসনীয় নয় এবং তার জন্য সাধারণ ভাবে নিস্পাপ হওয়া সাব্যস্ত নেই। (হাক্বীক্বাতুল বায়আত ওয়াল এলহাম পৃঃ নং- ৪৪, ৪৫) 


(৪) ঐ পাঞ্জাৰী কবি ‘তাক্ববিয়াতুল ঈমানকে পাঞ্জাবী ভাষায় কবিতাকারে প্রকাশ করে করে নাম রেখেছে হিসনুল ঈমান ওয়া যীনাতুল ইসলাম এবং ভূপালীর লিখিত ত্বরীকায়ে মুহাম্মদীয়াকে সে পাঞ্জাবী ভাষায় কবিতাকারে লিখে তার নাম করণ করেছে “আনওয়ায়ে মহাম্মদী”। এতে পাঞ্জাবী কবি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে শরীয়তের অসমর্থিত এমন কতগুলাে অভূতপূর্ব যুক্তির অবতারণা করেছে, যদ্দরুন পাঞ্জাবের মধ্যে ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে যে কারাে নিকট পাঞ্জাবী দুয়েক বর্ণের জ্ঞান ছিল সে উহা পাঠ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে কুরআন হাদিস বিরােধী এবং বিদয়াতী, মুশরিকী বলে অভিহিত করে যেতাে। সে চক্রান্ত করে বলত যে, ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) বলেছিলেন—


اِذَا صَحَّ الحَدِیثُ فَهُوَ مَذهَبِی وَاترُکُوا قَولِی بِخَیرِ المُصطَفٰی صَلّٰی اللّٰه عَلَیهِ وَسَلَّم-  


অর্থাৎ যতগুলাে বিশুদ্ধ হাদিস শরীফ আছে তা আমার মাযহাব এবং ছরকারে দো আলমের হাদিসের মােকাবিলায় আমার কথাকে পরিত্যাগ করাে । সুতরাং ফুকাহায়ে মুকাল্লিদীন নয়। বরং আমরা আহলে হাদিসই সত্যপন্থী এবং নির্ভেজাল হানাফী। 

সাপের চেয়েও মারাত্মক, নিকৃষ্টতর নরাধম পাঞ্জাবী কবি পূর্বসূরী ওলামাদের ফিকাহ্ গ্রন্থকে রদ করেছে এবং এ যুক্তি দেখিয়েছে যে, তৎকালে ইলমে কালামের চর্চা যৎ সামান্য ছিল। আর বর্তমানে তাে এ বিষয়ে জ্ঞান সাগর উতলে উঠেছে এবং চতুর্দিক থেকে হাদিস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং পূর্বসূরী ওলামাদের ফিকাহ্ শাস্ত্র সর্বজন গৃহীত নয়। 



দশ- মেীলভী আহমদ গাংগুহীঃ 



তাক্বলীদের (ইমাম অনুসারী) দাবীদার ওয়াহাবী ফের্কার ধারা বেয়ে আগমন করেছে মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী, যার ভ্রান্ত আক্বীদার পিচ্ছিলতায় মুসলিম জাতির পদস্খলন ঘটে । তার বিভ্রান্তমূলক আক্বীদার একটি দৃষ্টান্ত হল যে,একদা জনৈক ভক্ত তার কাছে জিজ্ঞেস করে-হুজুর! দু'ব্যক্তি পরস্পর বাদানুবাদ করে। একজন বলল- আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলতে পারে। একথা শুনে আরেকজন বলে উঠে, আল্লাহ কখনাে মিথ্যা আচরণ করেন না। তৃতীয় ব্যক্তি মিমাংসার উদ্দেশ্যে বলল- আমিও তাে আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারার পক্ষে। ওহে গুরুজন! আপনি মেহেরবানী করে ফরমান, তৃতীয় ব্যক্তি কি মুসলমান না কাফির? বিদয়াতী সুন্নতপন্থী? উত্তরে গাংগুহী বলল-তৃতীয় ব্যক্তিকে কাফির, বেদয়াতী কিংবা বিভ্রান্ত কিছুই বলা উচিত নয়। তার উক্তি আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন-এটা ঠিকই আছে। সেই তৃতীয় ব্যক্তির উপর কঠোরতা প্রদর্শন করা অনুচিত। আরে তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমরা হানাফী শাফেয়ী কাউকে দোষারােপ করিনা, এটাও সেরূপ একটা মতবিরােধ। সে তৃতীয় ব্যক্তিকে ফাসিক কিংবা গােমরাহ বলা থেকে বিরত থাক। ওহে মুসলিম জাতি! আমি (আলা হযরত) ঘােষনা দিচ্ছি যে, গাংগুহী কতইনা গুরুতর ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। যে আল্লাহ তায়ালা থেকে মিথ্যা সম্পাদিত হওয়ার প্রবক্তা। গাংগুহী উপরােক্ত তৃতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে ফতওয়া দিয়েছে। তাকে (তৃতীয় ব্যক্তি) কাফির বা মুরতাদ বলা তাে দুরের কথা ফাসিক কিংবা গােমরাহ ও বলা উচিত হবেনা। সে আরাে তুলনা করেছে হানাফী-শাফেয়ী পারস্পরিক মতবিরােধের সাথে। যেমনিভাবে হানাফীরা বলে থাকে, “আমিন” চুপে বলতে, শাফেয়ীরা বলে তার উল্টো। যেরূপভাবে এদের সমালােচনা। করা যায়না, অনুরূপভাবে ঝগড়াটে ব্যক্তিবর্গকে ও সমালােচনার উর্ধে রাখা প্রয়ােজন। পরােক্ষভাবে সে একথা মেনে নিয়েছে যে, আল্লাহকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী দুটোই বলা যাবে। নাউযুবিল্লাহ! (ফতওয়ায়ে গাংগুহী তৃতীয় খন্ড)। 



এগার- মৌলভী কাসেম নানুতুভীঃ 



ওয়াহাবী মতবাদের অন্যতম পুরােধা মৌং কাসেম নানুতুভী "তাহযীরুন নাছ” নামক কিতাবে বলেছে خَاتَمُ النَّبِیّینَ এর অর্থ সর্বশেষ নবী মনে করা এটা সাধারণ মানুষের ধ্যান ধারণা। কিন্তু জ্ঞানীদের নিকট প্রথম ও শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু বিশেষ কোন ফজীলত বুঝা যায় না সেহেতু 


وَلَکِن رَسُولُ اللَّهِ وَخَتَمُ النَّبِیِّینَ 


এ আয়াতের অর্থ সর্বশেষ নবী বলা শুদ্ধ নয়। এর যথাযথ অর্থ হবে তিনি সকল নবীদের আসল। তবে এ আয়াতে করীমা প্রশংসার স্থলে না হলে তখন خَاتَمُ النَّبِیِینَ এর অর্থ সর্বশেষ নবী বলা যুক্তি সঙ্গত হতাে। সার কথা হল নানুতুভী সর্বশেষ নবী মানতে রাজী নয়। অথচ এটা খােদ ছরকারে দো'আলমের হাদিসে মুতাওয়াতির এবং সকল নবী, সাহাবী ও উম্মতে মুহাম্মদ (ﷺ)’র ইজমার খেলাফ। (তাহযীরুন্নাছ-পৃঃ২,৩ কৃতঃ কাসেম নানুতুভী) 



বার- মৌলভী আশরাফ আলী থানভীঃ 



সেই বাতিল ফের্কার মসলকের উপর ১২৮০ হিজরীতে জন্ম লাভ করে মৌলভী আশরাফ আলী থানভী। ওহাবী মতবাদের প্রচার প্রসারে সে জোরে শোরে নেমে পড়ে। সে কুফরী বাক্যালাপে শুধু অভ্যস্ত নয়; বরং শিষ্য প্রশিষ্যকে উৎসাহিত করে যেত। তার একটি প্রমাণ হল- 


● একদিন তার এক মুরীদ স্বপ্নে কালেমায়ে ত্বায়্যিবা পড়তে গিয়ে বললঃ

 لاَ اِلٰهَ اِلاَّ اللَّهُ اَشرَف عَلِی رَسُولُ اللَّهِ 

আর জাগ্রত হয়ে দরূদ পড়ল এভাবে যে,

 اللَّهُمَّ صَلِّی عَلٰی سَیِّدِنَا وَنَبِیِّنَا وَمَولٰنَا اَشرَف عَلِی 

পরক্ষণে মুরীদ তার ফতওয়া জানতে চাইলে থানভী বলল- এ ঘটনায় তুমি প্রশান্তি লাভ কর যে, তুমি যার কথা উচ্চারণ করেছে সে সুন্নাতানুসারী। থানভী কুফরী বাক্যকে শােধরায়ে না দিয়ে আরাে উৎসাহিত করল। অথচ কোন গাইরে নবীকে রাসুলুল্লাহ বলা এবং কারাে উপর দরূদ পড়া মারাত্মক অপরাধ। সে নিজকে রাসুলুল্লাহ দাবী করে বসে। 

(রেসালায়ে আল ইমদাদ পৃঃ ৩৫, ৩৬ কৃত- মৌঃ আশরাফ আলী থানভী) 


● গায়ব (অদৃশ্য বিষয় জানার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে প্রত্যেক শিশু ও পাগলের সাথে উপমা দিয়েছে। 

(রেছালায়ে হিফজুল ঈমান পৃঃ নং-৭ কৃত আশরাফ আলী থানভী) 




                      তাদের বিধান



মােদ্দাকথা হল- দীর্ঘ ও বিরক্তিকর হওয়ার আশংকায় এতটুকুতে যথেষ্ট মনে করলাম। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাদের সকল ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য এবং এদের সমস্ত দল উপদল সমূহকে তলে ধরা সম্ভব হয়নি। ওরা তাদের দলভুক্ত হবে, যারা দাজ্জালের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করবে। 



          হে মুফতিয়ে মিল্লাত ওয়াদ্বীন! 



এখন আপনার সমীপে প্রশ্ন রইল যে, এ বাতিল মৃতবাদী ওয়াহাবীরা অন্যান্য পথ ভ্রষ্ট খারেজী রাফেজী ফেরকা গুলাের মত কিনা?

 اُولٰٸِكَ هُم شَرُّالبَرِيَّةِ ,

● (তারা সৃষ্টি কুলের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট) 

(সুরা, বাইয়্যিনাত আয়াত, নংঃ ৬) 

اُولَٸِكَ کَالاَنعَامِ بَل هُم اَضَلُّ

● (তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়’ বরং তা অপেক্ষা ও অধিক পথভ্রষ্ট ) (সুরাহ আ'রাফ-১৭৯) 

فَمَثَله کَمَثَلِ الکَلبِ اِن تَحمِل عَلَیهِ یَلهَث اَو تَترُکهُ یَلهَث

● (সুতরাং তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়, তুমি তার উপর হামলা করলেও সেটা জিহবা বের করে দেয় এবং ছেড়ে দিলেও জিহবা বের করে দেয়। (সুরা আরাফ-১৭৬) 


উপরােক্ত কুরআনী ভাষ্যের আওতায় পড়ছে কিনা?


● হাদিসে পাকে আছে , 

مِثلُ اَهلِ البِدعِ شَرُّالخَلقِ وَالخَلِیقَةِ وَاَهلُ البِدعِ کِلاَبُ اَهلِ النَّارِ

(বিদয়াতীরা সৃষ্টির সর্ব নিকৃষ্ট ও জাহান্নামের কুকুর) 


এ বাতিল মতবাদী ওয়াহাবীরা উপরােল্লিখিত হাদীসে নববীর অন্তর্ভূক্ত কিনা? নামাযে তাদের পিছনে ইকতিদা (অনুসরণ) করা, তাদের লিখিত পুস্তকাদি অধ্যয়ন করা এবং তাদের সাথে সংশ্রব রাখার ব্যাপারে হুকুম বা বিধান কি? যারা তাদেরকে মুহাব্বত করে এবং এ সব ভন্ডদের আলিম ও সুন্নাতপন্থী পীর মনে করে এদের সম্পর্কে মন্তব্য কি? কোরানের অকাট্য দলীলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয়া, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে কাফের ও ফাছিক বলে আখ্যায়িত করা, সর্বজ্ঞাতা দাবী করা, আমিত্ব প্রকাশ করা, বিদ্রোহ করা এবং নবীর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) শানে ধিক্কারমূলক ও মান হানিকর উক্তি করা-এসব ফের্কাগুলাের মধ্যে কম-বেশী বিদ্যমান। 


উত্তরঃ 


হে প্রভু! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তােমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তাদের উপস্থিতি হওয়া থেকে পানাহ চাচ্ছি। প্রাগুক্ত প্রশ্নটি কি উত্তরের মুখাপেক্ষী? স্বয়ং তদস্থলে সঠিক উত্তরটি রয়েছে। সম্মানিত প্রশ্নকারী মা শয়তানদের থেকে যে অভিশপ্ত উক্তি সমূহ বর্ণনা করেছেন, তা দ্বারা ওদের সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতা, কুফরী এবং মুরতাদ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর এটাই মুসলমানদের কাছে দ্বি-প্রহরের ন্যায় স্পষ্ট।


وَسَیَعلَمُ الَّذِینَ ظَلَمُوا اَیَّ مُنقَلَبٍ یَّنقَلِبُونَ 

● (এবং শিগগিরই যালিমগণ জানবে যে, কোন পার্শ্বের উপর তারা পলট খাবে) 

(সুরাহ-শূয়ারা - আয়াত নং ২২৭)

 

اَلاَ لَععنَةُ اللّٰهِ عَلٰي الظّٰلِمِینَ

● (ওহে! যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাৎ) 

(সুরাহ- হুদ- আয়াত নং- ১৮) 


وَلَٸِن سَأَلتَهُم لَیَقُولَنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوضُ وَنَاعَبُ- قُل اَبِا للّٰهِ واٰبَاتِهٖ وَرَسُولِهٖ کُنتُم تَستَهزِنُونَ- لاَ تَعتَذِرُوا قَد کَفَرتُم بَعدَ اِیمَانِکُم-

● (এবং হে প্রিয় মাহবুব! যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তবে বলবে, আমরা তাে এমনি হাসি খেলার মধ্যে ছিলাম। আপনি বলুন- তােমরা কি আল্লাহ, তার আয়াত সমূহ এবং তদীয় রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? মিথ্যা অজুহাত রচনা করােনা, তােমরা ঈমান আনয়নের পর কাফির হয়ে গেছাে।) (সুরাহ তাওবা - আয়াত নং- ৬৫)। 


یَخلِفُونَ بِاللّٰهِ مَا قَالُوا وَلَقَد قَالُوا کَلِمَةَ الکُفرِ وَکَفَرُوا بَعدَ اِسلاَمِهِم

● (আল্লাহর কসম করে যে, তারা বলেনি এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তারা কুফরের কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পরে তারা কাফির হয়ে গেছে।) 

(সুরাহ তাওবা - আয়াত নং- ৭৪) 


لَعَنَهُمُ اللّٰهُ بِکُفرِهِم فَقَلِیلاً مَّا یَٶمِنُونَ

● (বরং আল্লাহ তাদের উপর অভিশাপ করেছেন তাদের কুফরের কারণে। সুতরাং তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।) (সুরা বাক্বারাহ আয়াত নং- ৮৮) 


وَالَّذِینَ یُٶذُونَ رَسُولَ اللّٰهِ لَهُم عَذِابُُ اَلِیمُُ 

● (আর যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।) (সুরাহ তাওবা- আয়াত নং- ৬১) 


اِنَّ الَّذِینَ یُٶذُونَ اللّٰهُ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ فِي الدُّنیَا وَالاٰخِرَةِ وَاَعَدّ لَهُم عَذَابًا مُّهِینًا

● (নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুুত করে রেখেছেন।) (সুরাহ্ আহযাব- আয়াত নং- ৫৭)। 


উপরােক্ত আয়াতে করীমার বােধগম্য বিষয় হল যে, যারা সাধারণ মুসলমানের উপর অত্যাচার চালায় তাদের পরিণাম অত্যন্ত খারাপ, তাদের আশ্রয়ন জাহান্নাম এবং তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত হয়ে থাকে। আর যারা ওলীগণ, আম্বিয়ায়ে কেরাম ও স্বয়ং ছরকারে দো'আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র শান-মানের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালায়, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত কতইনা প্রবল? তাদের আশ্রয়ন দোযখের সর্ব নিকৃষ্ট স্তরে। 



                     হে সুন্নী ভায়েরা! 



যদি আপনারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন কিভাবে এত মারাত্মক অভিশপ্ত কুফরী কথা বার্তা বলতে পেরেছ? তখন তারা কৌশল এঁটে বসে। আদ্যোপান্ত ভ্রান্ত বিশ্লেষণ করবে, যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বলবে- আমাদের উদ্দেশ্য কারাে মানহানি করা ছিল না। আমরা এমনি ভাবেই হাস্যচ্ছলে তা বলে দিয়েছি। 


পরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন—

হে মাহবুব! আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তদীয় রাসুলের সাথে কি তােমরা বিদ্রুপ করতেছ? তাল-বাহানা করাে না তােমরা ঈমান আনয়নের পরে কাফির হয়ে গেছাে। 

তাদের উপরােক্ত ভ্রান্ত বক্তব্য সম্পর্কে আপত্তি করা হলে নিজেদেরকে সামলানাের যখন কোনই কৌশল বাকী থাকবে না তখন সে মিথ্যুক শয়তানরা একটু পিছু হঁটে বলবে আল্লাহর শপথ, আমরা তাে এ ধরনের মান হানিকর উক্তি করিনি। এ রকম কটুক্তি আমাদের কিতাবাদিতে নেই, এটা আমাদের উপর জঘন্যতম অপবাদ। তােমরা তাে অজ্ঞদের সামনে ধূর্তামী করে যাচ্ছ। মহাশক্তিশালী আল্লাহ বলেন- নিশ্চয়ই তারা কুফরী আচরণ করেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কাফির হয়ে গেছে। 


মহান আল্লাহ বলেন- وَاَنَّهُم لاَ اَیمَانَ لَهُم , 

● (তাদের কসমের কোন গ্রহণ যােগ্যতা নেই।) 


প্রজ্ঞাময় আল্লাহ পাক আরাে বলেন-

وَاَتَّخَذُوا اَیمَانَهُم جُنَّةً فَصَدُّوا عَن سَبِیلِ اللّٰهِ فَلَهُم عَذَابُُ مُّهِینَ-

● (তারা আপন শপথগুলােকে ঢাল স্বরূপ গ্রহণ করে নিয়েছে। অতঃপর আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে। সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ।) 

(সুরাহ্ মুজাদালাহ- আয়াত নং- ১৬) 


তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর অভিশাপ করেছেন, তাইতাে তাদের খুব কম লােক ঈমান আনয়ন করে। যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিয়ে থাকে তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ দিয়ে থাকেন আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।


উল্লেখিত ওয়াহাবী, ন্যাচারী (প্রকৃতিবাদ) কাদিয়ানী, গায়রে মুকাল্লিদীন, দেওবন্দী এবং চাকড়ালুভী (আল্লাহ তাদের সবাইকে নিরাশ করুন) ইত্যাদি ফের্কা গুলাে অত্র আয়াতের মর্মানুসারে নিঃসন্দেহে কাফির ও ধর্মত্যাগী। ইসলামী আইন মতে যদিও তাদের মধ্যে দু'একটি কুফরী পাওয়া গেছে; কিন্তু শত শত কুফরী তাদের উপর আরােপিত হয়েছে । যেমনিভাবে মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর উপর আরােপ করা হয়ে থাকে। ইদানিং তাদের অনুসারী ও বংশধরদের মাঝে এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল; যে কাফির হয়নি। তা এভাবে যে, مَن شَكَّ فِي کُفرِهٖ فَقَد کَفَرَ; অর্থাৎ (যে কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ করে নিশ্চয় সে কাফির হয়ে গেছে) যারা ওয়াহাবীদের অভিশপ্ত উক্তি সমূহের উপর অবগত হয়েও তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পােষণ করে তারাও কাফির। নিঃসন্দেহে তাদের পূর্বসূরী, উত্তরসূরী, অনুসারী এবং অনুসৃত সকলেই প্রশ্নোল্লিখিত হাদিসের আওতায় পড়েছে। অবশ্যই তারা সকলেই বিদয়াতী, জাহান্নামী এবং জাহান্নামের কুকুর। এদের (ওয়াহাবী) কে খারেজী ও রাফেযীদের সাদৃশ্য বলা, এটা খারেজী-রাফেযীদের উপর জুলুম করা ও ওয়াহাবীদের বেয়াদবীর কমতি স্বীকার করার নামান্তর। কেননা খারেজী রাফেযীদের স্বেচ্ছামূলক বেয়াদবী শুধুমাত্র সাহাবীগণ ও আহলে বায়াত (রাঃ) এর উপর সীমাবদ্ধ ছিল। আর তাদের (ওয়াহাবী) বেয়াদবী সম্মানিত নবীগণ এবং খােদ্ ইমামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র শানে হয়েছে। সুতরাং উভয়ের মাঝে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে গেল। এ সমস্ত আলােচনা অধিক কলেবরে আমি অধমের সালিস্ সুয়ূফ, কাওকাবুহু শিহাবিয়্যাহ, সুবহানাস্ সুব্বুহ, ফতওয়াল হেরামাঈন, হুসামুল হেরামাইন, তামহীদ এ ঈমান, ওয়া আম্বাউল মােস্তফা, খালিসুল ই'তিক্বাদ, ক্বছীদাতুল ইস্তেমদাদ ও তার ব্যাখ্যা কাশফে দ্বালালে দেওবন্দ ইত্যাদি পুস্তিকাসমূহে সবিস্তারে রয়েছে। (ওয়ালিল্লাহিল হামদ) তাদের পিছনে ইক্বতিদা করা সম্পূর্ণ বাতিল, যেমনিভাবে আন-নেহী আল আকীদ- কিতাবে আমি (আ’লা হযরত) বর্ণনা করেছি। তাদের বই পুস্তক অধ্যয়ন করা হারাম, কিন্তু রদ্ করার উদ্দেশ্যে আলিমদের জন্য বৈধ। তাদের সাথে সংশ্রব রাখা, তাদের সাথে সালাম বিনিময় করা, তাদের সংস্পর্শে বসা, তাদেরকে পাশে বসানাে, অসুস্থ হলে সেবা শুশ্রুষার উদ্দেশ্যে দেখতে যাওয়া, মৃত্যু বরণ করলে মুসলমানদের রীতি-নীতি অনুযায়ী গােসল ও কাফন দেয়া, তাদের কফিন বহন করা, ইছালে সাওয়াব করা ইত্যাদি হারাম। এমনকি জানাযার নামায পড়া কুফরী পর্যায়ের। 


● আল্লাহ বলেন— 

وَاَمَّا یُنسِیَنَّكَ الشَّیطَانُ فَلاَ تَقعُد بَعدَ الذِّکرٰی مَعَ القَومِ الظَّالِمِینَ-

(এবং যখন শয়তান তােমাকে ভুলিয়ে দিবে, অতঃপর স্মরণ হলে জালিমদের নিকট বসাে না)। (সুরাহ্ আনআম আয়াত নং-৬৮)। 


● আরাে বলেন- وَلاَ تَرکَنُوا اِلٰی الَّذِینَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّکُمُ النَّارُ

(তােমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে যেয়াে না, কেননা এতে তােমাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে)। 


● এ প্রসঙ্গে উম্মতের কান্ডারী নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- 

فَإِیَّاکُم وَاِیَّاهُم لاَ یُضِلُّونَکُم وَلاَ یَفتِنُونَکُم 

(তােমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক, আর তাদেরকে তােমাদের থেকে দূরে রাখ। যাতে তারা গােমরাহী ও ফিৎনায় তােমাদেরকে জড়িত করতে না পারে)। 


● অন্য একটি হাদিসে নববীতে রয়েছে-

لاَتُجَالِسُوھُم وَلاَتُٶَاکِلُوھُم وَلاَتُشَارِبُوھُم وَاِذَا مَرِضُوا فَلاَ تَعُودُوھُم وِاِذَا مَاتُوا فَلاَ تَشهَدُوھُم وَلاَ تُصَلُّوا عَلَیهِم لاَ تُصَلُّوا مَعَهُم-

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তােমরা তাদের পাশে বসোনা, তাদের সাথে পানাহার করাে না, তারা অসুস্থ হলে সেবা শুশ্রুষা করাে না, তারা মৃত্যু বরণ করলে তাদের জানাযায় হাজির হয়াে না, তাদের উপর জানাযার নামাজ পড়াে না এবং তাদের সাথে নামায আদায় করাে না। 


● আল্লাহ জাল্লাশানুহু বলেন-

وَلاَ تُصَلِّ عَلٰی اَحَدٍ مِّنهُم مَاتَ اَبَداً وَّلاَتَقُم عَلٰی قَبرِهٖ-

অর্থাৎ হে মাহবুব! তাদের মধ্যে কারাে মৃত্যু উপর কখনাে জানাযার নামায পড়বেন না এবং তাদের কবরের পাশে দাঁড়াবেন না। (সুরা তাওবা আয়াত নং- ৮৪)।


যারা ওয়াহাবীদের বিভ্রান্তিমূলক উক্তিসমূহের উপর অবগত হয়েও তাদেরকে ভালবাসবে, তারাও অনুরূপভাবে কাফির। 


● মহান আল্লাহ বলেন-  

وَمَن یَّتَوَلَّهُم مِنکُم فَاِنَّهُ مِنهُم-

(এবং তােমাদের মধ্য থেকে যে কেহ তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে, সেও তাদের অন্তর্ভূক্ত) (সুরা মায়েদা আয়াত নং-৫১)। 

● দয়াল নবী এরশাদ করেছেন-  

مَن اَحَبَّ قَوماَ حَشَرَهُ اللّٰهُ مَعَهُم- 

(যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসবে, আল্লাহ তাকে তাদের সাথে হাশর করাবেন)।

● আরাে বলেন- 

 مَن ھَوٰی الکَفَرَةَ فَهُوَ مَعَهُم-

(যে কাফিরদের সাথে মুহাব্বত রাখবে, সে তাদের সাথী হবে)।


যে তাদেরকে আলেমে দ্বীন এবং সুন্নাতানুসারী মনে করবে সে নিঃসন্দেহে কাফির ধর্মত্যাগী।

● শেফায়ে কাজী আয়ায, যখীরাতুল উক্বা, বাহরুর রায়িক্ব, মাজমায়ুল আনহার, ফতওয়ায়ে বাযযাযিয়াহ্ এবং দুররুল মুখতার ইত্যাদি নির্ভরযােগ্য গ্রন্থে রয়েছে—

مَن شَكَّ فِی عَذَابِهٖ وَکُفرِهٖ فَقَد کَفَرَ- 

(যে তার শাস্তি এবং কুফরির ব্যাপারে সন্দিহান হবে, নিশ্চয় সেও কাফির)।
১.ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ শিফা-২/২১১)
২.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকাম
৩.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬
৪.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ দুররে মুখতার’।
৫.আ'লা হযরতঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা।
৬.আ'লা হযরতঃ ইরশাদে আ'লা হযরত।


যখন তাদের মুসলমান বলাতাে দূরের কথা, তাদের কুফরির ব্যাপারে সন্দেহ করলে কাফির হয়ে যায়, (নাউযুবিল্লাহ) তাহলে তাদেরকে আলেমে দ্বীন অথবা সুন্নাতের অনুসারী মনে করা কতইনা নিকৃষ্টতম কুফরী!

 وَذَالِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِینَ 

(এটাই হল জালিমদের প্রতিদান)। 



                          পরিশিষ্ট



মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ আল্লাহ তায়ালা মানবরূপী শয়তানদের অনিষ্ট থেকে পানাহ করুন। মুসলমান ভাইদের অন্তর দৃষ্টিকে খুলে দিন এবং শত্রু-মিত্র পার্থক্য করার তাওফীক দান করুন। 

ভাবতে অবাক লাগে শত্রুতা করে কার সাথে? নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা'র সাথে? 

আফসােস! হাজারাে আফসােস! দোস্ত-দুশমন পরিচয় লাভ করা, নিজেদের শত্রুদের কবল থেকে পলায়ন করা এবং তাদের চেহারা দেখে রক্তাশ্রু ঝরানাে 

উচিত। 

হে মাহবুবে খােদার (ﷺ) বিরুদ্ধাচরণকারী, তার সম্পর্কে কটুক্তি ও গালমন্দকারী, তাঁর প্রতি গালমন্দ লিখে প্রকাশকারী গােষ্ঠী, ঐ শয়তানদের সাথে সংশ্রব রক্ষাকারী! 

কেয়ামত ও হাশরের দিন কি অনুষ্ঠিত হবেনা? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কি মুখ দেখাতে হবেনা? তাঁর সুপারিশ ভিক্ষার জন্য কি হাত বাড়াতে হবেনা? প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আল্লাহকে ভয় করুন এবং তদীয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সমীহ  করুন। আল্লাহ রাব্বল আলামীন আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

আমিন! আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন। 



Top