বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর শুভাগমনের (মিলাদুন্নবীর) ভবিষ্যদ্বাণী ও পূর্ণতা
লেখক: মাওলানা মাসুম আহমদ

কুরআন শরীফে মুহাম্মদ (ﷺ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’লা স্বয়ং ঘোষণা করছেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছি’। (সুরা আম্বিয়া : ১০৮) 

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
অর্থাৎ, ‘মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মাঝে কারো পিতা নয়। কিন্তু (তিনি) আল্লাহ রসূল ও নবীদের মোহর।’ (আহযাব: ৪১) 


বাইবেলের পূরাতন নিয়মে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী

ভবিষ্যদ্বাণী (১) 

বনী ইসমাঈলের মধ্য থেকে মূসা সদৃশ এক নবীর আগমন হবে।

বাইবেলের পুরাতন নিয়মে আছে “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন। তাঁর কথামত তোমাদের চলতে হবে।” ( দ্বিতীয় বিবরন- ১৮:১৫)

আবার এর সাথে বাইবেলে এ কথাও আছে, 
“আমি তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তাদের জন্য তোমার মত একজন নবী দাঁড় করাবো। তার মুখ দিয়েই আমি আমার কথা বলব, আর আমি যা বলতে তাকে আদেশ দেব সে তাই তাদের বলবে।” (দ্বিতীয় বিবরন ১৮:১৮)

মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমন সংক্রান্ত এই ভবিষ্যদ্বাণী যখন উপস্থাপন করা হয় তখন খৃষ্টান ভাইয়েরা এই আপত্তি করেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) নয় বরং যীশুর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণীই এখানে করা হয়েছে। তাদের এই দাবীর মোটেও কোন ভিত্তি নেই। কারণ বাইবেলের উপরোক্ত উদ্ধৃতিদ্বয়ের মাঝেই তাদের এই দাবীর খন্ডন বিদ্যমান।

যেমন: 
(১) এখানে মোশি অর্থাৎ মূসা (আ.) স্পষ্টভাবে বলছেন ‘আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন’ অথচ যীশু কখনো নিজেকে মূসার সদৃশ বলে ইঞ্জিলের কোথাও দাবী করেননি। 
(২) যীশু মূসার ন্যায় কোন নতুন ব্যবস্থা বা শরীয়ত নিয়ে আসেন নি বরং তার শরীয়তকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আগমন করেছেন। (মথি ৫: ১৭-১৮) 
(৩) এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, এই নবী তাদের অর্থাৎ ‘ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য হতে’ আগমন করবেন। এখানে ‘তাদের মধ্য থেকে’ বলা হয় নি। আর ইস্রায়েলীয় ভাই বলতে আব্রাহামের আরেক পুত্র ইসমাঈলের বংশধর অর্থাৎ বনী ইসমাঈলকেই বোঝায়। আর হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) বনী ইসমাঈলেই জন্মগ্রহন করেছেন। ইস্রায়েলীয় ভাই বলতে বনী ইসমাঈলকেই যে বোঝানো হয়েছে এর জন্য আরো দেখুন (আদি পুস্তক ১৬: ১১-১২ ও আদি পুস্তক ২৫: ১৭-১৮) । 

(৪) নবুয়ত লাভের ক্ষেত্রেও মূসা (আ.)-এর সাথে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর সাদৃশ্য রয়েছে। মূসা (আ.) ৪০ বৎসর বয়সে নবুয়ত লাভ করেছিলেন (প্রেরিত ৭ : ৩০)। 

অনুরুপভাবে মুহাম্মদ (ﷺ) ও ৪০ বৎসর বয়সে নবুয়ত লাভ করেছেন পক্ষান্তরে যীশু নবুয়ত লাভ করেছিলেন ৩০ বৎসর বয়সে।

ভবিষ্যদ্বাণী (২) 

‘পারন’ নামক এলাকা থেকে তিনি 

অর্থাৎ সেই নবী আগমন করবেন বাইবেলে আছে “সদাপ্রভূ সিনাই থেকে আসলেন, তিনি সেয়ীর থেকে তাদের উপর আলো দিলেন, তার আলো ‘পারন’ পাহাড় থেকে ছড়িয়ে পড়ল। তিনি লক্ষ লক্ষ পবিত্র স্বর্গদূতদের মাঝখান থেকে আসলেন; তার ডান হাতে রয়েছে তাদের জন্য আগুন ভরা আইন।” (দ্বিতীয় বিবরন ৩৩ : ২)

মক্কা সহ সমগ্র হেজাজ এলাকাকে ‘পারন’ বা আরবীতে ‘ফারান’ বলা হয়। আরব ভূগোল বিশারদদের মতানুযায়ী এ কথা প্রমাণিত। আর বাইবেলে এ কথা স্পষ্টভাবে বিদ্যমান যে, মহানবী (ﷺ) এর পূর্ব-পুরুষগণ অর্থাৎ বনী ইসমাঈল এ এলাকাতেই বসবাস করতেন। বাইবেলে বলা হয়েছে-“পারন নামে এক মরু এলাকায় সে (ইসমাঈল) বাস করতে লাগলো।” (আদিপুস্তক ২১:২১) 

এই ভবিষ্যদ্বাণীর আরেকটি অংশে যে আগুন ভরা আইনের কথা বলা হয়েছে তা-ও কুরআন করীম নাযেল হওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে।

ভবিষ্যদ্বাণী (৩)  

সেই নবীর চেহারার বর্ণনা ও দশ হাজার পবিত্র আত্মাসহ আগমন

বাইবেলে হযরত সুলায়মান (আ.) সেই প্রতিশ্রুত নবীর চেহারার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন, “আমার প্রিয়ের চেহারা শ্বেত, লালচে তার গায়ের রং; দশ হাজার জনের মধ্যে তিনি বিশেষ একজন। তাঁর মাথা খাঁটি সোনার মত, তাঁর চুল ঢেউ খেলানো আর দাঁড় কাকের মত কালো।” (পরমগীত ৫:১০-১৬)

এই ভবিষ্যদ্বাণীও মুহাম্মদ (ﷺ)-এর মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীতে সেই নবীর চেহারার যে বর্ণনা এসেছে তা পুরোপুরি মুহাম্মদ (ﷺ)-এর চেহারার সাথে সাদৃশ্য রাখে। যেমন, মহানবী (ﷺ) এর চেহারা ছিল সাদা ও উজ্জ্বল লালচে আর চুল ছিল কালো ও ঢেউ খেলানো। পক্ষান্তরে হযরত ঈসা (আ.)-এর চেহারা ছিল রক্তিম বর্ণের ও চুল ছিল কোকড়ানো ও সোনালী বর্ণের। এই ভবিষ্যদ্বাণীর আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, সেই নবী দশ হাজার জনের মধ্যে বিশেষ একজন। মুহাম্মদ (ﷺ) যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তাঁর সাথে দশ হাজার সাহাবী ছিলেন। তিনি (ﷺ) ছিলেন তাদের সবার মাঝে বিশেষ একজন।

বাইবেলের নূতন নিয়মে অর্থাৎ ইঞ্জিলে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী

ভবিষ্যদ্বাণী (১) এক: 

প্রতিশ্রুত সেই নবীর অস্বীকারকারীদের শাস্তি প্রদান করা হবেঃ

ইঞ্জিলে এসেছে নবী মুসা বলেছিলেন, “তোমাদের ঈশ^র সদাপ্রভূ তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন। তার কথামত তোমাদের চলতে হবে। যে তার কথা শুনবেনা তাকে তার লোকদের মধ্য থেকে একেবারে ধ্বংস করা হবে।” (প্রেরিত ৩:২২-২৩)

বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণীও আঁ হযরত (ﷺ)-এর ক্ষেত্রে পূর্ণ হয়েছে। কারণ তাঁর (ﷺ) জীবদ্দশাতেই তাঁর বড় বড় বিরোধীরা ধ্বংস হয়েছিল যেমন আবু জাহেল, আবু লাহাব, আরো অনেকেই। এই ভবিষ্যদ্বাণী কখনো মসীহ্ দ্বারা পূর্ণ হয় না কেননা তার জীবদ্দশাতে তাঁর কোন বিরুদ্ধবাদী মারা যায় নি উপরন্তু তাঁকেই ক্রুশে চড়তে হয়েছিল।

ভবিষ্যদ্বাণী (২) দুই: 

মসীহ্ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তাঁর পর এমন এক সত্যের রুহ্ (আত্মা) আগমন করবেন তিনি যা কিছু বলবেন ঈশ্বরের পক্ষ থেকেই বলবেন এবং তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হবে। ইঞ্জিলে মসীহ্ সেই প্রতিশ্রুত নবীর আগমন সম্পর্কে বলছেন- “কিন্তু সেই সত্যের রুহ্ যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, কিন্তু যা কিছু শোনেন তাই বলবেন। আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন।” (যোহন ১৬:১৩)

এই ভবিষ্যদ্বাণীটিও মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে। মসীহ্ পর মুহাম্মদ (ﷺ)-ই এসেছেন যিনি পূর্ণ সত্য দেখিয়েছেন । মুহাম্মদ (ﷺ) যা কিছু বলতেন আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকেই বলতেন (সূরা নজম : ৪-৫)। 

পৃথিবী সাক্ষী যে, মুহাম্মদ (ﷺ) আজ থেকে চৌদ্দ শত বৎসর পূর্বে যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়েছে এবং আজও পূর্ণ হচ্ছে।
ভবিষ্যদ্বাণী 

ভবিষ্যদ্বাণী (৩) দুই: 

সেই নবী এসে মসীহ্ মহিমা প্রকাশ করবেন মসীহ্ সেই নবী সম্পর্কে বলছেন, “সেই সত্যের রুহ্ আমারই মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তাই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন” (যোহন ১৬:১৪)।

মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের মাধ্যমে মসীহ্ এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতা পেয়েছে। মুহাম্মদ (ﷺ) এসে মসীহ্ মহিমা প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁকে ক্রুশীয় মৃত্যুর অপবাদ থেকে এবং তাঁর মাকে অসতী অপবাদ থেকে মুক্ত করেছেন।

ভবিষ্যদ্বাণী (৪) চার: 

মসীহ্ পর অন্য একজন সাহায্যকারী আসবেন। যার শিক্ষা চিরকাল থাকবে। মসীহ্ বলেন “আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আরেকজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দিবেন।” (যোহন ১৪:১৬)

এই ভবিষ্যদ্বানীটিও একমাত্র মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের মাধ্যমেই পূর্ণতা লাভ করেছে কেননা মসীহ্র পর চিরস্থায়ী শরীয়ত নিয়ে একমাত্র মুহাম্মদ (ﷺ)-ই আগমন করেছেন।


হিন্দু ধর্ম গ্রন্থসমূহে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী


পবিত্র কুরআনের ঘোষনা-
وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌ
অর্থ: পৃথিবীতে এমন কোন জাতি নেই যাদের মাঝে আল্লাহ্ তা’লা সতর্ককারী অর্থাৎ নবী রসূল পাঠান নি। (সুরা ফাতির: ২৫)

সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাচীন তীর্থস্থান ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। সিন্ধু নদের অববাহিকায় যে জাতির বাস ছিল তারাই আজ হিন্দু নামে অভিহিত। এই হিন্দু জাতিতেও অনেক মহাপুরুষের আগমন ঘটেছে। যাদেরকে বর্তমানে হিন্দুরা ঈশ্বরের অবতার হিসেবে পূজা করে থাকে। অথচ তারা সবাই ছিল তাদের নিজ নিজ সময়ের খোদার পক্ষ থেকে আসা সতর্ককারী। তেমনি তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোও ছিল খোদার পক্ষ থেকে আসা ঐশীগ্রন্থ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এতে অনেক সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে। মানুষের অন্যায় হস্তক্ষেপের হাত থেকে এই পবিত্র গ্রন্থগুলো রেহাই পায় নি। তাই আজ সেগুলো তাদের প্রকৃত রুপ থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। তথাপি খোদা তা’লার অপার মহিমা যে এখনো সেগুলোতে কিছু সত্যের ঝলক বিদ্যমান এবং কিছু সত্য ভবিষ্যদ্বাণীও বিদ্যমান যেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়ে নিজেদের সত্যতার প্রমান বহন করে চলেছে। যদিও এ সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ছিল একটি জাতি বা গোষ্ঠির জন্য সীমাবদ্ধ কিন্তু এতে ভবিষ্যতে আগমনকারী সেই মহাপুরুষের ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান যিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য আগমন করবেন। আর একমাত্র মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের মাধ্যমেই সেই সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতা লাভ করেছে।

হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ বেদে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমনের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী

ভবিষ্যদ্বাণী (১) এক: 

মানব কর্তৃক প্রশংসিত এক নবীর আগমন হবে-
অথর্ব বেদে আগমনকারী সেই নবী সম্পর্কে বলা হয়েছে- “ইদংজনা উপশ্রুত নরাশংসঃস্তবিষ্যতে।” 
(অথর্ব বেদ ২০ নম্বর গ্রন্থ, ১২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ, ১ নম্বর মন্ত্র) অর্থ: ‘এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে যিনি হবেন মানব কর্তৃক প্রশংসিত।’

আমরা যদি ‘নরাশংস’ শব্দটিকে মুহাম্মদ শব্দটির সাথে মিলিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাই দুটি শব্দের অর্থ পুরোপুরি এক। ‘নরাশংস’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে নর দ্বারা অর্থাৎ মানুষ দ্বারা প্রশংসিত। তদ্রুপ মুহাম্মদ শব্দের অর্থও প্রশংসিত অর্থাৎ মানব কর্তৃক যিনি অনেক বেশী প্রশংসিত।

ভবিষ্যদ্বাণী (২) দুই: 

সেই প্রতিশ্রুত নবী উটে আরোহণ করবেন- অথর্ব বেদের আরেক স্থানে আছে- “উষ্ট্রা যস্য প্রবাহনো বধুমন্তো দ্বির্দশ” (অথর্ব বেদ ২০ নম্বর গ্রন্থ, ১২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ, ২ নম্বর মন্ত্র) অর্থাৎ ‘ঐ প্রশংসিত মহাপুরুষ উটের উপর আরোহণ করে আবির্ভূত হবেন। তার দ্বাদশ সহধর্মিণী হবেন।’

গীতায় মুহাম্মদ (ﷺ) এর আগমন সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী

ভবিষ্যদ্বাণী (১) এক: 

যখনই ধর্মের পতন ও অধর্ম দেখা দিবে তখনই একজন মহাপুরুষের আগমন ঘটবে-
গীতায় রয়েছে- “যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত – অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ // পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে //” (গীতা,অধ্যায়: ৪, শ্লোক: ৭-৮) 

অনুবাদ: ‘যখনই ধর্মে অধঃপতন হবে এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হবে, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হব। সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করে ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হব।’

ভবিষ্যদ্বাণী (২) দুই: 

সমস্ত জাতির জন্য এক বিশ্ব নবীর আগমন ঘটবে। গীতায় রয়েছে কৃষ্ণ তাঁর শিষ্য অর্জুনকে ভবিষ্যতে আগত তাঁর কয়েকটি বিশ্বরুপ দেখালেন। যেখানে অর্জুন সহস্র সূর্যের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত এক মহাপুরুষকে দেখে বলে উঠলেন “দিবি সূর্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুত্থিতা যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ ভাসস্তস্য মহাত্মনঃ” (গীতা, অধ্যায়: ১১, শ্লোক: ১২) অর্থাৎ ‘যদি আকাশে সহস্র র্সূ্যের প্রভা যুগপৎ উদিত হয়, তাহলে সেই মহাত্ম বিশ্বরূপের প্রভার কিঞ্চিত তুল্য হতে পারে।’

শ্রী কৃষ্ণ ছিলেন জাতীয় অবতার। কিন্তু অর্জুন তাঁর সামনে বিদ্যমান এই কৃষ্ণের চেয়ে হাজারো গুণ দীপ্তিমান এক সত্তাকে দেখলেন। যিনি হাজারো সূর্য তুল্য। যিনি শুধু এক জাতি, এক দেশের জন্য আসবেন না। আসবেন এক বিশ্বরূপ নিয়ে সমগ্র বিশ্বের জন্য। গীতার উপরোক্ত এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ (ﷺ)-ই হচ্ছেন সেই মহাপুরুষ যাকে পবিত্র কুরআনে ‘সিরাজুম্ মুনীর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ভবিষ্যদ্বাণী (৩) তিন: 

আহমদ নামে এক সর্বশ্রেষ্ঠ রসূলের আগমন হবে- গীতায় রয়েছে- “অহমাদির্হি দেবানাং মহর্ষীণাঞ্চ সর্বশঃ” (গীতা, অধ্যায়: ১০, শ্লোক: ২) অর্থাৎ ‘আহমদ দেবতা দেবতাদের মাঝে সর্বোতভাবে মহির্ষী।’

পুরানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) সম্পর্কে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণী

পুরানে খুবই স্পষ্টভাবে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর আগমন সর্ম্পকিত কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান।

ভবিষ্যদ্বাণী (১) এক: 

‘মহামদ’ নামে এক মহাপুরুষের আগমন হবে। ভবিষ্য পুরানে রয়েছে- “মহামদ ইতিখ্যাত: শিষ্যশাখা সমন্বিত: নৃ পশ্চব মহা দেবং মরুস্থল নিবাসিনম।” (ভবিষ্যপুরান-৩, খন্ড: ৩, অধ্যায়: ৩ শ্লোক: ৫, ৬) অর্থাৎ ‘মহামদ নামে এক মহাপুরুষ মরু অঞ্চলে শিষ্যসহ আবির্ভূত হবেন। তাকে অর্থাৎ সেই মরুস্থলে আগমনকারী মহাদেবকে নমস্কার।’

ভবিষ্যদ্বাণী (২) দুই: 

খৎনা সম্পন্ন একজন মহাপুরুষ আগমন করবেন। ভবিষ্য পুরানে আরেক স্থানে এসেছে-“লিঙ্গচ্ছেদী শিখাহীন: শ্মশ্রুধারী স দ্রষক: উচ্চালাপী সর্বভক্ষী ভবিষ্যতি জনো মম।” (ভবিষ্যপুরান-৩, খন্ড: ৩, অধ্যায়: ৩, শ্লোক: ২৫) অর্থাৎ ‘এই মহাপুরুষের খৎনা হবে, টিকি না রেখে তিনি দাড়ি রাখবেন। তিনি উঁচু আওয়াজে আহবান করবেন। তিনি হালাল খাদ্য গ্রহন করবেন’।
ভবিষ্যপুরানের উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের প্রতিটি বাক্য একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর আগমনের মাধ্যমেই অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণতা লাভ করেছে।

ভবিষ্যদ্বাণী (৩) তিন: 

শান্তির শহর অর্থাৎ মক্কায় সেই মহাপুরুষের জন্ম হবে- কল্কি পুরানে আছে “শাম্ভলে বিষ্ণুয শস্যে গৃহে প্রাদুর্ভবামাহম” (কল্কি পুরান, ২য় অধ্যায়, শ্লোক: ৪) অর্থাৎ ‘কলির কালে বিষ্ণু দাসের গৃহে, সম্ভল শহরে কল্কি অবতারের জন্ম হবে।’ বিষ্ণু শব্দের আরবী অনুবাদ হচ্ছে ‘আল্লাহ্’ আর দাসের আরবী হচ্ছে ‘আব্দ। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ্ ঘরে সেই মহাপুরুষ জন্ম নিবেন। তাছাড়া এখানে ‘সম্ভল’ যে শব্দ এসেছে তার আরবী হচ্ছে আমান অর্থাৎ শান্তি। আর এক সাথে অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘দারুল আমান’। পবিত্র মক্কা নগরীর আরেক নাম হচ্ছে ‘দারুল আমান’ অর্থাৎ শান্তির শহর।

ভবিষ্যদ্বাণী (৪) চার: 

সেই মহাপুরুষের চার খলীফা থাকবে- কল্কি পুরানে আছে “চতুর্ভি ভ্রাতৃভির্দেব! করিষ্যামি কলিক্ষয়ম” (কল্কি পুরান, ২/১৫) অর্থাৎ ‘তার ভ্রাতৃতুল্য চারজন সহকর্মী হবেন, তাদের সহযোগে তিনি কলি (জাহেলিয়াত) ক্ষয় করবেন।

ভবিষ্যদ্বাণী (৫) পাঁচ: 

নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার যুগে সেই মহাপুরুষ আগমন করবেন। “কলি যুগে যখন রাজারা হবে ডাকাতের মত তখন বিষ্ণু দাশের ঘরে কল্কি জন্ম নিবে। (কল্কিপুরান, ২/৭)
আমরা সকলেই অবগত যে, মুহাম্মদ (ﷺ) সেই জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতার যুগেই জন্ম নিয়েছিলেন যখন সর্বত্রই ছিল হানাহানি নৈরাজ্য ও অধিকার হননের চিত্র।

সূধী পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা আমাদের নিকট দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ সমূহে একজন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর আগমন সম্বন্ধীয় যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান তা একমাত্র আমাদের নেতা ও প্রভূ নবীকূলের শিরোমণি রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা (ﷺ)-এর শুভাগমনের মাধ্যমেই অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণতা লাভ করেছে। তাঁর (ﷺ) আগমনের মাধ্যমে শরীয়ত পূর্ণতা লাভ করেছে। মানবজাতি তার উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ এই মহান নবীর প্রতি প্রতিনিয়ত অবারিত দরুদ প্রেরণ করা আর এই দোয়া করা যে, এই পৃথিবীর যে সমস্ত মানুষ এখনো এই মহান নবীর শান ও মর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত নয় আল্লাহ তা’লা তাদের সকলকে এই মহা মর্যাদাবান নবীর শান ও মর্যাদা অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন এবং এই নবীর প্রতি ঈমান এনে হেদায়াত লাভ করার তৌফিক দান করুন। আর আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকেও এই মহান নবীর পবিত্র জীবনাদর্শ অনুসরণ করার ও তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ প্রেরণ করার তৌফিক দান করুন (আমীন)।


Top