বিষয়ঃ ওহাবী কাকে বলে ওহাবী কি,,?
*—*—*—*—*—*—*—*—*—*—*—*—*—*—*
আজ আমাকে এক ওহাবি প্রশ্ন করেছে ওহাবি কাকে বলে?
ওহাবিদের পরিচয় জেনে নিনঃ
আমরা সব সময় একটা কথা বলে থাকি এটা ওহাবীদের কাজ বা ওহাবী আক্বীদা, ওহাবী মতবাদ। আর এই ওহাবী কারা সেটাও আমাদের জানা অনেক প্রয়োজন। ওহাবী হলো পথভ্রষ্ট একটি নামধারী ইসলামিক দল। যারা সবসময় আমাদের প্রিয় নবী ও ওলী-অাল্লাহদের শানে বেয়াদবী করে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা করতে থাকবে। এরা হলো “ফেরকায়ে বাতেলা” বা অতীতের “খারেজী সম্প্রদায়” এর আধুনিক ও আপডেটেড ভার্সন।
ওহাবী মতবাদঃ হিজরী দ্বাদশ শতকের ১১১১ হিজরীতে আরবের নজদ নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর আবির্ভাব ঘটে। সে যে মতবাদ প্রচার করেছিলো উহাই ওহাবী আন্দোলন এবং ওহাবী সমপ্রদায় নামে অভিহিত।
ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতে আরম্ভ করে আজ পর্যনত্দ ইসলামী সমাজে যে সব ফেৎনা ফ্যাসাদের সম্মুখীন হয়েছে – তাদের মধ্যে ওহাবী ফেৎনা জঘন্যতম। আমাদের প্রিয় নবী পূর্বেই এ ফেৎনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। মিশকাত শরীফের “জিকরুশশাম আল ইয়ামান” অধ্যায়ের ৫৮২ নং পৃষ্ঠা।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক সময় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া প্রসঙ্গে এরশাদ করলেন – হে আল্লাহ্ ! আপনি আমাদের শাম দেশে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ্ ! আপনি আমাদের ইয়েমেন দেশে বরকত দান করুন। সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন – “ইয়া রাসুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নজদের জন্য বরকতের দোয়া করুন। কিন্তু আমাদের নবীজি পুনরায় শাম ও ইয়েমেন দেশের জন্য দোয়া করলেন। সাহাবায়ে কেরামগন পুনরায় নজদের জন্য নবীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করলেন। হাদীসটি বর্ননাকারী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৃতীয় বারে এরশাদ করলেন – ” সেখানে (নজদে) ভূ-কম্পন ও বহু ফেৎনা ফ্যাসাদ হবে। সেখান হতে শয়তানের শিং (দল) বের হবে। উক্ত হাদিসের আলোকে (বুখারী শরীফ) এর অনেক হাদীস বিশারদের মতে উপরোল্লেখিত হাদীসে ওহাবী ফেৎনা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে।
হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ (দেখুন মেরকাত শরহে মেশকাত ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং – ৫৭৯ ও জখিরায়ে কারামত ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং -৭)।
সবচেয়ে বড় কথা আমরা যারা জোর দাবী করি – আমরা হানাফী মাযহাবের অনুসারী । যদি তাই হয়, সহি দাবি করে থাকেন, তাহলে হানাফী মাযহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ব এবং অন্যতম গ্রহণযোগ্য ফতোয়ার কিতাব হলো “ফতোয়ায়ে শামী”। এই কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ড ৪১৩ নং পৃষ্ঠায় “বাবুল বোগাতে” ওহাবী ফেৎনা সম্পর্কে বলা হয়েছে। আরো পাবেন তাফসীরে সাবী ৩য় খন্ড ২৮৮ পৃষ্ঠা।
এরা নজদ শহর হতে আত্ম প্রকাশ করে মক্কা ও মদিনা শরীফের উপর বিজয়ী হয়েছিলো। এরা নিজেদেরকে হাম্বলী বলে দাবী করতো। কিন্তু তারা বিশ্বাস করতো যে, তারাই একমাত্র মুসলমান এবং তাদের আক্বীদা বিরুদ্ধাচরনকারীগণ মুশরিক। এবং তাদের বিরুদ্ধাচরনকারীগণ মুসলমান এবং ওলামাদিগকে হত্যা করা তারা হালাল মনে করত। এবং এভাবে তারা (ওহাবিরা) মক্কা ও মদীনাবাসীদের উপর ভীষন জুলুম অত্যাচার করেছে।
বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মাদ্রাসায় উসূলে ফিকাহর পাঠ্য কিতাব হিসেবে “নূরুল আনোয়ার” নামক একটি কিতাব পড়ানো হয়। উক্ত কিতাবের ২৫১ নং পৃষ্ঠায় ১৩ নং হাশিয়া বা পাশর্্বটিকায় ওহাবীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ-
তাদের (রাফেজী, খারেজী ও মো’তাজেলা ইত্যাদি বাতিল ফেরকার) মত ওহাবী সমপ্রদায়ও একটি পথভ্রষ্ট দল – যারা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু ওয়া-সাল্লাম এর শাফায়াতকে অস্বীকার করে। (নাউজুবিল্লাহ্)।
কত বড় জঘন্য ফেৎনা তারা আমার/আপনার দয়াল নবীর শানে প্রচার করছে অথচ নবীর শাফায়াত ছাড়া শুধু মানুষ নয় অন্য কোন নবীরাও এমনকি যারা দুনিয়া থেকেই বেহেসত্দের সুসংবাদ নিয়ে গেছে আল্লাহ্ৰ কাছ থেকে তারাও নবীর সাফায়াত ছাড়া বেহেসত্দে যেতে পারবে না।
অথচ আমার/আপনার দয়াল নবী বলেন – আমার উম্মতের কবীরা গুনাহকারীর জন্য আমার শাফায়াত রয়েছে।
তিরমিযী, অধ্যায় আল-জামি ২/৬৬ এছাড়াও এ হাদিসটি আবু-দাউদ শরীফেও রয়েছে।
ওহাবী ও অন্যান্ন কিছু শয়তানের দলের মুরব্বীদের আক্বীদা হলো পীর/মুরীদি মানা না-জায়েজ (নাউজুবিল্লা)
তাদের প্রতি আমার করুনা ও কষ্ট হয় তারা কত বড় ফাসিক ও পথভ্রষ্ট। আর তারা পীর/মুর্শিদ মানে না বলেই তারা আজ পথভ্রষ্ট। কারণ তাদের বর্তমান পীর় হলো শয়তান।
# তাদের মতে পীর় মুরীদি না জায়েজ-ই নয় বরং শিরক (নাউজুবিল্লাহ্)।
আল্লাহ্ বলেন – তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর আল্লাহ এর পথে নৈকট্য/ওসীলা অন্বেষণ/তালাশ কর। সুরা আল-মায়িদা, আয়াত – ৩৫।
সাফায়াতের একমাত্র মালিক আমার/আপনার প্রিয় নবী। আর ওসীলা তালাশ করতে বলেছে আল্লাহ্ – তারা হলেন ওলি-অল্লাহ বা পীর-মুরশিদ (ইমাম)। কারণ ওসীলা ছাড়া নবীর সাফায়াত মিলবে না।
আল্লাহ্ বলেন “স্বরন কর ওই দিন (হাশরের দিন) প্রত্যেককে আমি তাদের ইমাম/দলনেতার সাথে আহ্বান করব”। এবং তাদের ডান হাতে আমল নামা দেওয়া হবে তারা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমান জুলুম হবে না। আল কুরআন, সুরা বনী ইসরাইল – ১৭ : আয়াত ৭১।
উপরোক্ত আয়াতে সকল মুফাসসের একমত হয়েছেন এ দলনেতা হলো আমাদের মধ্যে অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যারা অল্লাহ্ নেক্কার বান্দা (মোমিন /ওলিঅল্লাহ্ / পীর – মুরশিদ) মতার অধিকারী যারা ইসলামের কোরআন ও হাদিসের সঠিক পথ দেখায় সেই হলো ইমাম বা দলনেতা।
আল্লাহ্ আরো বলেনঃ আনুগত্য কর আল্লাহ্র, আনুগত্য কর রাসুলের এবং যারা তোমাদের মধ্যে মতার অধিকারী/বিচারক/ইমাম। আল কুরআন, সুরা আন-নিসা – ৪:৫৯।
(এখানে আল্লাহ যারা তোমাদের মধ্যে অর্থাৎ মানুষের মধ্যে মতার অধিকারী বলতে ইমাম/ওলি-অল্লাহ বা পীর-মুরশিদকে বুঝিয়েছেন)। যার অসংখ্য প্রমান হাদিসে পাওয়া যায়।
ওহাবী ও পথভ্রষ্টদের আরেক আক্বীদা হলো রাসূল হায়াতুন্নবী নন। (নাউজুবিল্লাহ্)।
তাদের মতে মিলাদ্দুন্নবী আলোচনা করা নিকৃষ্ট বেদাত কাজ। বেদাতে সাইয়্যেআহ (নাউজুবিল্লাহ্)।
(এমনকি বর্তমানে সৌদি ওহাবীদের গ্রান্ড মূফতী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী নবীজির উদ্যাপন করাকে শিরক বলে ফতোয়া দিয়েছে। এই পথভ্রষ্ট মূখ্য জানেই না শিরক কাকে বলে। যা পরবর্তীতে আমাদের দেশীয় ওহাবীরা “এ আবার কোন ঈদ” নামক পোষ্টারের মাধ্যমে গত ২০০৩ এবং ২০০৪ইং সনে সারা বাংলাদেশে পোষ্টার দিয়ে সয়লাভ করে দিয়েছিলো সারা বাংলায়।
# আল হাকায়েকুল ইসলামিয়া নামক কিতাবে (যা তুকর্ীর ইসত্দাম্বুল থেকে প্রকাশিত) এর ১১ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে – ওহাবীদের মতে রাসুলে আকরাম নবীজির এর রওজা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করলে তা হবে শিরক। (নাউজুবিল্লাহ্)
।
# এমনকি বাংলাদেশের ওহাবীরাও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতি বৎসর হাজীদের বিনামূল্যে বাংলাতে কিছু বই বিতরন করে যা হজ্জ গাইড বা বিভিন্ন নামে বিতরন করা হয়ে থাকে। সেখানে তারা বলছে যে, হজ্জ করতে আসলে নবীর রওজা যিয়ারত না করলেও চলবে (নাউজুবিল্লাহ্)। এটা হজ্জের কোন অংশ না (নাউজুবিল্লাহ্)। অথচ আমার/আপনার কুল কায়েনাতের নবীজি বলেছেন যারা হজ্জ করতে আসল আর আমার রওজা যিয়ারত করল না তারা যেন আমার সাথে দুশমনী করলো।
এক কথায়, এরা হলো বর্তমানে আমাদের সমাজে সবচেয়ে বড় দুশমনে রাসূল এবং পথভ্রষ্ট দল যা আমাদের প্রিয় নবী পূর্বেই এ ফেৎনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেখুন মিশকাত শরীফের ” জিকরুশশাম আল ইয়ামান\” অধ্যায়ের ৫৮২ নং পৃষ্ঠা।
যারা সৌদির ওহাবীদের গ্রান্ড মূফতীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তারা তাদের কৃত কর্ম চালাচ্ছে। আল্লাহ্ আমাদের এই সকল পথভ্রষ্ট বাতিলদের হাত থেকে হেফাজত করুন . . .আমীন