চতুর্থ অধ্যায়ঃআযানের আগে ও পরে দুরুদ সালামের বৈধতাঃ
ক. কুরআনের আলোকে আযানের আগে ও পরে দুরুদ সালামের বৈধতার প্রমাণঃ
আল্লাহ তা‘য়ালা নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ সালাম পাঠ করার জন্য সময় বেধে দেন নি।
আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনে পাকে বলেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
-‘‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার সকল ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়তেছেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূল (ﷺ) এর প্রতি দুরূদ পড় এবং সালাম দাও মুহব্বত ও তাজিম সহকারে।’’
🔺(সূরা আহযাব আয়াত নং ৫৬)
উক্ত আয়াতে প্রিয় নবী (ﷺ)কে সালাম দিতে বলা হয়েছে এখানে কোন সময়কে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি যে শুধু এক বা নির্দিষ্ট সময়ই নবীকে সালাম দিবে, বরং এ আয়াতে আম ব্যাপককতার প্রমাণ মিলে যে নবীজি(ﷺ) র উপর দুরুদ সালাম পাঠ করার। এ বক্তব্যের সমর্থনে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকীহ, মুহাদ্দিস, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-
اَنَّهُ تَعَالَى لَمْ يَوقُتْ ذَلِكَ لِيشَمِلُ سَائِرُ الْاَوْقَات-
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা এখানে উক্ত আয়াতে কোন নির্দিষ্ট ওয়াক্ত বা সময় নির্ধারন করেন নি বরং সমস্ত সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (অর্থাৎ যে কোন সময়ই দরূদ সালাম পড়া যাবে নিষেধাজ্ঞা সময় ব্যতীত)।’’
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১০৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বৈরুত)
এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক পাওয়া যায় যেমন ইমাম তিরমিযি (রঃ) সংকলন করেন-
عَنِ الطُّفَيْلِ بْنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللَّهَ اذْكُرُوا اللَّهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ، قَالَ أُبَيٌّ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي؟ فَقَالَ: مَا شِئْتَ. قَالَ: قُلْتُ: الرُّبُعَ، قَالَ: مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ: النِّصْفَ، قَالَ: مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قَالَ: قُلْتُ: فَالثُّلُثَيْنِ، قَالَ: مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ: أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا قَالَ: إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.
-‘‘হযরত উবাই ইবনে কাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...আমি বললাম সবটুকু সময় আপনার উপর সালাত পাঠে লাগাব। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমালেন, তাহলে তো তোমার চিন্তা মুক্তির জন্য তাই যথেষ্ট হবে।’’
🔺(তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/২১৮পৃ. হা/২৪৫৭, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৫৭পৃ. হা/৩৫৭৮, এবং হা/৩৮৯৪, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৮৫পৃ. হা/১৪১৮, মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৩/৩৯০পৃ. হা/১১৮৫, শেকাত, হা/৯২৯, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭/১২৯পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৮পৃ. ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ১১/৫পৃ. হা/৮৪৬৭, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৭৬পৃ. হা/৩৯৯৭)
তবে ফকীহগণ কিছু স্থানে দুরূদ সালাম পড়ার ব্যাপারে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন তাছাড়া সব স্থানে দুরূদ সালাম পড়া মুস্তাহাব বলে গণ্য। তাই মাকরূহ সময় সমূহের মধ্যে আজানের আগে ও পরে উল্লেখ নেই। যেমন ফতোয়ার শামীতে রয়েছে যে-
تُكْرَهُ الصَّلَاةُ عَلَيْهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي سَبْعَةِ مَوَاضِعَ: الْجِمَاعِ، وَحَاجَةِ الْإِنْسَانِ، وَشُهْرَةِ الْمَبِيعِ وَالْعَثْرَةِ، وَالتَّعَجُّبِ، وَالذَّبْحِ، وَالْعُطَاسِ
-‘‘ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাত অবস্থায় নবীজী (ﷺ) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা মাকরূহ (তাহরীমী)। যথা- (১) স্ত্রী সহবাসকালে (২) পেশাব পায়খানার সময় (৩) ব্যবসার মাল চালু করার সময়। (৪) হোচট খাওয়ার পর (৫) যবেহ করার সময় (৬) আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়। (৭) এবং হাঁচি দেয়ার সময়।’’
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ)
এই নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দরুদ-সালাম পড়া মোস্তাহাব। যেমন ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রঃ) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-
(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ(أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.
-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)
হাদিসের আলোকে আযান ও ইকামতের আগে দুরূদ সালাম
উপরোল্লেখিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু) বলেন-
يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن
-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দুরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’
🔺(আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.)
মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর আলোচনায় উল্লেখ করেছি যে সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদিসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাই এটিও রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ। তাহলে দুরুদ-সালাম পড়ার কোন সময় নির্ধারিত নেই, তবে ফুকাহায়ে কেরাম কিছু নির্দিষ্ট স্থানে মাকরুহ বলেছেন যা ইতিপূর্বে আলোকপাত করেছি। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) একটি হাদিসে পাক বর্ণনা করেন-
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ امْرَأَةٍ مِنْ بَنِي النَّجَّارِ قَالَتْ: كَانَ بَيْتِي مِنْ أَطْوَلِ بَيْتٍ حَوْلَ الْمَسْجِدِ وَكَانَ بِلَالٌ يُؤَذِّنُ عَلَيْهِ الْفَجْرَ فَيَأْتِي بِسَحَرٍ فَيَجْلِسُ عَلَى الْبَيْتِ يَنْظُرُ إِلَى الْفَجْرِ، فَإِذَا رَآهُ تَمَطَّى، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ قَالَتْ: ثُمَّ يُؤَذِّنُ، قَالَتْ: وَاللَّهِ مَا عَلِمْتُهُ كَانَ تَرَكَهَا لَيْلَةً وَاحِدَةً تَعْنِي هَذِهِ الْكَلِمَاتِ
-‘‘হযরত ওরওয়াহ বিন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নাজ্জার গোত্রের এক মহিলা সাহাবী থেকে, তিনি বলেন, মসজিদে নববীর নিকটবর্তী ঘর সমূহের মধ্যে আমার বাড়ি ছিল সুউচ্চ হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে উঠে ফজরের আযান দিতেন। তিনি সাহরীর শেষ সময়ে এসে ঐ ছাদের উপরে বসে সুবহে সাদেকের অপেক্ষা করতেন। অতঃপর ভোর হয়েছে দেখার পর তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং বলতেন
- اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ‘
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রসংশা করি এবং আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি এজন্য যে, আপনি কোরাইশদেরকে দীন ইসলাম কায়েমের তৌফিক দান করেছেন।’’ রাবী বলেন, অতঃপর হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু আযান দিতেন। রাবী আরো বলেন, আল্লাহর শপথ! বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ দোয়া পাঠ কোন রাতে বাদ দিয়েছেন বলে আমার জানা নাই।’’
🔺(ইমাম আবু দাঊদ : আস সুনান : বাবুল আযান : ১/৭৭ পৃ. হাদিস নং. ৫১৯, ইমাম বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : আযান ফিল মিনারাহ : ১/৪২৫পৃ. হাদিসঃ ১৮৪৬, মাকতুবায়ে দারুল বায, মক্কাতুল মুক্কাররামা সৌদি)
যারা বলেন আযানের পূর্বে কিছু বলা নিষেধ উক্ত হাদিস দ্বারা তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেল। এ হাদিসটিকে আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানীও ‘হাসান’ বলেছেন।
🔺(আলবানী, সহিহুল সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং. ৫১৯)
আযান ও ইকামাতের শব্দ একই দুটি শব্দ ছাড়া। এজন্যই রাসূল (ﷺ) ইকামাতকেও আযান বলেছেন। হযরত বুরায়রাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
وَعَنْ بُرَيْدَةٍ أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ إِلَّا الْمَغْرِبَ
-‘‘প্রত্যেক দুই আযানের (আযান ও ইকামাতের) মধ্যবর্তী সময়ে নামায রয়েছে, তবে মাগরিব ব্যতীত।’’
🔺(ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/২৩১পৃ. হাদিস নং. ৩৩৯১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, হাদিস নং. ২১৩৬৮)
মুফতি আমিমুল ইহসান ও ইমাম হায়সামী (رحمة الله) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার, ১/১৫৩পৃ. হাদিস নং. ৩৬৮)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) হযরত মাগাফ্ফাল (رضي الله عنه) আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণনা করেছেন-
بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ لِمَنْ شَاءَ
-‘‘দুই আযানের মধ্যে যে চায় নামায পড়বে।’’
🔺(ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৭/৩৪৬পৃ. হাদিস নং. ১৬৭৯০, হাদিসটির সনদ সহিহ, সুনানে দারেমী, হাদিস নং. ১৪৮০, সহিহ বুখারী, হাদিস নং. ৬২৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং. ৮৩৮)
তাহলে রাসূলে কারীমের এ হাদিস মোতাবেক ইকামাতও আযান। তাহলে মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল (رضي الله عنه)এর একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে
السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ
হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’
🔺(হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯)
তাই আযান ও ইকামাতের পূর্বে সালাতু সালাম দেয়া হযরত বিলালের সুন্নাত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোচনা বা তাকে সালাম দেওয়া তার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়া সবকিছুই জিকিরের অর্ন্তভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আলোচনাকে আল্লাহ কুরআনে জিকির বলছেন।
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَك -
‘‘আপনার জিকির (দুরূদ, সালাম, আলোচনা) কে আমি বুলন্দ করে দিয়েছি।’’
🔺(সুরা ইনশিরাহ : আয়াত:৪)
শুধু তাই নয় আল্লাহর নাম নেওয়া যেমনি যিকর তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম নেয়া তাকে সালাম দেওয়াও জিকিরের অর্ন্তভুক্ত।
যেমন আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ ফরমান-
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -
-‘‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। জিবরাঈল (আ.) বলেন মহান রব আমাকে : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে সেখানে আমার সাথে আপনার ও জিকির হবে।’’
🔺((ক) ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০, ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২, ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬, ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮, ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ. আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।)
আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী বলেন, সনদটি “হাসান” পর্যায়ের। শুধু তাই নয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেওয়া জিকিরের অর্ন্তভুক্ত এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীসে পাক দেখুন-
عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ " إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ
-‘‘হযরত মুহাজির ইবনে কুনফুয রাদিয়াল্লাহু তাআলা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক দিন তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এমন সময় হাজির হলেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করতেছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দিলেন। কিন্তু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু না করা পর্যন্ত সালামের জবাব দেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কারণ উল্লেখ করলেন এবং বললেন আমি অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা অপছন্দ করি।’’
🔺((ক) ইমাম আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৪পৃ. কিতাবুত তাহারাত : হাদীস : ১৮, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৬৫পৃ হাদিস : ৩০২, আলবনিীও সনদটিকে এ গ্রন্থগুলোর তাহকীকে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
অতএব উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেয়াও জিকির। এ বিষয়ে হযরত সায়ীদ ইবনে আবু আরুবা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে হাদিস বর্ণিত আছে।
🔺(ইমাম ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৬৫ পৃ : হাদীস : ৩৫০)
তাই জিকির করার সময় কী নির্ধারণ আছে? এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার হাবীব এর আমল দেখুন-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ
-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল অবস্থায় বা সময়ে আল্লাহর যিকর করতেন।’’
🔺(ইমাম মুসলিম : আস-সুনান : ১/২৮২পৃ. , ইমাম আবু দাঊদ : আস-সুনান : ১/৫পৃ. কিতাবুত-তাহারাত : হাদিস : ১৮, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ১/৮২পৃ. কিতাবুত তাহারাত হাদিস : ৩০২, ইমাম তিরমিযী : আস সুনান: ১/২৪৮পৃ.)
তাই অতএব প্রমাণিত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেওয়া নিষিদ্ধ স্থান ছাড়া সব স্থানে বৈধ। তাই অতএব জ্ঞানীদেরজন্য এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি। অনেক বিজ্ঞ বিজ্ঞ ফকীহগণ ইহার উপরে মুস্তাহাব ফতোয়া দিয়েছেন তা বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে কিতাব দীর্ঘ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ফুকাহায়ে কেরামের আলোকে
আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের ইমাম ইবনে কাইয়্যুম (ওফাত.হি.৭৫১হি.) বলেন-
الموطن السَّادِس من مَوَاطِن الصَّلَاة عَلَيْهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الصَّلَاة عَلَيْهِ بعد إِجَابَة الْمُؤَذّن وَعند الْإِقَامَة
-‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দুরুদ শরীফের ৭ম মুস্তাহাব স্থান হলো আযানের সময় (পূর্বে) এবং ইকামতের পূর্বে।’’
🔺(আহলে হাদীস আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ৩০৮পৃ)
অপরদিকে ইমাম কাজি আয়াজ আল-মালেকী (رحمة الله) 🔺(ওফাত.৫৪৪হি.) বলেন-
ومن مواطن الصلاة عليه عند ذكره وسماع اسمه أو كتابة أو عند الأذان-
-‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দুরুদ মুস্তাহাব হল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ বা স্মরণ হবে, যখন তাঁর নাম মোবারক কোথাও লিখবে এবং পূর্বে আযানের।’’
🔺(ইমাম কাজী আয়াজ: শিফা শরীফ : ২/৪৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)
উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
(عند الأذان (أي الإعلام الشامل للإقامة-
-‘‘আযানের পূর্বে বা নিকট দ্বারা ইকামতের পূর্বেও অন্তর্ভুক্ত।’’
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা : ২/১১৬পৃ দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন)
অপরদিকে দেওবন্দের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আব্দুল হাই লখনোভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাহেব লিখেন-
يستفاد منه بظاهره استحبابه عند شروع الاقامة كما هو متعارف في بعض البلاد-
-‘‘স্পষ্টত ইকামতের পূর্বে দুরুদ সালাম পড়া মুস্তাহাব এরই প্রমান মিলে যেমনি ভাবে কিছু দেশে এর আমল পরিচিতি রয়েছে।’’
🔺(আল্লামা সায়ীদ উল্লাহ খান ক্বাদেরী : তাখরীজে জাআল হক: ৭৮১পৃ)
অপরদিকে ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় বলেন-
اى الصلوة والسلام على النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قبل الاذان الإقامة-
-‘‘নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করার মুস্তাহাব সময় হলো আযানের এবং ইকামতের পূর্বে।’’
🔺(ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী : ফতহুল মুঈন : ১/২২৩পৃ.)
আল্লামা আব্দুর রাহমান জাযরী (ওফাত. ১৩৬০হি.) লিখেন-
الصلاة على النبي قبل الأذان والتسابيح قبله بالليل
-‘‘অনুচ্ছেদ : আযানের পূর্বে ও রাতের বেলায় আযানের পূর্বে নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর সালাত ও তাসবীহ পাঠ।’’
🔺(জাযরী, কিতাবুল ফিকহু আ‘লা মাযাহাবিল আরবা‘আ, ১/৩২৬পৃ.)
আযান এর পর দুরুদ ও সালাম বৈধতার প্রমাণঃ
এ বিষয়ে সরাসরি সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا-
-‘‘প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ইরশাদ ফরমান, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আজান শ্রবণ করবে তখন সে যা বলে তোমরাও তা বলবে। অতঃপর আমার উপর দুরূদ সালাম পাঠ করবে। কেনা যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দুরূদ সালাম পাঠ করে তার জন্য আল্লাহ তাআলা দশটি রহমত বর্ষণ করেন।’’
🔺(ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত : হাদীস : ৩৮৪, খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬, আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩, নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস : ৬৭৮, ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০, সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ হাদীস : ৭০২, ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪)
এ বিষয়ে বাতিলপন্থীদের ধোঁকার জবাবঃ
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইসলামী শরীয়তে সকল কিছুই প্রথমত বৈধ, যে পর্যন্ত তা কোন সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা নিষেধ প্রমাণিত না হয়। বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এজন্যই ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) উভয়ই বলেন-
الْمُخْتَارَ أَنَّ الْأَصْلَ الْإِبَاحَةُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ مِنْ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ
ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানিফা এবং জমহুর ইমামদের পছন্দনীয় মতামত হল প্রত্যেক কিছুই বৈধ (যে পর্যন্ত না কোন দলীল দ্বারা নিষেধ করা হয়)।
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : রদ্দুল মুখতার আলা দুররুল মুখতার: ১/৭৮পৃ কিতাবুত তাহারাত)
তাই বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর কাঠ মোল্লাগণ মাহফিলে এই আমলটি কে হারাম পর্যন্ত ফাতওয়া দিয়ে বেড়ান। অথচ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে বলেন-
الْحَلَالُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَالْحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عَفَا عَنْهُ
-‘‘হালাল হচ্ছে যা আল্লাহ তা‘য়ালা স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) হালাল করেছেন; আর হারাম হচ্ছে, স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) যা হারাম করেছেন এবং যেটা সম্পর্কে নিরব রয়েছেন সেটা মাফ।’’
🔺(খতীব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত : কিতাবুদ-ত্বআম: ৩/৯৮পৃ., ইমাম তিরমিযী : আস সুনান: ৪/১৯২পৃ : হাদিস : ১৭২৬, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান: ২/১১১পৃ হাদিস : ৩৩৯৭)
তাহলে সেই কাঠ মোল্লাদের কাছে জানতে চাওয়া কোরআন, অথবা হাদিসের কোন কিতাবে আমলটি নিষিদ্ধ বলা হয়েছে ? কিয়ামত পর্যন্ত তারা কোন জবাব দিতে পারবে না। আমরা এটিকে নফল বা মুস্তাহাব হিসেবেই জানি। মুস্তাহাব হওয়ার জন্য শরিয়তে কোন নিষেধ না থাকলে এবং বুযর্গদের ভাল ধারণাই যথেষ্ট। ইমাম আলাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত হানাফী ফিকহের গ্রন্থ ‘‘দুররুল মুখতারের’’ ওজুর মুস্তাহাব অধ্যায়ে লিখেন-
وَمُسْتَحَبُّهُ وَهُوَ مَا فَعَلَهُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مَرَّةً وَتَرَكَهُ أُخْرَى، وَمَا أَحَبَّهُ السَّلَفُ
-‘‘মুস্তাহাব ঐ কাজটাকে বলা হয়, যেটা হুযুর (ﷺ) কোন সময় করেছেন আবার কোন সময় করেননি এবং ঐ কাজটাকেও বলে, যেটা বিগত মুসলমানগণ ভাল মনে করেছেন।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/১২৩পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)
পঞ্চম অধ্যায়ঃজানাযার নামাযের পর দোয়ার বৈধতার প্রমাণ-
জানাযা নামাজ নাকি দোয়াঃ
আমাদের দেশে এক শ্রেণীর নামধারী আলেম রয়েছেন যারা জানাযা দোয়া ছাড়া নামায মানতে রাজী নয়। যাই হোক এখন আমরা পৃথিবীর কোনো মৌলভীর কথা না শুনে মহান রব তা‘য়ালা এ বিষয়ে কী বলেছেন তা দেখবো।
ক. রাসূল (ﷺ) মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জানাযার নামায পড়তে গেলে নিষেধ করতে গিয়ে মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَلا تُصَلِّ عَلى أَحَدٍ مِنْهُمْ ماتَ أَبَداً وَلا تَقُمْ عَلى قَبْرِهِ
-‘‘আপনি কখনও তাদের (মুনাফিক) কারোর উপর (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং তাদের কবরের নিকট (জিয়ারতের) জন্য দাঁড়াবেন না।’’
(সুরা তাওবাহ, আয়াত, ৮৪)
🔺(শানে নূযুল দেখুন সহিহ বুখারী, ২/৭৬পৃ. হাদিস নং. ১২৬৯, হযরত ইবনে উমর (রা) এর সূত্রে)
ক. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা রাসূলের আদেশঃ
দলীল নং- ১-৩৪
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ، فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ-
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যখন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়ে ফেলবে অত:পর তার জন্য খালেস বা নিষ্ঠার সাথে দোয়া কর।’’
🔺(ইবনে মাযাহ : আস-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ১/৪৮০ পৃ. : হাদিস : ১৪৯৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আবি দাউদ : আস্-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ৩/৫৩৮ পৃ. : হাদিস : ৩১৯৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে হিব্বান : আস-সহিহ : ৭/৩৪৬পৃ. হাদিসঃ ৩০৭৭, সুয়ূতি : জামেউস-সগীর : ১/৫৮ পৃ. : হাদিস : ৭২৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/৩১৯ পৃ., হাদিস : ১৬৭৪, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, আলবানী : সহীহুল মিশকাত : হাদিস : ১৬৭৪ এ তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৪০ পৃ. দারুল মা’রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম নববী : রিয়াদুস সালেহীন : ৩১০-৩১১ প. হাদিস : ৯৩৭, ইমাম তাবরানী : কিতাবুদ-দোয়া : ৩৬২ পৃ. হাদিস : ১২০৫-১২০৬, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/৩১৯পৃ. হাদিসঃ ২২৭৫)
এ হাদিসের সারমর্মঃ উক্ত হাদিসে রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন فَأَخْلِصُوا -‘‘অত:পর খালেস বা আন্তরিকভাবে তার জন্য দোয়া কর।’’ কালিমার প্রথমে فاء বর্ণ তা‘কিব (বিলম্ব ব্যতীত অন্যটা শুরু করা) জন্য এসে থাকে।
৪. আল্লামা সিরাজ উদ্দিন উসমান (রহ) এর নাহু শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন নাহুতে উল্লেখ করেন-
والفاء للترتيب بلا مهلة نحو قام زيد فعمرو إذا كان زيد متقدما وعمرو متأخرا بلا مهلة
-‘‘ ‘ফা’ হরফটি বিলম্বহীন পর্যায়ক্রমে অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- قام زيد فعمرو অর্থ যায়েদ দাড়ালো, অতঃপর আমর দাড়ালো। এ উদাহারণটি যায়েদের দাড়ানোর আমরের পূর্বে হবে এবং আমরের দাঁড়ানো বিলম্বহীনভাবে যায়েদের পরে হবে।’’
🔺(হেদায়াতুন্নাহু- ১১৩-১১৪পৃ. কাদীমী কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান, পরিচ্ছেদ : হরফে আতফ)
৬. আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানীপথি (রহ) বলেন-
بالفاء الموضوع للتعقيب بلا تراخ
-‘‘(ف) ‘ফা’ অব্যয়টি কোন সময় না নিয়ে অনতিবিলম্বে কোন কাজের পরে অন্য কাজ সম্পাদন করার অর্থে ব্যবহার হয়।’’ (তাফসীরে মাযহারী, ৮/১২৮পৃ.)
এ হাদিসটির সনদ পর্যালোচনাঃ উক্ত হাদিসটি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম আলবানী তার, সহীহুল মিশকাত এ উক্ত হাদিসটিকে ‘‘হাসান’’ বলেছেন।
🔺(ক. আহলে হাদিস আলবানী, ইরওয়উল গালীল, ৩/১৭৯পৃ. হাদিসঃ ৭৩২, আলবানী, সহিহুল জা‘মে, হাদিসঃ ৬৬৯, সহিহুল মিশকাত, তিনি বলেন সনদটি ‘হাসান')
এমনকি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি তার জামেউস সগীরে ‘হাসান’ বলেছেন, ইবনে হিব্বান তঁার ‘সহিহ’ গ্রন্থে সহিহ‘র তালিকায় রেখেছেন।
খ. জানাযার পর দোয়া করার বিষয়ে রাসূল (ﷺ)-এর আমলঃ
১. বিখ্যাত সিরাতবিদ ইমাম ওয়াকীদী (ওফাত. ২০৭ হি) তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
عَبْدُ الْجَبّارِ بْنُ عُمَارَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ..... فَصَلّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَعَا لَهُ، ثُمّ قَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ فَإِنّهُ شَهِيدٌ، دَخَلَ الْجَنّةَ فَهُوَ يَطِيرُ فِي الْجَنّةِ بِجَنَاحَيْنِ مِنْ يَاقُوتٍ حَيْثُ يُشَاءُ مِنْ الْجَنّةِ.
-‘‘হযরত আব্দুল জব্বার ইবনু উমারাহ ইবন্ আব্দুল্লাহ ইবন্ আবি বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,....... অত:পর রাসূল (ﷺ) হযরত জাফর বিন আবি তালেব (রা) এর জানাযার নামাজ আদায় করলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। তিনি তাদেরকে আরও বললেন তোমরা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর সে এখন জান্নাতে অবস্থান করছেন........।’’
🔺( ইমাম ওয়াকীদী, কিতাবুল মাগাজী, ২/৭৬২পৃ. দারুল আ‘লামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪০৯হি.)
২. প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রহ) 🔺(ওফাত.৮৬১ হি) তাঁর ফতোয়ার কিতাবে মুতার যুদ্ধের ঘটনায় উল্লেখ করেন-
عَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ عُمَارَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ قَالَا: لَمَّا الْتَقَى النَّاسُ بِمُؤْتَةِ جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - عَلَى الْمِنْبَرِ وَكُشِفَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الشَّامِ فَهُوَ يَنْظُرُ إلَى مُعْتَرَكِهِمْ، فَقَالَ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -: أَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ فَمَضَى حَتَّى اُسْتُشْهِدَ وَصَلَّى عَلَيْهِ وَدَعَا وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ يَسْعَى، ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ جَعْفَرُ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَمَضَى حَتَّى اُسْتُشْهِدَ، فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَدَعَا لَهُ وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَهُوَ يَطِيرُ فِيهَا بِجَنَاحَيْنِ حَيْثُ شَاءَ -
-‘‘হযরত আবদুল জাব্বার বিন উমারাহ (রহ) তিনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আবি বাকরাহ (রা) থেকে তিনি বলেন-যখন মুসলমানগণ (সাহাবীগণ) মুতার যুদ্ধ করতে ছিলেন। তখন রাসূল (ﷺ) মদিনার মসজিদে মিম্বারে উপবিষ্ট ছিলেন। সেখান থেকে শামদেশ পর্যন্ত পর্দা উঠিয়ে দেয়া হলো। যার ফলে তিনি স্বচক্ষে যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে ছিলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, এখন যায়েদ বিন হারেসা (রা) এক হাতে ঝান্ডা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। অতঃপর তিনি বললেন, সে শাহাদাত বরণ করেছেন। নবীজি তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন তোমরা তার জন্য ইস্তিগফার অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা কর। সে এখন জান্নাতে অবস্থান করে ছুটাছুটি করছেন। তারপর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন এখন জাফর বিন আবি তালেবের এক হাতে ঝান্ডা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। সেও শহীদ হয়ে গেলেন; নবীজি তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করলেন; সাহাবীদেরকে বললেন তোমরা তার জন্য ইস্তিগফার ক্ষমা প্রার্থনা কর সে এখন ইয়াকুত ডানায় ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন।’’
🔺(ক. আল্লামা ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম : ফাতহুল ক্বাদীর : কিতাবুয জানাইয : ২/১১৭ পৃ., আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল ক্বারী : ৮/২২ পৃ., আল্লামা ওয়াকেদী : কিতাবুল মাগাজী : ২/২১০-২১১ পৃ.)
৩. মুতার যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) সাহাবীর জানাযার নামাযের পর কী করলেন তা ইমাম বায়হাকী (রহ) সুন্দর করে সহিহ সনদে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন-
عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: حَتَّى اسْتُشْهِدَ فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَعَا لَهُ وَقَالَ اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ فَإِنَّهُ شَهِيدٌ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ يَطِيرُ فِي الْجَنَّةِ بِجَنَاحَيْنِ مِنْ يَاقُوتٍ حَيْثُ يَشَاءُ مِنَ الْجَنَّةِ-
-‘‘হযরত আসিম বিন উমর বিন কাতাদা (রা) বর্ণনা করেন-----তারপর জাফর বিন আবি তালেব (রা) শহীদ হয়ে গেলেন, অত:পর রাসূল (ﷺ) তার জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার কর, নিশ্চয় সে এখন শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং ইয়াকুত ডানায় ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন।’’
🔺(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৪/৩৭৯পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়াহ, বয়রুত, প্রথম প্রকাশ. ১৪০৫ হি.)
৯. বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও চার মাযহাবের ইমামের অন্যতম একজন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রহ) তাদের হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْهَجَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لَهُ فَتَبِعَهَا عَلَى بَغْلَةٍ يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ، وَنِسَاءٌ يَرْثِينَهَا، فَقَالَ: يَرْثِينَ، أَوْ لَا يَرْثِينَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمَرَاثِي .وَلْتُفِضْ إِحْدَاكُنَّ مِنْ عَبْرَتِهَا مَا شَاءَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَكَبَّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا، ثُمَّ قَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ قَدْرَ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ هَكَذَا هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘তাবেয়ী হযরত ইব্রাহিম হাজারী (রহ) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আওফা (রা) যিনি বাইতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তার কন্যার ওফাত হলে তিনি তার মেয়ের কফিনের পিছনে একটি খচ্চরের উপর সাওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করো না, যেহেতু হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মর্সিয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যেখানের সম-পরিমাণ দোয়া করতেছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনুরূপ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযায় করতেন।’’
🔺(আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/৪৭৪-৪৭৫পৃ. হাদিস : ১৮৩৫১; ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৮৭পৃ.হাদিস : ৩৩৫৫; ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৭০পৃ. হাদিস : ১৫৮১; ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তি : জামিউল জাওয়ামে : ১৪/৪৯৩ পৃ. হাদিস : ১১৫৫৪; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : হাদিস : ১৮৬০২; ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭; আল্লামা মুত্তাকী হিন্দি : কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০পৃ. হাদিস নং : ৪২৪৪৬)
হাদিসের সারমর্মঃ এ হাদিসে দ্বারা দুটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আল্লাহর হাবীব (ﷺ) নিজে জানাযার নামাযের পর দোয়া করেছেন এবং জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সাহাবী আওফা (رضي الله عنه) জানাযার পর দোয়া করেছেন। উল্লেখ্য যে, ثُمَّ (ছুম্মা) শব্দ দ্বারা প্রমাণ হয় দাঁড়িয়ে দোয়া নামাযের মধ্যে ছিল না, বরং নামাযের পরপরই ছিল। ইমাম হাকিম নিশাপুরী (রহ) হাদিসটি সংকলন করে বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘হাদিসটির সনদ সহিহ বা বিশুদ্ধ।
🔺(ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭)
উক্ত হাদিসটিকে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রহ)ও তার গ্রন্থে সহিহ বলে মেনে নিয়েছেন।
🔺(সুয়ূতি : জামিউস সগীর, ২/৫৬০ পৃ. হাদিস : ৯৩৮৫)
১১. বিখ্যাত ইমাম কাসানী (রহ) হাদিস সংকলন করেন-
رُوِيَ ্রأَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا فَرَغَ جَاءَ عُمَرُ وَمَعَهُ قَوْمٌ فَأَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ ثَانِيًا، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ: - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - الصَّلَاةُ عَلَى الْجِنَازَةِ لَا تُعَادُ، وَلَكِنْ اُدْعُ لِلْمَيِّتِ وَاسْتَغْفِرْ لَهُ-
-‘‘বর্ণিত হয়েছে একবার রাসূল (ﷺ) একটা যানাযার নামায শেষ করলেন। এরপর হযরত ওমর (রা) উপস্থিত হলেন, তার সাথে কিছু লোকও ছিল। তিনি দ্বিতীয় বার যানাযা পড়তে চাইলেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন যানাযার নামায দ্বিতীয় বার পড়া যায় না। তবে তুমি মৃতব্যক্তির জন্য দু’আ করতে পার এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’’
🔺(আল্লামা ইমাম কাসানী : বাদাঈ সানায়ে, ৩/৩১১পৃ.)
*জানাযার নামাযের পর রাসূল (ﷺ) নিজেই বিভিন্ন দোয়া পড়তেনঃ
১২. উপরের বিভিন্ন হাদিসে আমরা দেখেছি রাসূল (ﷺ) নিজে দোয়া করেছেন এবং সাহাবীদেরকে দোয়া করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন। এখন কিছু হাদিসে পাক উল্লেখ করবো নবীজি বাস্তব জীবনে জানাযার নামাযের পর নিজে বিভিন্ন শব্দে দোয়া করে সাহাবীদেরকে শিক্ষাও দিয়েছেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ) একটি হাদিসে পাক উল্লেখ করেছেন-
عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ:اللَّهُمَّ إِنَّ فُلَانَ ابْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
-‘‘হযরত ওয়াছিলা ইবনে আসকা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নিয়ে এক ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়লেন। অতঃপর (জানাযার পর) আমি শুনলাম তিনি মহান আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করলেন। এভাবে হে আল্লাহ! অমুকের ছেলে অমুক তোমার জিম্মায় ও তোমার আশ্রয়ে তাকে তুমি কবরের পরীক্ষা হতে রক্ষা কর। দোযখের আযাব হতে বাঁচাও। তুমি ওয়াদা ও হক পূরণকারী। অতএব তুমি মাফ কর, তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’’
🔺(আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৩/২১১পৃ. হাদিস নং.৩২০২, আলবানীর তাহক্বীক সূত্রে সহিহ, সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৪৮০পৃ. হাদিস নং. ১৪৯৯, তাবরানী, কিতাবুদ দোয়া, ১/৩৫৯পৃ. হাদিস নং.১১৮৯, ও মু‘জামুল কাবীর, ২২/৮৯পৃ. হাদিস নং. ২১৪, ও মুসনাদে শামিয়্যীন, ৩/২৫২পৃ. হাদিস নং. ২১৯৪, বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/২৮৮পৃ. হাদিস নং. ৬৩১,)
১৩. আরেকটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন ইমাম বায়হাকী (রহ) সংকলন করেছেন-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ صَلَّى عَلَى الْمَنْفُوسِ، ثُمَّ قَالَ: " اللهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ-
-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ) তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) জনৈক ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়লেন। তারপর বললেন হে আল্লাহ! এ ব্যক্তিকে কবর আযাব হতে রক্ষা কর।’’
🔺(ইমাম বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৪/১৪পৃ. হাদিস নং. ৬৭৯৩, প্রাগুক্ত., ও মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৫/২৪৮পৃ. হাদিস নং. ৭৪১০, ও এছবাত আযাবুল কুবুর, ১/১০৫পৃ. হাদিস নং. ১৬০ ও ১৬১)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উল্লেখ্য যে, ثُمَّ (ছুম্মা) শব্দ দ্বারা প্রমাণ হয় দাঁড়িয়ে দোয়া নামাযের মধ্যে ছিল না, বরং নামাযের পরপরই ছিল।
গ. জানাযার নামাযের পর দোয়া খলিফাদের সুন্নতঃ
ইসলামের চতুর্থ খলিফার আমল দেখুন-
عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا
-‘‘হযরত মুসতাযিল ইবনে হুসাইন (রা) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আলী (রা) এক জানাযার নামায আদায় করেন অতঃপর আবার তার জন্যে দোয়া করেন।’’
🔺(বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৬)
ঘ. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা সাহাবীদের সুন্নতঃ
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমরা এখন অনুসন্ধান করবো জানাযার নামায সমাপ্ত হলে সাহাবীরা দোয়া করতেন, এমন কোন আমল পাওয়া যায় কিনা।
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصَّلَاةَ-
-‘‘(১) বিশিষ্ট তা’বেয়ী না’ফে (রহ) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তিনি যদি কোনো জানাযায় উপস্থিত হয়ে দেখতেন যে, সালাতুল জানাযা আদায় করা হয়ে গেছে, তাহলে তিনি (আদায় কৃত জানাযার) পর দোয়া করে ফিরে আসতেন, পুনরায় সালাত (জানাযা) আদায় করতেন না।’’
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ : ৩/৫১৯ পৃ. হাদিস, ৬৫৪৫, মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার, ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ)
মুফতী আমিমুল ইহসান (রহ) বলেন এ হাদিসের সনদটি সহিহ।’’
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার :- ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ)
২. ইমাম বায়হাকী (রহ) হাদিস সংকলন করেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، أَنَّ أَبَا مُوسَى: صَلَّى عَلَى الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ الْجُعْفِيِّ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهِ أَدْرَكَهُمْ بَالْجَبَّانِ
-‘‘হযরত আমর বিন মুররাতা (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী হযরত খায়ছামা (রহ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আবু মূসা আশ‘আরী (রা) হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল-জুফিয়ী (রা)-এর জানাযার নামায আদায় করলেন, পরে তাঁর জন্যে দোয়া করেন।’’
🔺(বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৭)
🖋হাদিস (৩)ঃ শামসুল আয়িম্মা ইমাম সারখসী (রহ) 🔺(ওফাত.৪৮৩হি.) তাঁর বিখ্যাত ‘মবসুত শরীফে’ “মাইয়্যাতের গোসল” শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদিস সংকলন করেন-
مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - وَابْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّهُمَا فَاتَتْهُمَا الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا حَضَرَا مَا زَادَا عَلَى الِاسْتِغْفَارِ لَهُ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ.
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার পড়লেন বা দোয়া করলেন। একদা হযরত উমর (রা) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা) আসলেন তিনি বললেন হে আমার সাথীরা ! তোমরা আমাকে নামাজে মাসবুক করেছো তবে জানাযার পর দোয়াতে আমাকে মাসবুক (বাদ দিয়ে) করো না (এসো আমরা সবাই মিলে দোয়া করি)।’’
🔺(ইমাম সরখ্সী , আল-মবসুত, ২/৬৭পৃ.,আল্লামা আবু-বকর বিন মাসউদ কাসানী, বাদায়ে সানায়ে, ১/৩১১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন)
জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিষয়ে ফোকাহায়ে কেরামের দলিলঃ
ইমাম আযম (রহ)সহ বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণ কী বলেছেন?
বিখ্যাত ইমাম শা‘রানী (রহ) লিখেন-
ومن ذلك قول أبى حنيفة : أن التعزية سنة قبل الدفن لا بعد وبه قال الثورى مع قول الشافعى وأحمد أنها تسن قبله وبعد الى ثلاثة ايام ......ان شدة الحزن إنما تكون قبل الدفن فيعزى ويدعى له بتخفيف الحزن-
-‘‘আর এমনিভাবে ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর বক্তব্য হচ্ছে : দাফনের পূর্বে শোক প্রকাশ করা সুন্নাত, পরে নয়। তারই সাথে সাথে ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ) এবং তাঁর সাথে ইমাম শাফেয়ী (রহ) ও ইমাম আহমদ (রহ) বলেছেন যে, নিশ্চয় দাফনের পূর্বেই পেরেশানী বেশী থাকে। ফলে সে সময় মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করবে ও দোয়া করবে।’’
🔺(ইমাম শা‘রানী, মিযানুল কোবরা, ১/১৫৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)
এ ইবারত থেকে প্রমাণিত হল যে দাফনের পূর্বে (মানে জানাযার পর) দোয়া করা জায়েয এটা স্বয়ং ইমাম আযমেরই অভিমত।
জানাযার পরবর্তী দোয়া কবুলযোগ্যঃ
জানাযার নামায যেহেতু ফরয আর আমরা এখন দেখবো যে ফরয নামাযের কবুল হওয়ার বিষয়ে নবীজি কী বলেছেন। হযরত আবু উমামা (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন-
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ:قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ المَكْتُوبَاتِ.: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.-
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর কাছে জানতে চাওয়া হল, কোন সময়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বলেন, রাতের শেষ অংশে (তাহাজ্জুতের সময়) ও ফরয নামাজের পরবতর্ী দোয়া।’’
🔺(ক. তিরমিযি : আস-সুনান : ৫/৫২৬ পৃ. হাদিস : ৩৪৯৯, নাসাঈ : আস-সুনান : ৯/৪৭পৃ. হাদিস : ৯৮৫৬ ও আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলা, ১/১৮৬পৃ. হাদিসঃ ১০৮, মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৪৮৬ পৃ. হাদিস : ২৫৫০, বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/২৩৮পৃ. হাদিসঃ ৬৭০, ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৪/১৪১পৃ. হাদিস : ২০৯৮, আসকালানী : ফাতহুল বারী, ১২/৪১৮ পৃ. হাদিস : ৬৩৩০, তিনি বলেন হাদিসটি “হাসান”,ও তঁার অপর গ্রন্থ দিরায়া ফি তাখরীজে আহাদিসুল হিদায়া, ১/২২৫পৃ. হাদিসঃ ২৯১, যায়লাঈ : নাসিবুর রাঈয়াহ : ২/২৩৫পৃ. তিনি ইমাম তিরিমিযির ‘হাসান’ বলা মতকে মেনে নিয়েছেন, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : কিতাবুস সালাত : ১/১৯৬ পৃ. হাদিস : ৯৬৮)
হযরত কা‘ব (রা) এর সূত্রে ইমাম আব্দুর রাযযাক (রব) আরেকটি বিশুদ্ধ সনদ সংকলন করেছেন।
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক : আল-মুসান্নাফ : ২/৪২৪ পৃ. হাদিস : ৩৯৪৯ )
তাই বুঝতে পারলাম যে (জানাযার নামায যেহেতু ফরয তাই তার) পরবর্তী দোয়া কবুলযোগ্য, যা প্রিয় নবির হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
আহলে হাদিস ও দেওবন্দী ভাইদের প্রতি আমার আকুল আবেদনঃ
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! জানাযার নামাযের পর দোয়া করাকে কিছু গন্ডমূর্খ আলেম মাকরুহে তাহরীমী বলে থাকেন; অথচ হানাফী সকল বিজ্ঞ ফকিহগণ বলেছেন যে কোন কিছুকে মাকরুহ বলতে হলে হাদিস বা দলিলে খাছ লাগবে। হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) বলে গেছেন-
قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.
-‘‘ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে হাযম (রহ) বলেন, হানাফি মাযহাবের সকল ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে কোন আলেমের কিয়াস হতে দ্বঈফ সনদের উপর আমল করা উত্তম।’’
🔺(ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৯৯০পৃ. ক্রমিক নং. ৪৪৫, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ২০০৩ইং.)
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ) বলেন-
قَالَ فِي الْبَحْرِ: وَهُوَ مُسْتَحَبٌّ وَلَا يَلْزَمُ مِنْ تَرْكِ الْمُسْتَحَبِّ ثُبُوتُ الْكَرَاهَةِ، إذْ لَا بُدَّ لَهَا مِنْ دَلِيلٍ خَاصٍّ
-‘‘বাহার গ্রন্থকার (রহ) বলেন, আর এটি মুস্তাহাব; আর মুস্তাহাব তরক করলে মাকরুহ (তাহরীমী) প্রমাণিত হওয়া অপরিহার্য নয়। তখনই প্রমাণিত হবে যখন কোন বিশেষ দলিল পাওয়া যাবে।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/১৭৭পৃ. ঈদের নামাযের অধ্যায়, ও ১/৬৫৩পৃ. নামায অধ্যায়, ১/১২৪পৃ. কিতাবুল ওজু)
তাই তাদের এমন কোন হাদিস নেই যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে এ কারণে জানাযার নামাযের দোয়া করা মাকরুহ। ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ) বলেন-
أَنَّ الْمُخْتَارَ أَنَّ الْأَصْلَ الْإِبَاحَةُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ مِنْ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ
-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) ও ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এবং জমহুর ইমামদের পছন্দনীয় মতামত হল প্রত্যেক কিছুই বৈধ (যে পর্যন্ত না কোন দলিল দ্বারা নিষেধ করা হয়)।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/১০৫পৃ. কিতাবুল ওজু অধ্যায়)
তাই আমরা করি তা যায়েজ বলেই; আর আপনারা মাকরুহ বা নাজায়েয বলেছে তা কোরআন সুন্নাহের আলোকে প্রমাণ পেশ করুন।
ইসলামী শরীয়তে দোয়া কি ইবাদাত নয়?
অনেকে দোয়াকে ইবাদত মনে করতেই রাজি নয়; তাই বারবার তাদের দোয়া করলে তাদের নাকি অসুবিধা হয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আমাদের ধারণাটি কোরআন সুন্নাহের আলোকে কতটুকু সঠিক। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ-‘‘অতঃপর তোমরা বেশী বেশী করে দোয়া কর।’’
🔺(ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/২৭৪পৃ. হাদিস নং. ৯৪৬১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ১/৩৫০পৃ. হাদিস নং. ৪৮২, আবু দাউদ, আস্-সুনান, ১/২৩১পৃ. হাদিস নং. ৮৭৫, নাসাঈ, আস্-সুনান, ১/২২৬পৃ. হাদিস নং. ১১৩৭, ও আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৩৬৪পৃ. হাদিস নং. ৭২৭, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/২৫৪পৃ. হাদিস নং. ১৯২৮, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/১৫৮পৃ. হাদিস নং. ২৬৮৬)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারা কী রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ মানবেন না সলিমুদ্দীন মোল্লার? এটি আপনাদের বিবেকের আদালতেই রইল। এবার আসি
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক(রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন , দোয়া হল ইবাদতের মগজ স্বরূপ।’’
🔺(ক. ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৫/৪৫৬ : কিতাবুত দাওয়াত, হাদিস : ৩৩৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হাদিস : ৪২৫৬, সূয়তী, জামেউল আহাদিস : ৪/৩৬০পৃ. হাদিস : ১২১৬০, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ২/২২৪ পৃ: হাদিস : ৩০৮৭, ইমাম হাকেম তিরমিযী : নাওয়ারিদুল উসূল : ২/১১৩ পৃ:, ইমাম মুনযির : তারগিব আত তারহীব : ২/৩১৭ পৃ: হাদিস : ২৫৩৪, আল্লামা ইবনে রজব : জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ১/১৯১ পৃ:, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩১)
এ হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।
🔺(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ এর ১ম খন্ড দেখুন আশা করি এ হাদিসের সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে)
আরেকটি হাদিসে পাক লক্ষ্য করুন-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ- وقال الترمذىهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ قال الحاكم إسناده صحيح-
-‘হযরত নু‘মান বিন বশির(রা) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো একটি ইবাদত।’’
🔺(ক. ইমাম আবু দাউদ : আস-সুনান : কিতাবুস-সালাত : ২/৭৬ পৃ. হাদিস : ১৪৭৯, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : ৪/২৭৯ পৃ. হাদিস : ৪০৪৯, ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১২৫ পৃ. হাদিস : ৩৮২৮, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ৩/১৭২ পৃ. হাদিস : ৮৯০, ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাকে : ২/৫০ : হাদিস : ১৮০২, ইমাম তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৮০ পৃ. হাদিস : ৮০১, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩০)
উক্ত হাদিসটিকে ইমাম হাকিম নিশাপুরী ও সুয়ূতি তাঁদের স্ব-স্ব গ্রন্থে সহিহ বলেছেন। এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, أشْرَفُ الْعِبَادَةِ الدُّعاءُ -‘‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ইরশাদ ফরমান শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো দোয়া।’’
🔺(ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদাত, ১/৬৬পৃ. হাদিসঃ ৭১৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২পৃ. হাদিস : ৩১১৫)
তাই বিরুদ্ধবাদীদেরকে বলবো যে, আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো মনগড়া ফাতওয়া বাতিল করে সহিহ হাদিসের এবং মাযহাবের ইমামের ফাতওয়াকে মেনে নিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মৃত ব্যক্তিসহ নিজে কামিয়াবী হাসিল করুন। কেননা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহের বিরোধীর পরিণাম ভয়াবহ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- مَنْ خَالَفَ السُّنَّةَ كَفَرَ -‘‘যে আমার নবির সুন্নাতের বিরোধীতা করবে সে কাফির।’’
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, ২/৫১৯পৃ. হাদিস নং. ৪২৮১, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৩/২০১পৃ. হাদিস নং. ৫৪১৭, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/২৬০পৃ. হাদিস নং. ১৪০১০, ও ১৩/২৯৪পৃ. হাদিস নং. ১৪০৭২, ও ১৪০৭৩ ও ১৪০৭৪, হায়সামী, মাযমাউয যাওয়াইয, ২/১৫৪পৃ. হাদিস নং. ২৯৩৬, বায্যার, আল-মুসনাদ, ১২/২২২পৃ. হাদিস নং. ৫৯২৯, ইমাম তাহাবী, শরহে মা‘আনীল আছার, ১/৪২২পৃ. হাদিস নং. ২৪৬২)
জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘হাদিসের আলোকে জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিধান’’ দেখুন।